নগর নিসর্গ-অরক্ষিত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান by মোকারম হোসেন
নগরে আমরা কেন উদ্যান বানাই এবং লালন করি, এ প্রশ্নের একাধিক উত্তর হতে পারে। তবে সাদামাটাভাবে এটুকু বলা যায়, চোখ ও মনের খোরাক জোগাতে, ফুসফুসকে কিছুটা সতেজ বাতাস জোগান দিতে, সর্বোপরি একটি জনবহুল শহরের মানুষকে ভালোভাবে বাঁচিয়ে রাখতে পার্ক ও উদ্যান একটি অত্যাবশ্যকীয় স্থাপনা।
ভিন্ন অর্থে বলা যায়, মূলত পার্ক ও উদ্যান একটি শহরের অলংকারস্বরূপ। এমন অলংকার আমাদের রাজধানী শহরে আছে মাত্র হাতেগোনা কয়েকটি। তার একটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। উদ্যানটি ঐতিহাসিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং একই কারণে একটি উন্নত শৈলীর সংরক্ষিত স্থাপনারও দাবি রাখে। কিন্তু বাস্তব চিত্র একেবারেই ভিন্ন। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সেখানে উন্নয়নের নামে চলছে নৈরাজ্য। এই সুযোগে সেখানে আনাগোনা বেড়েছে একশ্রেণীর হকার, দালাল, নেশাখোর, ভবঘুরে আর ছিনতাইকারীদের। সবকিছু মিলিয়ে উদ্যানটি একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। সেখানে বেড়াতে গেলে মনে হবে সত্যিকার অর্থেই এই উদ্যানের এখন কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। উদ্যানের যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়, দোকানপাট, ভবঘুরেদের অস্থায়ী আস্তানা, লালন চর্চা কেন্দ্র (!), ছিনতাইকারী ও বখাটেদের আনাগোনা আর গোপন লেনদেনের ঝুপড়িঘর এই উদ্যানের নিয়তি যেন অনেকটাই নির্ধারণ করে দিয়েছে। ঝুপড়িঘরের লোকজন রীতিমতো বসতি গড়ে তুলেছে এখানে। গাছতলায় চুলা জ্বালিয়ে দিব্যি রান্না চলছে, গাছের ডালে দড়ি টানিয়ে শুকোতে দিয়েছে জামা-কাপড়। ভারী বাহন চলাচলের কারণে খসে পড়েছে পায়েহাঁটা পথের ইট-সুরকি। এমন একটি স্থানকে এখন কল্পিত উদ্যান না বলে আর উপায় কী?
ইদানীং সবচেয়ে দুর্বিসহ বিষয় হচ্ছে উদ্যানের ভেতরে অনাকাঙ্ক্ষিত মোটরবাইকের অবাধ যাতায়াত। মানুষের পায়েহাঁটা পথগুলো প্রতি মুহূর্তে অসংখ্য মোটরবাইকের উচ্চশব্দে প্রকম্পিত হচ্ছে। কিন্তু উদ্যানের ভেতর কেন এসব বাহন চলবে? একটি স্থায়ী আদেশের মাধ্যমে উদ্যানের ভেতর মোটরবাইকসহ সব ধরনের বাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত। উদ্যানের ভেতর নিয়মিত ফুটবল, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন ও ক্রিকেট খেলার আয়োজন দেখলে যে কারোরই বদ্ধমূল ধারণা হবে যে এই উদ্যানের কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। পশ্চিম প্রান্তে রয়্যালপামের বীথি লাগোয়া অপরিষ্কার ডোবাটির কী কাজ, তাও বোধগম্য নয়। উদ্যানে যেটুকু উন্নয়নমূলক কাজ হয়, তার কয়েক গুণ ক্ষতিকর কাজ হয়। গত বর্ষায় উদ্যানজুড়ে যেসব ঘাস বোনা হয়েছিল এখন তার ছিটেফোঁটাও অবশিষ্ট নেই। অথচ ঘাস বোনার পর গোটা উদ্যানের চিত্রটাই বদলে গিয়েছিল। তখন হাঁটতে গিয়ে মনে হয়েছিল পাশ্চাত্যের কোনো উদ্যানের ভেতরে আছি। অথচ স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এখন চারপাশে তাকালে মনে হবে এটা কোনো উদ্যান নয়, ময়লার ভাগাড়।
