ব দ লে যা ও ব দ লে দা ও মি ছি ল-আতঙ্কের নাম নৌ-দুর্ঘটনা by সাজ্জাদ হোসাইন

‘বদলে যাও বদলে দাও মিছিল’-এ নির্বাচিত চারটি ইস্যু নিয়ে অব্যাহত আলোচনা হচ্ছে। আজ নৌ-দুর্ঘটনার বিষয়ে বদলে যাও বদলে দাও মিছিল ব্লগের নিয়মিত লেখক আবুল খায়ের ও সাজ্জাদ হোসাইন-এর সমাধানমূলক অভিমতসহ আরও তিনজন লেখকের নির্বাচিত মন্তব্য ছাপা হলো।


বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক যোগাযোগব্যবস্থার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সুপ্রাচীন মাধ্যম হলো জলপথ। নদীমাতৃক বাংলাদেশে ঐতিহ্যগতভাবেই নৌপথের ব্যবহার ব্যাপক। বরিশাল বিভাগের সব জেলায় এবং চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের বেশ কয়েকটি জেলায় জনগণের আন্তজেলা ও ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হলো নদীপথ। সমগ্র বাংলাদেশেই স্বল্প ব্যয় ও স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াতের জন্য নদীপথ খুব জনপ্রিয়। কিন্তু এক দশক ধরে ধারাবাহিক নৌ-দুর্ঘটনায় ব্যাপক প্রাণহানিতে এ জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম এখন রীতিমতো আতঙ্কের নাম।
অতীতের অনেক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা মানুষের মনে এখনো হাহাকার করে বেড়ায়। ব্যাপক প্রাণহানিতে পরিবারগুলোর যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা আর পুষিয়ে তোলা সম্ভব হয়নি। এসব দুর্ঘটনা প্রাকৃতিক হলে মানুষ কিছুটা সান্ত্বনা পেত। কিন্তু দুর্ঘটনাগুলো যে রাষ্ট্রযন্ত্রের উদাসীনতার ফল, তা তদন্ত রিপোর্ট দেখলেই বোঝা যায়।
কোস্ট ট্রাস্ট নামের বেসরকারি একটি সংস্থার প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, ৭০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে নকশাজনিত কারণে। স্বাধীনতার পর ৪১ বছরে নৌ-দুর্ঘটনা নিয়ে মামলা হয়েছে ২০ হাজারেরও বেশি, এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ২০০টি মামলা। কিন্তু এসব মামলায় কারও শাস্তি হয়নি। এ বড় অদ্ভুত ব্যাপার! এটা সব সম্ভবের দেশ বলেই হয়তো সম্ভব। আর এ উদাসীনতার ফল হচ্ছে বারবার নৌ-দুর্ঘটনা ঘটা। এ অবস্থা আর কত দিন চলবে? সরকার এবং জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে এর অবসান করতে। সাধারণ জনগণের কণ্ঠ থেকে জোরালো আওয়াজ তুলতে হবে কিছু নির্দিষ্ট পদক্ষেপের ব্যাপারে।
প্রথম আলোর www.bodlejaobodledao.com ব্লগের মাধ্যমে চমৎকার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে নৌ-দুর্ঘটনা বন্ধে ইস্যুভিত্তিক নাগরিক আলোচনার প্ল্যাটফর্ম গড়ে। এখানে শিক্ষিত সমাজ তাদের মেধা, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার আলোকে আওয়াজ তুলে সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টি করছে। পরিত্রাণের জন্য এই অংশগ্রহণমূলক উদ্যোগ খুবই কার্যকর।
নৌ-দুর্ঘটনা রোধে প্রথমে আমাদের কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে। এর মধ্যে প্রতিটি যাত্রীবাহী লঞ্চের নকশা ত্রুটিমুক্ত, দক্ষ চালক নিয়োগ এবং নৌ- নিরাপত্তা আইন প্রয়োগ ও কার্যকর অন্যতম। এ ছাড়া শক্তিশালী নৌপুলিশ বাহিনী গড়ে তুলতে হবে। তারা সজাগ দৃষ্টি রাখবে, যেন বেপরোয়া লঞ্চ না চলে, সতর্কতামূলক চিহ্ন ছাড়া নদীপথে যেন মাছ ধরার কোনো জাল না থাকে, রাতে নিষিদ্ধ মালবাহী ট্রলার যাতে চলতে না পারে। সর্বোপরি নিশ্চিত করতে হবে আবহাওয়ার পূর্বাভাস চালক যেন সময়মতো পান। এমন ছোট ছোট গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপই পারে নৌ-দুর্ঘটনা নামের ব্যাধি থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে।
সাজ্জাদ হোসাইন: বদলে যাও বদলে দাও মিছিল ব্লগের লেখক
sazzad77s@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.