১৮ দলের জোট হলো-তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্যই এই মোর্চা : খালেদা
বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলের সঙ্গে আরো ১২টি দল যোগ করে '১৮ দলীয় জোট' নামে নতুন মোর্চা গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহাল করে তার কাছে অবিলম্বে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানিয়ে বলেন, এই লক্ষ্যেই ১৮ দলীয় জোট গঠন করা হয়েছে।
চূড়ান্ত বিজয় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে।
জোটের ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, সরকারের মনে রাখা উচিত, জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলনের মধ্য দিয়েই সামাজিক শান্তি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হতে পারে। সংঘাত ও প্রতিহিংসার পথ বিপর্যয়ই ডেকে আনবে।
খালেদা জিয়া সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, 'চক্রান্ত যত কুটিল হোক, নির্যাতন যত বর্বর হোক, জনজোয়ার কখনো স্তব্ধ হয় না। জনগণ আজ ঐক্যবদ্ধ। আমাদের অপ্রতিরোধ্য আন্দোলনের জয় হবেই।' চলমান আন্দোলন বেগবান করতে তিনি ওয়ার্ড থেকে জেলা-মহানগর পর্যন্ত নতুন জোটের সংগ্রাম কমিটি গঠনের আহ্বানও জানান।
গতকাল বুধবার বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সের মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে চারদলীয় জোট বিলুপ্ত করে ১৮ দলীয় জোটের ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করেন খালেদা জিয়া। বিকেল পৌনে ৫টার দিকে তিনি মঞ্চে ওঠেন। আগের রাতে ১৮ দলের নেতারা জোটের ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন।
নতুন জোটের দলগুলো
১৮ দলীয় জোটের দলগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া; বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমদ; বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ; লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ; খেলাফত মজলিস, আমির
মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক; ইসলামী ঐক্যজোট, চেয়ারম্যান মুফতি ফজলুল হক আমিনী; কল্যাণ পার্টি, চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক; জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), সভাপতি শফিউল আলম প্রধান; ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নীলু; ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্তুজা; বাংলাদেশ লেবার পার্টি, চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান; মুসলিম লীগ, নির্বাহী সভাপতি এ এইচ এম কামরুজ্জামান; বাংলাদেশ ন্যাপ, চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি; ন্যাপ ভাসানী, চেয়ারম্যান শেখ আনোয়ারুল হক; ইসলামিক পার্টি, চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবদুল মবিন; ডেমোক্রেটিক লীগ, সভাপতি অলি আহাদ; জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, সভাপতি শায়খ আবদুল মমিন; পিপলস লীগ, চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গরীবে নেওয়াজ।
জোটনেত্রী খালেদা জিয়া ঘোষণাপত্র পাঠ করে শোনান। সেখানে জোট গঠনের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বিবৃত ছিল। ঘোষণাপত্রে সব দল-মত-পেশাজীবী মানুষের দাবি অনুযায়ী তাদের স্বার্থ রক্ষায় সক্ষম একটি সরকার গঠনের লক্ষ্যে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি সংবিধানে পুনর্বহাল করে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করার আহ্বান জানানো হয়। ঘোষণাপত্রে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর ফলে উদ্ভূত পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা, অর্থনীতি, দলীয়করণ, সীমান্তে হত্যা, পুঁজিবাজারসহ সরকারের অপশাসন, দুর্নীতি, নতজানু পররাষ্ট্রনীতির মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশের স্বার্থ রক্ষা, আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকার হরণ, বিরোধী দলের ওপর সরকারের দমননীতি, গণমাধ্যমের ওপর সরকারি হস্তক্ষেপ প্রভৃতি বিষয় বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে ঘোষণাপত্রটি পাঠ করে খালেদা জিয়া। ভবিষ্যতে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে কী করবে তারও তথ্য তুলে ধরেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের বলেন, 'চারদলীয় জোটের মতোই ১৮ দলীয় জোট অনেক শক্তিশালী। আমরা বর্তমান সরকারের পতনের লক্ষ্যে আন্দোলনের জন্যই এই জোট করেছি।' ১৮ দলীয় জোটের সাতটি দলের নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন করা নেই, তাদের নিয়ে আন্দোলন কতটুকু জোরদার হবে- এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এখন আমাদের সঙ্গে জনগণ রয়েছে। সরকার গণবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তাদের সঙ্গে জনগণ নেই। বিএনপির আন্দোলন এমনিতেই শক্তিশালী হবে। নতুন জোট গঠনের ফলে আন্দোলন আরো বেগবান হবে। সরকার ভাড়া করে এমনকি আইসক্রিম ও ললিপপ খাইয়েও তাদের কর্মসূচিতে লোক আনতে পারছে না।'
জোট সম্প্রসারণ অনুষ্ঠানে ছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আর এ গনি, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আবদুল হালিম, অধ্যাপক এম এ মান্নান, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির অধ্যাপক নাজির আহমেদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, মিয়া গোলাম পরওয়ার, মহানগর নায়েবে আমির হামিদুর রহমান আযাদ, সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম বুলবুল, সহকারী সেক্রেটারি মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন ও ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ।
আরো ছিলেন ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামী, এলডিপির মহাসচিব অধ্যাপিকা জাহানারা বেগম, বিজেপির মহাসচিব শামীম আল মামুন, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, বাংলাদেশ লেবার পার্টির মহাসচিব হামদুল্লাহ আল মেহেদী, মুসলিম লীগের মহাসচিব আতিকুল ইসলাম, এনডিপির মহাসচিব আলমগীর মজুমদার, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মুফতি ওয়াক্কাস, ন্যাপ ভাসানীর মহাসচিব হাসরত খান ভাসানী, এনপিপির মহাসচিব ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবদুর রশীদ প্রধান, কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আবদুল মালেক ও পিপলস লীগের মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুব হোসেন।
No comments