পরিবেশ-বাঁধ ও সারী নদীর ন্যায়বিচার by পাভেল পার্থ
ফারাক্কা বাঁধের ক্ষত নিয়ে টিকে থাকা মুমূর্ষু বাংলাদেশ যখন টিপাইমুখ বাঁধসহ ভারতের আন্তনদী-সংযোগ প্রকল্পের জন্যও শঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ; তখনই বাংলাদেশের উজানে মেঘালয় রাজ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে আরেক সমস্যার বাঁধ। মেঘালয় রাজ্যের পাহাড়ি জেলা জৈন্তিয়ার জোয়াই শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে লেসকার ১০০
মিটার ভাটিতে মন্তডু, লামু ও উমসরিয়াং নদীর ত্রিমুখী সঙ্গমে পেডেকাংসাপ গ্রামের কাছে ‘মন্তডু-লেসকা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প’-এর কাজ করছে ‘মেঘালয় এনার্জি করপোরেশন লিমিটেড’। গত ২৯ ফেব্রুয়ারি প্রথম ইউনিটের বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মেঘালয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা [সূত্র: শিলং টাইমস, ০১/৩/১২]। জৈন্তিয়ার আমলারেম ব্লকের পাহাড়ি নদী মন্তডুর খরস্রোত আটকে ৬৩ মিটার উঁচু এ বাঁধ চালু হলে পুরো অঞ্চলই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে। বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে মন্তডু-লেসকা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে এবং দুনিয়ার এক ঝুঁকিপূর্ণ ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল ডাউকিচ্যুতির কাছাকাছি এবং সর্বাধিক বৃষ্টিপ্রবণ অঞ্চল চেরাপুঞ্জির দক্ষিণ ঢালে অবস্থিত।
মেঘালয় এনার্জি করপোরেশন লিমিটেডের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ‘মন্তডু-লেসকা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প’ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ১৯৭৫-৭৬ সালে এই প্রকল্পের প্রস্তাব হয় (সূত্র: http://meseb.nic.in/leshka.htm)। ১৯৯৭ সালে জাতীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবটি পেশ করা হয়। ১৯৯৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ভারতের কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ ওই প্রকল্পের ‘প্রযুক্তি-অর্থনৈতিক অনুমোদন’ দেয় (নং-২/মেঘ/২/৯৯-পিএসি/৯৪৯৯-৯৫২২/৭০২)। ১৯/৬/২০০১ তারিখে মেঘালয় রাজ্যের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় শর্ত সাপেক্ষে প্রকল্পটির পরিবেশগত ছাড়পত্র দেয়। ২০০২ সালে প্রকল্পটি বন বিভাগের অনুমোদন পায়। ২০১১ সালের নভেম্বরে প্রথম ইউনিটটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। ২০০৪ সালের মে মাসে বাঁধের নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে টানেল নির্মাণ শুরু হয়। ২০০৯ সালের মধ্যেই প্রকল্পটির বাঁধ, টানেল, পাওয়ার হাউস নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
১৯৯৮ সালের মার্চে ভাটিতে অবস্থিত বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে কোনো ধরনের পূর্ব আলোচনা ও অনুমতি ছাড়াই এই বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক ইউএনএফসিসিসির সিডিএম-সংক্রান্ত একটি ওয়েবসাইটে ওই প্রকল্প সম্পর্কে মন্তব্য করা হয়েছে, প্রকল্পটি ‘টেকসই উন্নয়নের কোনো ধারণা দেয়নি’। বরং এটি স্থানীয় পরিবেশ ও জনগণের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে। প্রকল্পটি স্থানীয় জনগণের পূর্বসম্মতি, অবাধ ও অনুমতি সাপেক্ষে হয়নি। মন্তডু নদীর উজান পাহাড়ি অঞ্চল উত্তর-পূর্ব ভারতের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ খনি অঞ্চল। পাহাড়ি বনাঞ্চল নিশ্চিহ্ন করে, পাহাড় ফালি ফালি করে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে নানান করপোরেট কয়লা ও পাথরখনি প্রকল্প। উজানের কয়লাখনির তলানি জমা