নব্বই দশকের গোড়ার দিকেও উদ্যানটি যথেষ্ট সংরক্ষিত ছিল। অটুট ছিল সীমানাপ্রাচীর। অনাকাঙ্ক্ষিত তেমন কিছুই চোখে পড়ত না। ভেতরের গাছপালাগুলো মোটামুটি সুশ্রী ছিল। তেমন কোনো দুর্লভ বৃক্ষ না থাকলেও এই সবুজবিবর্জিত নগরের মানুষগুলো কিছুক্ষণের জন্য হলেও এখানে স্বস্তি পেত। সব মৌসুমেই প্রকৃতিপ্রেমীরা এখানে বর্ণিল পুষ্পশোভা উপভোগ করতে পারত। তবে এখন আর উদ্যানের সেই রূপ-জৌলুস নেই।
উদ্যানের ভেতর অবৈধ পার্কিং, অস্থায়ী ঘর ও দোকানপাটে ভরে গেছে। মাঝখানের ফাঁকা স্থানে ফুটবল, ভলিবল, ক্রিকেট ও ব্যাডমিন্টন খেলা চলছে। উদ্যানের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে হঠাৎ গজিয়েছে লালনচর্চা নামের একটি অবৈধ স্থাপনা। এখানে কেন লালনচর্চার ঘর বানাতে হবে আর এই ঘরের অনুমতিই বা মিলল কোথা থেকে তা বোধগম্য নয়। তা ছাড়া সব ধরনের উদ্যান বিনোদনের জন্য নয়। কারণ পার্ক ও উদ্যান বস্তুত আলাদা। পার্কে ব্যায়াম বা শরীরচর্চার কাজটি অনুমোদনযোগ্য হলেও উদ্যানে তা নয়। কাজেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খেলাধুলা তো পরের কথা, শরীরচর্চাবিষয়ক কোনো স্থাপনা নির্মাণও অনুচিত কাজ। এই উদ্যান শুধু হাঁটাহাঁটির জন্য নির্ধারিত থাকুক না। পাশাপাশি দরকার হলো, বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা দোকানপাটগুলো তুলে দিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে কয়েকটি দোকানের অনুমতি দেওয়া। তাহলে একদিকে উদ্যানের সৌন্দর্য ও শৃঙ্খলা যেমন অটুট থাকবে, তেমনি উদ্যানে বেড়াতে আসা মানুষও উপকৃত হবে। পৃথিবীর সব উন্নত দেশেই পার্ক ও উদ্যানের ভেতর ছোট ছোট সুসজ্জিত খাবারের দোকান থাকে। খাবারের দোকান কোনো অপ্রয়োজনীয় কিছু নয়। তবে এ ক্ষেত্রে দোকানের পরিধি ও অন্যান্য বিষয় নির্ধারণ করে দিতে হবে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতার এই স্থাপনাটি নির্মাণের গোড়ার দিকে বেশ কিছু গাছপালা কেটে ফেলা হয়। এখানকার বেশির ভাগ গাছই বিদেশি। ফলে নতুন যা কিছু লাগানো হবে তা অবশ্যই দেশি হওয়া উচিত। শুধু গাছ রোপণ করলেই হবে না, সঠিক পরিচর্যাও জরুরি। কিন্তু দীর্ঘ দুই দশকে এখানকার যেসব গাছ হারিয়ে গেছে তার বিপরীতে কোনো উল্লেখযোগ্য গাছই রোপণ করা হয়নি। উদ্যানের ফাঁকা অংশে শুধু কিছু সুনির্বাচিত গাছ লাগানো যেতে পারে। আমরা অনেক সময় ঢাকায় নেই বা থাকলেও মাত্র দু-একটি আছে এমন কিছু গাছের চারা রোপণের জন্য সংরক্ষিত অথচ হাতের নাগালে রয়েছে এমন একটি স্থানের খোঁজ করি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আমাদের সে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে।
