অমর একুশে গ্রন্থমেলা-মুক্তচিন্তা আর তরুণ প্রাণের মিলনমেলা by রোবায়েত ফেরদৌস
তুমি তাই যা তুমি পড়’ —একটি পুরোনো প্রবাদ ‘বই এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে; প্রতীচী থেকে প্রাচীতে; বই এখন ফেরারি; ইউরোপ থেকে লেজ গুটিয়ে বই এখন ঘাড় গোঁজার চেষ্টা করছে ভারতবর্ষে’—পশ্চিমে অনলাইন-বই কিংবা শ্রুতিবই প্রকাশের হিড়িক দেখে ফরাসি চিন্তক জ্যাক দেরিদা একবার এই মন্তব্য করেছিলেন।
ফি বছর একুশের বইমেলায় গা-ঘেঁষে ঘন হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বইয়ের স্টল আর উপচে পড়া জনসমাগম দেখলে মনে হয় দেরিদা ঠিকই বলেছেন; কিন্তু মুখোশ চিড়ে মুখ চেনাটাও জরুরি—জনারণ্যের কতজন বইয়ের ক্রেতা? ভিড়-ঠেলা ক্রেতাদের কতজন পাঠক? আর গাদা গাদা পাঠকের কতজন আছেন যাঁরা বইয়ের বাছবিচার করতে পারেন? ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র বলেছেন তুষ ফেলে চাল নিতে। কতজন পারি তুষ ঝেড়ে চাল বাছতে? অ-বই থেকে বই খুঁজে বই বের করতে? স্বতন্ত্র রুচি তৈরির সুযোগ সেখানে কোথায়? আবার এটাও তো কোনো সুস্থ লক্ষণ নয় যে, বই প্রকাশনানির্ভর হয়ে পড়েছে একান্তই একুশের বইমেলার ওপর; কেননা আমাদের উচিত কেবল মেলা নয়, সারা বছরই এমন উদ্যোগ নেওয়া যাতে নতুন প্রজন্ম বই পড়ায় সত্যিকারের যে আনন্দ, সেই স্বাদ নিতে সক্ষম হয়ে ওঠে।
রুচি মানেই নির্বাচন। নির্বাচন কেবল পাঠকের বই কেনায় নয়, সবচেয়ে জরুরি বই প্রকাশের নির্বাচন। বাছবিচার এখানে অনপনেয়। নইলে নিম্নমানের বাজারিতে বইমেলা ছেঁয়ে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। মেলা-অন্তঃপ্রাণ হিসেবে নতুন প্রজন্মের একজন হিসেবে আমার চাওয়া তাই স্পষ্ট—বইমেলা কেবল মুনাফামুখিনতায় যেন পর্যবসিত না হয়। তথাকথিত বিশ্বায়নের দোহাই পেড়ে বই প্রকাশ আর বইমেলা স্রেফ বাজারিপনায় যেন আটকে না যায়।
তরুণেরা বয়সধর্মের কারণেই প্রতিবাদী হয়, প্রথাকে চ্যালেঞ্জ করে, বিকল্পের সন্ধান করে। বৃত্তের বাইরে গিয়ে নিজের পারঙ্গমতার স্বাক্ষর রাখতে সাহস দেখায়। নতুন প্রজন্ম সব সমাজেই জীবনঘনিষ্ঠতা, সৃষ্টিশীলতা আর দ্রোহের স্ফুরণ ঘটায়। বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক রুচি যেন থাকে বই প্রকাশে—প্রজন্মের প্রত্যাশাও থাকে তা-ই। বইমেলার কাছে আকাঙ্ক্ষা, এটি তরুণদের রুচি নির্মাণে ভূমিকা রাখবে, তুষ-চালের বাছবিচারে সক্ষম করে তুলবে, নতুন ও উন্নত চিন্তার সঙ্গে মেলায় আসা পাঠকদের মেলবন্ধন ঘটাবে। বইমেলা নতুন প্রজন্মের বইপ্রেমীদের তীর্থক্ষেত্র; এদের অনেকে বছরের বাকি ১১ মাস চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করে একুশের এই মেলাটির জন্য! দেশে-বিদেশে কত মেলা হয়; না, মন ভরে না; কত পানি কিন্তু চাতকের চাই মেঘের জল; কত মেলা কিন্তু এদের চাই একুশের মেলা।