হয় মেঘালয় পাহাড়ের সব পাহাড়ি খরস্রোতে। কয়লাখনির সালফার জমে জমে এখানকার নদীগুলোর পানি এসিডীয় হয়ে পড়েছে। মন্তডু নদীর পানিও এসিডিক। জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের যন্ত্রপাতি কোনোভাবেই এমন এসিডিক পানিতে টেকসই হবে না বলে মনে করছেন বাঁধ নির্মাণ বিশেষজ্ঞরা। পানিতে সালফিউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মেঘালয়ের দিমা হাসাও জেলার উমরাংসুতে অবস্থিত কপিলি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে (সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, ২৯ মে ২০১১)।
মন্তডু বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কেবল উজানের মেঘালয় পাহাড় নয়, ভাটির বাংলাদেশের মেঘনা অববাহিকাতেও তা তৈরি করবে এক দীর্ঘস্থায়ী বিপর্যয়। মুমূর্ষু হয়ে পড়বে ভারত-বাংলাদেশের মন্তডু-সারী-সুরমার অভিন্ন জলপ্রবাহ। উত্তর-পূর্ব পানি-প্রতিবেশ অঞ্চলের এক গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত নদী সারি। লালাখাল চা-বাগানের কাছে ভারতের লোভাছড়ি নদী থেকে এই সারী-গোয়াইন নদীর উৎপত্তি। সিলেটের জৈন্তাপুরের কাছে প্রবেশ করে সারী নদী গোয়াইনঘাট এলাকায় গোয়াইন নাম ধারণ করে পরে সিলেটের বাদামঘাট এলাকায় চেঙ্গের খাল (সিঙ্গের খাল) নাম নিয়ে সুরমা নদীতে মিলেছে। সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও সিলেট সদর উপজেলার ভেতর দিয়ে নদীটি প্রবাহিত হয়েছে। বারোমাসি স্রোত প্রবাহ নিয়ে প্রবাহিত সারী নদীর মোট দৈর্ঘ্য ২৫ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার। সারীঘাট এলাকায় বর্ষা মৌসুমে সারী নদীর গভীরতা থাকে ৮ দশমিক ৫০ মিটার এবং শীতকালে শূন্য দশমিক ৭৫ মিটার। মন্তডু-লেসকা বাঁধের ফলে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে সারী-গোয়াইন-সুরমাসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নদীজীবন। সারী নদী থেকে উজানের পাহাড় থেকে নেমে আসা বালু সংগ্রহ করে টিকে থাকা বারকি শ্রমিকেরা হয়ে পড়বেন আরও বেশি অসহায়। মন্তডু-লেসকা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বিষয়ে বাংলাদেশকে অচিরেই সবকিছু জানানো ভারতের দায়িত্ব। মন্তডু-লেসকা বাঁধ নিয়ে আন্তরাষ্ট্রিক বৈঠকের মাধ্যমেই ভারত-বাংলাদেশের যৌথ সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
শোনা যাচ্ছে, এ বছরের আগস্ট মাসেই এ প্রকল্পটি চালু হবে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করবে। অভিন্ন সীমান্ত নদীর এমন একতরফা ব্যবহার ভারত করতে পারে না। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য সনদ ১৯৯২-এর ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদের ‘ঘ’ ধারায় স্পষ্ট করে উল্লেখ রয়েছে, ‘চুক্তিবদ্ধ পক্ষ রাষ্ট্রের আওতাধীন বা নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় সৃষ্ট কোনো কারণে যদি অন্য কোনো রাষ্ট্রের প্রাণবৈচিত্র্যে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে, তবে সম্ভাব্য ক্ষতির শিকার সেই রাষ্ট্রকে তা অবহিত করতে হবে এবং ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
এক লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বাংলাদেশের ২৩০টি নদীর ভেতর ৫৭টি প্রধান নদীর উৎস সীমান্তবর্তী রাষ্ট্র ভারত ও মিয়ানমারের পাহাড়ি অঞ্চল। ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ের উত্তর-পূর্ব অঞ্চল এই মন্তডু-লেসকা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ফলে বিপন্ন ও উদ্বাস্তু হবে। ১৯৬২ সালে কর্ণফুলী নদীতে তৈরি হওয়া কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্পের কথা আমরা জানি। এই বাঁধ ডুবিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এবং উদ্বাস্তু করেছে মানুষসহ প্রাণবৈচিত্র্যের ঐতিহাসিক সংসার। ভারতের দার্জিলিং এলাকায় তৈরি হওয়া ‘উপমহাদেশের’ প্রথম জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটিও চলতি সময়ে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। মন্তডু-লেসকা বাঁধের বিরুদ্ধে সিলেটে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে জনগণ। বাঁধ নয়, জলপ্রবাহের প্রাকৃতিক ছন্দকে সমুন্নত রেখে ভারত-বাংলাদেশকে যৌথভাবেই নিশ্চিত করতে হবে মন্তডু ও সারী নদীর ন্যায়বিচার।
গবেষক, প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ।
animistbangla@yahoo.com
মেঘালয় এনার্জি করপোরেশন লিমিটেডের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ‘মন্তডু-লেসকা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প’ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ১৯৭৫-৭৬ সালে এই প্রকল্পের প্রস্তাব হয় (সূত্র: http://meseb.nic.in/leshka.htm)। ১৯৯৭ সালে জাতীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবটি পেশ করা হয়। ১৯৯৯ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ভারতের কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ ওই প্রকল্পের ‘প্রযুক্তি-অর্থনৈতিক অনুমোদন’ দেয় (নং-২/মেঘ/২/৯৯-পিএসি/৯৪৯৯-৯৫২২/৭০২)। ১৯/৬/২০০১ তারিখে মেঘালয় রাজ্যের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় শর্ত সাপেক্ষে প্রকল্পটির পরিবেশগত ছাড়পত্র দেয়। ২০০২ সালে প্রকল্পটি বন বিভাগের অনুমোদন পায়। ২০১১ সালের নভেম্বরে প্রথম ইউনিটটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়। ২০০৪ সালের মে মাসে বাঁধের নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে টানেল নির্মাণ শুরু হয়। ২০০৯ সালের মধ্যেই প্রকল্পটির বাঁধ, টানেল, পাওয়ার হাউস নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
১৯৯৮ সালের মার্চে ভাটিতে অবস্থিত বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে কোনো ধরনের পূর্ব আলোচনা ও অনুমতি ছাড়াই এই বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক ইউএনএফসিসিসির সিডিএম-সংক্রান্ত একটি ওয়েবসাইটে ওই প্রকল্প সম্পর্কে মন্তব্য করা হয়েছে, প্রকল্পটি ‘টেকসই উন্নয়নের কোনো ধারণা দেয়নি’। বরং এটি স্থানীয় পরিবেশ ও জনগণের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে। প্রকল্পটি স্থানীয় জনগণের পূর্বসম্মতি, অবাধ ও অনুমতি সাপেক্ষে হয়নি। মন্তডু নদীর উজান পাহাড়ি অঞ্চল উত্তর-পূর্ব ভারতের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ খনি অঞ্চল। পাহাড়ি বনাঞ্চল নিশ্চিহ্ন করে, পাহাড় ফালি ফালি করে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে নানান করপোরেট কয়লা ও পাথরখনি প্রকল্প। উজানের কয়লাখনির তলানি জমা হয় মেঘালয় পাহাড়ের সব পাহাড়ি খরস্রোতে। কয়লাখনির সালফার জমে জমে এখানকার নদীগুলোর পানি এসিডীয় হয়ে পড়েছে। মন্তডু নদীর পানিও এসিডিক। জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের যন্ত্রপাতি কোনোভাবেই এমন এসিডিক পানিতে টেকসই হবে না বলে মনে করছেন বাঁধ নির্মাণ বিশেষজ্ঞরা। পানিতে সালফিউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মেঘালয়ের দিমা হাসাও জেলার উমরাংসুতে অবস্থিত কপিলি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে গেছে (সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, ২৯ মে ২০১১)।