ব্রিটিশ আমলে এটা ছিল রেসকোর্স ময়দান। ব্রিটিশরা এখানে নিয়মিত ঘোড়দৌড় উপভোগ করত। তার স্মৃতিচিহ্ন এখনো টিকে আছে উদ্যান লাগোয়া শাহবাগ থানায়। থানার বর্তমান হাজতখানার কক্ষগুলোতেই সে সময় রেসের আগে ঘোড়াগুলো বেঁধে রাখা হতো। এই কক্ষগুলো সংরক্ষণ করা উচিত। তারপর এল উত্তাল মার্চ। বাঙালি জাতি মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণের সাক্ষী হয়ে থাকল এই উদ্যান। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক বিজয়ও এখানেই অর্জিত হয়েছে। এতসব উল্লেখযোগ্য ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে উদ্যানটি। মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসররা উদ্যানের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত রমনা কালীবাড়ি এবং দুর্গামন্দিরটি ধ্বংস করে। বর্তমান মন্দিরটি তারই একটি নতুন রূপ।
প্রায় আট বছর আগে প্রথম আলোয় ‘বেহাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান’ শিরোনামে এই উদ্যানের দৈন্যদশা নিয়ে লিখেছিলাম। দীর্ঘ সময় পরও সেই বেহাল অবস্থার কোনো উত্তরণ ঘটেনি। ১৯৯৮ সালের ২৯ মার্চ শুরু হওয়া ‘ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্প’ বিভিন্ন পর্যায়ে থেমে থেমে শেষ হওয়ার কথা এ বছরের ৩০ জুন। কিন্তু কাজের পূর্বাপর ধীরগতি আবারও অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। কিন্তু কাজের অজুহাতে উদ্যানটিকে অরক্ষিত রাখার কোনো অধিকার নেই গণপূর্ত বিভাগের। আশা করি, অচিরেই আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ এই স্থান যথাযথভাবে সংরক্ষিত হবে। উদ্যানের উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করেছিল বর্তমান সরকার, শেষটাও এই সরকারের হাত দিয়েই যেন হয়। যতটা দ্রুত সম্ভব উদ্যানটিকে একটি প্রকৃত উদ্যানের আদলে নিয়ে আসা উচিত। না হয় ধীরে ধীরে সবকিছুই ধ্বংস হবে। আমরা উদ্যানের ভেতর নিটোল সবুজের পরিবর্তে আর কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত বাহন বা স্থাপনা দেখতে চাই না।
মোকারম হোসেন: প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক, সাধারণ সম্পাদক, তরুপল্লব।
