ভূস্বর্গ সাজেকে অভাবের থাবা by আহমেদ মুনির ও সাধন বিকাশ চাকমা
টেবিলের ওপর ছোট ছোট বাটিতে অতিথিদের জন্য পাঁচন পরিবেশন করা হয়েছে। সাধারণত ২২ পদ সবজি দিয়ে রান্না করা হয় এই খাবার। কিন্তু বাটিতে কেবল কয়েক টুকরো আলু ছাড়া আর কোনো সবজি দেখা গেল না। গৃহকর্তা অতিথিদের হাতজোড় করে বললেন, ‘ঘরে চাল নেই, নেই কোনো তরিতরকারি কিন্তু বিজু বলে কথা, তাই যা ছিল তা দিয়েই পাঁচন রান্না করেছি।’
১৩ এপ্রিল বৈসাবি উৎসবের দিন রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের দক্ষিণ রুইলুই ত্রিপুরাপাড়ার একটি বাড়িতে গিয়ে এমন দৃশ্য দেখা যায়। খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানের আদিবাসী জনপদগুলোতে জাঁকজমকভাবে বৈসাবি উৎসব পালিত হলেও সাজেক ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে এমন চিত্রই দেখা গেছে। তীব্র খাদ্যসংকট, পানীয় জলের অভাবের কারণে এ এলাকায় বসবাসকারী ত্রিপুরা ও চাকমা সম্প্রদায়ের মানুষজন উৎসবে শামিল হতে পারেনি।
দক্ষিণ রুইলুই ত্রিপুরাপাড়ার কারবারি শশীভূষণ ত্রিপুরা বলেন, ‘সাজেকের বিভিন্ন গ্রামে এখন চালের কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। আমাদের কারও ঘরে পর্যাপ্ত চাল নেই। প্রথম আলোয় সাজেকের খাদ্যসংকটের কথা ছাপা হওয়ার পর ৮ এপ্রিল ইউনিয়নের ৪০০ পরিবারকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমরা সে চাল পাইনি। যাঁরা চাল পেয়েছেন, তাঁদেরই বা কদিন চলবে?’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত দুই মৌসুম ইঁদুরের উৎপাতের কারণে ফসল হয়নি। এবার আশায় বুক বেঁধে চাষিরা হলুদ চাষ করেছিলেন। কিন্তু হলুদের দাম পড়ে যাওয়ায় উৎপাদনের খরচও ওঠেনি। ফলে মানুষের হাতে টাকা নেই। টাকা থাকলেও চাল জোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়ে। বহু দূর থেকে চাল আনতে গিয়ে পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে চালের কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা।
জানা গেছে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাজেক পর্যটকদের কাছে ভূস্বর্গ হিসেবে পরিচিত। ১৬৮৭ দশমিক ৩৯২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সাজেক ইউনিয়নের জনসংখ্য ৩০ হাজারের কাছাকাছি। এই ইউনিয়নে রয়েছে ছয়টি মৌজা ও ১২৮টি গ্রাম। ইউনিয়নের রুইলুইপাড়া থেকে সবচেয়ে কাছের মাচালং বাজার ৩৫ কিলোমিটার দূরে। হেঁটে যেতে সময় লাগে আট থেকে নয় ঘণ্টা। কংলাক, শিয়ালদাই, কাইচ্চা ও ব্যাটলিংপাড়া থেকে মাচালঙে যেতে সময় লাগে কমপক্ষে দুই দিন। মাচালঙ বাজারের পর সড়কের অবস্থা খুব খারাপ। সপ্তাহের দুদিন হাটবারে চাঁদের গাড়ি চলাচল করে। তা-ও কেবল রুইলুইপাড়া পর্যন্ত। এ কারণে বাজার থেকে প্রতি কেজি চাল ২৮ থেকে ২৯ টাকায় কিনলেও প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে নিতে নিতে পরিবহন খরচের কারণে বেড়ে ৮০ থেকে ৯০ টাকায় দাঁড়ায়।
