চারদিক-মুক্তিযোদ্ধাদের অন্য রকম এক দিন by গৌরাঙ্গ দেবনাথ
২৯ মার্চ। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এ যেন অন্য রকম একটি দিন। সকাল থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা এসে হলরুমে জড়ো হচ্ছেন। বেলা ১১টায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু এর আগেই মুক্তিযোদ্ধাদের আগমনে হলরুম কানায় কানায় ভরে গেছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর গত ৪০ বছরে যে কাজটি হয়নি, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ব্যক্তিগত অর্থায়নে সে রকম
একটি কাজই করতে যাচ্ছেন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। আর তাই চিকিৎসকদের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা এ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছেন। গত ২৯ মার্চ মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য মনে রাখার মতো এমনই একটি স্মরণীয় অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হলো।
অনুষ্ঠানে আজীবন বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ‘স্বাস্থ্য কার্ড’ বিতরণ করেছেন নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসকেরা। ওই দিন দুপুরে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনের ওই অনুষ্ঠানে ২২০ জন মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে বিনা মূল্যের ওই স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণ করা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. সাদেক মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নবীনগর উপজেলা চেয়ারম্যান বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মো. জিয়াউল হক সরকার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণ করেন। এ অনুষ্ঠানকে সারা দেশের জন্য একটি অনুকরণীয় ‘মডেল’ হিসেবে অভিহিত করে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবু সাঈদ, নবীনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামছুল ইসলাম, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার শামসুল আলম, মুক্তিযোদ্ধা ও চেয়ারম্যান জসিমউদ্দিন আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা আজহারুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. আরজু, নবীনগর প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু কামাল খন্দকার, প্রথম আলোর প্রতিনিধি সংস্কৃতকর্মী গৌরাঙ্গ দেবনাথ, আওয়ামী লীগের নেতা শেখ নূরুল ইসলাম, জহির উদ্দিন চৌধুরী, ইদ্রিস মিয়া, হাবিবুর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন চেতনায় একাত্তরের সভাপতি জামাল হোসেন।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার শামসুল আলম বলেন, ‘গত ৪০ বছরেও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকারিভাবে যে উদ্যোগ গ্রহণ করা যায়নি, আজ নবীনগরের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত অর্থায়নে ও সমন্বিত উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধাদের বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ‘স্বাস্থ্য কার্ড’ বিতরণের এই অনুষ্ঠান সারা দেশে এক অনুকরণীয় বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাংগঠনিক কমান্ডার আজহারুল ইসলাম স্বাস্থ্য কার্ড পেয়ে বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর গত ৪০ বছরে কত সরকারের বদল হলো। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো সরকারই এ ধরনের ‘স্বাস্থ্য কার্ড’ দিতে পারল না। অথচ সরকারি চিকিৎসকেরা নিজেদের ব্যক্তিগত অর্থায়নে এই কার্ড দিয়ে প্রমাণ করলেন, উদ্যোগ আর আন্তরিকতা থাকলে সমাজে ভালো কাজ করা যায়।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. আরজু বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বলা হয়। অথচ সেই মুক্তিযোদ্ধারাই বিনা চিকিৎসায়, অবহেলায়-অযত্নে মারা যান, এ খবর আমরা পত্রিকার পাতা উল্টালেই প্রতিনিয়ত দেখতে পাই। তবে নবীনগরের চিকিৎসকদের আজকের এ উদ্যোগ সারা দেশের চিকিৎসকেরা সত্যিকার অর্থে আন্তরিকভাবে অনুসরণ করলে ভবিষ্যতে পত্রিকার পাতায় এ ধরনের দুঃখজনক সংবাদ অনেক কমে যাবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সামছুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে অনেক জরুরি কাজ ফেলে রেখে এ অনুষ্ঠানে এসেছি কেবল উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানাতে। আমি মনে করি, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আজকের এই ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানটি মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বহু দিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ও জেলা বিএমএর সাধারণ সম্পাদক মো. আবু সাঈদ বলেন, ‘প্রথমবারের মতো একটি উপজেলায় চালু হওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদানের এই অনুকরণীয় সার্ভিসটি আমরা সারা দেশে না হলেও গোটা জেলায় দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেব।’
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি উপজেলা চেয়ারম্যান বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মো. জিয়াউল হক সরকার বলেন, ‘একটি কার্ড দেখিয়ে অসহায়-গরিব মুক্তিযোদ্ধারা বিনা মূল্যে সব ধরনের চিকিৎসাসেবা পাবেন, এ উদ্যোগ আরও বহু আগেই আমাদের নেওয়ার দরকার ছিল। এ উদ্যোগকে নবীনগর থেকেই সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আয়োজকদের আমি সাধুবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’
অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, অনুষ্ঠানের সভাপতি মো. সাদেক মিয়া বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আজকে ২২০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বিনা মূল্যের এই ‘স্বাস্থ্য কার্ড’ দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে উপজেলার সব মুক্তিযোদ্ধাকে (প্রায় এক হাজার ২০০ জন) এই কার্ড দেওয়া হবে।’
অনুষ্ঠান শেষে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবার ওসব স্বাস্থ্য কার্ড পেয়ে বাড়ি ফেরার পথে একাধিক মুক্তিযোদ্ধা এই প্রতিনিধিকে বলেন, ‘ইডা তো বালা একটা আয়জন দেখাইল ডাক্তার সাবরা। অবশ্যই ইডার প্রশংসা করতে অইব। কিন্তু এই কার্ড দেখাইয়া আসলে কয় দিন আমরা মুক্তিযোদ্ধারা বিনা মূল্যে সরকারি ডাক্তার সাবদের কাছে সত্যিকারের চিকিৎসাসেবা পাই, হেইডা আগে দেইখ্যা লই। এর পরই বুঝা যাইব, আসলেই এই উদ্যোগডা কতটুকু সফল অইব...?’
