সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত প্রয়োজন-পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি

দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন স্থগিত করার পর এটাই প্রত্যাশা ছিল যে সরকার এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু সরকারের কর্মকাণ্ডে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না । এ অবস্থায় পদ্মা সেতু নিয়ে তোলা দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে আবার মুখ খুলেছে বিশ্বব্যাংক।


অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছে সরকারকে। বিশ্বব্যাংককে আশ্বস্ত করতে পারলে অর্থায়নের ওপর স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হতে পারে বলেও সংশ্লিষ্ট মহল মনে করেন।
গত সেপ্টেম্বরে সরকারের কাছে পদ্মা সেতু নিয়ে ‘দুর্নীতির গুরুতর তথ্য’ তুলে ধরেছিল বিশ্বব্যাংক। সেখানে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও তাঁর ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান সাকোর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়। মন্ত্রী ও সরকারের তরফ থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছে শুরু থেকেই। তবে মন্ত্রীকে শেষ পর্যন্ত যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে অন্য মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের অভিযোগের পর ব্যবস্থা বলতে এটুকুই নিয়েছে সরকার। দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক জানিয়েছে, তাদের তদন্তে দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।
সরকারের কাছে দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরার মাস সাতেক পর গত মঙ্গলবার এ ব্যাপারে নতুন করে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে। দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দেওয়ার পাশাপাশি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ সরকারের কাছে পদ্মা সেতু প্রকল্পে গুরুতর দুর্নীতির তথ্য ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে দেওয়া শুরু করে এবং বিশ্বব্যাংক ‘নিজস্ব তদন্তে’ আস্থা রাখে। ধারণা করা যায়, বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নিয়ে তাদের তোলা দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে নিশ্চিত। পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে বিশ্বব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনটি করা হয়েছিল বিভিন্নজনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে। সেখানে বলা হয়েছে যে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ও সাকোর কর্মকর্তারা মিলে এমন একটি পরিস্থিতির সৃষ্টি করেন যে সাকো হলো পদ্মা সেতুর কাজ পাইয়ে দেওয়ার ব্যাপারে এক ধরনের নীরব প্রতিনিধি। কোনো কাজ পেতে হলে সাকোকে টাকা দিতে হবে। যোগাযোগমন্ত্রী ও তাঁর প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এ ধরনের গুরুতর অভিযোগ ওঠার পর এ নিয়ে বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
আমরা মনে করি, বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির যেসব তথ্য তুলে ধরেছে তার একটি যথাযথ ও গ্রহণযোগ্য তদন্ত জরুরি এবং সে অনুযায়ী দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিকল্প নেই। দেশ ও জনগণের স্বার্থ সমুন্নত রেখে বিকল্প সূত্র থেকে অর্থ জোগাড় করে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হলে কারও আপত্তি থাকবে না। কিন্তু বিশ্বব্যাংক যেসব দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে, সরকারের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির স্বার্থেই তার সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত হতে হবে। সরকার দুর্নীতিবাজদের রক্ষার চেষ্টায় নিজেদের নিয়োজিত রাখবে, না ‘স্বপ্নের’ পদ্মা সেতু নির্মাণের সব বাধা দূর করতে এগিয়ে আসবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

No comments

Powered by Blogger.