এ প্রসঙ্গে রুইলুই মৌজার হেডম্যান লাল থাঙ্গা লুসাই বলেন, ‘২০০৪ সালে ইঁদুর-বন্যার পর এখানকার পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। এবার হলুদের দামও পাননি চাষিরা। অভাব সহ্য করতে না পেরে অনেক পরিবার সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে গেছে।’
‘পাহাড়ি ঝিরি-ঝরনার ময়লা পানি পান করতে হয় আমাদের। কখনো কখনো সেই পানিও পাই না। ইউনিয়নের একমাত্র উচ্চবিদ্যালয় বাঘাইহাটে। এখান থেকে জিপে গেলেও অন্তত দুই ঘণ্টা লাগবে। নেই সুচিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা।’ আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন রুইলুইপাড়ার বাসিন্দা বাদল ত্রিপুরা।
বাদল ত্রিপুরার কথার প্রতিধ্বনি শোনা গেল সাজেকের বিভিন্ন গ্রামের মানুষজনের মুখে। ব্যাটলিং মৌজার হেডম্যান রুয়াল চাক পাংখুয়া জানালেন, ‘এবার চাষিরা বীজ-হলুদ কিনেছেন প্রতি মণ এক হাজার টাকা দামে। অথচ কাঁচা হলুদের মণ এখন ২০০ টাকার মতো। চাষিরা মার খেয়েছেন, তার ওপর যোগাযোগব্যবস্থা ভীষণ খারাপ। তাই কারও ঘরে তেমন একটা খাবার নেই।’ ব্যাটলিং মৌজার বাসিন্দা কানেন্দ্র ত্রিপুরা জানান, ‘৯ নম্বর অরুণপাড়ায় ৮ এপ্রিল ২৫ কেজি চাল পেয়েছি। সেই চাল শেষ হওয়ার পথে। সামনের দিনগুলো কীভাবে চলবে সেটাই ভেবে পাচ্ছি না।’
মাচালঙ বাজারে কথা হয় সাজেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমার সঙ্গে। তিনি বলেন, সাজেকে এখন চরম খাদ্যসংকট চলছে। ইউনিয়নের ৮৯২ পরিবারের মধ্যে ২০০ পরিবার ভিজিএফ কার্ড পেয়েছেন। কিন্তু তাঁদের জন্য বরাদ্দ চাল আনতে হয় বাঘাইছড়ি উপজেলার মারিশ্যা থেকে। বহু গ্রাম আছে যেখান থেকে মারিশ্যা যেতে দুই থেকে তিন দিন সময় লেগে যায়। এ মুহূর্তে টেস্ট রিলিফসহ জরুরি খাদ্য সরবরাহ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদে চাষিদের মধ্যে বীজ, চারা ও কৃষি উপকরণ বিতরণ করলে সংকট অনেকটকা কাটবে।
দক্ষিণ রুইলুই ত্রিপুরাপাড়ার কারবারি শশীভূষণ ত্রিপুরা বলেন, ‘সাজেকের বিভিন্ন গ্রামে এখন চালের কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা। আমাদের কারও ঘরে পর্যাপ্ত চাল নেই। প্রথম আলোয় সাজেকের খাদ্যসংকটের কথা ছাপা হওয়ার পর ৮ এপ্রিল ইউনিয়নের ৪০০ পরিবারকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমরা সে চাল পাইনি। যাঁরা চাল পেয়েছেন, তাঁদেরই বা কদিন চলবে?’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত দুই মৌসুম ইঁদুরের উৎপাতের কারণে ফসল হয়নি। এবার আশায় বুক বেঁধে চাষিরা হলুদ চাষ করেছিলেন। কিন্তু হলুদের দাম পড়ে যাওয়ায় উৎপাদনের খরচও ওঠেনি। ফলে মানুষের হাতে টাকা নেই। টাকা থাকলেও চাল জোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়ে। বহু দূর থেকে চাল আনতে গিয়ে পরিবহন খরচ বেড়ে যায়। এলাকার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে চালের কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকা।
