নানা প্রশ্ন, নানা হিসাব-দুই সপ্তাহে সিলেট বিএনপি ও ছাত্রদলের তিনজন 'নিখোঁজ
গত মঙ্গলবার রাত থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি এম ইলিয়াস আলীর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এর আগে গত ৩ এপ্রিল 'নিখোঁজ' হন জেলা ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনার ও জুনেদ আহমদ। দুই সপ্তাহের মধ্যে এই তিনজনের রহস্যজনক নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় সিলেটে এখন তোলপাড় চলছে।
তিনজনই নিখোঁজ হয়েছেন ঢাকা থেকে। দিনার ও জুনেদ ঢাকার উত্তরা থেকে এবং ইলিয়াস আলী মহাখালী এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। দিনার ও জুনেদ নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই ইলিয়াস আলী দাবি করে আসছিলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাঁদের গুম করেছে। এ অবস্থায় তিনি নিজেই এখন নিখোঁজ হলেন। তাঁকেও 'গুম' করার অভিযোগ তুলেছে তাঁর পরিবার।
গত ৩ এপ্রিল বিকেল থেকে সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সহসাধারণ সম্পাদক ইফতেখার আহমদ দিনার ও তাঁর সহকর্মী ছাত্রদলকর্মী জুনেদ আহমদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। ঢাকার উত্তরা থেকে তাঁরা নিখোঁজ হন। এর আগে গত ২২ মার্চ সিলেট নগরের উপশহরে খুন হন ছাত্রদলের মীরাবাজার গ্রুপের কর্মী মাহমুদ হোসেন শওকত। তখন অভিযোগ ওঠে, ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনারের গ্রুপের কর্মীরা শওকতকে খুন করে। এ ঘটনায় দিনারকে প্রধান আসামি করে থানায় মামলা করে নিহত শওকতের পরিবার। এরপর থেকে দিনার ছিলেন পলাতক। দিনারের পরিবারের দাবি, মামলার আসামি হওয়ায় গত ১ এপ্রিল জামিন নিতে ঢাকায় যান দিনার। রাজধানীর উত্তরায় তাঁর এক আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান করছিলেন তিনি। ৩ এপ্রিল বিকেলে উত্তরার বাসা থেকে বের হওয়ার পর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি দিনারের। তাঁর সঙ্গে থাকা ছাত্রদলকর্মী শওকতও ওই সময় থেকে নিখোঁজ। উভয়ের পরিবার দাবি করছে, ৩ এপ্রিল বিকেল পর্যন্ত তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। এ অবস্থায় গত ৯ এপ্রিল দিনার ও শওকতের পরিবারের পক্ষ থেকে শহরের শাহপরাণ থানায় পৃথক দুটি জিডি করা হয়। কিন্তু দু সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তাঁদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
খুনের ঘটনায় দলে বিভক্তি : ২২ মার্চ খুন হওয়া শওকত জেলা ছাত্রদলের সহসাধারণ সম্পাদক ইফতেখার আহমদ দিনার গ্রুপের (যা উপশহর গ্রুপ নামে পরিচিত) কর্মী ছিলেন। এর আগে তিনি ছাত্রদলের মিরাবাজার গ্রুপে (জামান গ্রুপ) ছিলেন। তবে ছাত্রদলের এই দুই গ্রুপই বিএনপির ইলিয়াস আলীর আশীর্বাদপুষ্ট। খুনের ঘটনায় ছাত্রদলের মিরাবাজার গ্রুপের (জামান গ্রুপ) নেতারা দিনার গ্রুপকে দায়ী করে। তবে ইফতেখার আহমদ দিনার দাবি করেন, শওকত একসময় জামান গ্রুপে ছিলেন। দেড় বছর আগে তিনি তাঁদের গ্রুপে আসেন। এ নিয়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপ তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। তখন দিনার এও দাবি করেন, ঘটনার দিন তিনি ইলিয়াস আলীর সঙ্গে সুনামগঞ্জে ছিলেন। তবে দিনারের এ দাবির ব্যাপারে ইলিয়াস আলী তখন নিশ্চুপ থাকেন। এ অবস্থায় দিনার যখন নিখোঁজ হন, এর তিন দিন পর ৬ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলন করে ইলিয়াস আলী দিনারের সন্ধান দাবি করেন। তখন সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি স্বীকার করেন, ঘটনার দিন দিনার তাঁর সঙ্গে সুনামগঞ্জে ছিলেন।
