তামাক চাষ-ঔপনিবেশিক আমলের নীলচাষ by অভয় প্রকাশ চাকমা
তামাক চাষ করা হয় কৃষিজমিতে, এতে খাদ্যশস্য চাষের জমি কমে যায়। ফলে বেড়ে যায় খাদ্য ঘাটতি। এ ছাড়াও তামাকের ক্ষতিকর পোকা পাশের ক্ষেতের শাকসবজি ও ফলের বাগান ধ্বংস করে। সর্বোপরি ক্ষতি হচ্ছে জানমালের
ব্রিটিশ উপনিবেশের সময় এ দেশের কৃষকদের নীলচাষে বাধ্য করত ব্রিটিশরা।
ব্রিটিশ উপনিবেশের সময় এ দেশের কৃষকদের নীলচাষে বাধ্য করত ব্রিটিশরা।
নীলচাষের ফলে বাংলার কৃষকরা নিজেদের কৃষিজমিতে নীল ছাড়া খাদ্যশস্য উৎপাদন করতে পারত না। নীলকুঠিতে নিয়ে কৃষকদের নির্যাতন করত। সে শোষণ এখনও থামেনি। নিজেদের লাভের জন্য তারা নীলচাষের পরিবর্তে ক্ষতিকর তামাক চাষে বাধ্য করে চলেছে। বদলেছে বাধ্য করার কৌশল। অধিক মুনাফার লোভ দেখিয়ে বিদেশি কোম্পানিগুলো কৃষকদের খাদ্যশস্য চাষের পরিবর্তে গোল্ডলিফ চাষে উদ্বুদ্ধ করছে বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করে।
গত ২২ জুন বরাবরের মতো বিএটি বা ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি গাছের চারা বিতরণ কর্মসূচি উদ্বোধন করেছে। কোম্পানিটি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য চারা বিতরণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে থাকে বটে, কিন্তু তামাক চাষ করে দেশের পরিবেশ, মানুষের স্বাস্থ্য, কৃষিজমি ইত্যাদির ক্ষতি করে চলেছে প্রতিনিয়ত। আর এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে লাভের সামান্য অংশ খরচ করে বনায়নের মতো লোক দেখানো কার্যক্রম চালু করে থাকে। আর ঢাকঢোল পিটিয়ে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী এবং সচিবকে দিয়ে উদ্বোধন করে এ কর্মসূচি। কিন্তু উদ্বোধনের পর কিছু গাছের চারা নামসর্বস্ব কয়েকটি সংস্থাকে বিতরণ করেই খালাস। সেই চারা কোথায় রোপণ করা হয় তা আর জানা যায় না। সিগারেট তৈরিতে যে পরিমাণ কাঠ পোড়ানো হয় সে তুলনায় তাদের কার্যক্রমে কত গাছ লাগানো হয় তদন্ত করলে বোঝা যাবে। ক্রমহ্রাসমান কৃষিজমির দেশে চলছে ক্রমবর্ধমান তামাক চাষ। তামাকজনিত কারণে দেশের যে ক্ষতি হয়, তা থেকে তাদের দেশকে মুক্ত রাখতে আমাদের মতো গরিব দেশে তারা তামাক চাষ করছে। আর পরিবেশ রক্ষা করতে গাছ লাগানোর কথা বলছে। পরিবেশ রক্ষা করতে গাছ লাগানোর কথা বলছে, আর তামাক চাষ বৃদ্ধি করে দেশের পরিবেশ ধ্বংস করে দিচ্ছে।
তামাক মাটির গভীর থেকে খাদ্য শুষে নেওয়ায় আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায় মাটির উর্বরতা শক্তি। প্রতি হেক্টর তামাক পাতা শুকাতে কমপক্ষে পাঁচশ' মণ কাঠ পোড়ানো হয়। এই কাঠের মূল উৎস হচ্ছে সংরক্ষিত বন। এক তথ্যে জানা গেছে, এ বছর সারাদেশে ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। এতে বোঝা যায়, প্রতিবছর কী পরিমাণ বন ধ্বংস হচ্ছে শুধু তামাক চাষের কারণে। ১৯৯৯ সালে জিইটিএসটি জানিয়েছে, শুধু তামাক চাষের কারণে বাংলাদেশের ৩০ শতাংশ বন ধ্বংস হচ্ছে। বলাবাহুল্য, এরই মধ্যে তামাক চাষ বহুগুণ বেড়েছে। শুধু বন ধ্বংস নয়, কাঠ পোড়ানোর ফলে নির্গত হয় প্রচুর পরিমাণ কার্বন। তামাক চাষ করা হয় কৃষিজমিতে, এতে খাদ্যশস্য চাষের জমি কমে যায়। ফলে বেড়ে যায় খাদ্য ঘাটতি। এ ছাড়াও তামাকের ক্ষতিকর পোকা পাশের ক্ষেতের শাকসবজি ও ফলের বাগান ধ্বংস করে। সর্বোপরি ক্ষতি হচ্ছে জানমালের। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, তামাকের কারণে দেশে প্রতিবছর অর্ধলক্ষাধিক লোক মারা যায় এবং পঙ্গু হয় প্রায় চার লাখ লোক। সরকার একদিকে পরিবেশ রক্ষা করতে বনায়নের গুরুত্ব দিচ্ছে, অপরদিকে পরিবেশ ও বন ধ্বংসকারী সিগারেট কোম্পানিগুলো থেকে কর আদায় করছে। গত বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসে আয়োজিত এক সেমিনারে এক সংস্থা জানিয়েছে, সিগারেট কোম্পানিগুলো সরকারকে প্রতিবছর কর দিচ্ছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা, আর শুধু তামাকজনিত রোগের কারণে বাংলাদেশে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা; বন ও কৃষিজমি তো ধ্বংস হচ্ছেই। অনেক সংসদ সদস্য সিগারেট কোম্পানির সঙ্গে জড়িত থাকায় বাজেটে বিড়ি-সিগারেটের ওপর কর আরোপের বিষয়ে বিরোধিতা করেছেন।
বিশ্বের অনেক দেশে ধূমপানবিরোধী প্রচারণার জন্য বাজেটে বর্ধিত কর ধার্য করা হয়। এই অর্থ দিয়ে জনগণকে ধূমপানমুক্ত রাখতে সরকারিভাবে প্রচারণা চালানো হয়। আমাদের দেশে এ ধরনের কর ধার্য না করায় তামাকের বিরুদ্ধে সরকারিভাবে প্রচারণা চালানো হয় না। ফলে ধূমপানের ক্ষতি সম্পর্কে জনগণকে জোরালোভাবে অবহিত করা যায় না। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ধূমপায়ীর সংখ্যা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসে জানিয়েছে, এফটিসিতে (ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অব টোব্যাকো কন্ট্রোল) এ পর্যন্ত ইইউ এবং বাংলাদেশসহ ১৭২টি দেশ স্বাক্ষর করেছে। এ চুক্তির আওতায় জোট সরকারের আমলে 'ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫' পাস করা হয়েছিল। কিন্তু তখন যেমন এ আইনের যথাযথ প্রয়োগ পরিলক্ষিত হয়নি, এখনও হচ্ছে না। ধূমপানকে 'সভ্যতার ইতিহাসে জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি' বলে চিহ্নিত করেছে ডবিল্গউএইচও। পরিবেশ বাঁচাতে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী কৃষকদের তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করার বিধান রয়েছে। পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্য ধ্বংসকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে নেওয়া বনায়ন কর্মসূচি মন্ত্রী এবং সচিবকে দিয়ে উদ্বোধন করানো হচ্ছে; এটা তামাক চাষ ও ধূমপানকেই উৎসাহিত করছে।