ইদানীং সবচেয়ে দুর্বিসহ বিষয় হচ্ছে উদ্যানের ভেতরে অনাকাঙ্ক্ষিত মোটরবাইকের অবাধ যাতায়াত। মানুষের পায়েহাঁটা পথগুলো প্রতি মুহূর্তে অসংখ্য মোটরবাইকের উচ্চশব্দে প্রকম্পিত হচ্ছে। কিন্তু উদ্যানের ভেতর কেন এসব বাহন চলবে? একটি স্থায়ী আদেশের মাধ্যমে উদ্যানের ভেতর মোটরবাইকসহ সব ধরনের বাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা উচিত। উদ্যানের ভেতর নিয়মিত ফুটবল, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন ও ক্রিকেট খেলার আয়োজন দেখলে যে কারোরই বদ্ধমূল ধারণা হবে যে এই উদ্যানের কোনো কর্তৃপক্ষ নেই। পশ্চিম প্রান্তে রয়্যালপামের বীথি লাগোয়া অপরিষ্কার ডোবাটির কী কাজ, তাও বোধগম্য নয়। উদ্যানে যেটুকু উন্নয়নমূলক কাজ হয়, তার কয়েক গুণ ক্ষতিকর কাজ হয়। গত বর্ষায় উদ্যানজুড়ে যেসব ঘাস বোনা হয়েছিল এখন তার ছিটেফোঁটাও অবশিষ্ট নেই। অথচ ঘাস বোনার পর গোটা উদ্যানের চিত্রটাই বদলে গিয়েছিল। তখন হাঁটতে গিয়ে মনে হয়েছিল পাশ্চাত্যের কোনো উদ্যানের ভেতরে আছি। অথচ স্বল্প সময়ের ব্যবধানে এখন চারপাশে তাকালে মনে হবে এটা কোনো উদ্যান নয়, ময়লার ভাগাড়।
নব্বই দশকের গোড়ার দিকেও উদ্যানটি যথেষ্ট সংরক্ষিত ছিল। অটুট ছিল সীমানাপ্রাচীর। অনাকাঙ্ক্ষিত তেমন কিছুই চোখে পড়ত না। ভেতরের গাছপালাগুলো মোটামুটি সুশ্রী ছিল। তেমন কোনো দুর্লভ বৃক্ষ না থাকলেও এই সবুজবিবর্জিত নগরের মানুষগুলো কিছুক্ষণের জন্য হলেও এখানে স্বস্তি পেত। সব মৌসুমেই প্রকৃতিপ্রেমীরা এখানে বর্ণিল পুষ্পশোভা উপভোগ করতে পারত। তবে এখন আর উদ্যানের সেই রূপ-জৌলুস নেই।
উদ্যানের ভেতর অবৈধ পার্কিং, অস্থায়ী ঘর ও দোকানপাটে ভরে গেছে। মাঝখানের ফাঁকা স্থানে ফুটবল, ভলিবল, ক্রিকেট ও ব্যাডমিন্টন খেলা চলছে। উদ্যানের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তে হঠাৎ গজিয়েছে লালনচর্চা নামের একটি অবৈধ স্থাপনা। এখানে কেন লালনচর্চার ঘর বানাতে হবে আর এই ঘরের অনুমতিই বা মিলল কোথা থেকে তা বোধগম্য নয়। তা ছাড়া সব ধরনের উদ্যান বিনোদনের জন্য নয়। কারণ পার্ক ও উদ্যান বস্তুত আলাদা। পার্কে ব্যায়াম বা শরীরচর্চার কাজটি অনুমোদনযোগ্য হলেও উদ্যানে তা নয়। কাজেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে খেলাধুলা তো পরের কথা, শরীরচর্চাবিষয়ক কোনো স্থাপনা নির্মাণও অনুচিত কাজ। এই উদ্যান শুধু হাঁটাহাঁটির জন্য নির্ধারিত থাকুক না। পাশাপাশি দরকার হলো, বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা দোকানপাটগুলো তুলে দিয়ে সুশৃঙ্খলভাবে কয়েকটি দোকানের অনুমতি দেওয়া। তাহলে একদিকে উদ্যানের সৌন্দর্য ও শৃঙ্খলা যেমন অটুট থাকবে, তেমনি উদ্যানে বেড়াতে আসা মানুষও উপকৃত হবে। পৃথিবীর সব উন্নত দেশেই পার্ক ও উদ্যানের ভেতর ছোট ছোট সুসজ্জিত খাবারের দোকান থাকে। খাবারের দোকান কোনো অপ্রয়োজনীয় কিছু নয়। তবে এ ক্ষেত্রে দোকানের পরিধি ও অন্যান্য বিষয় নির্ধারণ করে দিতে হবে।