সিএনজির অপব্যবহার বন্ধ করে শিল্পে গ্যাস দিন by আবুল কাসেম হায়দার
বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি গ্যাস। এ দেশে গ্যাস আবিষ্কার, এর ব্যবহার নানাভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে পরিকল্পনার অভাবে গ্যাসের ব্যবহার বৈজ্ঞানিক উপায়ে হচ্ছে না। অনুৎপাদনশীল খাতে গ্যাসের ব্যবহার হলে দেশে সত্যিকার অর্থনৈতিক বিকাশ আশানুরূপ হয়নি।
বর্তমানে ঘর-গৃহস্থালিতে গ্যাসের সংকট চলছে। রান্নাবান্না পর্যন্ত গ্যাসের অভাবে অনেক বাড়িতে বন্ধ হয়ে আসছে। গ্যাস সরবরাহ-স্বল্পতার কারণে দেশে শিল্প-কারখানার উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে।
গ্যাস সংকটের কারণে দেশে বিভিন্ন শিল্প-কারখানা ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। গ্যাস স্বল্পতার কারণে শিল্পে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে বস্ত্র খাতের ডায়িং, ফিনিশিং কারখানাগুলোতে কাপড় উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। গ্যাসের অভাবে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রায় ৬০০ মেগাওয়াট কম হচ্ছে। দেশে সিএনজি স্টেশন বেড়ে চলেছে। ১৯৮৩ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সিএনজি স্টেশন ছিল মাত্র সাতটি। ওই বছরগুলোতে মাত্র এক হাজার ৩৭৯টি যানবাহন সিএনজিতে চলত। ২০০১ সালে মাত্র দুটি সিএনজি স্টেশন স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়। আর এখন সিএনজি স্টেশনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৮৪টি। তা ছাড়া আরো ৪০টি সিএনজি স্টেশন স্থাপনের কাজ চলছে। ২০০৩ সাল থেকে সিএনজি স্টেশনের পাশাপাশি গাড়িকে সিএনজিতে রূপান্তরের সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে। ২০০০ সাল পর্যন্ত সিএনজি রূপান্তরিত যানবাহনের সংখ্যা ছিল মাত্র এক হাজার ৩৭৯টি। আর এখন এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই লাখের বেশি। বিগত কয়েক বছর গড়ে প্রায় ৩০ থেকে ২৫ হাজার গাড়ি সিএনজিতে রূপান্তর করা হয়েছে। ২০০৪ সালে গাড়ি সিএনজি রূপান্তর হয় ১০ হাজার ৫২৫টি, ২০০৫-০৬ সালে ৩৮ হাজার ৩৫৩টি, ২০০৫-০৬ সালে ৩৮ হাজার ৩৫৩টি, ২০০৬-০৭ সালে ৩৮টি ৪৫৪টি, ২০০৭-০৮ সালে ২৪ হাজার ৪২টি, ২০০৮-০৯ সালে ২৬ হাজার ১৪১টি গাড়ি সিএনজিতে রূপান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে ঢাকায় ১৮৫টি সিএনজি স্টেশন, গাজীপুরে ৭০টি, কুমিলায় ৬০, নারায়ণগঞ্জে ২৭, চট্টগ্রামে ৬০, সিলেটে ৩২, ফেনীতে ১৩টি, বগুড়ায় ১৯টি, পাবনায় ছয়টি সিএনজি স্টেশন রয়েছে।
দেশে প্রতিদিন গড়ে ১৯০ থেকে ২০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে। অন্যদিকে গ্যাসের সর্বমোট চাহিদা রয়েছে ২৩০ কোটি ঘনফুট। ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ৪০ কোটি ঘনফুট। প্রতিবছর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। আমাদের দেশের মোট উৎপাদিত গ্যাসের বেশির ভাগ ব্যবহার করা হচ্ছে তিতাস গ্যাস এলাকায়। উৎপাদিত ১৯০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের মধ্যে তিতাস গ্যাস এলাকা ব্যবহার হয় ১৬৫ কোটি ঘনফুট। বর্তমানে তিতাস গ্যাস কম্পানি থেকে গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে ১৪৪ কোটি ঘনফুট, ঘাটতি থাকছে ২১০ কোটি ঘনফুট। আবাসিক ক্ষেত্রে গ্যাসের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে গ্যাসের ঘাটতি বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে মোট উৎপাদিত গ্যাসের ১৮ শতাংশ ব্যবহার হয় আবাসিক কাজে। অন্যদিকে গ্যাসের সরবরাহ কম হওয়ায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদনও বেশ হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে উৎপাদিত গ্যাসের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত হয় ৭৮ কোটি ঘনফুট, সার কারখানায় ২০ কোটি ঘনফুট, ক্যাপটি পাওয়ার প্লান্ট ব্যবহার হয় ২৫ থেকে ২৮ কোটি ঘনফুট, শিল্প খাতে ব্যবহৃত হয় ৩০ থেকে ৩২ ঘনফুট, সিএনজি খাতে ১২ কোটি ঘনফুট, আবাসিক খাতে ২০ থেকে ২২ কোটি ঘনফুট, বাণিজ্যিক ও অন্যান্য খাতে গ্যাস ব্যবহার হয় ২৫ থেকে ২৬ কোটি ঘনফুট।
এখানে একটি বিশেষ ঘটনা বলা প্রয়োজন, তা হলো ২০০৯ সালে শুরুতে জ্বালানি বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা। ওই কমিটির অনুৎপাদনশীল খাতে গ্যাসের ব্যবহার কমানোর সুপারিশ করে কমিটি বলেন, উৎপাদনশীল খাতে গ্যাসের ব্যবহার বেশি করলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। সার ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের ব্যবহার অর্ধেকে নিয়ে আসা উচিত। তবে এ ক্ষেত্রে কমিটি ঠিকমতো পরামর্শ রাখেনি বলে উল্লেখ করেছে। কমিটির প্রতিবেদনে মোট উৎপাদনের ৫০ শতাংশ সার ও বিদ্যুতে ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। ৫০ শতাংশের ৮০ শতাংশ বিদ্যুৎ এবং বাকি ২০ শতাংশ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে অন্য গ্রাহকদের। শিল্প খাতকে বেশ গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া আবাসিক, বাণিজ্যিক, সিএনজি খাতকে সব খাতের পরে স্থান দিয়েছে। কমিটি গ্রাহক বিবেচনায় গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের কথা বলেছে। গ্যাসের সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য আবাসিক ও সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) দাম বাড়ানো দরকার বলে কমিটি মনে করে বক্তব্য দিয়েছে। কিন্তু কমিটি ভুলে গিয়েছে যে এ দেশে শিল্প-কারখানা স্থাপন ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নতি সম্ভব নয়। আজ গ্যাসের অভাবে শিল্প-কারখানার উৎপাদন ৫০ শতাংশ নেমে এসেছে। অনেক শিল্প-কারখানা গ্যাস, বিদ্যুতের অভাবে বন্ধ হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার শ্রমিক চাকরি হারাচ্ছে। বহু ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ঋণখেলাপি হয়ে পড়ছেন। বিষয়টি খুবই জটিল। তাই সরকারকে গ্যাসের ব্যবহার সম্পর্কে দ্রুত ও কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। ১. গ্যাস দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। গ্যাসের সরবরাহ হ্রাস পেয়েছে। তাই সিএনজিতে গ্যাসের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। নতুন করে আর কোনো সিএনজি স্টেশন স্থাপন করা যাবে না। যদি কোনো বিনিয়োগকারী সিএনজি ব্যবসা করতে না চান তখন পুরনো সিএনজি স্টেশন মালিকদের ব্যাংকের