গৌরাঙ্গ দেবনাথ
অনুষ্ঠানে আজীবন বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দিতে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ‘স্বাস্থ্য কার্ড’ বিতরণ করেছেন নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত চিকিৎসকেরা। ওই দিন দুপুরে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনের ওই অনুষ্ঠানে ২২০ জন মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে বিনা মূল্যের ওই স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণ করা হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মো. সাদেক মিয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে নবীনগর উপজেলা চেয়ারম্যান বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মো. জিয়াউল হক সরকার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণ করেন। এ অনুষ্ঠানকে সারা দেশের জন্য একটি অনুকরণীয় ‘মডেল’ হিসেবে অভিহিত করে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবু সাঈদ, নবীনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সামছুল ইসলাম, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার শামসুল আলম, মুক্তিযোদ্ধা ও চেয়ারম্যান জসিমউদ্দিন আহমেদ, মুক্তিযোদ্ধা আজহারুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. আরজু, নবীনগর প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু কামাল খন্দকার, প্রথম আলোর প্রতিনিধি সংস্কৃতকর্মী গৌরাঙ্গ দেবনাথ, আওয়ামী লীগের নেতা শেখ নূরুল ইসলাম, জহির উদ্দিন চৌধুরী, ইদ্রিস মিয়া, হাবিবুর রহমান প্রমুখ। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন চেতনায় একাত্তরের সভাপতি জামাল হোসেন।
অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার শামসুল আলম বলেন, ‘গত ৪০ বছরেও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সরকারিভাবে যে উদ্যোগ গ্রহণ করা যায়নি, আজ নবীনগরের সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত অর্থায়নে ও সমন্বিত উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধাদের বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ‘স্বাস্থ্য কার্ড’ বিতরণের এই অনুষ্ঠান সারা দেশে এক অনুকরণীয় বিরল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাংগঠনিক কমান্ডার আজহারুল ইসলাম স্বাস্থ্য কার্ড পেয়ে বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার পর গত ৪০ বছরে কত সরকারের বদল হলো। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো সরকারই এ ধরনের ‘স্বাস্থ্য কার্ড’ দিতে পারল না। অথচ সরকারি চিকিৎসকেরা নিজেদের ব্যক্তিগত অর্থায়নে এই কার্ড দিয়ে প্রমাণ করলেন, উদ্যোগ আর আন্তরিকতা থাকলে সমাজে ভালো কাজ করা যায়।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. আরজু বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বলা হয়। অথচ সেই মুক্তিযোদ্ধারাই বিনা চিকিৎসায়, অবহেলায়-অযত্নে মারা যান, এ খবর আমরা পত্রিকার পাতা উল্টালেই প্রতিনিয়ত দেখতে পাই। তবে নবীনগরের চিকিৎসকদের আজকের এ উদ্যোগ সারা দেশের চিকিৎসকেরা সত্যিকার অর্থে আন্তরিকভাবে অনুসরণ করলে ভবিষ্যতে পত্রিকার পাতায় এ ধরনের দুঃখজনক সংবাদ অনেক কমে যাবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সামছুল ইসলাম বলেন, ‘আজকে অনেক জরুরি কাজ ফেলে রেখে এ অনুষ্ঠানে এসেছি কেবল উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানাতে। আমি মনে করি, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আজকের এই ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানটি মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে বহু দিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত) ও জেলা বিএমএর সাধারণ সম্পাদক মো. আবু সাঈদ বলেন, ‘প্রথমবারের মতো একটি উপজেলায় চালু হওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদানের এই অনুকরণীয় সার্ভিসটি আমরা সারা দেশে না হলেও গোটা জেলায় দ্রুত ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেব।’
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি উপজেলা চেয়ারম্যান বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মো. জিয়াউল হক সরকার বলেন, ‘একটি কার্ড দেখিয়ে অসহায়-গরিব মুক্তিযোদ্ধারা বিনা মূল্যে সব ধরনের চিকিৎসাসেবা পাবেন, এ উদ্যোগ আরও বহু আগেই আমাদের নেওয়ার দরকার ছিল। এ উদ্যোগকে নবীনগর থেকেই সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আয়োজকদের আমি সাধুবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’
অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, অনুষ্ঠানের সভাপতি মো. সাদেক মিয়া বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আজকে ২২০ জন মুক্তিযোদ্ধাকে বিনা মূল্যের এই ‘স্বাস্থ্য কার্ড’ দেওয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে উপজেলার সব মুক্তিযোদ্ধাকে (প্রায় এক হাজার ২০০ জন) এই কার্ড দেওয়া হবে।’
অনুষ্ঠান শেষে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসেবার ওসব স্বাস্থ্য কার্ড পেয়ে বাড়ি ফেরার পথে একাধিক মুক্তিযোদ্ধা এই প্রতিনিধিকে বলেন, ‘ইডা তো বালা একটা আয়জন দেখাইল ডাক্তার সাবরা। অবশ্যই ইডার প্রশংসা করতে অইব। কিন্তু এই কার্ড দেখাইয়া আসলে কয় দিন আমরা মুক্তিযোদ্ধারা বিনা মূল্যে সরকারি ডাক্তার সাবদের কাছে সত্যিকারের চিকিৎসাসেবা পাই, হেইডা আগে দেইখ্যা লই। এর পরই বুঝা যাইব, আসলেই এই উদ্যোগডা কতটুকু সফল অইব...?’
গৌরাঙ্গ দেবনাথ
No comments