বস্তি উচ্ছেদ-নন্দ ঘোষরা যে কারণে ঢাকায় আসেন by শরিফুজ্জামান শরিফ
বস্তির সমস্যা শুধু ঢাকার নয়, এশিয়ার অন্য শহরেও রয়েছে। নগর গবেষকদের মতে, আমাদের ২৭ শতাংশ মানুষ শহরে বাস করে। প্রতি বছর ৫ লাখ মানুষ কাজের জন্য ঢাকায় আসে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার হিসাবে কাজের সন্ধানে আসা মানুষের ৭০ ভাগই বস্তিতে থাকতে বাধ্য হয়। শুধু উচ্ছেদ করে কীভাবে এর সমাধান হবে?
কিছু সরকারি জমি উদ্ধারে গত ৪ এপ্রিল আদালতের নির্দেশে দ্রুতগতিতে ঢাকার কড়াইল বস্তি উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ দেশে প্রভাবশালীদের মামলার ফাইল ধীরলয়ে এগোয়। কখনো গা ঢাকা দেয়, গ্রেফতারের আদেশ তামিলের আগে লাপাত্তা হয়ে যান! পুলিশ খুঁজে পায় না! কিন্তু বস্তি-রিকশা উচ্ছেদের নির্দেশ বা ১০ হাজার টাকার কৃষিঋণ আদায়ে দরিদ্র কৃষকের কোমরে রশি বাঁধার কাজে পুলিশ বহুকাল থেকেই বেশ দক্ষতার পরিচয় দিয়ে আসছে! ৪ এপ্রিল এক লাখেরও বেশি গরিব মানুষের অগত্যা মাথা গোঁজার ঠাঁই কড়াইল বস্তিতে বুলডোজার হামলে পড়ে। ২ হাজার ঘর পুরোপুরি, ৬ হাজার ঘর আংশিক ভেঙেছে। টেলিভিশনে দেখেছি ওদের ইজ্জত, শক্তি, প্রভাবের মতো দুর্বল ঘরগুলো চুর চুর করে ভেঙে পড়েছে। ওদের অসহায় কান্না অনেককে কষ্ট দিয়েছে, বিচলিত করেছে। আবার কেউ বলেছেন, কাজটি ভালোই হয়েছে। বাবারা তোমরা গ্রামে থাকতে পার না? এখানে আস কেন? চলাচলে ব্যাঘাত ঘটাও, বিনা পয়সায় পানি-বিদ্যুৎ ব্যবহার কর? তোমাদের হাত ধরে শহরে মাদক আসে। এই শহরের তোমরাই নন্দ ঘোষ!
অভিযোগগুলো যদি মেনেও নেই তারপরও বলা যায়, এভাবে কাউকে রাষ্ট্র উচ্ছেদ করতে পারে না। যে পাঁচটি চাহিদাকে সংবিধান মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকার করে তার ব্যবস্থা করবে বলে অঙ্গীকার করেছে বাসস্থান তার একটা। যারা বলেন, ওরা অবৈধভাবে ওখানে ছিল, হ্যাঁ সত্য। কিন্তু এই শহরে আরও যারা পাবলিকের সম্পদ দখল করে বহুতল ভবন বানিয়েছে তাদের ওখানে কি বুলডোজার যাবে? হাতিরঝিলের মধ্যে বিজিএমইএর ভবন জন্ম হয়েছে আইন অমান্য করে। হলফ করে বলতে পারি, কড়াইলের বস্তিতে যেভাবে বুলডোজার হামলে পড়েছে বিজিএমইএ ভবনে সেভাবে পড়বে না। যে কর্মকর্তারা খরগোশ গতিতে আদালতের রায় বাস্তবায়ন করেছেন তারা কি পারবেন গুলশান লেক দখল করে গড়ে ওঠা বহুতল ইমারতে এভাবে বুলডোজার চালাতে? অথচ গুলশানের জায়গা আর হাতিরঝিলের জায়গা দুটিই পাবলিক সম্পত্তি।