এ হত্যাকাণ্ডে সিলেট বিএনপির ইলিয়াস-বলয়ে নতুন করে ভাঙন দেখা দেয়। ঘটনার পরের দিন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সামসুজ্জামান জামানের মালিকানাধীন একটি স্থানীয় পত্রিকায় হত্যাকাণ্ডের জন্য দিনারকে দায়ী করে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শামসুজ্জামানকে আসামি করে মানহানির মামলা করেন দিনারের স্ত্রী প্রিসিলা পারভীন। এরপর থেকেই জামান ও দিনার গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরো প্রকট আকার ধারণ করে। এতে ইলিয়াস আলীও অনেকটা বেকায়দায় পড়েন। কারণ, দুটি গ্রুপেরই নেতা তিনি। আবার দিনারের শ্বশুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। তিনিও ইলিয়াস গ্রুপের নেতা। এ অবস্থায় ত্রিমুখী সঙ্কটে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খান ইলিয়াস আলী। এর ধারাবাহিকতায় বিএনপির ইলিয়াস অনুসারীরা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। ধীরে ধীরে তা চরম আকার ধারণ করে। বিষয়টি ত্বরিত মীমাংসার জন্য ইলিয়াস আলীকে ঘনিষ্টজনরা পরামর্শ দিলেও তিনি তখন রহস্যজনকভাবে নীরব ভূমিকা পালন করেন। ফলে তাঁর অনুসারী দায়িত্বশীল নেতারা তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হন। অবস্থা বেগতিক দেখে একপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে তাঁর অনুসারী নেতাদের বৈঠকে ডাকেন ইলিয়াস। কিন্তু পরপর তিনটি বৈঠক ডাকার পরও সিনিয়র নেতাদের কেউই তাতে অংশগ্রহণ না করায় পরিস্থিতি আরো জটিল হয়। সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল শহরের মদিনা মার্কেট এলাকায় ইলিয়াস আলী একটি সমাবেশ করতে চাইলে ছাত্রদলের একটি গ্রুপ একই স্থানে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে। পরে প্রশাসন সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলে তিনি সমাবেশ করতে পারেননি।
অবশেষে সোচ্চার ইলিয়াস : ছাত্রদল নেতা দিনার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় গত কয়েক দিন সোচ্চার ছিলেন এম. ইলিয়াস আলী। সভা, সমাবেশ, বিবৃতি ও সংবাদ সম্মেলনে তিনি কঠোর ভাষায় সরকারের সমালোচনা করেন। এ সময় তিনি দিনার নিখোঁজ হওয়ার পেছনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং র্যাবের হাত রয়েছে বলে দাবি করেন। ৬ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলনে ইলিয়াস আলী বলেন, 'বিএনপি নেতারা তাঁদের নিজস্ব সোর্সে নিশ্চিত হয়েছেন, র্যাব-১-এর সদস্যরা দিনারকে আটক করেছেন। অথচ তাঁরা আটকের কথা স্বীকারও করছেন না, অস্বীকারও করছেন না।' দিনারকে গুম করার ষড়যন্ত্র চলছে- এমন অভিযোগ করে ইলিয়াস আলী অবিলম্বে দিনারকে আইনের হাতে সোপর্দ এবং জনসমক্ষে হাজির করার দাবি জানান। অন্যথায় দলের পক্ষ থেকে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি। র্যাবের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক অফিসার তাঁদের কাছে দিনারসহ আরো একজন আটক থাকার কথা স্বীকার করেছে বলেও তখন উল্লেখ করেন ইলিয়াস আলী। এর পর থেকে দিনারের সন্ধানের দাবিতে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠন সভা, সমাবেশ, মানববন্ধন করে আসছে। এ অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে ঢাকা থেকে নিখেঁাঁজ হন ইলিয়াস আলী।