জানা গেছে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সাজেক পর্যটকদের কাছে ভূস্বর্গ হিসেবে পরিচিত। ১৬৮৭ দশমিক ৩৯২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সাজেক ইউনিয়নের জনসংখ্য ৩০ হাজারের কাছাকাছি। এই ইউনিয়নে রয়েছে ছয়টি মৌজা ও ১২৮টি গ্রাম। ইউনিয়নের রুইলুইপাড়া থেকে সবচেয়ে কাছের মাচালং বাজার ৩৫ কিলোমিটার দূরে। হেঁটে যেতে সময় লাগে আট থেকে নয় ঘণ্টা। কংলাক, শিয়ালদাই, কাইচ্চা ও ব্যাটলিংপাড়া থেকে মাচালঙে যেতে সময় লাগে কমপক্ষে দুই দিন। মাচালঙ বাজারের পর সড়কের অবস্থা খুব খারাপ। সপ্তাহের দুদিন হাটবারে চাঁদের গাড়ি চলাচল করে। তা-ও কেবল রুইলুইপাড়া পর্যন্ত। এ কারণে বাজার থেকে প্রতি কেজি চাল ২৮ থেকে ২৯ টাকায় কিনলেও প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে নিতে নিতে পরিবহন খরচের কারণে বেড়ে ৮০ থেকে ৯০ টাকায় দাঁড়ায়।
এ প্রসঙ্গে রুইলুই মৌজার হেডম্যান লাল থাঙ্গা লুসাই বলেন, ‘২০০৪ সালে ইঁদুর-বন্যার পর এখানকার পরিস্থিতি খারাপ হয়েছে। এবার হলুদের দামও পাননি চাষিরা। অভাব সহ্য করতে না পেরে অনেক পরিবার সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে গেছে।’
‘পাহাড়ি ঝিরি-ঝরনার ময়লা পানি পান করতে হয় আমাদের। কখনো কখনো সেই পানিও পাই না। ইউনিয়নের একমাত্র উচ্চবিদ্যালয় বাঘাইহাটে। এখান থেকে জিপে গেলেও অন্তত দুই ঘণ্টা লাগবে। নেই সুচিকিৎসার কোনো ব্যবস্থা।’ আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন রুইলুইপাড়ার বাসিন্দা বাদল ত্রিপুরা।
বাদল ত্রিপুরার কথার প্রতিধ্বনি শোনা গেল সাজেকের বিভিন্ন গ্রামের মানুষজনের মুখে। ব্যাটলিং মৌজার হেডম্যান রুয়াল চাক পাংখুয়া জানালেন, ‘এবার চাষিরা বীজ-হলুদ কিনেছেন প্রতি মণ এক হাজার টাকা দামে। অথচ কাঁচা হলুদের মণ এখন ২০০ টাকার মতো। চাষিরা মার খেয়েছেন, তার ওপর যোগাযোগব্যবস্থা ভীষণ খারাপ। তাই কারও ঘরে তেমন একটা খাবার নেই।’ ব্যাটলিং মৌজার বাসিন্দা কানেন্দ্র ত্রিপুরা জানান, ‘৯ নম্বর অরুণপাড়ায় ৮ এপ্রিল ২৫ কেজি চাল পেয়েছি। সেই চাল শেষ হওয়ার পথে। সামনের দিনগুলো কীভাবে চলবে সেটাই ভেবে পাচ্ছি না।’
মাচালঙ বাজারে কথা হয় সাজেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অতুলাল চাকমার সঙ্গে। তিনি বলেন, সাজেকে এখন চরম খাদ্যসংকট চলছে। ইউনিয়নের ৮৯২ পরিবারের মধ্যে ২০০ পরিবার ভিজিএফ কার্ড পেয়েছেন। কিন্তু তাঁদের জন্য বরাদ্দ চাল আনতে হয় বাঘাইছড়ি উপজেলার মারিশ্যা থেকে। বহু গ্রাম আছে যেখান থেকে মারিশ্যা যেতে দুই থেকে তিন দিন সময় লেগে যায়। এ মুহূর্তে টেস্ট রিলিফসহ জরুরি খাদ্য সরবরাহ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি দীর্ঘ মেয়াদে চাষিদের মধ্যে বীজ, চারা ও কৃষি উপকরণ বিতরণ করলে সংকট অনেকটকা কাটবে।
No comments