সরকারের সুপারিশে মামলা প্রত্যাহার বাঞ্ছনীয় নয়-‘অস্ত্র বাজেয়াপ্ত, তবে আসামি খালাস’!

মামলা হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে। অবৈধ অস্ত্র ও গুলি রাখার দায়ে র‌্যাব দুই ব্যক্তিকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে থানায় সোপর্দ করেছে। এরপর সরকারের উচিত ছিল আদালতে মামলা চালিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অপরাধ প্রমাণ করে তাদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা। কিন্তু তা না করে উল্টো সরকারই মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করে।


আদালত শেষ পর্যন্ত সেই অবৈধ অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করে দুই আসামিকে খালাস দেয়! প্রশ্ন হলো, উদ্ধার করা অস্ত্র যদি অবৈধ ও সে কারণে বাজেয়াপ্ত করা হয়, তাহলে যারা সেই অস্ত্র রাখল এবং তা বহন করতে সহযোগিতা করল, তারা ছাড়া পায় কীভাবে? তাহলে তো দণ্ডবিধিই অকার্যকর হয়ে যায়।
অভিযুক্ত অস্ত্রধারী দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ২০০৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পল্লবী থানায় মামলা হয়। তারপর দেড় বছর না যেতেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অস্ত্র আইনে করা মামলাটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। মহানগর পিপি বলেছেন, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশের জন্য গঠিত জাতীয় কমিটির প্রস্তাবের ভিত্তিতে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। তাহলে তো বলতে হয়, বর্তমান সরকারের আমলেও তথাকথিত রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা চলছে। এটা তো সরকারই প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিল। তা ছাড়া, অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে ধৃত দুই ব্যক্তি ব্যবসায়ী, তাদের কোনো রাজনৈতিক পরিচয় তো জানা যায়নি। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ বলে চিহ্নিত হলো কীভাবে?
বর্তমান সরকারের প্রথম প্রায় দুই বছরে ছয় হাজার ৪৮৫টি ফৌজদারি মামলা ‘রাজনৈতিক হয়রানিমূলক’ লেবেল এঁটে সম্পূর্ণ বা আংশিক প্রত্যাহারের আদেশ দেওয়া হয়েছে। প্রায় ৮১ হাজার অভিযুক্ত খালাস পেয়েছে বা পাওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এর আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০১-০৬ সময়কালেও প্রায় সাড়ে ৭৩ হাজার অভিযুক্ত ব্যক্তি খালাস পেয়েছে। দুই মেয়াদে খালাসপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে খুন, ধর্ষণ, ডাকাতির মামলার আসামিও রয়েছে। এরা এখন সমাজে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
আলোচ্য জাতীয় কমিটির কাজ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি গঠিত হয়েছে দলীয় একটি কমিটি, যারা মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ যাচাই-বাছাই করবে। কিন্তু দেশে আইনের শাসন চলতে দিতে চাইলে মামলা প্রত্যাহারের সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আদালত এখন প্রশাসন থেকে পৃথক ও স্বাধীন। তাই সব মামলা আদালতেই নিষ্পত্তি হতে দেওয়া বাঞ্ছনীয়। তা না হলে শুধু অস্ত্রই বাজেয়াপ্ত হবে, আসামিরা থাকবে আইনের ধরাছোঁয়ার বাইরে।

No comments

Powered by Blogger.