বঙ্গ রঙ্গ ভরা by সুভাষ সাহা
বঙ্গ রঙ্গ ভরা। রঙ্গ-রসে বাঙালির চিরকালীন আসক্তি বিখ্যাত সাহিত্য সৃষ্টির উপাদান। কথার পিঠে কথা সাজিয়ে রূপকথার কল্পলোকে বাঙালি মন মুহূর্তে ভ্রমরের মতো এ-ফুল থেকে ও-ফুলে সঞ্জীবনী সুধায় আত্মহারা হতে পারে। আর সেই জাতের মানুষকে যদি বলা হয় আইন মেনে রঙ্গ-রসে মজা যাবে,
তখন বাক্যে গুরুচণ্ডালীর মতো ছন্দপতন ঘটে বাঙালির স্বাভাবিক রসবোধেও। গণতান্ত্রিক দুনিয়ার শাসক ও বিখ্যাত ব্যক্তিদের নিয়ে রঙ্গ-রসে মশহুর হতে বাধা নেই। মহাপ্রতাপশালী দেশের প্রেসিডেন্টের বিরাট বপুর কার্টুন এঁকে কার্টুনিস্ট ওই নেতা ও তার দেশ সম্পর্কে মানুষের গড়পড়তা ভাবনার প্রকাশ ঘটান। ইরাক যুদ্ধের সময় জুনিয়ার বুশকে নিয়ে আঁকা কার্টুন দুনিয়ার মানুষের রঙ্গ-রসকেই প্রতিফলিত করে। আমাদের এখানেই এরশাদ সাহেবকে নিয়ে কত মজার মজার কার্টুন হয়েছে। তবে মানুষের ইহকাল-পরকাল ও ঈশ্বর সম্পর্কিত বিশ্বাস নিয়ে রঙ্গ-রসে মশগুল হওয়ার অধিকার অশরীরী মানব মন শরীরী মর্ত্যবাসীকে দেয়নি। এখানে শুধু নিষ্কাম প্রেম রস ও ভক্তি রসের উপচারে জয়গান চলে।
যারা নানা কারণে বিখ্যাত ও সমাজের কেউকেটা হয়ে যান তাদের নিয়ে তাবৎ দুনিয়াতেই নানারূপে, নানা ভাষায়, নানা উপমায় রঙ্গ-রসের নহর বইয়ে দেওয়া চলে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে মানুষের প্রিয় মমতা দিদির কী হলো যে, তিনি তাকে নিয়ে রঙ্গ-রস করাকে একেবারেই পছন্দ করছেন না! তাকে ও ক্ষমতাসীন তৃণমূলের কয়েকজন নেতাকে নিয়ে কার্টুন আঁকার জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিখ্যাত বিজ্ঞানী-শিক্ষককে জেলে পুরে ছেড়েছেন। শুধু তাই নয়, জেলে পোরার আগে দলীয় গুণ্ডাবাহিনী ওই শিক্ষককে কত ধানে কত চাল তা কিল-ঘুষি দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পেঁৗছে যে, বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী, নোবেল জয়ী ও শিক্ষাবিদরা এক সুরে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে শুরু করেছেন। কলকাতার মধ্যবিত্তদের অনেকেই এখন নাকি আঙুল কামড়াচ্ছেন আর স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপর এটাকে আগাম খৰ বিবেচনা করে ঘুমের ঘোরেও কেঁপে কেঁপে উঠছেন।
প্রকাশ্যে ধর্ষকের পক্ষ নেওয়া, অধ্যাপক পেটানোর মতো কয়েকটি ঘটনায় দিদির কাণ্ডকারখানা দেখে এখনই কলকাতার মধ্যবিত্তের শিরে সপ্তমী চেপেছে বোধকরি। মমতা ব্যানার্জি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি সামরিক ফরমানবলে রাজ্য ক্ষমতার মসনদ হাতিয়ে নেননি। রীতিমতো ভোটযজ্ঞে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতার রশি ধরে থাকা সিপিএম জোটকে পরাজিত করে তাকে ক্ষমতায় বসতে হয়েছে। তিনি কলকাতার গড়পড়তা মধ্যবিত্ত মহিলাদের মতো সুশীলাও নন, বরং সাধারণের একেবারে কাছের মানুষ হিসেবে তার জননন্দিত রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছবি দিদি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে ফুটে উঠত। এমন মানুষটির কাছে রঙ্গ-রসের কার্টুন এতটা হুল ফোটানো জ্বালা ধরাতে পারে তা তার কট্টর সমর্থকদের কাছেও কেমন বেসুরো ঠেকছে। বিহারের লালু প্রসাদ যাদব তাকে নিয়ে আঁকা কার্টুন উপভোগ করতেন। দিদির নাখোশ হওয়ায় তিনিও বিস্মিত হয়েছেন।
আমাদের দেশে অবশ্য নেতা-নেত্রীদের নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অনেক কার্টুন হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে রঙ্গ-রসের সঙ্গে ব্যঙ্গের মিশেল ঘটলে নেতা-নেত্রীরা কী মূর্তি ধারণ করেন তা এখনও আমাদের অজানা। যারা জনগণ নিয়ে কারবার করেন এবং যারা নানা কারণে বিখ্যাত হন, তাদের হুল ফুটানো সমালোচনা ও কার্টুন হজম করার মতো মানসিকতা থাকা প্রয়োজন। কারণ তারা আর যাই হোন দেব-দেবী নন, মর্ত্যেরই মানুষ। মমতা নিজেকে ইতিমধ্যে দেবী ভাবতে শুরু করেছেন কি!