মনে রাখা খুবই জরুরি যে, এই বৈপরীত্ব নিয়ে একটি সমাজ চলতে পারে না। বস্তিবাসীর প্রতিবাদের কারণে যানজটে পড়ে কেউ কেউ বলেছে, ওদের ঢাকা থেকে বের করে দাও। কিন্তু খুঁজিনি ওরা কেন ঢাকায় আসে, বস্তিতে থাকতে বাধ্য হয়। সব সরকার শহরে সৌন্দর্য বাড়াতে, রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল নির্বিঘ্ন করতে রিকশা-বস্তি উচ্ছেদ করে। বস্তির সমস্যা শুধু ঢাকার নয়, এশিয়ার অন্য শহরেও রয়েছে। নগর গবেষকদের মতে, আমাদের ২৭ শতাংশ মানুষ শহরে বাস করে। প্রতি বছর ৫ লাখ মানুষ কাজের জন্য ঢাকায় আসে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার হিসাবে কাজের সন্ধানে আসা মানুষের ৭০ ভাগই বস্তিতে থাকতে বাধ্য হয়। শুধু উচ্ছেদ করে কীভাবে এর সমাধান হবে? মানুষ কেন শহরমুখী হয়? প্রতি বছর বিরাট সংখ্যক মানুষ নদীভাঙনের কারণে কোথাও ঠাঁই না পেয়ে শহরে আসতে বাধ্য হয়। জলবায়ু পরিবর্তনে বাস্তুচ্যুত হয়ে মানুষ শহরে আসছে। আসছে সামাজিক ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর একটা অংশ। গত বছর বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি জানিয়েছিল, দেশে মোট জনসংখ্যার ৬-৭ কোটি ছিল দরিদ্র (তখন তাদের হিসাবে জনসংখ্যা ছিল ১৫-১৬ কোটি)। আর সরকারি হিসাব মতে, জনসংখ্যার ৪০ ভাগ মানুষ দরিদ্র। তাদের মধ্যে ২৫ ভাগ হতদরিদ্র। রয়েছে এক অঞ্চলের সঙ্গে অন্য অঞ্চলের বৈষম্য। মঙ্গা আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার রাজশাহী, খুলনার প্রতি বেশি মনোযোগ দেওয়া দরকার ছিল। কিন্তু ঘটেছে উল্টো। এডিপিতে প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম আর অর্থমন্ত্রীর পদটি চিরস্থায়ী হওয়ায় সিলেট বরাদ্দ পেয়েছে বেশি। ২০০৩-০৪ অর্থবছরে সিলেটের জন্য এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ১ পয়েন্ট ২০ ভাগ, খুলনার জন্য ২ পয়েন্ট ৬২ ভাগ, ২০০৬-০৭ সালে তা সিলেটের জন্য বেড়ে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৭৭ ভাগ আর খুলনার জন্য ২ দশমিক ৯১ ভাগ (পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের টাস্কফোর্স রিপোর্ট, ২০০৮-০৯)। সব দিকেই পিছিয়ে আছে বরিশাল-খুলনা। রাষ্ট্রের মনোযোগ পায়নি বলে শিল্পায়ন হয়নি। বন্ধ হয়েছে একের পর এক কারখানা, বেড়েছে বেকারের মিছিল। আইলা-সিডর তাদের শহরমুখী হতে বাধ্য করেছে। রয়েছে এনজিওর ঋণ পরিশোধ করতে না পারা, আদম ব্যবসায়ীদের প্রতারণার শিকার হওয়ার মতো ঘটনা। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় একটি টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে আঞ্চলিক বৈষম্যের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, দেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার বাড়লেও তা গরিব মানুষের জীবনে কোনো প্রভাব ফেলেনি (অর্থ উপদেষ্টার বাজেট বক্তৃতা ২০০৮-০৯)। অর্থমন্ত্রীর গত দুই বছরের বাজেট বক্তৃতায় জেনেছিলাম দেশে ৬ কোটি গ্রামীণ মজুরের মধ্যে ৩ কোটি ৭০ লাখ কৃষির সঙ্গে যুক্ত, যাদের সবার জমি নেই। আর ২ কোটি ৩০ লাখ অকৃষি খাতের সঙ্গে যুক্ত। প্রতি বছরই কৃষি খাত সংকুচিত হচ্ছে। ড. মাহবুব হোসেন ২০০৩ সালে গ্রামীণ দরিদ্রের ওপর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ১৯৮৮-২০০০ সালের মধ্যে কৃষি ও অকৃষি থেকে আয়ের হার ছিল মাত্র ১ ঃ ৬। তাই দুটি খাতের মানুষই কাজ না পেয়ে শহরে আসছেন। কাজের জন্য যারা ঢাকায় আসেন তাদের মধ্যে এই দুই শ্রেণীর সংখ্যাই বেশি। কেননা গ্রামে একজন মজুরের ৫ মাস কাজ থাকে। আবার বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতার সুফল সবাই পায় না, কাজ পেতে ঘুষ দিতে হয়, মজুরি পায় না, আছে দালালের উৎপাত। যারা বলেন, ওরা কেন শহরে আসে? আসে কারণ গ্রামে ওদের নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থা নেই, আমাদের সরকারগুলোও সেদিকে নজর দেয়নি।
রাস্তার ওপর গাড়ি রেখে, জলাভূমি দখল করে, খাল ভরাট করে, পাঁচতলা ভবনের ভিত্তির ওপর বারো তলা ভবন বানিয়ে এ শহর বাসের অযোগ্য করেছে ক্ষমতাশালীরা, দরিদ্ররা নয়। তারা যদি এই শহরে থাকতে পারে তাহলে দরিদ্র মানুষও থাকবে। ঢাকা শহর বহুমাত্রিক ও বহু পেশার মানুষের শহর। তাদের আগমন পুলিশ বা আইন দিয়ে ঠেকানো যাবে না, এটি সমর্থনযোগ্যও নয়, হতেও দেওয়া যাবে না। 'জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে প্রতি বছর ষাট হাজার মানুষ নদীভাঙনের কারণে, লবণাক্ততার কারণে দশ থেকে পনেরো হাজার মানুষ; আর জলাবদ্ধতার কারণে ত্রিশ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে, আর এক লাখ মানুষ প্রতি তিন থেকে পাঁচ বছরে জলোচ্ছ্বাসের কারণে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হবে' (সেন্টার ফর গ্গ্নোবাল চেঞ্জ-২০০৮)। দুর্যোগ বাড়ছে, বেকারত্ব বাড়ছে, বাড়ছে বৈষম্য। শিকড়ছেঁড়া এই মানুষ কাজের জন্য শহরে আসছে। আর সে ক্ষেত্রে তাদের প্রথম পছন্দ ঢাকা। শহরমুখী দরিদ্র মানুষের এই স্রোত ঠেকাতে প্রয়োজন ভূমি সংস্কার, সুষম উন্নয়ন, অভিযোজন, গ্রামে শিল্পায়ন আর বাস্তবমুখী মহাপরিকল্পনা ।
শরিফুজ্জামান শরিফ :কলাম লেখক ও সাধারণ সম্পাদক, নাগরিক সংহতি
অভিযোগগুলো যদি মেনেও নেই তারপরও বলা যায়, এভাবে কাউকে রাষ্ট্র উচ্ছেদ করতে পারে না। যে পাঁচটি চাহিদাকে সংবিধান মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকার করে তার ব্যবস্থা করবে বলে অঙ্গীকার করেছে বাসস্থান তার একটা। যারা বলেন, ওরা অবৈধভাবে ওখানে ছিল, হ্যাঁ সত্য। কিন্তু এই শহরে আরও যারা পাবলিকের সম্পদ দখল করে বহুতল ভবন বানিয়েছে তাদের ওখানে কি বুলডোজার যাবে? হাতিরঝিলের মধ্যে বিজিএমইএর ভবন জন্ম হয়েছে আইন অমান্য করে। হলফ করে বলতে পারি, কড়াইলের বস্তিতে যেভাবে বুলডোজার হামলে পড়েছে বিজিএমইএ ভবনে সেভাবে পড়বে না। যে কর্মকর্তারা খরগোশ গতিতে আদালতের রায় বাস্তবায়ন করেছেন তারা কি পারবেন গুলশান লেক দখল করে গড়ে ওঠা বহুতল ইমারতে এভাবে বুলডোজার চালাতে? অথচ গুলশানের জায়গা আর হাতিরঝিলের জায়গা দুটিই পাবলিক সম্পত্তি।
