ফুটপাতে চাঁদাবাজি-দোকানিদের বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে

ফুটপাত থাকে কোন প্রয়োজনে- এমন প্রশ্ন আসে ঢাকার ফুটপাতের দিকে তাকালে। কী দুরবস্থা ফুটপাতের। গাদাগাদি করা দোকানপাটের মাঝখান দিয়ে সামান্য একটু জায়গা থাকে পথচারীর জন্য। কোথাও তা-ও নেই। অগত্যা পথচারীকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হয়। পথচারীর এই দুরবস্থা দেখবে কে?


কিন্তু সেই ফুটপাত দখল করে যাঁরা দুই পয়সা রোজগার করে দিনাতিপাত করেন, তাঁদের দিকেও তাকানোর কেউ কি আছে? ভিটেবাড়ি বন্ধক রেখে কিংবা আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে ধারদেনা করে এসব গরিব মানুষ সামান্য পণ্য সাজিয়ে বসেন ফুটপাতে। দোকানে বসার মতো পুঁজি নেই বলে তাঁরা বাঁচার তাগিদে সেখানেই পসরা সাজান। কিন্তু তাঁদের এই বাঁচার পথেও বাগড়া বসান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্য। চাঁদাবাজি চলে নিত্য। প্রকাশ্যেই এই চাঁদাবাজি চলে কিছু দালালের মাধ্যমে। যে কারণে সরাসরি চাঁদাগ্রহীতাকে ধরা সম্ভব নয়। ফুটপাতে বসে ব্যবসা করার আইনগত অধিকার না থাকলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু সদস্যের চাঁদাবাজির সুবাদে সেই অবৈধ কাজটিও চালিয়ে নিতে পারছেন তাঁরা।
সরকারিভাবে ফুটপাত হকারমুক্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় প্রতিটি সরকারের আমলে। কালেভদ্রে অভিযান পরিচালনা করা হয়। কিন্তু সেই পর্যন্তই সার। আবার ফুটপাতে চলে আসেন হকাররা। কোথাও কোথাও আবার ফুটপাতের পাশের দোকানিও দখল করে বসে আছেন ফুটপাত। নিজের দোকানের দ্রব্যসামগ্রী মজুদ করে ফুটপাতে পথচারীর চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করা হচ্ছে।
ফুটপাতগুলোতে যাঁরা ব্যবসা করেন, তাঁদের কারো ট্রেড লাইসেন্স নেই। তাঁদের কোনো কর দিতে হয় না। আনুষঙ্গিক ব্যয় কম থাকার কারণে সেখানকার দোকানিরা ঢাকার বহু দোকানির চেয়ে কম মূল্যে পণ্য বিক্রি করতে পারেন। যে কারণে সাধারণ মানুষ ফুটপাতের দোকান থেকে দ্রব্য ক্রয় করে নিজেদের চাহিদা পূরণ করতে পারেন। তাঁদের আকর্ষণও বেশি থাকে এসব দোকানের ওপর। ফলে ফুটপাতের দোকানগুলোর প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা সম্ভব হয় না। অথচ সরকারিভাবে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করলে এসব দোকানির বাঁচার উপায় ঠিক রেখেই ফুটপাতকে মুক্ত রাখা সম্ভব হতে পারে। সে রকম কিছু উদ্যোগ সরকারিভাবে একাধিকবার গ্রহণ করা হয়েছিল। সাপ্তাহিক বাজারব্যবস্থা করা হয়েছিল একসময়। ফুটপাতের দোকানিরা সেসব বাজারে পসরা সাজিয়ে বসতে পারতেন। সেই বাজারে চাঁদাবাজি হতো না। ক্রেতার সমাগমও হতো মোটামুটি। কিন্তু চাঁদাবাজিতে অসুবিধা হওয়ার কারণে কি না কে জানে, একসময় সেই বাজারব্যবস্থা লুপ্ত হয়ে যায় ঢাকা থেকে।
ঢাকার ফুটপাতে ব্যবসায়ী হাজার হাজার ব্যক্তিকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা কঠিন ব্যাপার। তাই বিকল্প চিন্তা করতে হবে ফুটপাতের ব্যাপারে। মানুষের চলাচলের সুবিধা রেখে মোটামুটি জায়গা আছে এমন স্থানে তাঁদের ব্যবসার সুবিধা সম্প্রসারিত করা যেতে পারে। তুলনামূলক সরু ফুটপাতগুলো থেকে হকারদের সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের যেহেতু উৎখাত করা হয়নি, তাই তাদের ওপর থেকে চাঁদাবাজির নির্যাতন বন্ধ করে দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.