পবিত্র কোরআনের আলো-যারা কৃপণতা করে আল্লাহর পথে খরচ করে না, তাদের গলায় বেড়ি পরানো হবে

১৮০। ওয়ালা ইয়াহ্সাবান্নাল্লাযীনা ইয়াব্খালূনা বিমা আতাহুমুল্লাহু মিন ফাদ্ব্লিহি হুয়া খাইরাল্লাহুম; বাল হুয়া শার্রুল্লাহুম; সাইউত্বাওয়্যাক্বূনা মা বাখিলূ বিহী ইয়াওমাল কি্বয়ামাতি; ওয়া লিল্লাহি মীরাছুস সামাওয়াতি ওয়াল আর্দ্ব; ওয়াল্লাহু বিমা তা'মালূনা খাবীর।


১৮১। লাক্বাদ সামি'আল্লাহু ক্বাওলাল্লাযীনা ক্বালূ ইন্নাল্লাহা ফাক্বীরুঁ ওয়া নাহ্নু আগ্নিইয়াউ; সানাক্তুবু মা ক্বালূ ওয়া ক্বাত্লাহুমুল আম্বিইয়াআ বিগাইরি হাক্কিউঁ; ওয়া নাক্বূলু যূক্বূ 'আযাবাল হারীকি্ব। [সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৮০-১৮১]
অনুবাদ : ১৮০। আল্লাহ তায়ালা তাদের যে প্রাচুর্য দিয়েছেন, তা থেকে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে যারা কৃপণতা করে, তারা যেন কখনো এটা মনে না করে, এটা তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। বরং এটা তাদের জন্য অকল্যাণ বয়ে আনবে। কৃপণতা করে তারা যা জমিয়েছে, কিয়ামতের দিন তা দিয়ে তাদের গলায় বেড়ি পরিয়ে দেওয়া হবে। আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর মালিকানা তো আল্লাহর। আর তোমাদের প্রতিটি কার্যকলাপ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা অবগত রয়েছেন।
১৮১। আল্লাহ তায়ালা সেসব লোকের কথা শুনছেন, যখন তারা বলে, আল্লাহ অবশ্যই গরিব আর আমরা বিত্তবান। তারা যা বলছে, তা আমি লিখে রাখছি। আর তারাই নবীদের অন্যায়ভাবে হত্যা করেছিল। আমি তাদের বলব, এবার তোমরা জাহান্নামের স্বাদ উপভোগ কর।
ব্যাখ্যা : ১৮০ নম্বর আয়াতে আল্লাহর পথে সম্পদ ব্যয় না করার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে। আল্লাহর পথে সম্পদ ব্যয় করা বলতে মালের জাকাত আদায় করাসহ সৎ কাজে অনুরূপ দান-খয়রাতের কথা বলা হয়েছে। যারা আল্লাহর পথে সম্পদ ব্যয় না করে কৃপণতাবশত শুধু জমিয়ে রাখে, তাদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, তারা যদিও মনে করে, এই সম্পদ তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে; কিন্তু না, এই সম্পদ তাদের জন্য চরম অকল্যাণের কারণ হবে। হাদিসে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট বক্তব্য আছে। সহিহ বুখারিতে উল্লেখ আছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, কেউ আল্লাহ প্রদত্ত মালের জাকাত আদায় না করলে বা সৎ পথে ব্যয় না করলে সেই মাল কিয়ামতের দিন বিষাক্ত সাপের মতো বেড়ি আকারে তাদের গলায় চেপে ধরবে। ওই সাপ তাদের মুখমণ্ডলের উভয় পাশে চেপে ধরে বলবে, 'আমি তোমার পার্থিব ধন-সম্পদ। তুমি আমাকে খরচ না করে অন্যের হক নষ্ট করে শুধু জমিয়ে রেখেছিলে।'
১৮১ নম্বর আয়াতটি নাজিল হয়েছে কিছুসংখ্যক ইহুদির ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, করজে হাসানা-সংক্রান্ত আয়াতটি যখন নাজিল হয়, সেই আয়াতে বলা হয়েছে, 'এমন ব্যক্তি কি আছে, যে আল্লাহকে করজে হাসানা দেবে?' তখন কিছুসংখ্যক ইহুদি রাসুল (সা.)-এর খিদমতে হাজির হয়ে বলে, 'হে মুহাম্মদ, আপনার আল্লাহ কি গরিব হয়ে গেছেন? তিনি তো বান্দার কাছে কর্জ চাইছেন?' তখন এ আয়াতটি নাজিল হয়। ইহুদিরা কর্জে হাসানার তাৎপর্য না বুঝেই আল্লাহর ব্যাপারে ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্য রাখতে থাকে। এসব বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ বলেন, আল্লাহ তায়ালা এসব বক্তব্য লিপিবদ্ধ করে রাখছেন। অর্থাৎ এ রকম ধৃষ্টতার জন্য তাদের জবাবদিহি করা হবে। সেই সঙ্গে এই আয়াতে অতীতে তাদের পূর্বপুরুষদের ধৃষ্টতার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা আল্লাহর নবী-রাসুলদের অন্যায়ভাবে হত্যা করেছিল। তাদের এসব ধৃষ্টতার জবাবে আল্লাহ বলবেন, জাহান্নামের স্বাদ গ্রহণ করো। এখানে এই ধৃষ্টতার বিরুদ্ধে কোনো যুক্তি-প্রমাণ তুলে ধরা হয়নি। কারণ এর প্রয়োজন নেই।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.