রোববার সারা দেশে বিএনপির হরতাল-মধ্যরাতে বনানীর রাস্তা থেকে নিখোঁজ ইলিয়াস আলী
রাজধানীর বনানীর রাস্তা থেকে নিখোঁজ হয়েছেন বিএনপির সাবেক সাংসদ এম ইলিয়াস আলী ও তাঁর গাড়িচালক মো. আনসার। মঙ্গলবার মধ্যরাতে কে বা কারা তাঁদের ধরে নিয়ে যায়। পুলিশ জানায়, রাত একটার দিকে বনানীর ২ নম্বর সড়কে তাঁর গাড়িটি পাওয়া যায়।
ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীরের অভিযোগ, সরকারের কোনো বাহিনী তাঁর স্বামীকে ধরে নিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে তিনি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ইলিয়াস আলীকে র্যাব তুলে নিয়ে গেছে। আর দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, চৌধুরী আলমের মতো ইলিয়াস আলীকেও সরকার অপহরণ করেছে। তাঁকে হাজির করা না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। ২০১০ সালের ২৫ জুন রাজধানীর ফার্মগেট এলাকা থেকে বিএনপির নেতা চৌধুরী আলম অপহূত হন। এখন পর্যন্ত তাঁর কোনো খোঁজ মেলেনি।
যোগাযোগ করা হলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক এম সোহায়েল গত রাতে বলেন, ইলিয়াস আলীকে র্যাব আটক করেনি। কারা তাঁকে ধরেছে, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত র্যাবের কাছে কোনো তথ্য নেই। র্যাবও বিষয়টি তদন্ত করছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র ও গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইলিয়াস আলী কীভাবে নিখোঁজ হয়েছেন, সে ব্যাপারে আমরা কিছু জানতে পারিনি। বনানী থানা ও গোয়েন্দা উত্তর বিভাগ বিষয়টি তদন্ত করছে।’
এ ঘটনায় বিএনপি রোববার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে। গত রাতে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে জ্যেষ্ঠ নেতাদের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া সিলেট বিভাগের চার জেলা সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে আজ সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে স্থানীয় বিএনপি। ইলিয়াসের নিখোঁজ হওয়ার প্রতিবাদে এই চার জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রশীদ বলেন, মঙ্গলবার রাত একটার দিকে মহাখালীর আমতলী এলাকাসংলগ্ন বনানী ২ নম্বর সড়কে ইলিয়াস আলীর গাড়িটি পাওয়া যায়। গাড়ির ভেতরে চালক আনসারের মুঠোফোনটি পাওয়া যায়। এ বিষয়ে ইলিয়াসের স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরেজিস্ট্রার (প্রশাসন-৩) তাহসিনা রুশদীর সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাত একটার দিকে মহাখালীর সাউথ পয়েন্ট স্কুলসংলগ্ন সড়ক থেকে দরজা খোলা অবস্থায় গাড়িটি পাওয়া যায়। রাস্তার মাঝে পড়ে থাকা গাড়িটির কারণে যানজট সৃষ্টি হলে টহলে থাকা সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাহবুবুর রহমান ঠেলে গাড়িটি সাউথ পয়েন্ট স্কুলের সামনের ফাঁকা জায়গায় নিয়ে যান। গাড়ির ভেতরে পাওয়া মুঠোফোন নিয়ে এএসআই মাহবুব কয়েকজনকে ফোন করে গাড়ির মালিক তাহসিনা রুশদীরের নম্বর পান। রাত দেড়টার দিকে ওই এএসআই তাহসিনার নম্বরে ফোন করে গাড়ি পড়ে থাকার বিষয়টি জানান। তাঁর কাছ থেকে পুলিশ জানতে পারে, গাড়ির আরোহী ছিলেন ইলিয়াস আলী। আর মুঠোফোনটি চালকের।
ইলিয়াসের স্ত্রী জিডিতে উল্লেখ করেন, মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টার দিকে চালক আনসারকে সঙ্গে নিয়ে বনানীর বাসা থেকে বের হন ইলিয়াস আলী। রাত দেড়টার দিকে পুলিশের একজন কর্মকর্তা তাঁকে ফোন করে গাড়ি পাওয়ার বিষয়টি জানান। এরপর তিনি ঘটনাটি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও র্যাবের মহাপরিচালককে জানান।
