অর্থনীতি-নতুন ব্যাংক নিয়ে চাপান উতোর by মইনুল ইসলাম
৫ ও ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংক আরও নয়টি নতুন বাণিজ্যিক ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার সম্মতি দিয়েছে, যে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশে মোট ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৬টিতে। দুই বছর ধরে সরকারের মূল নেতৃত্বের চাপের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ড অবশেষে নতিস্বীকার করেছে।
(বোর্ডের দুজন সদস্য সংশ্লিষ্ট বোর্ড-সভায় অনুপস্থিত থেকে তাঁদের অসম্মতির বিষয়টির জানান দিয়েছেন বলে পত্রপত্রিকায় ও টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে খবর বেরিয়েছে, কিন্তু তাঁরা সভায় হাজির হয়ে তাঁদের অসম্মতি লিখিতভাবে রেকর্ড করালে সত্যিকার সৎ সাহসের পরিচায়ক হতো)।
১৯৮২ সাল থেকেই ব্যক্তি খাতে ব্যাংকের মালিকানা বণ্টন এ দেশে খুবই লোভনীয় রাজনৈতিক ও আর্থিক ‘তোহফা’ হিসেবে চালু রয়েছে। বলাবাহুল্য, এই তোহফার সঙ্গে নগদ নারায়ণের যেমন যোগসূত্র থাকে, তেমনি কারা কারা ক্ষমতাসীন একাধিপতির ‘প্রসাদ-ধন্য সাফল্যের বরপুত্র’রূপে বরিত হলেন, তা-ও জানার সুযোগ পাওয়া যায় এই বণ্টনযজ্ঞের কল্যাণে। সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদ ১৯৮২ সালের প্রথম জেনারেশন প্রাইভেট ব্যাংকের মালিকানা বিলি-বণ্টনের বাণিজ্য থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন বলে দেশে-বিদেশের মিডিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯৯১-৯৬ মেয়াদের বিএনপি সরকারের সময়ে তাঁদের নেতা ও সমর্থকেরা দ্বিতীয় জেনারেশনের ব্যাংকগুলোর মালিকানা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছিলেন। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের আওয়ামী লীগ সরকার তৃতীয় জেনারেশনের ব্যাংকগুলোর মালিকানা বণ্টনের মাধ্যমে নেতা-মন্ত্রী স্বজনদের চাহিদা মিটিয়েছে। এই তিন দফার বিলি-বণ্টনে দেশীয় মালিকানার প্রাইভেট বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ত্রিশে। এরপর আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের ১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ নিতে গিয়ে তাদের শর্তের বাঁধনে আটকে গিয়েছিল ২০০১-২০০৬ মেয়াদের বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। ওই শর্ত পূরণ করতে গিয়ে ২০০৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক আইন সংশোধন করে নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার কর্তৃত্ব পুরোপুরি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের ওপর ন্যস্ত করতে বাধ্য হয়েছিল তদানীন্তন সরকার।