নানা প্রশ্ন : দু সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও খোঁজ মেলেনি ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনার এবং জুনেদ আহমদের। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাদা পোশাকধারীরা তাঁকে উঠিয়ে নিয়ে গুম করেছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হলেও সরকারের কোনো সংস্থাই এ তথ্য স্বীকার করেনি। তাঁরা দুজন বেঁচে আছেন কি না- তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে উভয় পরিবার। বেঁচে থাকলে তাঁদের কোথায় রাখা হয়েছে, তা জানতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অফিসে দিনরাত খোঁজ নিয়েও সদুত্তর পাচ্ছে না তারা।
নিখোঁজ দিনারের বৃদ্ধা মা পারভীন আহমদ বলেন, 'আমি আমার সন্তানের খোঁজ চাই। তাকে ফেরত চাই। আমি জানতে চাই- আমার ছেলে কোথায় আছে, কেমন আছে।' দিনারের স্ত্রী প্রিসিলা পারভীন পিংকি বলেন, 'আমরা একটি স্বাধীন দেশে বসবাস করছি। এভাবে দুইটা মানুষ নিখোঁজ হয়ে গেল। অথচ দু সপ্তাহেও তাঁদের সন্ধান আমরা জানতে পারছি না। র্যাব-পুলিশের কাছে গেলে তারা আমাদের কোনো সহযোগিতা করছে না। উল্টো আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছে। আমি আমার স্বামীকে ফেরত চাই।'
সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার অমূল্য ভূষণ বড়ুয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিষয়টি পুলিশ দেখছে। ঢাকায়ও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।' নিখোঁজ দুজনের পরিবারের পক্ষ থেকে করা জিডির কপি ঢাকার উত্তরা থানায় পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান। অমূল্য ভূষণ আরো বলেন, 'আমরা সম্ভব সব জায়গায় যোগাযোগ করছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত নিখোঁজ দুজনের ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাইনি।'
গত ৩ এপ্রিল বিকেল থেকে সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সহসাধারণ সম্পাদক ইফতেখার আহমদ দিনার ও তাঁর সহকর্মী ছাত্রদলকর্মী জুনেদ আহমদের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না। ঢাকার উত্তরা থেকে তাঁরা নিখোঁজ হন। এর আগে গত ২২ মার্চ সিলেট নগরের উপশহরে খুন হন ছাত্রদলের মীরাবাজার গ্রুপের কর্মী মাহমুদ হোসেন শওকত। তখন অভিযোগ ওঠে, ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনারের গ্রুপের কর্মীরা শওকতকে খুন করে। এ ঘটনায় দিনারকে প্রধান আসামি করে থানায় মামলা করে নিহত শওকতের পরিবার। এরপর থেকে দিনার ছিলেন পলাতক। দিনারের পরিবারের দাবি, মামলার আসামি হওয়ায় গত ১ এপ্রিল জামিন নিতে ঢাকায় যান দিনার। রাজধানীর উত্তরায় তাঁর এক আত্মীয়ের বাসায় অবস্থান করছিলেন তিনি। ৩ এপ্রিল বিকেলে উত্তরার বাসা থেকে বের হওয়ার পর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি দিনারের। তাঁর সঙ্গে থাকা ছাত্রদলকর্মী শওকতও ওই সময় থেকে নিখোঁজ। উভয়ের পরিবার দাবি করছে, ৩ এপ্রিল বিকেল পর্যন্ত তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। এ অবস্থায় গত ৯ এপ্রিল দিনার ও শওকতের পরিবারের পক্ষ থেকে শহরের শাহপরাণ থানায় পৃথক দুটি জিডি করা হয়। কিন্তু দু সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও তাঁদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি।
