ফাহিমা হত্যা-গাড়িচালক মিন্টু গ্রেপ্তার, হত্যার কথা স্বীকার

রাজধানীর গুলশানে গৃহবধূ ফাহিমা সুলতানা খুনের ঘটনায় তাঁদের গাড়িচালক মিন্টু পেয়াদাকে গতকাল বুধবার গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। ওই বাসা থেকে লুণ্ঠিত স্বর্ণালংকারের মধ্যে প্রায় ৬০ ভরি অলংকারও উদ্ধার করা হয়। র‌্যাবের কর্মকর্তারা দাবি করেন, গৃহকর্ত্রীকে হত্যার কথা মিন্টু গ্রেপ্তারের পর স্বীকার করেছেন।


র‌্যাব জানায়, গতকাল বেলা দুইটার দিকে র‌্যাব-১-এর একটি দল কামরাঙ্গীরচরের একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৬০ ভরি স্বর্ণালংকারসহ মিন্টুকে (৪০) গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁকে র‌্যাব সদর দপ্তরে নেওয়া হয়।
ফাহিমা গত মঙ্গলবার দুই মেয়েকে স্কুলে দিয়ে সকাল ১০টার দিকে বাসায় ফেরার পর খুন হন। গুরুতর আহত হয় গৃহকর্মী বীণা। ঘটনার সময় বাসায় ফাহিমার তিন বছরের ছেলে নাদিম ছিল।
গতকাল বিকেলে র‌্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে মিন্টুকে সাংবাদিকদের সামনে আনা হয়। এ সময় তিনি হত্যার কথা স্বীকার করে ঘটনার বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, বড়লোকের গাড়িচালকের চাকরি করার একপর্যায়ে তিনিও বড়লোক হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। ওই স্বপ্ন পূরণ করতে তিনি গৃহকর্ত্রীকে খুন করে টাকা-স্বর্ণালংকার লুটের পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী মঙ্গলবার গৃহকর্ত্রী দুই মেয়েকে উত্তরায় স্কুলে নামিয়ে দিয়ে বাসায় ফিরলে তিনিও পিছু পিছু যান। গৃহকর্মী বীণাকে সামনে পেয়ে প্রথমে তার গলায় ছুরিকাঘাত করেন। সে নিস্তেজ হয়ে পড়ে যাওয়ায় মনে করেছিলেন, মারা গেছে। এরপর তিনি গৃহকর্ত্রীর কাছে গিয়ে যা আছে, বের করে দিতে বলেন। ফাহিমা তাঁকে না মেরে বাসার সব নিয়ে যেতে বলেন। প্রাণ বাঁচাতে গৃহকর্ত্রী বাথরুমে ঢুকলে তিনি সেখানে গিয়ে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে তাঁকে হত্যা করেন। এরপর আলমারি ও ওয়ার্ডরোব খুলে টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে কাপড় বদলে গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যান।
গাড়িটি পরে গুলশানের এক সড়ক থেকে উদ্ধার করা হয়।
র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার এম সোহায়েল প্রথম আলোকে বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, লুণ্ঠিত বাকি স্বর্ণালংকার নিয়ে গাড়িচালক মিন্টুর স্ত্রী পালিয়ে গেছেন। জিজ্ঞাসাবাদে মিন্টু বলেছেন, সপ্তাহ খানেক আগে গৃহকর্ত্রী তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে তাঁকে হত্যার জন্য ছুরি কিনে আনেন।
ফাহিমা সুলতানা হত্যার ঘটনায় গতকাল দুপুরে তাঁর স্বামী ব্যবসায়ী মুবিন খান বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেন। এজাহারে বলা হয়, তাঁর স্ত্রীকে হত্যা ও গৃহকর্মী বীণাকে আহত করে মিন্টু বাসা থেকে দুই লাখ টাকা ও ১৫০ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। বীণা ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গতকাল দুপুরে গুলশান ২ নম্বরে ১০১ নম্বর সড়কের ৭ নম্বর বাড়ির পঞ্চমতলায় মুবিন খানের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, নাদিম স্বজনদের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করছে। লুণ্ঠিত অলংকারের খালি বাক্স মেঝেতে পড়ে আছে। ফাহিমার বড় মেয়ে সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী মায়েশা খান বিলাপ করছিল, ‘আমার মাকে নিয়ে গেলে কেন? তাঁকে এনে দাও।’ এ সময় তাকে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন মুবিন খান। তিনি বলেন, শান্ত স্বভাব দেখে ছয়-সাত মাস আগে মিন্টুকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এমন পরিণতি হবে, তা কখনো তিনি বুঝতে পারেননি।
ফাহিমা টঙ্গী ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ছিলেন। দুপুরে ওই হাসপাতালের অধ্যাপক হামিদা বেগমের নেতৃত্বে চিকিৎসকেরা মুবিন খানের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে আসেন। এ সময় হামিদা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানুষ কী করে এমন নৃশংস হয়?’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে দুপুরে ফাহিমার মরদেহ গুলশান ২ নম্বর আজাদ জামে মসজিদে নেওয়া হয়। সেখানে জানাজা শেষে মরদেহ দাফনের জন্য মৌলভীবাজারের রাজনগরের পারশীপাড়ায় নেওয়া হয়।

No comments

Powered by Blogger.