মন্তডু বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কেবল উজানের মেঘালয় পাহাড় নয়, ভাটির বাংলাদেশের মেঘনা অববাহিকাতেও তা তৈরি করবে এক দীর্ঘস্থায়ী বিপর্যয়। মুমূর্ষু হয়ে পড়বে ভারত-বাংলাদেশের মন্তডু-সারী-সুরমার অভিন্ন জলপ্রবাহ। উত্তর-পূর্ব পানি-প্রতিবেশ অঞ্চলের এক গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত নদী সারি। লালাখাল চা-বাগানের কাছে ভারতের লোভাছড়ি নদী থেকে এই সারী-গোয়াইন নদীর উৎপত্তি। সিলেটের জৈন্তাপুরের কাছে প্রবেশ করে সারী নদী গোয়াইনঘাট এলাকায় গোয়াইন নাম ধারণ করে পরে সিলেটের বাদামঘাট এলাকায় চেঙ্গের খাল (সিঙ্গের খাল) নাম নিয়ে সুরমা নদীতে মিলেছে। সিলেটের জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও সিলেট সদর উপজেলার ভেতর দিয়ে নদীটি প্রবাহিত হয়েছে। বারোমাসি স্রোত প্রবাহ নিয়ে প্রবাহিত সারী নদীর মোট দৈর্ঘ্য ২৫ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার। সারীঘাট এলাকায় বর্ষা মৌসুমে সারী নদীর গভীরতা থাকে ৮ দশমিক ৫০ মিটার এবং শীতকালে শূন্য দশমিক ৭৫ মিটার। মন্তডু-লেসকা বাঁধের ফলে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে সারী-গোয়াইন-সুরমাসহ দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নদীজীবন। সারী নদী থেকে উজানের পাহাড় থেকে নেমে আসা বালু সংগ্রহ করে টিকে থাকা বারকি শ্রমিকেরা হয়ে পড়বেন আরও বেশি অসহায়। মন্তডু-লেসকা জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বিষয়ে বাংলাদেশকে অচিরেই সবকিছু জানানো ভারতের দায়িত্ব। মন্তডু-লেসকা বাঁধ নিয়ে আন্তরাষ্ট্রিক বৈঠকের মাধ্যমেই ভারত-বাংলাদেশের যৌথ সিদ্ধান্ত ও উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
শোনা যাচ্ছে, এ বছরের আগস্ট মাসেই এ প্রকল্পটি চালু হবে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করবে। অভিন্ন সীমান্ত নদীর এমন একতরফা ব্যবহার ভারত করতে পারে না। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক প্রাণবৈচিত্র্য সনদ ১৯৯২-এর ১৪ নম্বর অনুচ্ছেদের ‘ঘ’ ধারায় স্পষ্ট করে উল্লেখ রয়েছে, ‘চুক্তিবদ্ধ পক্ষ রাষ্ট্রের আওতাধীন বা নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় সৃষ্ট কোনো কারণে যদি অন্য কোনো রাষ্ট্রের প্রাণবৈচিত্র্যে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে, তবে সম্ভাব্য ক্ষতির শিকার সেই রাষ্ট্রকে তা অবহিত করতে হবে এবং ক্ষতির পরিমাণ কমিয়ে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’
এক লাখ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বাংলাদেশের ২৩০টি নদীর ভেতর ৫৭টি প্রধান নদীর উৎস সীমান্তবর্তী রাষ্ট্র ভারত ও মিয়ানমারের পাহাড়ি অঞ্চল। ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে ঝুঁকিপূর্ণ বাংলাদেশ ও ভারত উভয়ের উত্তর-পূর্ব অঞ্চল এই মন্তডু-লেসকা জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ফলে বিপন্ন ও উদ্বাস্তু হবে। ১৯৬২ সালে কর্ণফুলী নদীতে তৈরি হওয়া কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ উন্নয়ন প্রকল্পের কথা আমরা জানি। এই বাঁধ ডুবিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চল এবং উদ্বাস্তু করেছে মানুষসহ প্রাণবৈচিত্র্যের ঐতিহাসিক সংসার। ভারতের দার্জিলিং এলাকায় তৈরি হওয়া ‘উপমহাদেশের’ প্রথম জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটিও চলতি সময়ে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। মন্তডু-লেসকা বাঁধের বিরুদ্ধে সিলেটে ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে জনগণ। বাঁধ নয়, জলপ্রবাহের প্রাকৃতিক ছন্দকে সমুন্নত রেখে ভারত-বাংলাদেশকে যৌথভাবেই নিশ্চিত করতে হবে মন্তডু ও সারী নদীর ন্যায়বিচার।
গবেষক, প্রতিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ।
animistbangla@yahoo.com
No comments