ঋণ মওকুফ করে দিয়ে শুধু মূলধন ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। গাড়িতে পেট্রল ও ডিজেল ব্যবহার করতে হবে। এই দুটি আমদানি করে ব্যবহার করা যাবে। গ্যাস শিল্পের জন্য সহজে আমদানি করা যাবে না। তাই গ্যাসের ব্যবহার শুধু শিল্পে ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ২. শুধু ট্যাঙ্ িক্যাব সিএনজিতে চলতে পারে। সাধারণ জনগণের যাতায়াতের সুবিধার জন্য এ ব্যবস্থা রাখা যায়। মালয়েশিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শুধু ট্যাঙ্ িক্যাব সিএনজিতে ব্যবহার করা হয়। প্রাইভেট গাড়ি, বাস, ট্রাক সবই পেট্রল বা ডিজেলে চলছে। ৩. অবিলম্বে জরুরি ভিত্তিতে পেট্রোবাংলাকে সক্রিয় করতে হবে। বিদেশে বাংলাদেশি দক্ষ প্রকৌশলীদের দেশে ফেরত এনে পেট্রোবাংলাকে কার্যকর করা যাবে। এখন দরকার সক্রিয় উদ্যোগের। এ কাজটি সরকারকে করতে হবে। ৪. নতুন নতুন কূপ খননের কাজ দ্রুত শুরু করতে হবে। গ্যাস উত্তোলন করে জাতীয় গ্যাস লাইনে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। সব বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা জাতির সামনে সরকারকে পেশ করতে হবে। ৫. বাংলাদেশে গ্যাস বিভাগে এখন পেট্রোবাংলার অধীনে কম্পানিগুলোতে দুর্নীতির বড় আখড়া। টাকা ছাড়া, ঘুষ ছাড়া এসব বিভাগের কেউ কিছুই বোঝেন না। তাই ঘুষের মাত্রা অধিক হওয়ায় শিল্পে ব্যবহৃত গ্রাহকদের পণ্য উৎপাদন খরচও অধিক। আন্তর্জাতিক বাজারে অন্যান্য দেশের পণ্যের সঙ্গে আমরা মূল্যে টিকে থাকতে পারি না। তাই প্রয়োজন দুর্নীতিমুক্ত ঘুষমুক্ত গ্যাস বিভাগ। এটুকু সফল করতে সরকারকে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সরকারের উঁচু মহল থেকে দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র গঠনে কার্যকর ও বাস্তব পদক্ষেপ জাতি নির্বাচনী ওয়াদা অনুযায়ী আশা করে।
লেখক : সাবেক সহসভাপতি, এফবিসিসিআই ও প্রতিষ্ঠাতা-ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি।
গ্যাস সংকটের কারণে দেশে বিভিন্ন শিল্প-কারখানা ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। গ্যাস স্বল্পতার কারণে শিল্পে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে বস্ত্র খাতের ডায়িং, ফিনিশিং কারখানাগুলোতে কাপড় উৎপাদন প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। গ্যাসের অভাবে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রায় ৬০০ মেগাওয়াট কম হচ্ছে। দেশে সিএনজি স্টেশন বেড়ে চলেছে। ১৯৮৩ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সিএনজি স্টেশন ছিল মাত্র সাতটি। ওই বছরগুলোতে মাত্র এক হাজার ৩৭৯টি যানবাহন সিএনজিতে চলত। ২০০১ সালে মাত্র দুটি সিএনজি স্টেশন স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হয়। আর এখন সিএনজি স্টেশনের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৮৪টি। তা ছাড়া আরো ৪০টি সিএনজি স্টেশন স্থাপনের কাজ চলছে। ২০০৩ সাল থেকে সিএনজি স্টেশনের পাশাপাশি গাড়িকে সিএনজিতে রূপান্তরের সংখ্যাও পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে। ২০০০ সাল পর্যন্ত সিএনজি রূপান্তরিত যানবাহনের সংখ্যা ছিল মাত্র এক হাজার ৩৭৯টি। আর এখন এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই লাখের বেশি। বিগত কয়েক বছর গড়ে প্রায় ৩০ থেকে ২৫ হাজার গাড়ি সিএনজিতে রূপান্তর করা হয়েছে। ২০০৪ সালে গাড়ি সিএনজি রূপান্তর হয় ১০ হাজার ৫২৫টি, ২০০৫-০৬ সালে ৩৮ হাজার ৩৫৩টি, ২০০৫-০৬ সালে ৩৮ হাজার ৩৫৩টি, ২০০৬-০৭ সালে ৩৮টি ৪৫৪টি, ২০০৭-০৮ সালে ২৪ হাজার ৪২টি, ২০০৮-০৯ সালে ২৬ হাজার ১৪১টি গাড়ি সিএনজিতে রূপান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে ঢাকায় ১৮৫টি সিএনজি স্টেশন, গাজীপুরে ৭০টি, কুমিলায় ৬০, নারায়ণগঞ্জে ২৭, চট্টগ্রামে ৬০, সিলেটে ৩২, ফেনীতে ১৩টি, বগুড়ায় ১৯টি, পাবনায় ছয়টি সিএনজি স্টেশন রয়েছে।
দেশে প্রতিদিন গড়ে ১৯০ থেকে ২০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে। অন্যদিকে গ্যাসের সর্বমোট চাহিদা রয়েছে ২৩০ কোটি ঘনফুট। ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ৪০ কোটি ঘনফুট। প্রতিবছর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। আমাদের দেশের মোট উৎপাদিত গ্যাসের বেশির ভাগ ব্যবহার করা হচ্ছে তিতাস গ্যাস এলাকায়। উৎপাদিত ১৯০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের মধ্যে তিতাস গ্যাস এলাকা ব্যবহার হয় ১৬৫ কোটি ঘনফুট। বর্তমানে তিতাস গ্যাস কম্পানি থেকে গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে ১৪৪ কোটি ঘনফুট, ঘাটতি থাকছে ২১০ কোটি ঘনফুট। আবাসিক ক্ষেত্রে গ্যাসের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে গ্যাসের ঘাটতি বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে মোট উৎপাদিত গ্যাসের ১৮ শতাংশ ব্যবহার হয় আবাসিক কাজে। অন্যদিকে গ্যাসের সরবরাহ কম হওয়ায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদনও বেশ হ্রাস পেয়েছে। বর্তমানে উৎপাদিত গ্যাসের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত হয় ৭৮ কোটি ঘনফুট, সার কারখানায় ২০ কোটি ঘনফুট, ক্যাপটি পাওয়ার প্লান্ট ব্যবহার হয় ২৫ থেকে ২৮ কোটি ঘনফুট, শিল্প খাতে ব্যবহৃত হয় ৩০ থেকে ৩২ ঘনফুট, সিএনজি খাতে ১২ কোটি ঘনফুট, আবাসিক খাতে ২০ থেকে ২২ কোটি ঘনফুট, বাণিজ্যিক ও অন্যান্য খাতে গ্যাস ব্যবহার হয় ২৫ থেকে ২৬ কোটি ঘনফুট।
এখানে একটি বিশেষ ঘটনা বলা প্রয়োজন, তা হলো ২০০৯ সালে শুরুতে জ্বালানি বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা। ওই কমিটির অনুৎপাদনশীল খাতে গ্যাসের ব্যবহার কমানোর সুপারিশ করে কমিটি বলেন, উৎপাদনশীল খাতে গ্যাসের ব্যবহার বেশি করলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে। সার ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাসের ব্যবহার অর্ধেকে নিয়ে আসা উচিত। তবে এ ক্ষেত্রে কমিটি ঠিকমতো পরামর্শ রাখেনি বলে উল্লেখ করেছে। কমিটির প্রতিবেদনে মোট উৎপাদনের ৫০ শতাংশ সার ও বিদ্যুতে ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। ৫০ শতাংশের ৮০ শতাংশ বিদ্যুৎ এবং বাকি ২০ শতাংশ ব্যবহার করতে বলা হয়েছে অন্য গ্রাহকদের। শিল্প খাতকে বেশ গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া আবাসিক, বাণিজ্যিক, সিএনজি খাতকে সব খাতের পরে স্থান দিয়েছে। কমিটি গ্রাহক বিবেচনায় গ্যাসের মূল্য নির্ধারণের কথা বলেছে। গ্যাসের সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য আবাসিক ও সংকুচিত প্রাকৃতিক গ্যাসের (সিএনজি) দাম বাড়ানো দরকার বলে কমিটি মনে করে বক্তব্য দিয়েছে। কিন্তু কমিটি ভুলে গিয়েছে যে এ দেশে শিল্প-কারখানা স্থাপন ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নতি সম্ভব নয়। আজ গ্যাসের অভাবে শিল্প-কারখানার উৎপাদন ৫০ শতাংশ নেমে এসেছে। অনেক শিল্প-কারখানা গ্যাস, বিদ্যুতের অভাবে বন্ধ হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার শ্রমিক চাকরি হারাচ্ছে। বহু ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ঋণখেলাপি হয়ে পড়ছেন। বিষয়টি খুবই জটিল। তাই সরকারকে গ্যাসের ব্যবহার সম্পর্কে দ্রুত ও কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। ১. গ্যাস দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। গ্যাসের সরবরাহ হ্রাস পেয়েছে। তাই সিএনজিতে গ্যাসের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। নতুন করে আর কোনো সিএনজি স্টেশন স্থাপন করা যাবে না। যদি কোনো বিনিয়োগকারী সিএনজি ব্যবসা করতে না চান তখন পুরনো সিএনজি স্টেশন মালিকদের ব্যাংকের ঋণ মওকুফ করে দিয়ে শুধু মূলধন ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। গাড়িতে পেট্রল ও ডিজেল ব্যবহার করতে হবে। এই দুটি আমদানি করে ব্যবহার করা যাবে। গ্যাস শিল্পের জন্য সহজে আমদানি করা যাবে না। তাই গ্যাসের ব্যবহার শুধু শিল্পে ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ২. শুধু ট্যাঙ্ িক্যাব সিএনজিতে চলতে পারে। সাধারণ জনগণের যাতায়াতের সুবিধার জন্য এ ব্যবস্থা রাখা যায়। মালয়েশিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শুধু ট্যাঙ্ িক্যাব সিএনজিতে ব্যবহার করা হয়। প্রাইভেট গাড়ি, বাস, ট্রাক সবই পেট্রল বা ডিজেলে চলছে। ৩. অবিলম্বে জরুরি ভিত্তিতে পেট্রোবাংলাকে সক্রিয় করতে হবে। বিদেশে বাংলাদেশি দক্ষ প্রকৌশলীদের দেশে ফেরত এনে পেট্রোবাংলাকে কার্যকর করা যাবে। এখন দরকার সক্রিয় উদ্যোগের। এ কাজটি সরকারকে করতে হবে। ৪. নতুন নতুন কূপ খননের কাজ দ্রুত শুরু করতে হবে। গ্যাস উত্তোলন করে জাতীয় গ্যাস লাইনে সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। দীর্ঘদিন ধরে গ্যাস সংযোগ বন্ধ রয়েছে। এভাবে একটি দেশ চলতে পারে না। সব বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা জাতির সামনে সরকারকে পেশ করতে হবে। ৫. বাংলাদেশে গ্যাস বিভাগে এখন পেট্রোবাংলার অধীনে কম্পানিগুলোতে দুর্নীতির বড় আখড়া। টাকা ছাড়া, ঘুষ ছাড়া এসব বিভাগের কেউ কিছুই বোঝেন না। তাই ঘুষের মাত্রা অধিক হওয়ায় শিল্পে ব্যবহৃত গ্রাহকদের পণ্য উৎপাদন খরচও অধিক। আন্তর্জাতিক বাজারে অন্যান্য দেশের পণ্যের সঙ্গে আমরা মূল্যে টিকে থাকতে পারি না। তাই প্রয়োজন দুর্নীতিমুক্ত ঘুষমুক্ত গ্যাস বিভাগ। এটুকু সফল করতে সরকারকে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সরকারের উঁচু মহল থেকে দুর্নীতিমুক্ত রাষ্ট্র গঠনে কার্যকর ও বাস্তব পদক্ষেপ জাতি নির্বাচনী ওয়াদা অনুযায়ী আশা করে।
লেখক : সাবেক সহসভাপতি, এফবিসিসিআই ও প্রতিষ্ঠাতা-ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি।
No comments