মেলায় থাকতে হবে নানা অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ পাঠযোগ্য বৈচিত্র্যময় বই। উৎসাহ দিতে হবে নতুন লেখকদের। ভালো পাঠকই আখেরে ভালো লেখক তৈরি করে। বইমেলাকে তাই পাঠকবান্ধব না হয়ে উপায় নেই। বইমেলা কেবল বই কেনার নয়, বই দেখার, বই শোঁকার, বই ছোঁয়ার মেলা। পাঠক যেন নিশ্চিন্তে মেলার পবিত্র আঙিনায় ঘুরে বেড়াতে পারেন। প্রকাশক যেন পছন্দসই জায়গা পান। মুক্তচিন্তার মেলা যেন সব অর্থেই মুক্ত হয়। সবার মতামত নিয়ে মেলার পরিসর আরও সৃষ্টিশীল, আরও আকর্ষণীয় করে নির্মাণের প্রয়াস নিতে হবে। প্রতিবছর মেলার আদল যেন এক রকম না হয়; একঘেয়ে বিন্যাস থেকে বইমেলাকে তাই বেরিয়ে আসতে হবে। অন্দরমহল আর বহিরঙ্গে প্রতিবছরই নতুনত্ব আর বৈচিত্র্য আনার উদ্যোগ নিতে হবে, নান্দনিক বিবেচনাকে ওপরে ঠাঁই দিতে হবে।
বইমেলাকে ঘিরে বাংলা একাডেমী, বইয়ের প্রকাশক, পাঠক আর লেখক—এই চার অংশের শুভ ও সৃষ্টিশীল সমন্বয় দেখার অপেক্ষায় থাকি আমরা। আমাদের প্রত্যাশা, নতুন প্রজন্ম চায় ভাষা আন্দোলনের যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, তার স্বভাবটি যেন মেলার আয়োজন আর বিন্যাসে প্রকাশ পায়। ভাষা আন্দোলন কেবল সাংস্কৃতিক আন্দোলন ছিল না, ছিল রাজনৈতিক আন্দোলনও বটে—বইমেলায় এই দ্রোহ আর রাজনৈতিক স্পিরিট অটুট থাকে যেন। মেলার অনুবাদ যেন নিছক গাদাগাদি ঠাসাঠাসি আর ভিড়ভাট্টা না হয়ে ওঠে, কর্তৃপক্ষ তার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখবে, সৃষ্টিশীল তরুণ প্রজন্ম আন্তরিকভাবেই এটা চায়। বইমেলা তরুণদের কাছে এত বিশেষ যে তারা কেবল বইপ্রেমের আবেগ আর তার উৎসারণ নিয়ে সন্তুষ্ট হতে নারাজ, তারা চায় এটা সত্যিকার অর্থেই হয়ে উঠুক জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। একুশ ছিল সত্যের পক্ষে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে। তরুণদের মনোজগৎও অন্যায্যের বিরুদ্ধে। বাংলা একাডেমী একটি আন্দোলনের ফল। আশা থাকবে, বইমেলায় সব সময় যেন সেই ভাবটা জাগরূক থাকে।