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতার এই স্থাপনাটি নির্মাণের গোড়ার দিকে বেশ কিছু গাছপালা কেটে ফেলা হয়। এখানকার বেশির ভাগ গাছই বিদেশি। ফলে নতুন যা কিছু লাগানো হবে তা অবশ্যই দেশি হওয়া উচিত। শুধু গাছ রোপণ করলেই হবে না, সঠিক পরিচর্যাও জরুরি। কিন্তু দীর্ঘ দুই দশকে এখানকার যেসব গাছ হারিয়ে গেছে তার বিপরীতে কোনো উল্লেখযোগ্য গাছই রোপণ করা হয়নি। উদ্যানের ফাঁকা অংশে শুধু কিছু সুনির্বাচিত গাছ লাগানো যেতে পারে। আমরা অনেক সময় ঢাকায় নেই বা থাকলেও মাত্র দু-একটি আছে এমন কিছু গাছের চারা রোপণের জন্য সংরক্ষিত অথচ হাতের নাগালে রয়েছে এমন একটি স্থানের খোঁজ করি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান আমাদের সে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে।
ব্রিটিশ আমলে এটা ছিল রেসকোর্স ময়দান। ব্রিটিশরা এখানে নিয়মিত ঘোড়দৌড় উপভোগ করত। তার স্মৃতিচিহ্ন এখনো টিকে আছে উদ্যান লাগোয়া শাহবাগ থানায়। থানার বর্তমান হাজতখানার কক্ষগুলোতেই সে সময় রেসের আগে ঘোড়াগুলো বেঁধে রাখা হতো। এই কক্ষগুলো সংরক্ষণ করা উচিত। তারপর এল উত্তাল মার্চ। বাঙালি জাতি মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণের সাক্ষী হয়ে থাকল এই উদ্যান। তারই ধারাবাহিকতায় আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক বিজয়ও এখানেই অর্জিত হয়েছে। এতসব উল্লেখযোগ্য ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে উদ্যানটি। মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসররা উদ্যানের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত রমনা কালীবাড়ি এবং দুর্গামন্দিরটি ধ্বংস করে। বর্তমান মন্দিরটি তারই একটি নতুন রূপ।
প্রায় আট বছর আগে প্রথম আলোয় ‘বেহাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যান’ শিরোনামে এই উদ্যানের দৈন্যদশা নিয়ে লিখেছিলাম। দীর্ঘ সময় পরও সেই বেহাল অবস্থার কোনো উত্তরণ ঘটেনি। ১৯৯৮ সালের ২৯ মার্চ শুরু হওয়া ‘ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্প’ বিভিন্ন পর্যায়ে থেমে থেমে শেষ হওয়ার কথা এ বছরের ৩০ জুন। কিন্তু কাজের পূর্বাপর ধীরগতি আবারও অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। কিন্তু কাজের অজুহাতে উদ্যানটিকে অরক্ষিত রাখার কোনো অধিকার নেই গণপূর্ত বিভাগের। আশা করি, অচিরেই আমাদের ইতিহাস-ঐতিহ্যের গুরুত্বপূর্ণ এই স্থান যথাযথভাবে সংরক্ষিত হবে। উদ্যানের উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করেছিল বর্তমান সরকার, শেষটাও এই সরকারের হাত দিয়েই যেন হয়। যতটা দ্রুত সম্ভব উদ্যানটিকে একটি প্রকৃত উদ্যানের আদলে নিয়ে আসা উচিত। না হয় ধীরে ধীরে সবকিছুই ধ্বংস হবে। আমরা উদ্যানের ভেতর নিটোল সবুজের পরিবর্তে আর কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত বাহন বা স্থাপনা দেখতে চাই না।
মোকারম হোসেন: প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক, সাধারণ সম্পাদক, তরুপল্লব।
No comments