যে রাস্তায় গাড়িটি পাওয়া যায়: ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে মহাখালীর আমতলী হয়ে ঢুকেই হাতের বাঁ দিকে সাউথ পয়েন্ট স্কুলসংলগ্ন বনানী ২ নম্বর সড়ক। রাস্তাটি চওড়ায় ১০-১১ ফুট। দুটি গাড়ি কোনোমতে পাস কাটাতে পারে। আমতলী থেকে ওই রাস্তায় ঢুকে ১০০ গজ দূরেই পড়ে ছিল ইলিয়াসের গাড়িটি। যেখান থেকে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে, তার একপাশে মাঠ আর অন্য পাশে নির্মাণাধীন নূরানী টাওয়ার।
পেছন থেকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছিল: প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ ধারণা করছে, অন্য কোনো গাড়ি পেছন থেকে ইলিয়াস আলীর গাড়িকে ধাক্কা দেয়। এরপর গাড়ি থামলে ইলিয়াস ও গাড়িচালককে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।
টয়োটা এক্স এক্সিও (ঢাকা মেট্রো গ ২৯-৪৪১৫) গাড়িটির পেছনে মাঝ বরাবর জিআই পাইপের বাম্পার বাঁকা অবস্থায় পাওয়া গেছে। গাড়ির পেছনের অংশেও রং চটে গেছে। ইলিয়াসের স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর নামে কেনা গাড়িটি একদমই নতুন, ঘটনার সময় গাড়ির পেছনে কোনো গাড়ি ধাক্কা দিয়েছে বলে তাঁরও ধারণা।
গাড়িটি যেখানে পড়ে ছিল, তার পাশেই নির্মাণাধীন নূরানী টাওয়ারের নিরাপত্তাকর্মী লুৎফর রহমান বলেন, রাতে একটি গাড়ির সঙ্গে আরেকটি গাড়ির ধাক্কা লাগার শব্দ তিনি শুনেছেন। এরপর কিছু উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের আওয়াজও পেয়েছেন। তবে ঘটনাটি টিনের বেড়ার ওই পারে হওয়ায় তিনি কিছু দেখতে পাননি।
ইলিয়াস আলীর অপর গাড়িচালক মনির বলেন, রাত পৌনে ১০টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে ইলিয়াস আলী রূপসী বাংলা হোটেলে যান বলে তাঁকে চালক আনসার জানান। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় গাড়িতে আরও দুজন লোক ছিলেন। তাঁদের মনির চেনেন না বলে জানান। রাত পৌনে ১২টার দিকে আনসার বাসার পাশের একটি দোকানে ফোন করে ইলিয়াসের নম্বরে টাকা পাঠাতে বলেন। এরপর আনসারের সঙ্গে আর তাঁর যোগাযোগ হয়নি।
পুলিশ, বিএনপির নেতা ও ইলিয়াসের স্বজনেরা ধারণা করছেন, দুজন ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য অন্তত সাত-আটজন লোক প্রয়োজন। তা ছাড়া ইলিয়াসের মতো ব্যক্তিকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া খুব সহজ নয়। আর কিছু না হোক, তিনি অন্তত চিৎকার করবেন।
বনানীর বাসায় ভিড়: গতকাল সকাল থেকেই বিএনপির শত শত নেতা-কর্মী ইলিয়াস আলীর বাসায় জড়ো হন। বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা ভিড় জমান। ইলিয়াসের নির্বাচনী এলাকা সিলেট থেকেও আসেন নেতা-কর্মীরা।
ইলিয়াসের মালিকানাধীন সিলেট হাউস নামের ছয়তলা ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে কয়েক দিন আগে। এই বাড়ির পঞ্চম তলায় ছয় মাস আগে পরিবার নিয়ে উঠেন তিনি।
বাড়ির নিচতলার বৈঠকখানায় বসে ছিলেন বিমর্ষ তাহসিনা রুশদীর। সাংবাদিক ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি। কখনো কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁর দুই ছেলে আবরার ইলিয়াস ও লাবিব সাহারা এবং মেয়ে সায়ারা নাওয়াল বাসার অন্য কক্ষে ছিল। বড় ছেলে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। ছোটটি দশম আর মেয়েটি দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে।
বিকেলে তাহসিনা রুশদীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তাঁর কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। সাংবাদিকদের মুখের দিকে চেয়ে বসে আছি। আপনারা যদি কিছু জানেন, তাহলে আমাদের জানান। বড় ছেলেটার কাল পরীক্ষা। ওরা কিছু খাচ্ছে না।’
সকালে বনানীর বাসায় একে একে আসেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ অসংখ্য নেতা-কর্মী। সেখানে রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, তিনি পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও র্যাবের মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
