অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী উত্ত্যক্ত করার ঘটনা

সমাজে আলো ছড়ানো ও আলো জ্বালানোর অঙ্গীকার নিয়ে যাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে আসেন, তাঁদের কারও কারও ভেতরে যে গভীর অন্ধকার রয়ে গেছে, সেটি আবারও প্রমাণিত হলো বুধবারের ঘটনায়। ওই দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে এফ রহমান হলের সামনের রাস্তা দিয়ে তিন তরুণী হেঁটে যাচ্ছিলেন।


এ সময় জহুরুল হক হলের ছাত্রলীগের নেতা তানজীল ভূঁইয়া তানভীর ও তাঁর সহযোগীরা তাঁদের উত্ত্যক্ত করলে এফ রহমান হলের শিক্ষার্থী আলমগীর বাধা দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তানভীর ও তাঁর সহযোগীরা আলমগীরকে মারধর করেন এবং একপর্যায়ে তাঁকে জহুরুল হলে নিয়ে আটকে রাখেন। এর কিছুক্ষণ পর এফ রহমান হলের শিক্ষার্থীরা তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করান। গুরুতর আহত না হলে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার প্রয়োজন পড়ত না। আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ জানানোর জন্য আলমগীরকে ধন্যবাদ জানাই। একই সঙ্গে নিন্দা জানাই নারী উত্ত্যক্তকারীদের।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে তানভীরকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর। তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ ধরনের অপরাধীকে সাময়িক বরখাস্ত করাই কি যথেষ্ট? এরা ছাত্র নামের কলঙ্ক। এই সব কলঙ্ক যত দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের করা যায় ততই মঙ্গল। অভিযুক্ত তানভীরের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে ছিনতাইয়ের অভিযোগও আছে। কয়েক দিন আগে প্রথম আলোয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের খবর প্রকাশিত হয়েছে। সেই ছিনতাইয়ের সঙ্গেও ছাত্রলীগের কর্মীরা জড়িত।
যে ছাত্রসংগঠনটির নেতা-কর্মীরা নিজেদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক বলে দাবি করেন, সেই সংগঠনের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ কি তাঁদের জন্য সম্মান বয়ে আনে? গুটিকয় কর্মীর অপকর্মের দায় কেন সংগঠনটি নেবে? নেতৃত্ব ও প্রশাসনের আশ্রয়-প্রশ্রয় না পেলে এঁরা এতটা দুঃসাহস দেখাতে পারতেন না। তানভীর ও তাঁর সহযোগীরা যা করেছেন, তা কেবল অনৈতিক নয়, আইনের চোখেও দণ্ডনীয়। নারী উত্ত্যক্ত করার দায়ে এই ক্যাম্পাসেই বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি স্কুলের একজন শিক্ষককে শাস্তি দেওয়া হয়েছে কয়েক মাস আগে। তানভীর ও তাঁর সহযোগীরা নারীদের উত্ত্যক্ত করেই ক্ষান্ত হননি; প্রতিবাদকারীকেও লাঞ্ছিত করেছেন। এঁদের অপরাধ আরও গুরুতর। সেই ক্ষেত্রে লঘু শাস্তি বা মার্জনার সুযোগ নেই। গুরুদণ্ড তাঁদের পেতেই হবে।

No comments

Powered by Blogger.