খুনের ঘটনায় দলে বিভক্তি : ২২ মার্চ খুন হওয়া শওকত জেলা ছাত্রদলের সহসাধারণ সম্পাদক ইফতেখার আহমদ দিনার গ্রুপের (যা উপশহর গ্রুপ নামে পরিচিত) কর্মী ছিলেন। এর আগে তিনি ছাত্রদলের মিরাবাজার গ্রুপে (জামান গ্রুপ) ছিলেন। তবে ছাত্রদলের এই দুই গ্রুপই বিএনপির ইলিয়াস আলীর আশীর্বাদপুষ্ট। খুনের ঘটনায় ছাত্রদলের মিরাবাজার গ্রুপের (জামান গ্রুপ) নেতারা দিনার গ্রুপকে দায়ী করে। তবে ইফতেখার আহমদ দিনার দাবি করেন, শওকত একসময় জামান গ্রুপে ছিলেন। দেড় বছর আগে তিনি তাঁদের গ্রুপে আসেন। এ নিয়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপ তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। তখন দিনার এও দাবি করেন, ঘটনার দিন তিনি ইলিয়াস আলীর সঙ্গে সুনামগঞ্জে ছিলেন। তবে দিনারের এ দাবির ব্যাপারে ইলিয়াস আলী তখন নিশ্চুপ থাকেন। এ অবস্থায় দিনার যখন নিখোঁজ হন, এর তিন দিন পর ৬ এপ্রিল এক সংবাদ সম্মেলন করে ইলিয়াস আলী দিনারের সন্ধান দাবি করেন। তখন সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি স্বীকার করেন, ঘটনার দিন দিনার তাঁর সঙ্গে সুনামগঞ্জে ছিলেন।
এ হত্যাকাণ্ডে সিলেট বিএনপির ইলিয়াস-বলয়ে নতুন করে ভাঙন দেখা দেয়। ঘটনার পরের দিন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সামসুজ্জামান জামানের মালিকানাধীন একটি স্থানীয় পত্রিকায় হত্যাকাণ্ডের জন্য দিনারকে দায়ী করে সংবাদ প্রকাশ করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে শামসুজ্জামানকে আসামি করে মানহানির মামলা করেন দিনারের স্ত্রী প্রিসিলা পারভীন। এরপর থেকেই জামান ও দিনার গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরো প্রকট আকার ধারণ করে। এতে ইলিয়াস আলীও অনেকটা বেকায়দায় পড়েন। কারণ, দুটি গ্রুপেরই নেতা তিনি। আবার দিনারের শ্বশুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। তিনিও ইলিয়াস গ্রুপের নেতা। এ অবস্থায় ত্রিমুখী সঙ্কটে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খান ইলিয়াস আলী। এর ধারাবাহিকতায় বিএনপির ইলিয়াস অনুসারীরা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন। ধীরে ধীরে তা চরম আকার ধারণ করে। বিষয়টি ত্বরিত মীমাংসার জন্য ইলিয়াস আলীকে ঘনিষ্টজনরা পরামর্শ দিলেও তিনি তখন রহস্যজনকভাবে নীরব ভূমিকা পালন করেন। ফলে তাঁর অনুসারী দায়িত্বশীল নেতারা তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হন। অবস্থা বেগতিক দেখে একপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে তাঁর অনুসারী নেতাদের বৈঠকে ডাকেন ইলিয়াস। কিন্তু পরপর তিনটি বৈঠক ডাকার পরও সিনিয়র নেতাদের কেউই তাতে অংশগ্রহণ না করায় পরিস্থিতি আরো জটিল হয়। সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল শহরের মদিনা মার্কেট এলাকায় ইলিয়াস আলী একটি সমাবেশ করতে চাইলে ছাত্রদলের একটি গ্রুপ একই স্থানে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করে। পরে প্রশাসন সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলে তিনি সমাবেশ করতে পারেননি।