নতুন প্রজন্ম কখনোসখনো বিপথগামী হতে পারে—মাদক, নারী উত্যক্তকরণ, ধর্মান্ধতা কিংবা অন্ধকার জঙ্গিবাদের চর্চায় লিপ্ত হতে পারে, কিন্তু আমি অন্তঃকরণে বিশ্বাস করি, এটা সাময়িক। অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান পেলে তারা তাতে সাড়া দেবে ঠিকই—কিন্তু সে আহ্বান হতে হবে আন্তরিক, যুক্তিগ্রাহ্য আর গাঢ়। সূর্যের মতো স্পষ্ট আর সত্য কোনো ডাক দিয়ে গেলে তা এড়ানোর সাধ্য তাদের নেই। এ জন্য আলো ছড়াতে হবে, সত্যের বীজ রোপণ করে যেতে হবে। অন্ধকার থেকে আলোর সড়কে নিয়ে আসতে একটি জীবনবাদী বই মানুষকে যেভাবে আবাহন করতে পারে, তার চেয়ে বড় শক্তি আর কার আছে? নতুন প্রজন্মকে গ্রন্থমনস্ক করে গড়ে তোলার তাই কোনো বিকল্প নেই; গ্রন্থমনস্ক করা মানে প্রকারান্তরে মানুষকে জীবনমনস্ক করা।
রাষ্ট্রের লক্ষ্য হওয়া উচিত সংস্কৃতি, আর রাজনীতি সেই লক্ষ্য অর্জনের উপায়। একটি সাংস্কৃতিক বোধসম্পন্ন রুচিশীল ও মানবিক রাষ্ট্র নির্মাণের প্রয়াসে বইমেলা অবদান রাখতে পারে অবশ্যই। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনায় সংস্কৃতিকে যথাযথভাবে সম্পৃক্ত করা হয়নি। এ দুটোকে দুই ভুবনের বাসিন্দা বলে আলাদা করে রাখা হচ্ছে—প্রতীতি বলে, রাষ্ট্র ও সংস্কৃতি কোনোটির জন্যই যা শুভ নয়। বলা হয়, একটি দেশের গণতন্ত্র মাপার অন্যতম গজকাঠি হচ্ছে সে দেশের ‘চিন্তার স্বাধীনতা’র চর্চা কতটা হয়, তাই। গণতন্ত্রের সমার্থক শব্দ পরমতসহিষ্ণুতা, টলারেন্স। যেমনটি ভলতেয়ার বলেছিলেন, ‘আমি তোমার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করতে পারি, কিন্তু তোমার মত প্রকাশ করতে দেওয়ার জন্য আমি আমার জীবন দিতে পারি।’ বিনয়ের সঙ্গে জানতে ইচ্ছে করে, গণতন্ত্রচর্চার এই ভলতেয়ারিয়ান ফিলসফি থেকে আমরা কত দূরে? গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, সংস্কারমুক্ত, বিজ্ঞানমনস্ক ও গ্রন্থমুখী সমাজ নির্মাণে বইমেলা আগামী আরও অনেক বছর আলো ছড়াতে থাকুক। কোনো বন্ধ বা নিষিদ্ধের অর্গলে বইমেলা যেন আর কখনো আটকা পড়ে না যায়।
রোবায়েত ফেরদৌস: সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
robaet.ferdous@gmail.com
রুচি মানেই নির্বাচন। নির্বাচন কেবল পাঠকের বই কেনায় নয়, সবচেয়ে জরুরি বই প্রকাশের নির্বাচন। বাছবিচার এখানে অনপনেয়। নইলে নিম্নমানের বাজারিতে বইমেলা ছেঁয়ে যাবে, এটাই স্বাভাবিক। মেলা-অন্তঃপ্রাণ হিসেবে নতুন প্রজন্মের একজন হিসেবে আমার চাওয়া তাই স্পষ্ট—বইমেলা কেবল মুনাফামুখিনতায় যেন পর্যবসিত না হয়। তথাকথিত বিশ্বায়নের দোহাই পেড়ে বই প্রকাশ আর বইমেলা স্রেফ বাজারিপনায় যেন আটকে না যায়।