ইলিয়াস আলী ১৯৯২ সালে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হন। ২০০১ সালে সিলেট-৩ আসন (বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ) থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতিও তিনি। সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের মৃত্যুর পর বৃহত্তর সিলেটের রাজনীতিতে তাঁর ব্যাপক প্রভাব তৈরি হয়।
যোগাযোগ করা হলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক এম সোহায়েল গত রাতে বলেন, ইলিয়াস আলীকে র্যাব আটক করেনি। কারা তাঁকে ধরেছে, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত র্যাবের কাছে কোনো তথ্য নেই। র্যাবও বিষয়টি তদন্ত করছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মুখপাত্র ও গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইলিয়াস আলী কীভাবে নিখোঁজ হয়েছেন, সে ব্যাপারে আমরা কিছু জানতে পারিনি। বনানী থানা ও গোয়েন্দা উত্তর বিভাগ বিষয়টি তদন্ত করছে।’
এ ঘটনায় বিএনপি রোববার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে। গত রাতে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে জ্যেষ্ঠ নেতাদের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া সিলেট বিভাগের চার জেলা সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জে আজ সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে স্থানীয় বিএনপি। ইলিয়াসের নিখোঁজ হওয়ার প্রতিবাদে এই চার জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ, সড়ক অবরোধ, সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রশীদ বলেন, মঙ্গলবার রাত একটার দিকে মহাখালীর আমতলী এলাকাসংলগ্ন বনানী ২ নম্বর সড়কে ইলিয়াস আলীর গাড়িটি পাওয়া যায়। গাড়ির ভেতরে চালক আনসারের মুঠোফোনটি পাওয়া যায়। এ বিষয়ে ইলিয়াসের স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরেজিস্ট্রার (প্রশাসন-৩) তাহসিনা রুশদীর সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাত একটার দিকে মহাখালীর সাউথ পয়েন্ট স্কুলসংলগ্ন সড়ক থেকে দরজা খোলা অবস্থায় গাড়িটি পাওয়া যায়। রাস্তার মাঝে পড়ে থাকা গাড়িটির কারণে যানজট সৃষ্টি হলে টহলে থাকা সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মাহবুবুর রহমান ঠেলে গাড়িটি সাউথ পয়েন্ট স্কুলের সামনের ফাঁকা জায়গায় নিয়ে যান। গাড়ির ভেতরে পাওয়া মুঠোফোন নিয়ে এএসআই মাহবুব কয়েকজনকে ফোন করে গাড়ির মালিক তাহসিনা রুশদীরের নম্বর পান। রাত দেড়টার দিকে ওই এএসআই তাহসিনার নম্বরে ফোন করে গাড়ি পড়ে থাকার বিষয়টি জানান। তাঁর কাছ থেকে পুলিশ জানতে পারে, গাড়ির আরোহী ছিলেন ইলিয়াস আলী। আর মুঠোফোনটি চালকের।
ইলিয়াসের স্ত্রী জিডিতে উল্লেখ করেন, মঙ্গলবার রাত পৌনে ১০টার দিকে চালক আনসারকে সঙ্গে নিয়ে বনানীর বাসা থেকে বের হন ইলিয়াস আলী। রাত দেড়টার দিকে পুলিশের একজন কর্মকর্তা তাঁকে ফোন করে গাড়ি পাওয়ার বিষয়টি জানান। এরপর তিনি ঘটনাটি পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও র্যাবের মহাপরিচালককে জানান।
যে রাস্তায় গাড়িটি পাওয়া যায়: ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে মহাখালীর আমতলী হয়ে ঢুকেই হাতের বাঁ দিকে সাউথ পয়েন্ট স্কুলসংলগ্ন বনানী ২ নম্বর সড়ক। রাস্তাটি চওড়ায় ১০-১১ ফুট। দুটি গাড়ি কোনোমতে পাস কাটাতে পারে। আমতলী থেকে ওই রাস্তায় ঢুকে ১০০ গজ দূরেই পড়ে ছিল ইলিয়াসের গাড়িটি। যেখান থেকে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে, তার একপাশে মাঠ আর অন্য পাশে নির্মাণাধীন নূরানী টাওয়ার।
পেছন থেকে ধাক্কা দেওয়া হয়েছিল: প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ ধারণা করছে, অন্য কোনো গাড়ি পেছন থেকে ইলিয়াস আলীর গাড়িকে ধাক্কা দেয়। এরপর গাড়ি থামলে ইলিয়াস ও গাড়িচালককে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।
