স্কুল মাঠে ইটভাটা-কোথাও কেউ নেই!

পরিবেশ আইন অনুযায়ী লোকালয়ের তিন এবং বনাঞ্চলের দুই কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা বসানো যায় না। কিতাবি সে বিধান বাস্তবে আর কয়জন মানে! আমরা আকসারই দেখি যে, যত্রতত্র সর্বনাশা চিমনি মাথা তুলে দাঁড়াচ্ছে। কিন্তু যশোরের মনিরামপুরে যেভাবে স্কুলের মাঠে ইটভাটা বসানো হয়েছে, তা বোধহয় নজিরবিহীন।


পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের পক্ষে এত নেতিবাচক উদ্যোগ বিরল। এ ক্ষেত্রে প্রশ্নটা নিছক আইনেরও নয়, কাণ্ডজ্ঞানের। শুক্রবার সমকালের লোকালয় পাতায় প্রকাশিত সচিত্র প্রতিবেদনে স্পষ্ট যে, ইটভাটা কেবল বিদ্যালয় সংলগ্ন নয়। এর গা ঘেঁষেই রয়েছে বসতবাড়ি, ফসলি জমি ও ক্ষুদ্র বনাঞ্চল। এই পরিবেশ ইটভাটা বসানোর কথা সুস্থ মস্তিষ্কে চিন্তা করাও কঠিন। ইট প্রস্তুতকারী মেশিনের বিকট শব্দ, ট্রাকের আসা-যাওয়া, কাদা-পানি, ধোঁয়া-ধূলির কারণে প্রাথমিক বিদ্যালয়টির পাঠদান ও পরিবেশ ব্যাপকভাবে বিঘি্নত হচ্ছে। অথচ ভাটার লিজগ্রহীতার নাকি 'এখন আর কিছুই করার নেই'। এমন বক্তব্য আমাদের কাছে ঔদ্ধত্যই বিবেচিত হয়। তার খুঁটির জোর খতিয়ে দেখা জরুরি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যেভাবে 'লিখিত অভিযোগ' পাওয়ার জন্য হাত গুটিয়ে বসে আছেন, তাও সীমাহীন বিস্ময়েরই জন্ম দেয়। মনে হয় যেন মনিরামপুরের কোথাও কেউ নেই! আমরা আশা করব, অবিলম্বে ইটভাটাটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। পোড়ামাটির ব্যবসায় পাঠদানকে বলী দেওয়ার অঘটনের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের জন্য কেবল আর্থিক দণ্ডই যথেষ্ট হতে পারে না। কারা এমন একটি স্পর্শকাতর জায়গায় জমি লিজ দিয়েছে, তাও দেখতে হবে। ইটভাটাটির অনুমোদিত কি-না, থাকলে কোন কর্মকর্তার অবহেলা কিংবা উপরিপ্রাপ্তি তার সঙ্গে জড়িত ছিল কর্তৃপক্ষ দেখবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। একই সঙ্গে এ ধরনের ঘটনায় সামাজিক প্রতিরোধের কথাটাও আমরা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। দোদাড়িয়া এলাকার বাসিন্দারা সোচ্চার থাকলে প্রশাসনিক ব্যবস্থার প্রয়োজন খুব বেশি হতো না। এই ইটভাটাই শেষ নয়। আগামী দিনে ওই এলাকার পরিবেশ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের ওপর যে আরও আঘাত আসবে না, তা হলফ করে বলা যায় না। আমরা আশা করব, সাধারণ নাগরিকরাই তখন সবার আগে প্রতিবাদী হয়ে উঠবেন। সমাজে কাউকে না কাউকে প্রথম প্রতিবাদ করতে হয়, তা দেখে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন অন্যরাও এগিয়ে আসে।

No comments

Powered by Blogger.