২০০১-০৬ মেয়াদের সরকারের সময়ে আরেক দফা নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদানে চাপ দিয়েও মালিকানা-প্রত্যাশী লবি সফল হতে পারেনি প্রধানত আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের ভেটো ক্ষমতার কারণে। মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই নতুন উদ্যমে সরকারের প্রিয়ভাজনেরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দেন। প্রায় দুই বছরের লবিংয়ের পুরস্কার জুটল নতুন নয়টি ব্যাংক। (আরও কয়েকটি যুক্ত হতে পারে কিছুদিনের মধ্যেই।) অতএব দেশীয় ব্যক্তিমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়াবে ৩৯টি, মোট ব্যাংক ৫৬টিতে। সে জন্যই নিবন্ধের শিরোনামে ‘নতুন ব্যাংক নিয়ে চাপান উতোর’ কথাটি ব্যবহার করেছি। কবির লড়াইয়ের দুটো পর্বের নাম ‘চাপান-উতোর’। আমাদের নেতা-নেত্রী এবং তাঁদের প্রত্যক্ষ সমর্থক ও কৃপাধন্য বুদ্ধিজীবী মহল নতুন ব্যাংকের ‘প্রয়োজনীয়তা বনাম প্রয়োজনাতিরিক্ততা’ নিয়ে মিডিয়ায় যে ‘বাহাস’ ও কথার তুবড়ি ছুটিয়ে চলেছেন, তার সারবত্তা বিবেচনায় ‘চাপান-উতোর’ কথাটির অবতারণা খুবই উপযুক্ত মনে হয়েছে। কারণ ব্যাখ্যা করছি:
১৯৪৭-৭১ পর্বের পাকিস্তানের রাষ্ট্র-পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে শিল্পায়নের ধুয়া তুলে যে ২২টি পরিবারের কাছে দেশটির শিল্প সম্পদের সিংহভাগ পুঞ্জীভূতকরণের প্রক্রিয়ায় গতিসঞ্চার করেছিল, সে পৃষ্ঠপোষণের মডেলটিকে আগে অভিহিত করা হতো ‘রাষ্ট্র-লালিত পুঁজিবাদ’। বর্তমানে এটাকে বলা যায়, ক্রোনি ক্যাপিটালিজম বা ‘স্বজনপ্রীতি, আত্মীয়-তোষণ ও চাটুকারীর পুঁজিবাদ’। ইন্দোনেশিয়ার স্বৈরশাসক সুহার্তোর আত্মীয়স্বজন ও কৃপাভাজন সামরিক-সিভিল সাঙ্গাতদের রাতারাতি ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ হয়ে পুরো ইন্দোনেশিয়ার শিল্প-বাণিজ্য কুক্ষিগতকরণের ইতিহাসকে বর্ণনা করার জন্যই এই নতুন অভিধাটির প্রবর্তন করা হয়েছে উন্নয়ন ডিসকোর্সে। আইউব খানের আমলে একই ধারার ক্রোনি ক্যাপিটালিজম লালন করার কারণেই ২২ পরিবারের উত্থান ও বিকাশ ঘটেছিল। আইয়ুব খানের সন্তানেরা, বেয়াইরা এবং আরও কয়েকজন আত্মীয়-কুটুম্ব ওই ২২ পরিবারের কাতারে জায়গা করে নিয়েছিল। ওই ২২ পরিবারের মধ্যে মাত্র দুটো পরিবারের ঠিকানা ছিল পূর্ব পাকিস্তানে।
বাংলাদেশের স্বায়ত্তশাসন, স্বাধিকার ও স্বাধীনতাসংগ্রামে ব্যাংক জাতীয়করণের দাবিটি জনমানুষের কাছে প্রাণের দাবি হয়ে উঠেছিল ব্যাংকিংয়ের এহেন প্রবল পুঁজি-লুণ্ঠন ও রাজনৈতিক অপব্যবহারের হাতিয়ার হওয়ার কারণেই। ১৯৭২ সালে ব্যাংক জাতীয়করণের সিদ্ধান্তটিও সে জন্য বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল এই আশায় যে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সাধারণ উৎপাদনশীল জনগোষ্ঠীর কাছে সুলভে, কম সুদে এবং ন্যায্যতার ভিত্তিতে ব্যাংক ঋণ পৌঁছে দিতে সমর্থ হবে। যার মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের প্রধান চাবিকাঠি হয়ে উঠবে ব্যাংকিং ব্যবস্থা। বঙ্গবন্ধু সরকার অতিদ্রুত দেশের গ্রামে-গঞ্জে ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে সম্প্রসারণের জন্য তাঁর শাসনামলের তিন বছর আট মাসে কয়েক হাজার ব্যাংক শাখা স্থাপনের ব্যবস্থা করেছিল, যদিও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সংখ্যায় ছয়টিতেই স্থির ছিল। কিন্তু শাখা বিস্তারের পুরো ফল ব্যাংকগুলোর ওই সময়ের আমানতের প্রবৃদ্ধিতে প্রতিফলিত হয়নি প্রধানত জনগণের ৮২ শতাংশ ওই সময়ে দারিদ্র্যের চক্রে আবদ্ধ থাকার কারণেই। আরও