টয়োটা এক্স এক্সিও (ঢাকা মেট্রো গ ২৯-৪৪১৫) গাড়িটির পেছনে মাঝ বরাবর জিআই পাইপের বাম্পার বাঁকা অবস্থায় পাওয়া গেছে। গাড়ির পেছনের অংশেও রং চটে গেছে। ইলিয়াসের স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর নামে কেনা গাড়িটি একদমই নতুন, ঘটনার সময় গাড়ির পেছনে কোনো গাড়ি ধাক্কা দিয়েছে বলে তাঁরও ধারণা।
গাড়িটি যেখানে পড়ে ছিল, তার পাশেই নির্মাণাধীন নূরানী টাওয়ারের নিরাপত্তাকর্মী লুৎফর রহমান বলেন, রাতে একটি গাড়ির সঙ্গে আরেকটি গাড়ির ধাক্কা লাগার শব্দ তিনি শুনেছেন। এরপর কিছু উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের আওয়াজও পেয়েছেন। তবে ঘটনাটি টিনের বেড়ার ওই পারে হওয়ায় তিনি কিছু দেখতে পাননি।
ইলিয়াস আলীর অপর গাড়িচালক মনির বলেন, রাত পৌনে ১০টার দিকে বাসা থেকে বের হয়ে ইলিয়াস আলী রূপসী বাংলা হোটেলে যান বলে তাঁকে চালক আনসার জানান। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় গাড়িতে আরও দুজন লোক ছিলেন। তাঁদের মনির চেনেন না বলে জানান। রাত পৌনে ১২টার দিকে আনসার বাসার পাশের একটি দোকানে ফোন করে ইলিয়াসের নম্বরে টাকা পাঠাতে বলেন। এরপর আনসারের সঙ্গে আর তাঁর যোগাযোগ হয়নি।
পুলিশ, বিএনপির নেতা ও ইলিয়াসের স্বজনেরা ধারণা করছেন, দুজন ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যাওয়ার জন্য অন্তত সাত-আটজন লোক প্রয়োজন। তা ছাড়া ইলিয়াসের মতো ব্যক্তিকে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া খুব সহজ নয়। আর কিছু না হোক, তিনি অন্তত চিৎকার করবেন।
বনানীর বাসায় ভিড়: গতকাল সকাল থেকেই বিএনপির শত শত নেতা-কর্মী ইলিয়াস আলীর বাসায় জড়ো হন। বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারা ভিড় জমান। ইলিয়াসের নির্বাচনী এলাকা সিলেট থেকেও আসেন নেতা-কর্মীরা।
ইলিয়াসের মালিকানাধীন সিলেট হাউস নামের ছয়তলা ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে কয়েক দিন আগে। এই বাড়ির পঞ্চম তলায় ছয় মাস আগে পরিবার নিয়ে উঠেন তিনি।
বাড়ির নিচতলার বৈঠকখানায় বসে ছিলেন বিমর্ষ তাহসিনা রুশদীর। সাংবাদিক ও দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি। কখনো কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁর দুই ছেলে আবরার ইলিয়াস ও লাবিব সাহারা এবং মেয়ে সায়ারা নাওয়াল বাসার অন্য কক্ষে ছিল। বড় ছেলে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। ছোটটি দশম আর মেয়েটি দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ে।
বিকেলে তাহসিনা রুশদীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা তাঁর কোনো খোঁজ পাচ্ছি না। সাংবাদিকদের মুখের দিকে চেয়ে বসে আছি। আপনারা যদি কিছু জানেন, তাহলে আমাদের জানান। বড় ছেলেটার কাল পরীক্ষা। ওরা কিছু খাচ্ছে না।’
সকালে বনানীর বাসায় একে একে আসেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ অসংখ্য নেতা-কর্মী। সেখানে রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, তিনি পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও র্যাবের মহাপরিচালকের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
ইলিয়াস আলী ১৯৯২ সালে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক হন। ২০০১ সালে সিলেট-৩ আসন (বিশ্বনাথ-বালাগঞ্জ) থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। বর্তমানে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক। সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতিও তিনি। সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানের মৃত্যুর পর বৃহত্তর সিলেটের রাজনীতিতে তাঁর ব্যাপক প্রভাব তৈরি হয়।
No comments