বিদেশি সাহেবদের নিঃসরিত কার্বন মিটিগেশনের জন্য খাদ্যশস্য চাষ না করে হলেও আমাদের গাছ লাগাতে হবে এবং প্রয়োজনের সময়ও কাটতে পারব না। তেমনি তাদের মুনাফা লাভের জন্য দেশের পরিবেশ ও কৃষিজমি ধ্বংস করে হলেও তামাক চাষ করতে হবে। নীলকর সাহেবরা জোরপূর্বক কৃষকদের নীলচাষে নিয়োগ করত। আর স্বাধীন দেশে টোব্যাকো সাহেবরা এখন সুকৌশলে কৃষকদের তামাক চাষে জড়িত করছে। শোষণের পদ্ধতি ও ক্ষেত্র পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু শোষণ বেড়েছে ভয়াবহভাবে; মহামারীরূপে প্রাদুর্ভাব ঘটছে তামাকজনিত ক্ষতির। এ প্রাদুর্ভাব থেকে যে সহজে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে না, তা সহজে বোধগম্য।
গত ২২ জুন বরাবরের মতো বিএটি বা ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি গাছের চারা বিতরণ কর্মসূচি উদ্বোধন করেছে। কোম্পানিটি জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য চারা বিতরণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে থাকে বটে, কিন্তু তামাক চাষ করে দেশের পরিবেশ, মানুষের স্বাস্থ্য, কৃষিজমি ইত্যাদির ক্ষতি করে চলেছে প্রতিনিয়ত। আর এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে লাভের সামান্য অংশ খরচ করে বনায়নের মতো লোক দেখানো কার্যক্রম চালু করে থাকে। আর ঢাকঢোল পিটিয়ে পরিবেশ ও বনমন্ত্রী এবং সচিবকে দিয়ে উদ্বোধন করে এ কর্মসূচি। কিন্তু উদ্বোধনের পর কিছু গাছের চারা নামসর্বস্ব কয়েকটি সংস্থাকে বিতরণ করেই খালাস। সেই চারা কোথায় রোপণ করা হয় তা আর জানা যায় না। সিগারেট তৈরিতে যে পরিমাণ কাঠ পোড়ানো হয় সে তুলনায় তাদের কার্যক্রমে কত গাছ লাগানো হয় তদন্ত করলে বোঝা যাবে। ক্রমহ্রাসমান কৃষিজমির দেশে চলছে ক্রমবর্ধমান তামাক চাষ। তামাকজনিত কারণে দেশের যে ক্ষতি হয়, তা থেকে তাদের দেশকে মুক্ত রাখতে আমাদের মতো গরিব দেশে তারা তামাক চাষ করছে। আর পরিবেশ রক্ষা করতে গাছ লাগানোর কথা বলছে। পরিবেশ রক্ষা করতে গাছ লাগানোর কথা বলছে, আর তামাক চাষ বৃদ্ধি করে দেশের পরিবেশ ধ্বংস করে দিচ্ছে।
তামাক মাটির গভীর থেকে খাদ্য শুষে নেওয়ায় আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায় মাটির উর্বরতা শক্তি। প্রতি হেক্টর তামাক পাতা শুকাতে কমপক্ষে পাঁচশ' মণ কাঠ পোড়ানো হয়। এই কাঠের মূল উৎস হচ্ছে সংরক্ষিত বন। এক তথ্যে জানা গেছে, এ বছর সারাদেশে ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। এতে বোঝা যায়, প্রতিবছর কী পরিমাণ বন ধ্বংস হচ্ছে শুধু তামাক চাষের কারণে। ১৯৯৯ সালে জিইটিএসটি জানিয়েছে, শুধু তামাক চাষের কারণে বাংলাদেশের ৩০ শতাংশ বন ধ্বংস হচ্ছে। বলাবাহুল্য, এরই মধ্যে তামাক চাষ বহুগুণ বেড়েছে। শুধু বন ধ্বংস নয়, কাঠ পোড়ানোর ফলে নির্গত হয় প্রচুর পরিমাণ কার্বন। তামাক চাষ করা হয় কৃষিজমিতে, এতে খাদ্যশস্য চাষের জমি কমে যায়। ফলে বেড়ে যায় খাদ্য ঘাটতি। এ ছাড়াও তামাকের ক্ষতিকর পোকা পাশের ক্ষেতের শাকসবজি ও ফলের বাগান ধ্বংস করে। সর্বোপরি ক্ষতি হচ্ছে জানমালের। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, তামাকের কারণে দেশে প্রতিবছর অর্ধলক্ষাধিক লোক মারা যায় এবং পঙ্গু হয় প্রায় চার লাখ লোক। সরকার একদিকে পরিবেশ রক্ষা করতে বনায়নের গুরুত্ব দিচ্ছে, অপরদিকে পরিবেশ ও বন ধ্বংসকারী সিগারেট কোম্পানিগুলো থেকে কর আদায় করছে। গত বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসে আয়োজিত এক সেমিনারে এক সংস্থা জানিয়েছে, সিগারেট কোম্পানিগুলো সরকারকে প্রতিবছর কর দিচ্ছে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা, আর শুধু তামাকজনিত রোগের কারণে বাংলাদেশে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে পাঁচ হাজার কোটি টাকা; বন ও কৃষিজমি তো ধ্বংস হচ্ছেই। অনেক সংসদ সদস্য সিগারেট কোম্পানির সঙ্গে জড়িত থাকায় বাজেটে বিড়ি-সিগারেটের ওপর কর আরোপের বিষয়ে বিরোধিতা করেছেন।
বিশ্বের অনেক দেশে ধূমপানবিরোধী প্রচারণার জন্য বাজেটে বর্ধিত কর ধার্য করা হয়। এই অর্থ দিয়ে জনগণকে ধূমপানমুক্ত রাখতে সরকারিভাবে প্রচারণা চালানো হয়। আমাদের দেশে এ ধরনের কর ধার্য না করায় তামাকের বিরুদ্ধে সরকারিভাবে প্রচারণা চালানো হয় না। ফলে ধূমপানের ক্ষতি সম্পর্কে জনগণকে জোরালোভাবে অবহিত করা যায় না। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ধূমপায়ীর সংখ্যা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গত ৩১ মে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসে জানিয়েছে, এফটিসিতে (ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অব টোব্যাকো কন্ট্রোল) এ পর্যন্ত ইইউ এবং বাংলাদেশসহ ১৭২টি দেশ স্বাক্ষর করেছে। এ চুক্তির আওতায় জোট সরকারের আমলে 'ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫' পাস করা হয়েছিল। কিন্তু তখন যেমন এ আইনের যথাযথ প্রয়োগ পরিলক্ষিত হয়নি, এখনও হচ্ছে না। ধূমপানকে 'সভ্যতার ইতিহাসে জনস্বাস্থ্যের জন্য বড় হুমকি' বলে চিহ্নিত করেছে ডবিল্গউএইচও। পরিবেশ বাঁচাতে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী কৃষকদের তামাক চাষে নিরুৎসাহিত করার বিধান রয়েছে। পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্য ধ্বংসকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে নেওয়া বনায়ন কর্মসূচি মন্ত্রী এবং সচিবকে দিয়ে উদ্বোধন করানো হচ্ছে; এটা তামাক চাষ ও ধূমপানকেই উৎসাহিত করছে।
বিদেশি সাহেবদের নিঃসরিত কার্বন মিটিগেশনের জন্য খাদ্যশস্য চাষ না করে হলেও আমাদের গাছ লাগাতে হবে এবং প্রয়োজনের সময়ও কাটতে পারব না। তেমনি তাদের মুনাফা লাভের জন্য দেশের পরিবেশ ও কৃষিজমি ধ্বংস করে হলেও তামাক চাষ করতে হবে। নীলকর সাহেবরা জোরপূর্বক কৃষকদের নীলচাষে নিয়োগ করত। আর স্বাধীন দেশে টোব্যাকো সাহেবরা এখন সুকৌশলে কৃষকদের তামাক চাষে জড়িত করছে। শোষণের পদ্ধতি ও ক্ষেত্র পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু শোষণ বেড়েছে ভয়াবহভাবে; মহামারীরূপে প্রাদুর্ভাব ঘটছে তামাকজনিত ক্ষতির। এ প্রাদুর্ভাব থেকে যে সহজে পরিত্রাণ পাওয়া যাবে না, তা সহজে বোধগম্য।
অভয় প্রকাশ চাকমা : কলাম লেখক
No comments