চরাচর-জীববৈচিত্র্য সংকট by আজিজুর রহমান

বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। আয়তনে ছোট হলেও প্রাকৃতিকভাবে জীববৈচিত্র্যে খুবই সমৃদ্ধ। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এখনো টিকে আছে অনেক বন্য প্রাণী। সামগ্রিকভাবে বনের পরিমাণ দেশের মোট আয়তনের এক-পঞ্চমাংশের কাছাকাছি হলেও সেই তুলনায় বন্য প্রাণীর সংখ্যা অনেক বেশি।


বাংলাদেশের আবহাওয়া, বিশেষ করে তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুর চাপ, ঋতুচক্র, পরিমিত বৃষ্টিপাত এবং পানি ও মাটির উপাদান ইত্যাদি বন্য প্রাণীর উপযোগী হওয়ায় জীববৈচিত্র্যের এই সমৃদ্ধি। ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অব বাংলাদেশের (ডাবি্লউটিবি) পরিবেশিত তথ্য থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে ৯০৩ প্রজাতির বন্য প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে ৩০-৩৫টি উভচর, ১২৬টি সরীসৃপ, ৬৫০টি পাখি ও ১১৩টি স্তন্যপায়ী প্রজাতি রয়েছে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, এসব বন্য প্রাণীর মধ্যে ১৫০ প্রজাতিই এখন বিলুপ্তির পথে। স্তন্যপায়ী, পাখি, সরীসৃপ ও উভচর প্রজাতির এসব প্রাণীর বেশির ভাগই অতিবিপন্ন, বিপন্ন ও ক্ষতিগ্রস্তের তালিকায়। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের ১০ প্রজাতির ইতিমধ্যেই বিলুপ্তি ঘটেছে। এ ছাড়া ৪৩টি প্রজাতি রয়েছে বিলুপ্তির পথে। বাড়তে থাকা জনসংখ্যার চাপ, ব্যাপক হারে বন উজাড়, বন্য প্রাণী শিকার, নদীর নাব্যতা হ্রাস, দূষণ ও ভারসাম্যহীন পরিবেশ, জলবায়ুর পরিবর্তন ইত্যাদি বন্য প্রাণী বিলুপ্তির কারণ। শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বে বন্য প্রাণী বিলুপ্তির ঘটনা ঘটছে অব্যাহতভাবে। ১৯৭০ সাল থেকে এক-তৃতীয়াংশ প্রাণী পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এর মধ্যে স্থলচর ২৫ শতাংশ, সামুদ্রিক ২৮ শতাংশ ও মিঠা পানির প্রাণী ২৯ শতাংশ। জিওলজিক্যাল সোসাইটি অব লন্ডন এ তথ্য প্রকাশ করে। তারা আরো জানায়, এ বিলুপ্তি থেকে মানুষ প্রজাতিও বাদ পড়েনি। আর এই প্রজাতির বিলুপ্তির পরিমাণ ১ শতাংশ। পরিবেশদূষণ, মাত্রাতিরিক্ত কৃষিকাজ পরিচালনা, নগরসভ্যতার ব্যাপক সম্প্রসারণ, অতিরিক্ত মৎস্য আহরণ এবং বেপরোয়া বন্য প্রাণী শিকার এই বিলুপ্তির কারণ। বিশ্ব বন্য প্রাণী সংরক্ষণ সংস্থার (ডাবি্লউডাবি্লউএফ) বিজ্ঞানবিষয়ক প্রকাশনা এবং অনলাইনে পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে ৪০০ প্রজাতির মাছ, উভচর, সরীসৃপ, পাখি ও স্তন্যপায়ী প্রাণীর ওপর গবেষণা চালিয়ে জিওলজিক্যাল সোসাইটি অব লন্ডন এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে আরো বলা হয়, ১৯৭০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত ৩৫ বছরে ৩০ শতাংশ প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে। ১৯৯২ সালে স্বাক্ষরিত হয় জীববৈচিত্র্য সনদ। সদস্য দেশগুলো ২০১০ সাল নাগাদ জীববৈচিত্র্যের বিলুপ্তির হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনতে ২০০২ সালে অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু এ অঙ্গীকার শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। ডাবি্লউডাবি্লউএফ বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণেও আগামী ৩০ বছরে বিশ্বের জীববৈচিত্র্যকে আরো হুমকি মোকাবিলা করতে হবে। সংস্থাটির যুক্তরাজ্য শাখার প্রচার বিভাগের প্রধান কলিন বাটফিল্ড বলেন, আমাদের সবার জীবনের ওপর জীববৈচিত্র্যের প্রভাব অপরিসীম। এর বিনাস ঠেকাতে না পারলে আমরা ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হব, বিশ্বে খাদ্য সংকট তীব্রতর হবে, রোগবালাই ব্যাপক আকার ধারণ করবে। তাই প্রকৃতি, পরিবেশ ও প্রাণের অস্তিত্ব রক্ষায় ডাবি্লউডাবি্লউএফ ২০২০ সাল নাগাদ বনভূমির উজাড় হওয়ার মাত্রা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার জন্য বিশ্বের দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
আজিজুর রহমান

No comments

Powered by Blogger.