অবশেষে সোচ্চার ইলিয়াস : ছাত্রদল নেতা দিনার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় গত কয়েক দিন সোচ্চার ছিলেন এম. ইলিয়াস আলী। সভা, সমাবেশ, বিবৃতি ও সংবাদ সম্মেলনে তিনি কঠোর ভাষায় সরকারের সমালোচনা করেন। এ সময় তিনি দিনার নিখোঁজ হওয়ার পেছনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং র্যাবের হাত রয়েছে বলে দাবি করেন। ৬ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলনে ইলিয়াস আলী বলেন, 'বিএনপি নেতারা তাঁদের নিজস্ব সোর্সে নিশ্চিত হয়েছেন, র্যাব-১-এর সদস্যরা দিনারকে আটক করেছেন। অথচ তাঁরা আটকের কথা স্বীকারও করছেন না, অস্বীকারও করছেন না।' দিনারকে গুম করার ষড়যন্ত্র চলছে- এমন অভিযোগ করে ইলিয়াস আলী অবিলম্বে দিনারকে আইনের হাতে সোপর্দ এবং জনসমক্ষে হাজির করার দাবি জানান। অন্যথায় দলের পক্ষ থেকে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেন তিনি। র্যাবের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক অফিসার তাঁদের কাছে দিনারসহ আরো একজন আটক থাকার কথা স্বীকার করেছে বলেও তখন উল্লেখ করেন ইলিয়াস আলী। এর পর থেকে দিনারের সন্ধানের দাবিতে সিলেটের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠন সভা, সমাবেশ, মানববন্ধন করে আসছে। এ অবস্থায় মঙ্গলবার রাতে ঢাকা থেকে নিখেঁাঁজ হন ইলিয়াস আলী।
নানা প্রশ্ন : দু সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও খোঁজ মেলেনি ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনার এবং জুনেদ আহমদের। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাদা পোশাকধারীরা তাঁকে উঠিয়ে নিয়ে গুম করেছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হলেও সরকারের কোনো সংস্থাই এ তথ্য স্বীকার করেনি। তাঁরা দুজন বেঁচে আছেন কি না- তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে উভয় পরিবার। বেঁচে থাকলে তাঁদের কোথায় রাখা হয়েছে, তা জানতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন অফিসে দিনরাত খোঁজ নিয়েও সদুত্তর পাচ্ছে না তারা।
নিখোঁজ দিনারের বৃদ্ধা মা পারভীন আহমদ বলেন, 'আমি আমার সন্তানের খোঁজ চাই। তাকে ফেরত চাই। আমি জানতে চাই- আমার ছেলে কোথায় আছে, কেমন আছে।' দিনারের স্ত্রী প্রিসিলা পারভীন পিংকি বলেন, 'আমরা একটি স্বাধীন দেশে বসবাস করছি। এভাবে দুইটা মানুষ নিখোঁজ হয়ে গেল। অথচ দু সপ্তাহেও তাঁদের সন্ধান আমরা জানতে পারছি না। র্যাব-পুলিশের কাছে গেলে তারা আমাদের কোনো সহযোগিতা করছে না। উল্টো আমাদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করছে। আমি আমার স্বামীকে ফেরত চাই।'
সিলেট মহানগর পুলিশ কমিশনার অমূল্য ভূষণ বড়ুয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, 'বিষয়টি পুলিশ দেখছে। ঢাকায়ও পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।' নিখোঁজ দুজনের পরিবারের পক্ষ থেকে করা জিডির কপি ঢাকার উত্তরা থানায় পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান। অমূল্য ভূষণ আরো বলেন, 'আমরা সম্ভব সব জায়গায় যোগাযোগ করছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত নিখোঁজ দুজনের ব্যাপারে কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য পাইনি।'
No comments