দুর্ভাগ্যজনক, রাষ্ট্রায়ত্ত কল-কারখানা, সেক্টর করপোরেশন, সরকারি-আধা সরকারি-স্বায়ত্তশাসিত প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির মোচ্ছব শুরু হয়ে যাওয়ায় ওই সব লোকসানের দরিয়ায় নিমজ্জমান প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব পালন করতে হয়েছিল ব্যাংকগুলোকেই। তবুও কৃষি খাতে, কুটিরশিল্প ও ক্ষুদ্রশিল্প খাতে আমানতের উল্লেখযোগ্য অনুপাত বরাদ্দ দিতে চেষ্টা করেছে বঙ্গবন্ধুর সরকার। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় ওই সব ঋণের প্রবাহ ছিল নিতান্তই অপ্রতুল। দুঃখজনক হলো, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী আমলাতন্ত্রের কর্তা-ব্যক্তি ও ব্যাংকারদের আত্মীয়স্বজনরা ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্য ওই সময়ে ব্যাংকগুলোতে ঘন ঘন হাজিরা দিতে শুরু করেছিল। এদেরই বলা হতো ‘ব্রিফকেস ব্যবসায়ী’। ওপর মহল থেকে টেলিফোন করিয়ে ব্যাংকের উচ্চপদস্থ অফিসারদের চেম্বারে হাজির হয়ে যেত ওই তদবিরবাজেরা, ব্রিফকেসে থাকতো নানা রকম প্রকল্পের ব্যবসায়ের বা আমদানি এলসির ফাইল। শুধু তদবির নয়, প্রায়ই বখরা ভাগাভাগির চুক্তিতে উপনীত হতো সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো। এভাবেই শুরু হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশে ব্যাংক পুঁজি লুণ্ঠনের সর্বনাশা খেলা। কিন্তু তারল্যসংকটের কারণে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত খুব বেশি ‘কামেলিয়ত হাসিল’ করতে সমর্থ হয়নি পুঁজি লুটেরার দল।
স্বর্ণ-সুযোগটা অবারিত হয়েছিল সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের শাসনামলে। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের শেষ বছরটায় ব্যাংকগুলো ক্রমেই তারল্যসংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। আর ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওই স্বাস্থ্যকর অবস্থাটার ফায়দা নিলেন জিয়াউর রহমান, তাঁর রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়ায়। তাঁর কেনাবেচার রাজনীতির লোভনীয় হাতিয়ার হিসেবে অপব্যবহূত হলো ব্যাংক ঋণ এবং প্রধানত দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প ঋণ। শিল্পায়নের নামে বেধড়ক পুঁজি বিলানোর ওই মোচ্ছবের মাধ্যমেই দেশের আজকের দিনের কয়েক হাজার কোটিপতি পরিবারের নাটকীয় উত্থান পর্বটি জোরদার হয়েছিল। কারা কীভাবে ওই মোচ্ছবে শরিক হয়েছিল তার প্রামাণ্য কাহিনি সবিস্তারে উদ্ঘাটিত হয়েছে
২০১০ সালে প্রকাশিত আমার গবেষণা গ্রন্থ A Profile of Bank Loan Default in the Private sector in Bangladesh গ্রন্থে। এ ক্ষেত্রে স্বৈরশাসক এরশাদের আমলে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে প্রাইভেট ব্যাংকের মালিকানা বণ্টনের লোভনীয় দুর্নীতির অধ্যায়টি যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে, কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মাধ্যমে পুঁজি-লুণ্ঠনের ধারা দুর্বল হয়ে গেছে মনে করার কোনো কারণ নেই। আমার গবেষণা গ্রন্থে উঠে এসেছে, একই ব্যক্তি কীভাবে ৩/৪/৫ বার তার রাজনৈতিক আনুগত্য