তরুণেরা বয়সধর্মের কারণেই প্রতিবাদী হয়, প্রথাকে চ্যালেঞ্জ করে, বিকল্পের সন্ধান করে। বৃত্তের বাইরে গিয়ে নিজের পারঙ্গমতার স্বাক্ষর রাখতে সাহস দেখায়। নতুন প্রজন্ম সব সমাজেই জীবনঘনিষ্ঠতা, সৃষ্টিশীলতা আর দ্রোহের স্ফুরণ ঘটায়। বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক রুচি যেন থাকে বই প্রকাশে—প্রজন্মের প্রত্যাশাও থাকে তা-ই। বইমেলার কাছে আকাঙ্ক্ষা, এটি তরুণদের রুচি নির্মাণে ভূমিকা রাখবে, তুষ-চালের বাছবিচারে সক্ষম করে তুলবে, নতুন ও উন্নত চিন্তার সঙ্গে মেলায় আসা পাঠকদের মেলবন্ধন ঘটাবে। বইমেলা নতুন প্রজন্মের বইপ্রেমীদের তীর্থক্ষেত্র; এদের অনেকে বছরের বাকি ১১ মাস চাতক পাখির মতো অপেক্ষা করে একুশের এই মেলাটির জন্য! দেশে-বিদেশে কত মেলা হয়; না, মন ভরে না; কত পানি কিন্তু চাতকের চাই মেঘের জল; কত মেলা কিন্তু এদের চাই একুশের মেলা।
মেলায় থাকতে হবে নানা অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ পাঠযোগ্য বৈচিত্র্যময় বই। উৎসাহ দিতে হবে নতুন লেখকদের। ভালো পাঠকই আখেরে ভালো লেখক তৈরি করে। বইমেলাকে তাই পাঠকবান্ধব না হয়ে উপায় নেই। বইমেলা কেবল বই কেনার নয়, বই দেখার, বই শোঁকার, বই ছোঁয়ার মেলা। পাঠক যেন নিশ্চিন্তে মেলার পবিত্র আঙিনায় ঘুরে বেড়াতে পারেন। প্রকাশক যেন পছন্দসই জায়গা পান। মুক্তচিন্তার মেলা যেন সব অর্থেই মুক্ত হয়। সবার মতামত নিয়ে মেলার পরিসর আরও সৃষ্টিশীল, আরও আকর্ষণীয় করে নির্মাণের প্রয়াস নিতে হবে। প্রতিবছর মেলার আদল যেন এক রকম না হয়; একঘেয়ে বিন্যাস থেকে বইমেলাকে তাই বেরিয়ে আসতে হবে। অন্দরমহল আর বহিরঙ্গে প্রতিবছরই নতুনত্ব আর বৈচিত্র্য আনার উদ্যোগ নিতে হবে, নান্দনিক বিবেচনাকে ওপরে ঠাঁই দিতে হবে।
বইমেলাকে ঘিরে বাংলা একাডেমী, বইয়ের প্রকাশক, পাঠক আর লেখক—এই চার অংশের শুভ ও সৃষ্টিশীল সমন্বয় দেখার অপেক্ষায় থাকি আমরা। আমাদের প্রত্যাশা, নতুন প্রজন্ম চায় ভাষা আন্দোলনের যে অসাম্প্রদায়িক চেতনা, তার স্বভাবটি যেন মেলার আয়োজন আর বিন্যাসে প্রকাশ পায়। ভাষা আন্দোলন কেবল সাংস্কৃতিক আন্দোলন ছিল না, ছিল রাজনৈতিক আন্দোলনও বটে—বইমেলায় এই দ্রোহ আর রাজনৈতিক স্পিরিট অটুট থাকে যেন। মেলার অনুবাদ যেন নিছক গাদাগাদি ঠাসাঠাসি আর ভিড়ভাট্টা না হয়ে ওঠে, কর্তৃপক্ষ তার প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখবে, সৃষ্টিশীল তরুণ প্রজন্ম আন্তরিকভাবেই এটা চায়। বইমেলা তরুণদের কাছে এত বিশেষ যে তারা কেবল বইপ্রেমের আবেগ আর তার উৎসারণ নিয়ে সন্তুষ্ট হতে নারাজ, তারা চায় এটা সত্যিকার অর্থেই হয়ে উঠুক জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। একুশ ছিল সত্যের পক্ষে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে। তরুণদের মনোজগৎও অন্যায্যের বিরুদ্ধে। বাংলা একাডেমী একটি আন্দোলনের ফল। আশা থাকবে, বইমেলায় সব সময় যেন সেই ভাবটা জাগরূক থাকে।