এভাবে রঙ্গ-রসে রাজ-বাধা এলে বাঙালির রবীন্দ্রনাথের লিপিকা অন্তর্গত প্যারবল 'বিদুষক' নাম চরিত্রটির মতো '...মহারাজের সভায় থাকলে আমি হাসতে ভুলে যাব' বলে কাঞ্চিপতির সভা ছেড়ে পথে এসে দাঁড়ানোর মতো অবস্থা হতে পারে।
যারা নানা কারণে বিখ্যাত ও সমাজের কেউকেটা হয়ে যান তাদের নিয়ে তাবৎ দুনিয়াতেই নানারূপে, নানা ভাষায়, নানা উপমায় রঙ্গ-রসের নহর বইয়ে দেওয়া চলে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে মানুষের প্রিয় মমতা দিদির কী হলো যে, তিনি তাকে নিয়ে রঙ্গ-রস করাকে একেবারেই পছন্দ করছেন না! তাকে ও ক্ষমতাসীন তৃণমূলের কয়েকজন নেতাকে নিয়ে কার্টুন আঁকার জন্য যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিখ্যাত বিজ্ঞানী-শিক্ষককে জেলে পুরে ছেড়েছেন। শুধু তাই নয়, জেলে পোরার আগে দলীয় গুণ্ডাবাহিনী ওই শিক্ষককে কত ধানে কত চাল তা কিল-ঘুষি দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পেঁৗছে যে, বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী, নোবেল জয়ী ও শিক্ষাবিদরা এক সুরে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে শুরু করেছেন। কলকাতার মধ্যবিত্তদের অনেকেই এখন নাকি আঙুল কামড়াচ্ছেন আর স্বাধীন মতপ্রকাশের ওপর এটাকে আগাম খৰ বিবেচনা করে ঘুমের ঘোরেও কেঁপে কেঁপে উঠছেন।
প্রকাশ্যে ধর্ষকের পক্ষ নেওয়া, অধ্যাপক পেটানোর মতো কয়েকটি ঘটনায় দিদির কাণ্ডকারখানা দেখে এখনই কলকাতার মধ্যবিত্তের শিরে সপ্তমী চেপেছে বোধকরি। মমতা ব্যানার্জি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। তিনি সামরিক ফরমানবলে রাজ্য ক্ষমতার মসনদ হাতিয়ে নেননি। রীতিমতো ভোটযজ্ঞে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতার রশি ধরে থাকা সিপিএম জোটকে পরাজিত করে তাকে ক্ষমতায় বসতে হয়েছে। তিনি কলকাতার গড়পড়তা মধ্যবিত্ত মহিলাদের মতো সুশীলাও নন, বরং সাধারণের একেবারে কাছের মানুষ হিসেবে তার জননন্দিত রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছবি দিদি উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে ফুটে উঠত। এমন মানুষটির কাছে রঙ্গ-রসের কার্টুন এতটা হুল ফোটানো জ্বালা ধরাতে পারে তা তার কট্টর সমর্থকদের কাছেও কেমন বেসুরো ঠেকছে। বিহারের লালু প্রসাদ যাদব তাকে নিয়ে আঁকা কার্টুন উপভোগ করতেন। দিদির নাখোশ হওয়ায় তিনিও বিস্মিত হয়েছেন।
আমাদের দেশে অবশ্য নেতা-নেত্রীদের নিয়ে বিভিন্ন সময়ে অনেক কার্টুন হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে। তবে রঙ্গ-রসের সঙ্গে ব্যঙ্গের মিশেল ঘটলে নেতা-নেত্রীরা কী মূর্তি ধারণ করেন তা এখনও আমাদের অজানা। যারা জনগণ নিয়ে কারবার করেন এবং যারা নানা কারণে বিখ্যাত হন, তাদের হুল ফুটানো সমালোচনা ও কার্টুন হজম করার মতো মানসিকতা থাকা প্রয়োজন। কারণ তারা আর যাই হোন দেব-দেবী নন, মর্ত্যেরই মানুষ। মমতা নিজেকে ইতিমধ্যে দেবী ভাবতে শুরু করেছেন কি!
এভাবে রঙ্গ-রসে রাজ-বাধা এলে বাঙালির রবীন্দ্রনাথের লিপিকা অন্তর্গত প্যারবল 'বিদুষক' নাম চরিত্রটির মতো '...মহারাজের সভায় থাকলে আমি হাসতে ভুলে যাব' বলে কাঞ্চিপতির সভা ছেড়ে পথে এসে দাঁড়ানোর মতো অবস্থা হতে পারে।
No comments