ও সমর্থন পরিবর্তন করে ‘নির্দেশিত ব্যাংক ঋণের’ সুবিধা গ্রহণে সফল হয়েছিল তার কাহিনি, কীভাবে খেলাপি ঋণের কালচারটা এ দেশে গেড়ে বসে এখন দুরারোগ্য ক্যানসারে পরিণত হয়ে গেছে, কীভাবে শত শত ব্যাংকার প্রদত্ত ঋণের বখরা বাগিয়ে গত ৩০ বছরে ব্যাংকের মালিক বনে গেছে, কীভাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়তে বাড়তে ১৯৯৬-৯৭ সালে মোট ঋণের প্রায় ৫০ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল এবং ২০০২ সালে ঋণ অবলোপন (Write-off) পদ্ধতি চালু করে পুরোনো খেলাপি ঋণের সিংহভাগকে আলাদা হিসাবের বইয়ে পার করে দিয়ে পুরো সমস্যাকে লোকচক্ষুর অন্তরালে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। আমি বারবার বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছি, আপনারা প্রতি তিন মাস অন্তর যে খেলাপি ঋণের হিসাব প্রকাশ করেন তা অসত্য, জনগণের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। কারণ, অবলোপনকৃত (Written-off) মন্দ ঋণের হিসাব আপনারা লুকাচ্ছেন। ওই অবলোপনকৃত ঋণের ১ শতাংশও যে বেশির ভাগ ব্যাংক গত ১০ বছরে আদায় করতে সমর্থ হয়নি, সে ব্যাপারে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। জনগণের সঙ্গে এহেন লুকোচুরি সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই বেমানান। একই সঙ্গে বারবার পুনর্তফসিলীকরণ করে খেলাপি ঋণ সমস্যাকে ধামাচাপা দেওয়ার রোগটাও ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাংকগুলোতে। অতএব, এ দেশে ব্যাংকিংয়ের যে খেলাপি ঋণ সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটেছে বলে দাবি করা হচ্ছে, ওটাও নির্ভেজাল প্রতারণা।
সে জন্যই আমি বলতে চাই, নতুন ব্যাংক নিয়ে চাপান-উতোর যা চলেছে, সেটা ব্যাংকিংয়ের মূল সমস্যাকে ফোকাসে নিয়ে আসছে না। সব সরকারই রাজনৈতিক পুরস্কার, গোপন নজরানা এবং আত্মীয়-তোষণের জন্য নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দিয়ে চলেছে।
ব্যাংকিং হলো ‘পরের ধনে পোদ্দারি’, আমানতকারীরাই ব্যাংক ব্যবসার প্রাণভোমরা। নতুন ব্যাংক পুরোনো ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আমানত সংগ্রহের জন্য কাড়াকাড়ি করবে, সন্দেহ নেই। কিন্তু তাতে গড় আমানতের সুদের হার এবং প্রদত্ত ঋণের গড় সুদের হারের মধ্যে যে ৬-৭ শতাংশ পার্থক্য অনেক ব্যাংকে চালু রয়ে গেছে, তা ৪ শতাংশে কমিয়ে আনা যাবে কি না কিংবা ব্যাংকের নানা সেবা-পণ্যের জন্য যে গলাকাটা দাম বা ফি চালু রাখা হয়েছে, সেগুলো যৌক্তিকভাবে কমানো হবে কি না, তা তো বোঝা যাচ্ছে না। এসব ক্ষেত্রে প্রাইভেট ব্যাংকগুলো সিন্ডিকেশন পদ্ধতিতে যোগসাজশ ও সমঝোতা গড়ে তোলার মাধ্যমে যেভাবে মুনাফাবাজি করছে, সে ব্যাপারে তো বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ-ক্ষমতা প্রয়োগ করে ব্যাংকের গ্রাহকদের রিলিফ দিতে পারছে না। দেশের ‘স্টার ঋণখেলাপি’রা যে তাঁদের রাজনৈতিক প্রতিপত্তি ব্যবহার করে খেলাপি ঋণ শোধ না করেই আবার বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান বা পরিচালক হয়ে গেছেন, সে ব্যাপারে যে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকারের নীরব সম্মতি কিংবা গোপন সহায়ক ভূমিকা রয়েছে, তা কি অস্বীকার করা যাবে? এ দেশের ব্যাংকগুলো যে কয়েক হাজার কোটি টাকা মুনাফা করছে প্রতিবছর, ওই মুনাফা তো উৎপাদনশীল বিনিয়োগকে দোহন করে চলেছে—তার কী হবে? নয়তো ওই উচ্চ মুনাফায় ভাগ বসানোর খায়েশ নতুন ব্যাংকের সংখ্যার বৃদ্ধি ঘটাতে থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক।