নতুন প্রজন্ম কখনোসখনো বিপথগামী হতে পারে—মাদক, নারী উত্যক্তকরণ, ধর্মান্ধতা কিংবা অন্ধকার জঙ্গিবাদের চর্চায় লিপ্ত হতে পারে, কিন্তু আমি অন্তঃকরণে বিশ্বাস করি, এটা সাময়িক। অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান পেলে তারা তাতে সাড়া দেবে ঠিকই—কিন্তু সে আহ্বান হতে হবে আন্তরিক, যুক্তিগ্রাহ্য আর গাঢ়। সূর্যের মতো স্পষ্ট আর সত্য কোনো ডাক দিয়ে গেলে তা এড়ানোর সাধ্য তাদের নেই। এ জন্য আলো ছড়াতে হবে, সত্যের বীজ রোপণ করে যেতে হবে। অন্ধকার থেকে আলোর সড়কে নিয়ে আসতে একটি জীবনবাদী বই মানুষকে যেভাবে আবাহন করতে পারে, তার চেয়ে বড় শক্তি আর কার আছে? নতুন প্রজন্মকে গ্রন্থমনস্ক করে গড়ে তোলার তাই কোনো বিকল্প নেই; গ্রন্থমনস্ক করা মানে প্রকারান্তরে মানুষকে জীবনমনস্ক করা।
রাষ্ট্রের লক্ষ্য হওয়া উচিত সংস্কৃতি, আর রাজনীতি সেই লক্ষ্য অর্জনের উপায়। একটি সাংস্কৃতিক বোধসম্পন্ন রুচিশীল ও মানবিক রাষ্ট্র নির্মাণের প্রয়াসে বইমেলা অবদান রাখতে পারে অবশ্যই। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনায় সংস্কৃতিকে যথাযথভাবে সম্পৃক্ত করা হয়নি। এ দুটোকে দুই ভুবনের বাসিন্দা বলে আলাদা করে রাখা হচ্ছে—প্রতীতি বলে, রাষ্ট্র ও সংস্কৃতি কোনোটির জন্যই যা শুভ নয়। বলা হয়, একটি দেশের গণতন্ত্র মাপার অন্যতম গজকাঠি হচ্ছে সে দেশের ‘চিন্তার স্বাধীনতা’র চর্চা কতটা হয়, তাই। গণতন্ত্রের সমার্থক শব্দ পরমতসহিষ্ণুতা, টলারেন্স। যেমনটি ভলতেয়ার বলেছিলেন, ‘আমি তোমার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করতে পারি, কিন্তু তোমার মত প্রকাশ করতে দেওয়ার জন্য আমি আমার জীবন দিতে পারি।’ বিনয়ের সঙ্গে জানতে ইচ্ছে করে, গণতন্ত্রচর্চার এই ভলতেয়ারিয়ান ফিলসফি থেকে আমরা কত দূরে? গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, সংস্কারমুক্ত, বিজ্ঞানমনস্ক ও গ্রন্থমুখী সমাজ নির্মাণে বইমেলা আগামী আরও অনেক বছর আলো ছড়াতে থাকুক। কোনো বন্ধ বা নিষিদ্ধের অর্গলে বইমেলা যেন আর কখনো আটকা পড়ে না যায়।
রোবায়েত ফেরদৌস: সহযোগী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
robaet.ferdous@gmail.com
No comments