মনে রাখা খুবই জরুরি যে, এই বৈপরীত্ব নিয়ে একটি সমাজ চলতে পারে না। বস্তিবাসীর প্রতিবাদের কারণে যানজটে পড়ে কেউ কেউ বলেছে, ওদের ঢাকা থেকে বের করে দাও। কিন্তু খুঁজিনি ওরা কেন ঢাকায় আসে, বস্তিতে থাকতে বাধ্য হয়। সব সরকার শহরে সৌন্দর্য বাড়াতে, রাস্তায় ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল নির্বিঘ্ন করতে রিকশা-বস্তি উচ্ছেদ করে। বস্তির সমস্যা শুধু ঢাকার নয়, এশিয়ার অন্য শহরেও রয়েছে। নগর গবেষকদের মতে, আমাদের ২৭ শতাংশ মানুষ শহরে বাস করে। প্রতি বছর ৫ লাখ মানুষ কাজের জন্য ঢাকায় আসে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার হিসাবে কাজের সন্ধানে আসা মানুষের ৭০ ভাগই বস্তিতে থাকতে বাধ্য হয়। শুধু উচ্ছেদ করে কীভাবে এর সমাধান হবে? মানুষ কেন শহরমুখী হয়? প্রতি বছর বিরাট সংখ্যক মানুষ নদীভাঙনের কারণে কোথাও ঠাঁই না পেয়ে শহরে আসতে বাধ্য হয়। জলবায়ু পরিবর্তনে বাস্তুচ্যুত হয়ে মানুষ শহরে আসছে। আসছে সামাজিক ও আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর একটা অংশ। গত বছর বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি জানিয়েছিল, দেশে মোট জনসংখ্যার ৬-৭ কোটি ছিল দরিদ্র (তখন তাদের হিসাবে জনসংখ্যা ছিল ১৫-১৬ কোটি)। আর সরকারি হিসাব মতে, জনসংখ্যার ৪০ ভাগ মানুষ দরিদ্র। তাদের মধ্যে ২৫ ভাগ হতদরিদ্র। রয়েছে এক অঞ্চলের সঙ্গে অন্য অঞ্চলের বৈষম্য। মঙ্গা আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার রাজশাহী, খুলনার প্রতি বেশি মনোযোগ দেওয়া দরকার ছিল। কিন্তু ঘটেছে উল্টো। এডিপিতে প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক কারণে ঢাকা ও চট্টগ্রাম আর অর্থমন্ত্রীর পদটি চিরস্থায়ী হওয়ায় সিলেট বরাদ্দ পেয়েছে বেশি। ২০০৩-০৪ অর্থবছরে সিলেটের জন্য এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ১ পয়েন্ট ২০ ভাগ, খুলনার জন্য ২ পয়েন্ট ৬২ ভাগ, ২০০৬-০৭ সালে তা সিলেটের জন্য বেড়ে দাঁড়ায় ৪ দশমিক ৭৭ ভাগ আর খুলনার জন্য ২ দশমিক ৯১ ভাগ (পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের টাস্কফোর্স রিপোর্ট, ২০০৮-০৯)। সব দিকেই পিছিয়ে আছে বরিশাল-খুলনা। রাষ্ট্রের মনোযোগ পায়নি বলে শিল্পায়ন হয়নি। বন্ধ হয়েছে একের পর এক কারখানা, বেড়েছে বেকারের মিছিল। আইলা-সিডর তাদের শহরমুখী হতে বাধ্য করেছে। রয়েছে এনজিওর ঋণ পরিশোধ করতে না পারা, আদম ব্যবসায়ীদের প্রতারণার শিকার হওয়ার মতো ঘটনা। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় একটি টাস্কফোর্সের প্রতিবেদনে আঞ্চলিক বৈষম্যের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, দেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার বাড়লেও তা গরিব মানুষের জীবনে কোনো প্রভাব ফেলেনি (অর্থ উপদেষ্টার বাজেট বক্তৃতা ২০০৮-০৯)। অর্থমন্ত্রীর গত দুই বছরের বাজেট বক্তৃতায় জেনেছিলাম দেশে ৬ কোটি গ্রামীণ মজুরের মধ্যে ৩ কোটি ৭০ লাখ কৃষির সঙ্গে যুক্ত, যাদের সবার জমি নেই। আর ২ কোটি ৩০ লাখ অকৃষি খাতের সঙ্গে যুক্ত। প্রতি বছরই কৃষি খাত সংকুচিত হচ্ছে। ড. মাহবুব হোসেন ২০০৩ সালে গ্রামীণ দরিদ্রের ওপর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ১৯৮৮-২০০০ সালের মধ্যে কৃষি ও অকৃষি থেকে আয়ের হার ছিল মাত্র ১ ঃ ৬। তাই দুটি খাতের মানুষই কাজ না পেয়ে শহরে আসছেন। কাজের জন্য যারা ঢাকায় আসেন তাদের মধ্যে এই দুই শ্রেণীর সংখ্যাই বেশি। কেননা গ্রামে একজন মজুরের ৫ মাস কাজ থাকে। আবার বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতার সুফল সবাই পায় না, কাজ পেতে ঘুষ দিতে হয়, মজুরি পায় না, আছে দালালের উৎপাত। যারা বলেন, ওরা কেন শহরে আসে? আসে কারণ গ্রামে ওদের নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থা নেই, আমাদের সরকারগুলোও সেদিকে নজর দেয়নি।
রাস্তার ওপর গাড়ি রেখে, জলাভূমি দখল করে, খাল ভরাট করে, পাঁচতলা ভবনের ভিত্তির ওপর বারো তলা ভবন বানিয়ে এ শহর বাসের অযোগ্য করেছে ক্ষমতাশালীরা, দরিদ্ররা নয়। তারা যদি এই শহরে থাকতে পারে তাহলে দরিদ্র মানুষও থাকবে। ঢাকা শহর বহুমাত্রিক ও বহু পেশার মানুষের শহর। তাদের আগমন পুলিশ বা আইন দিয়ে ঠেকানো যাবে না, এটি সমর্থনযোগ্যও নয়, হতেও দেওয়া যাবে না। 'জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে প্রতি বছর ষাট হাজার মানুষ নদীভাঙনের কারণে, লবণাক্ততার কারণে দশ থেকে পনেরো হাজার মানুষ; আর জলাবদ্ধতার কারণে ত্রিশ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হবে, আর এক লাখ মানুষ প্রতি তিন থেকে পাঁচ বছরে জলোচ্ছ্বাসের কারণে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হবে' (সেন্টার ফর গ্গ্নোবাল চেঞ্জ-২০০৮)। দুর্যোগ বাড়ছে, বেকারত্ব বাড়ছে, বাড়ছে বৈষম্য। শিকড়ছেঁড়া এই মানুষ কাজের জন্য শহরে আসছে। আর সে ক্ষেত্রে তাদের প্রথম পছন্দ ঢাকা। শহরমুখী দরিদ্র মানুষের এই স্রোত ঠেকাতে প্রয়োজন ভূমি সংস্কার, সুষম উন্নয়ন, অভিযোজন, গ্রামে শিল্পায়ন আর বাস্তবমুখী মহাপরিকল্পনা ।
শরিফুজ্জামান শরিফ :কলাম লেখক ও সাধারণ সম্পাদক, নাগরিক সংহতি
No comments