ড. মইনুল ইসলাম: প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।
১৯৮২ সাল থেকেই ব্যক্তি খাতে ব্যাংকের মালিকানা বণ্টন এ দেশে খুবই লোভনীয় রাজনৈতিক ও আর্থিক ‘তোহফা’ হিসেবে চালু রয়েছে। বলাবাহুল্য, এই তোহফার সঙ্গে নগদ নারায়ণের যেমন যোগসূত্র থাকে, তেমনি কারা কারা ক্ষমতাসীন একাধিপতির ‘প্রসাদ-ধন্য সাফল্যের বরপুত্র’রূপে বরিত হলেন, তা-ও জানার সুযোগ পাওয়া যায় এই বণ্টনযজ্ঞের কল্যাণে। সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদ ১৯৮২ সালের প্রথম জেনারেশন প্রাইভেট ব্যাংকের মালিকানা বিলি-বণ্টনের বাণিজ্য থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন বলে দেশে-বিদেশের মিডিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯৯১-৯৬ মেয়াদের বিএনপি সরকারের সময়ে তাঁদের নেতা ও সমর্থকেরা দ্বিতীয় জেনারেশনের ব্যাংকগুলোর মালিকানা ভাগ-বাটোয়ারা করে নিয়েছিলেন। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদের আওয়ামী লীগ সরকার তৃতীয় জেনারেশনের ব্যাংকগুলোর মালিকানা বণ্টনের মাধ্যমে নেতা-মন্ত্রী স্বজনদের চাহিদা মিটিয়েছে। এই তিন দফার বিলি-বণ্টনে দেশীয় মালিকানার প্রাইভেট বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ত্রিশে। এরপর আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের ১ দশমিক শূন্য ৩ বিলিয়ন ডলারের ঋণ নিতে গিয়ে তাদের শর্তের বাঁধনে আটকে গিয়েছিল ২০০১-২০০৬ মেয়াদের বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোট সরকার। ওই শর্ত পূরণ করতে গিয়ে ২০০৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক আইন সংশোধন করে নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার কর্তৃত্ব পুরোপুরি বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা বোর্ডের ওপর ন্যস্ত করতে বাধ্য হয়েছিল তদানীন্তন সরকার।
২০০১-০৬ মেয়াদের সরকারের সময়ে আরেক দফা নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স প্রদানে চাপ দিয়েও মালিকানা-প্রত্যাশী লবি সফল হতে পারেনি প্রধানত আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের ভেটো ক্ষমতার কারণে। মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই নতুন উদ্যমে সরকারের প্রিয়ভাজনেরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দেন। প্রায় দুই বছরের লবিংয়ের পুরস্কার জুটল নতুন নয়টি ব্যাংক। (আরও কয়েকটি যুক্ত হতে পারে কিছুদিনের মধ্যেই।) অতএব দেশীয় ব্যক্তিমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের সংখ্যা দাঁড়াবে ৩৯টি, মোট ব্যাংক ৫৬টিতে। সে জন্যই নিবন্ধের শিরোনামে ‘নতুন ব্যাংক নিয়ে চাপান উতোর’ কথাটি ব্যবহার করেছি। কবির লড়াইয়ের দুটো পর্বের নাম ‘চাপান-উতোর’। আমাদের নেতা-নেত্রী এবং তাঁদের প্রত্যক্ষ সমর্থক ও কৃপাধন্য বুদ্ধিজীবী মহল নতুন ব্যাংকের ‘প্রয়োজনীয়তা বনাম প্রয়োজনাতিরিক্ততা’ নিয়ে মিডিয়ায় যে ‘বাহাস’ ও কথার তুবড়ি ছুটিয়ে চলেছেন, তার সারবত্তা বিবেচনায় ‘চাপান-উতোর’ কথাটির অবতারণা খুবই উপযুক্ত মনে হয়েছে। কারণ ব্যাখ্যা করছি:
