প্রাপ্তি জানার অধিকার দেশবাসীর আছে-মন্ত্রী-আমলাদের বিদেশ সফর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বৃহস্পতিবার সচিবদের সঙ্গে যে বৈঠক করেছিলেন, তাতে বেশ কয়েকজন সচিব অনুপস্থিত ছিলেন দেশের বাইরে থাকার কারণে। বিষয়টি তাঁর নজর এড়ায়নি। প্রধানমন্ত্রী সচিবদের ঘন ঘন বিদেশ সফরে বিরক্তি প্রকাশ করেন এবং জরুরি রাষ্ট্রীয় প্রয়োজন ছাড়া সচিবদের বিদেশ সফরে না যাওয়ার কথা বলেন।


সেদিনের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের কাজের ধীরগতি এবং অগ্রাধিকার ঠিক করতে না পারার জন্যও সচিবদের দায়ী করেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য ও মনোভাবের মধ্য দিয়ে যে সত্যটি বেরিয়ে এসেছে তা হলো, জনপ্রশাসনের শীর্ষ পদে আসীন ব্যক্তিরা সুযোগ পেলেই বিদেশ সফরে যান। সচিবেরা গেলে তাঁদের অধীনেরাও যান। এতে যে মন্ত্রণালয়ের কাজে সমস্যা হয়, সে বিষয়ে বিন্দুমাত্র সংশয় নেই।
তবে বৈঠকে যে বিষয়টি আলোচনায় আসেনি কিংবা প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেননি তা হলো, শুধু সচিব বা তাঁদের অধীনেরাই নন, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-সাংসদেরাও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার নামে ঘন ঘন বিদেশ সফরে যাচ্ছেন। কিন্তু এসব সফরের ফল বা প্রাপ্তি সম্পর্কে দেশবাসী কিছুই জানে না কিংবা তাদের জানানো হয় না। কোনো দেশে ফ্লাইট পুনরায় চালুর জন্য দেনদরবার করতে কিংবা অন্য দেশের বন্দর-সুবিধা দেখতে বিরাট লটবহর নিয়ে মন্ত্রীদের বিদেশ সফর কতটা যৌক্তিক, তা-ও ভেবে দেখা প্রয়োজন। অনেক সময় দেখা যায়, একই মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব দুজনই বিদেশ সফর করছেন। সে ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ড কীভাবে চলে? তাঁদের বিদেশ সফরে যে বিপুল অঙ্কের অর্থ খরচ হয়, তার জোগান দেয় দেশের সাধারণ মানুষ। অতএব, তাদের জানার অধিকার আছে, কোন খাতে কত টাকা খরচ হলো এবং তার বিনিময়ে দেশবাসী কী পেল?
প্রধানমন্ত্রী সচিবদের ঘন ঘন বিদেশ সফরে উষ্মা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু সচিব বা যেকোনো পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তার বিদেশে যেতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুমোদন জরুরি। কোনো সচিব বা কর্মকর্তা কী কাজে বিদেশ সফরে যাচ্ছেন, তার ব্যাখ্যাও তাঁদের দিতে হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় কোনো সফর অপ্রয়োজনীয় মনে করলে বাতিলও করে দিতে পারে। এসব বিষয় নিরীক্ষা করা যাঁদের দায়িত্ব, কাজটি তাঁরা ঠিকমতো করলে রাষ্ট্রের অনেক অপচয় কমে।
অতীতের কথা বাদ দিলেও এই সরকারের আমলে গত আড়াই বছরে সরকারের মন্ত্রী-সাংসদ ও আমলারা বহু আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু এসব সম্মেলনে বাংলাদেশ কী পেয়েছে, তা আমরা জানি না। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানানোর প্রয়োজনও বোধ করেননি।
মন্ত্রী-সাংসদ ও আমলারা বিদেশে যাবেন না, সে কথা বলা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। তবে জনগণের করের অর্থে তাঁদের এসব সফর অবশ্যই অর্থবহ হতে হবে। কোন মন্ত্রী বা সচিব কতবার বিদেশ গেছেন, সেই পরিসংখ্যান দেশবাসীর কোনো কাজে লাগবে না। তারা দেখতে চাইবে এসব সফর থেকে দেশ কতটা লাভবান হলো।

No comments

Powered by Blogger.