অবৈধ হেফাজতে সাত শিশু-সাবেক ডিআইজি ও তাঁর স্ত্রীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

পাচারের উদ্দেশ্যে অবৈধভাবে নিজেদের হেফাজতে সাত শিশু রাখার অপরাধে পুলিশের সাবেক উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আনিসুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী আনোয়ারা রহমানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁদের পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।


মামলার প্রায় ছয় বছর পর গতকাল বুধবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪-এর বিচারক আরিফুর রহমান রায় ঘোষণা করেন। ২০০৬ সালে ওই দম্পতির হেফাজতে থাকা শিশুদের নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে দেশব্যাপী আলোড়ন হয়। হেফাজতে থাকা সব কটি শিশুকেই তাঁরা নিজেদের সন্তান বলে দাবি করেন। এ ঘটনায় শিশু পাচার ও অবৈধভাবে রাখার অভিযোগে মানবাধিকার কর্মী এলিনা খান রাজধানীর বাড্ডা থানায় মামলা করেন।
রায় ঘোষণার সময় জামিনে থাকা আসামি আনোয়ারা রহমান আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালত তাঁর জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। অপর আসামি আনিসুর রহমান জামিনে পলাতক আছেন। রায়ে বলা হয়, আসামি আনিসুর রহমান গ্রেপ্তার বা আত্মসমর্পণের পর থেকে তাঁর সাজা কার্যকর শুরু হবে।
রায়ে বিচারক উল্লেখ করেন, আসামিদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০৩-এর ৬(১) ধারায় অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় দুজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হলো।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার সাবেক নির্বাহী পরিচালক এলিনা খান বলেন, ‘রায়ে সত্যের জয় হয়েছে, আমরা সন্তুষ্ট। সংবাদমাধ্যম ও সংগঠনের বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণে এই রায় পাওয়া সম্ভব হয়েছে।’ তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী কাজী সাজাওয়ার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করা হবে।
মামলার বিবরণে বলা হয়, ২০০৬ সালের ২ জুন রাজধানীর বাড্ডা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। এতে অভিযোগ করা হয়, বেআইনি উদ্দেশ্যে শিশুদের বিদেশে পাচার বা ক্রয়বিক্রয়ের জন্য আটক রাখা হয়েছে। ওই বছরের ১০ নভেম্বর গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা হুমায়ুন কবীর বিষয়টি তদন্ত করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেন।
এতে বলা হয়, ঘটনাটি নিছক একটি তথ্যগত ভুল। বাদী এলিনা খান তা প্রত্যাখ্যান করে নারাজি আবেদন করলে ২০০৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি মামলাটি আমলে নেন আদালত। ওই বছরের ৮ জুন আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। এ ছাড়া হাইকোর্টের নির্দেশে শিশুদের ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়।
পরে উদ্ধার হওয়া শিশুদের জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির আশ্রয়কেন্দ্রের জিম্মায় দেওয়ার আদেশ দেন আদালত। বর্তমানে ওই শিশুরা সমিতির আগারগাঁওয়ের আশ্রয়কেন্দ্র ‘প্রশান্তি’তে রয়েছে। তারা হলো জান্নাতুল মারিয়াম, জান্নাতুন আনিসা, আয়মান রহমান, নাফিস আকন, আনাস আকন ও দায়ান রহমান। এদের মধ্যে জান্নাতুল মারিয়াম নাজিফা নামের এক শিশু মারা গেছে।

No comments

Powered by Blogger.