১৯৪৭-৭১ পর্বের পাকিস্তানের রাষ্ট্র-পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে শিল্পায়নের ধুয়া তুলে যে ২২টি পরিবারের কাছে দেশটির শিল্প সম্পদের সিংহভাগ পুঞ্জীভূতকরণের প্রক্রিয়ায় গতিসঞ্চার করেছিল, সে পৃষ্ঠপোষণের মডেলটিকে আগে অভিহিত করা হতো ‘রাষ্ট্র-লালিত পুঁজিবাদ’। বর্তমানে এটাকে বলা যায়, ক্রোনি ক্যাপিটালিজম বা ‘স্বজনপ্রীতি, আত্মীয়-তোষণ ও চাটুকারীর পুঁজিবাদ’। ইন্দোনেশিয়ার স্বৈরশাসক সুহার্তোর আত্মীয়স্বজন ও কৃপাভাজন সামরিক-সিভিল সাঙ্গাতদের রাতারাতি ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ হয়ে পুরো ইন্দোনেশিয়ার শিল্প-বাণিজ্য কুক্ষিগতকরণের ইতিহাসকে বর্ণনা করার জন্যই এই নতুন অভিধাটির প্রবর্তন করা হয়েছে উন্নয়ন ডিসকোর্সে। আইউব খানের আমলে একই ধারার ক্রোনি ক্যাপিটালিজম লালন করার কারণেই ২২ পরিবারের উত্থান ও বিকাশ ঘটেছিল। আইয়ুব খানের সন্তানেরা, বেয়াইরা এবং আরও কয়েকজন আত্মীয়-কুটুম্ব ওই ২২ পরিবারের কাতারে জায়গা করে নিয়েছিল। ওই ২২ পরিবারের মধ্যে মাত্র দুটো পরিবারের ঠিকানা ছিল পূর্ব পাকিস্তানে।
বাংলাদেশের স্বায়ত্তশাসন, স্বাধিকার ও স্বাধীনতাসংগ্রামে ব্যাংক জাতীয়করণের দাবিটি জনমানুষের কাছে প্রাণের দাবি হয়ে উঠেছিল ব্যাংকিংয়ের এহেন প্রবল পুঁজি-লুণ্ঠন ও রাজনৈতিক অপব্যবহারের হাতিয়ার হওয়ার কারণেই। ১৯৭২ সালে ব্যাংক জাতীয়করণের সিদ্ধান্তটিও সে জন্য বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল এই আশায় যে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সাধারণ উৎপাদনশীল জনগোষ্ঠীর কাছে সুলভে, কম সুদে এবং ন্যায্যতার ভিত্তিতে ব্যাংক ঋণ পৌঁছে দিতে সমর্থ হবে। যার মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের প্রধান চাবিকাঠি হয়ে উঠবে ব্যাংকিং ব্যবস্থা। বঙ্গবন্ধু সরকার অতিদ্রুত দেশের গ্রামে-গঞ্জে ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে সম্প্রসারণের জন্য তাঁর শাসনামলের তিন বছর আট মাসে কয়েক হাজার ব্যাংক শাখা স্থাপনের ব্যবস্থা করেছিল, যদিও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সংখ্যায় ছয়টিতেই স্থির ছিল। কিন্তু শাখা বিস্তারের পুরো ফল ব্যাংকগুলোর ওই সময়ের আমানতের প্রবৃদ্ধিতে প্রতিফলিত হয়নি প্রধানত জনগণের ৮২ শতাংশ ওই সময়ে দারিদ্র্যের চক্রে আবদ্ধ থাকার কারণেই। আরও দুর্ভাগ্যজনক, রাষ্ট্রায়ত্ত কল-কারখানা, সেক্টর করপোরেশন, সরকারি-আধা সরকারি-স্বায়ত্তশাসিত প্রায় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির মোচ্ছব শুরু হয়ে যাওয়ায় ওই সব লোকসানের দরিয়ায় নিমজ্জমান প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়ে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব পালন করতে হয়েছিল ব্যাংকগুলোকেই। তবুও কৃষি খাতে, কুটিরশিল্প ও ক্ষুদ্রশিল্প খাতে আমানতের উল্লেখযোগ্য অনুপাত বরাদ্দ দিতে চেষ্টা করেছে বঙ্গবন্ধুর সরকার। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় ওই সব ঋণের প্রবাহ ছিল নিতান্তই অপ্রতুল। দুঃখজনক হলো, রাজনৈতিক নেতা-কর্মী আমলাতন্ত্রের কর্তা-ব্যক্তি ও ব্যাংকারদের আত্মীয়স্বজনরা ব্যবসা-বাণিজ্য করার জন্য ওই সময়ে ব্যাংকগুলোতে ঘন ঘন হাজিরা দিতে শুরু করেছিল। এদেরই বলা হতো ‘ব্রিফকেস ব্যবসায়ী’। ওপর মহল থেকে টেলিফোন করিয়ে ব্যাংকের উচ্চপদস্থ অফিসারদের চেম্বারে হাজির হয়ে যেত ওই তদবিরবাজেরা, ব্রিফকেসে থাকতো নানা রকম প্রকল্পের ব্যবসায়ের বা আমদানি এলসির ফাইল। শুধু তদবির নয়, প্রায়ই বখরা ভাগাভাগির চুক্তিতে উপনীত হতো সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো। এভাবেই শুরু হয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশে ব্যাংক পুঁজি লুণ্ঠনের সর্বনাশা খেলা। কিন্তু তারল্যসংকটের কারণে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত খুব বেশি ‘কামেলিয়ত হাসিল’ করতে সমর্থ হয়নি পুঁজি লুটেরার দল।
স্বর্ণ-সুযোগটা অবারিত হয়েছিল সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের শাসনামলে। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের শেষ বছরটায় ব্যাংকগুলো ক্রমেই তারল্যসংকট কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছিল। আর ব্যাংকিং ব্যবস্থার ওই স্বাস্থ্যকর অবস্থাটার ফায়দা নিলেন জিয়াউর রহমান, তাঁর রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়ায়। তাঁর কেনাবেচার রাজনীতির লোভনীয় হাতিয়ার হিসেবে অপব্যবহূত হলো ব্যাংক ঋণ এবং প্রধানত দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্প ঋণ। শিল্পায়নের নামে বেধড়ক পুঁজি বিলানোর ওই মোচ্ছবের মাধ্যমেই দেশের আজকের দিনের কয়েক হাজার কোটিপতি পরিবারের নাটকীয় উত্থান পর্বটি জোরদার হয়েছিল। কারা কীভাবে ওই মোচ্ছবে শরিক হয়েছিল তার প্রামাণ্য কাহিনি সবিস্তারে উদ্ঘাটিত হয়েছে
২০১০ সালে প্রকাশিত আমার গবেষণা গ্রন্থ A Profile of Bank Loan Default in the Private sector in Bangladesh গ্রন্থে। এ ক্ষেত্রে স্বৈরশাসক এরশাদের আমলে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে প্রাইভেট ব্যাংকের মালিকানা বণ্টনের লোভনীয় দুর্নীতির অধ্যায়টি যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে, কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মাধ্যমে পুঁজি-লুণ্ঠনের ধারা দুর্বল হয়ে গেছে মনে করার কোনো কারণ নেই। আমার গবেষণা গ্রন্থে উঠে এসেছে, একই ব্যক্তি কীভাবে ৩/৪/৫ বার তার রাজনৈতিক আনুগত্য ও সমর্থন পরিবর্তন করে ‘নির্দেশিত ব্যাংক ঋণের’ সুবিধা গ্রহণে সফল হয়েছিল তার কাহিনি, কীভাবে খেলাপি ঋণের কালচারটা এ দেশে গেড়ে বসে এখন দুরারোগ্য ক্যানসারে পরিণত হয়ে গেছে, কীভাবে শত শত ব্যাংকার প্রদত্ত ঋণের বখরা বাগিয়ে গত ৩০ বছরে ব্যাংকের মালিক বনে গেছে, কীভাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়তে বাড়তে ১৯৯৬-৯৭ সালে মোট ঋণের