গুলশানে নারী উদ্যোক্তা খুন-গাড়িচালক গ্রেপ্তার গয়না ও টাকার লোভেই হত্যা

রাজধানীর গুলশানে কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালক ফাহিমা সুলতানাকে হত্যার অভিযোগে তাঁর গাড়িচালক মিন্টু প্যাদাকে গতকাল বুধবার গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। ফাহিমার বাসা থেকে লুট করা প্রায় ৬০ ভরি সোনার গহনা উদ্ধার করা হয়েছে মিন্টুর কাছ থেকে। ফাহিমা সুলতানা শিল্পপতি এম এ মুবিন খানের স্ত্রী।


গ্রেপ্তার হওয়ার পর মিন্টু র‌্যাব আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বীকার করেছেন, গহনা ও টাকার লোভে তিনিই খুন করেছেন ফাহিমাকে।
মিন্টু জানান, হত্যার সময় ফাহিমা তাঁকে বলেছিলেন, 'আমাকে মেরো না, সব অলঙ্কার নিয়ে যাও'। মিন্টু বলেন 'এরপরও ফাহিমা জীবন বাঁচানোর চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে বাথরুমে আশ্রয় নিলে সেখানে গিয়ে আমি তাঁকে ছুরিকাঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করি।'
মিন্টু সাংবাদিকদের বলেন, 'ম্যাডামের (ফাহিমা) আলমারি ভরা স্বর্ণালংকার। নগদ টাকাও অনেক। সেসব কিভাবে নিজের করা যায়, দীর্ঘদিন ধরে তার পরিকল্পনা করি।' তিনি জানান, চার মাস আগে এম এ মুবিনের বাসার গাড়িচালক হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। এক সপ্তাহ আগে বাড্ডা নতুন বাজার থেকে ১৫০ টাকা দিয়ে একটি ধারালো ছোরা কিনে নিজের কাছে রাখেন। গত মঙ্গলবার সকালে ফাহিমার দুই মেয়েকে উত্তরার স্কলাস্টিকা স্কুলে নামিয়ে দিয়ে গুলশানের বাসায় গ্যারেজে গাড়ি রেখে পঞ্চম তলার ফ্ল্যাটে ওঠেন মিন্টু। বাসায় ঢুকে প্রথমেই গৃহকর্মী বীণাকে (১১) হত্যার উদ্দেশ্যে ছুরিকাঘাত করেন। বীণার চিৎকার শুনে ফাহিমা সুলতানা এগিয়ে এলে তাঁর পেটেও ছুরিকাঘাত করেন মিন্টু। এ সময় ফহিমা জীবন বাঁচাতে বাথরুমে গেলে সেখানে গিয়ে বুকে ছুারকাঘাত করেন মিন্টু। তাঁরা মারা গেছেন ভেবে মিন্টু দুজনকে বাথরুমে রেখে নিজের রক্তমাখা কাপড় পরিবর্তন করেন। এরপর ফাহিমার স্বামীর কাপড় পরে স্বর্ণালংকার ও টাকা নিয়ে পালিয়ে যান তিনি।
র‌্যাবের মিডিয়া ও লিগ্যাল উইংয়ের পরিচালক এম সোহায়েল কালের কণ্ঠকে বলেন, গাড়িচালক মিন্টু প্যাদাকে (৪৫) গতকাল দুপুর ২টার দিকে কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিকেলে র‌্যাব কার্যালয়ে মিন্টুকে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হয়। এর আগে র‌্যাব দপ্তরে গিয়ে মিন্টুকে শনাক্ত করেন মুবিন খান ও তার স্কুলপড়ুয়া দুই মেয়ে। মিন্টুর কাছ থেকে প্রায় ৬০ ভরি অলংকার পাওয়া গেছে। বাকি গহনা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। মন্টুর বক্তব্য যাচাই করা হচ্ছে।
র‌্যাব কর্মকর্তা সোহায়েল জানান, মিন্টু হত্যার পরিকল্পনা আগেই করেছিলেন। এই জন্য তিনি আগে থেকে বাসা ভাড়া নেন। তাঁর হঠাৎ করে বাসা ভাড়া নেওয়ার মধ্যে অস্বাভাবিক মনে হয়। এই সূত্র ধরেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মিন্টু র‌্যাবকে জানান, হত্যাকাণ্ডের পর তিনি স্ত্রীকে ফোন করে শরীয়তপুর থেকে ঢাকায় আসতে বলেন। পরে ফোন করে জানতে পারেন তাঁর স্ত্রী মাওয়া ঘাটে এসেছেন। এরপর সেখানে দুজনের সাক্ষাৎ হলে তাঁরা কামরাঙ্গীরচর এলাকায় গিয়ে একটি বাসায় ওঠেন। র‌্যাব ১-এর কম্পানি কমান্ডার মেজর মোস্তাক আহমেদ জানান, মিন্টু একাই ওই হত্যাকাণ্ড ঘটানোর কথা জানিয়েছেন। তাঁর কাছে নগদ কোনো টাকা পাওয়া যায়নি। অভিযানের সময় ওই বাসায় মিন্টুর স্ত্রীকে পাওয়া যায়নি।
পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আহত গৃহকর্মী বীণা ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গতকাল সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ফাহিমার লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়। এরপর দুপুরে গুলশানে আজাদ মসজিদে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দ্বিতীয় জানাজা ও দাফনের উদ্দেশ্যে মরদেহ নেওয়া হয় মুবিন খানের গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজারের খারপাড়ায়। সেখানে রাতে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করার কথা জানান স্বজনরা।
এদিকে গতকাল সকালে গুলশানে ফাহিমার বাসায় গিয়ে দেখা যায় শোকের মাতম। তাঁর তিন বছরের ছেলে নাফিম খান খুঁজে ফিরছিল তার মমতাময়ী মাকে। 'আম্মুকে এনে দাও, আমি আম্মুর কাছে যাব, আম্মু-আম্মু।' বলে ভাঙা গলায় কাঁদছিল অবুঝ নাফিম খান।
গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গুলশানের ১০১ নম্বর সড়কের ৭ নম্বর বাড়ির (সান ক্ল্যাসিক) সি-৫ ফ্ল্যাটে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ফাহিমা সুলতানা ইয়েনকে। ঘটনায় মঙ্গলবার রাতে গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন তাঁর স্বামী মুবিন খান। বাদী এজাহারে বলেন, তাঁর স্ত্রীকে হত্যা করে ১৫০ ভরি স্বর্ণালংকার ও দুই লাখ টাকা নিয়ে মিন্টু পালিয়ে যান।

No comments

Powered by Blogger.