বন্দরের আইন ও অবকাঠামো
ব্রিটিশ ভারতের অধীনে চট্টগ্রাম বন্দর নির্মিত হয়েছিল পাঁচটি কাঠের জেটি ও একটি পন্টুন দিয়ে। এটা ১৮৮৭ সালের কথা। তখন বন্দর চলত পোর্ট কমিশনারস অ্যাক্ট দিয়ে। ব্রিটিশ শাসন, তারপর পাকিস্তান শাসন পার হয়ে আজ চট্টগ্রাম বন্দর স্বাধীন বাংলাদেশের ৪০ বছর পার করেছে। এ বন্দরের কর্মব্যস্ততা বেড়েছে কয়েক শ গুণ।
অনেক বিস্তৃত হয়েছে আকারে। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে আমরা লক্ষ করছি, বন্দর পরিচালনার জন্য আজ পর্যন্ত যুগোপযোগী কোনো আইন প্রণীত হয়নি। ৯ এপ্রিল ২০১১ কালের কণ্ঠের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন্দর চলছে ১১৫ বছরের পুরনো আইনে। স্বভাবতই বন্দরের ব্যবস্থাপনায় একটি লেজেগোবরে অবস্থা সৃষ্টি হয়ে আছে। এরই একটি উদাহরণ হলো, ১০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেলে ২৬টি জাহাজ ডুবে আছে। গত ১০ বছরে নানা দুর্ঘটনায় জাহাজগুলো ডুবে গেলেও এসব জাহাজের একটিও উদ্ধার করতে পারেনি বা করেনি বন্দর কর্তৃপক্ষ। ফলে দিনে দিনে নাব্য হারাচ্ছে চ্যানেল এবং নানাভাবে দূষিত হয়ে পড়ছে বন্দরের বহির্নোঙর। এ অবস্থা চলতে থাকলে বন্দরে জাহাজ চলাচল অচিরেই মারাত্মকভাবে বিঘি্নত হবে। সম্প্রতি বহির্নোঙরের ব্রাভো অ্যাংকেরেজে চাল নিয়ে হ্যাং রো বং নামে যে জাহাজটি ডুবে গেছে সেটি থেকে তেল নির্গত হয়ে সমুদ্রের পানিদূষণ অব্যাহত রয়েছে। জাহাজটি যেখানে ডুবেছে সেখানকার গভীরতা ৩০ থেকে ৩২ ফুট। অথচ দ্রুত এ জাহাজ সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি আইনগত দুর্বলতার কারণে। ১১৫ বছর আগের আইনে বলা আছে, ডুবে যাওয়া জাহাজ যদি বন্দর চ্যানেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তাহলে মালিককে নিজ খরচে সেই জাহাজ সরিয়ে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে জাহাজ উদ্ধার করে উপকূলে নিয়ে আসার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এমনকি জাহাজ ডুবে চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে সে জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়েরও কোনো সুযোগ নেই। এ পরিস্থিতি জাহাজ মালিকদের দায়িত্বহীন হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে, আর ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বন্দর।
চট্টগ্রাম বন্দর দক্ষিণ এশিয়ার একটি ব্যস্ততম বাণিজ্যিক পণ্য ওঠানামার বন্দর। এ বন্দরের আঞ্চলিক গুরুত্ব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতরাং এ বন্দরের পরিবেশকে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। আইনগত সংস্কারসহ এ বন্দরকে আধুনিক সুবিধাদি দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের করে তোলা যেকোনো বিবেচনায় অপরিহার্য। আমরা আশা করি, সরকার এ কাজটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, বন্দরের অবকাঠামো আধুনিক রাখা এবং সেকেলে আইনের সংস্কার-দুটোই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে ডুবে থাকা ২৬টি জাহাজ দ্রুত উদ্ধার করে বন্দর এলাকা পরিচ্ছন্ন করাও জরুরি।
চট্টগ্রাম বন্দর দক্ষিণ এশিয়ার একটি ব্যস্ততম বাণিজ্যিক পণ্য ওঠানামার বন্দর। এ বন্দরের আঞ্চলিক গুরুত্ব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতরাং এ বন্দরের পরিবেশকে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। আইনগত সংস্কারসহ এ বন্দরকে আধুনিক সুবিধাদি দিয়ে আন্তর্জাতিক মানের করে তোলা যেকোনো বিবেচনায় অপরিহার্য। আমরা আশা করি, সরকার এ কাজটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, বন্দরের অবকাঠামো আধুনিক রাখা এবং সেকেলে আইনের সংস্কার-দুটোই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সেই সঙ্গে ডুবে থাকা ২৬টি জাহাজ দ্রুত উদ্ধার করে বন্দর এলাকা পরিচ্ছন্ন করাও জরুরি।
No comments