প্রায় ৫০ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল এবং ২০০২ সালে ঋণ অবলোপন (Write-off) পদ্ধতি চালু করে পুরোনো খেলাপি ঋণের সিংহভাগকে আলাদা হিসাবের বইয়ে পার করে দিয়ে পুরো সমস্যাকে লোকচক্ষুর অন্তরালে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। আমি বারবার বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছি, আপনারা প্রতি তিন মাস অন্তর যে খেলাপি ঋণের হিসাব প্রকাশ করেন তা অসত্য, জনগণের সঙ্গে প্রতারণার শামিল। কারণ, অবলোপনকৃত (Written-off) মন্দ ঋণের হিসাব আপনারা লুকাচ্ছেন। ওই অবলোপনকৃত ঋণের ১ শতাংশও যে বেশির ভাগ ব্যাংক গত ১০ বছরে আদায় করতে সমর্থ হয়নি, সে ব্যাপারে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। জনগণের সঙ্গে এহেন লুকোচুরি সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রেই বেমানান। একই সঙ্গে বারবার পুনর্তফসিলীকরণ করে খেলাপি ঋণ সমস্যাকে ধামাচাপা দেওয়ার রোগটাও ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাংকগুলোতে। অতএব, এ দেশে ব্যাংকিংয়ের যে খেলাপি ঋণ সমস্যা থেকে উত্তরণ ঘটেছে বলে দাবি করা হচ্ছে, ওটাও নির্ভেজাল প্রতারণা।
সে জন্যই আমি বলতে চাই, নতুন ব্যাংক নিয়ে চাপান-উতোর যা চলেছে, সেটা ব্যাংকিংয়ের মূল সমস্যাকে ফোকাসে নিয়ে আসছে না। সব সরকারই রাজনৈতিক পুরস্কার, গোপন নজরানা এবং আত্মীয়-তোষণের জন্য নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দিয়ে চলেছে।
ব্যাংকিং হলো ‘পরের ধনে পোদ্দারি’, আমানতকারীরাই ব্যাংক ব্যবসার প্রাণভোমরা। নতুন ব্যাংক পুরোনো ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আমানত সংগ্রহের জন্য কাড়াকাড়ি করবে, সন্দেহ নেই। কিন্তু তাতে গড় আমানতের সুদের হার এবং প্রদত্ত ঋণের গড় সুদের হারের মধ্যে যে ৬-৭ শতাংশ পার্থক্য অনেক ব্যাংকে চালু রয়ে গেছে, তা ৪ শতাংশে কমিয়ে আনা যাবে কি না কিংবা ব্যাংকের নানা সেবা-পণ্যের জন্য যে গলাকাটা দাম বা ফি চালু রাখা হয়েছে, সেগুলো যৌক্তিকভাবে কমানো হবে কি না, তা তো বোঝা যাচ্ছে না। এসব ক্ষেত্রে প্রাইভেট ব্যাংকগুলো সিন্ডিকেশন পদ্ধতিতে যোগসাজশ ও সমঝোতা গড়ে তোলার মাধ্যমে যেভাবে মুনাফাবাজি করছে, সে ব্যাপারে তো বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ-ক্ষমতা প্রয়োগ করে ব্যাংকের গ্রাহকদের রিলিফ দিতে পারছে না। দেশের ‘স্টার ঋণখেলাপি’রা যে তাঁদের রাজনৈতিক প্রতিপত্তি ব্যবহার করে খেলাপি ঋণ শোধ না করেই আবার বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান বা পরিচালক হয়ে গেছেন, সে ব্যাপারে যে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকারের নীরব সম্মতি কিংবা গোপন সহায়ক ভূমিকা রয়েছে, তা কি অস্বীকার করা যাবে? এ দেশের ব্যাংকগুলো যে কয়েক হাজার কোটি টাকা মুনাফা করছে প্রতিবছর, ওই মুনাফা তো উৎপাদনশীল বিনিয়োগকে দোহন করে চলেছে—তার কী হবে? নয়তো ওই উচ্চ মুনাফায় ভাগ বসানোর খায়েশ নতুন ব্যাংকের সংখ্যার বৃদ্ধি ঘটাতে থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক।
ড. মইনুল ইসলাম: প্রফেসর, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।
No comments