রাজনীতি-নির্বাহী কমিটিতে নিষ্ক্রিয় ৫০ by মোশাররফ বাবলু

ভবিষ্যতে নিষ্ক্রিয় নেতাদের জাতীয় নির্বাহী কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার চিন্তা করছে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব। এ লক্ষ্যে এরই মধ্যে দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির ৫০ জন নিষ্ক্রিয় সদস্যের একটি তালিকা করা হয়েছে। আগামীকাল রবিবার বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সভায় দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার হাতে এ তালিকা তুলে দেওয়া হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।


সূত্র মতে, যাঁরা দলের একাধিক পদ দখল করে রাখার পরও গত তিন বছরে সাংগঠনিক দক্ষতা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন কিংবা আন্দোলনের মাঠে ছিলেন না, তাঁদেরই অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তালিকায়।
বিএনপির এক সিনিয়র নেতা জানান, নিষ্ক্রিয় নেতাদের তালিকা করা হয়েছে। আগামী দিনে কমিটি গঠন করা হলে এ নেতারা বাদ পড়তে পারেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে নির্বাহী কমিটির সভা সামনে রেখে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন নিষ্ক্রিয় নেতারা। পদ টিকিয়ে রাখতে তাঁরা গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়, নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্যদের বাসায় ভিড় জমাচ্ছেন।
সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে মোবাইল ফোনেও যোগাযোগ করছেন তাঁরা।
জানা গেছে, গত বছর নির্বাহী কমিটির সভায় বিএনপি চেয়ারপারসন নির্দেশ দিয়েছিলেন, যাঁরা দলের বিভিন্ন পদে থেকেও নিষ্ক্রিয় তাঁদের তালিকা প্রণয়ন করতে। এ কাজের দায়িত্ব পড়েছিল দলের তিন নেতার ওপর। তাঁরাই নিষ্ক্রিয় নেতাদের তালিকা তৈরি করছেন। ওই তিন নেতা হলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ও যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমদ।
বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের শতাধিক নেতা বিভিন্ন পদে থেকেও নিষ্ক্রিয় আছেন। সরকারবিরোধী আন্দোলনে তাঁদের দেখা পাওয়া যায়নি। হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার পরও তাঁরা মাঠে নেই। ওই নিষ্ক্রিয় নেতাদের নিয়ে দলের বিভিন্ন পর্যায়ে সমালোচনা হচ্ছে। দলীয় হাইকমান্ডও ক্ষুব্ধ। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নিষ্ক্রিয় নেতাদের কাজ করার অনেক সময় দিয়েছেন। এর পরও তাঁরা সক্রিয় হননি। তাই বাধ্য হয়েই এবারের সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব নিষ্ক্রিয় নেতাদের তালিকা চেয়ারপারসনের হাতে তুলে দিচ্ছেন।
জানতে চাইলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, 'জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠকে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা উঠবে, এটাই স্বাভাবিক। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য সারা দেশে দলকে সাংগঠনিকভাবে জোরদার করা। বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। এ দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। প্রতিযোগিতাকে দলীয় কোন্দল বলা ঠিক হবে না।' সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত নেতাদের নিয়ে কী ভাবছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। এ আন্দোলনে যারাই শরিক হবেন তাঁদের গ্রহণ করা হবে। সে ক্ষেত্রে দলের মধ্যে কে সংস্কারপন্থী আর কে সংস্কারপন্থী নন, তা ভাবার সময় এখন নয়।'
জানা গেছে, গত বছর জাতীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠকে ৬০ তৃণমূল নেতা দল ও দেশের স্বার্থে খালেদা জিয়ার কাছে শতাধিক প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। কিন্তু বেশির ভাগ প্রস্তাব সভায়ই প্রত্যাখ্যান করা হয়। ৩১টি প্রস্তাব বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত হলেও সেগুলো বাস্তবায়িত হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.