চালচিত্র-দেশপ্রেম, কর্মসংস্কৃতি, দেশগড়ার দুর্জয় সংকল্প by শুভ রহমান
জাপানের ভয়াবহ সুনামি, ভূমিকম্প আর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বিপর্যয়ের কথা আমরা জেনেছি। চেরনোবিল, ভূপাল_সব পারমাণবিক বিপর্যয়কেই তা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। তবু কী আশ্চর্য জাদুমন্ত্রে জাপান আবার প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস নিয়ে নিজের পায়ে খাড়া হয়েছে,
বিস্ময়করভাবে শুধু নিজেকেই সাহায্য করছে না, আমাদের পদ্মা সেতু নির্মাণে প্রতিশ্রুত অতিরিক্ত সাহায্য দেওয়ার কথাও অটুট রাখার আশ্চর্যজনক ঘোষণাও দিয়ে দিয়েছে। এ কিভাবে সম্ভব হতে পারে, আমাদের কল্পনায়ও তা আসে না। তবে এ যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বর্বরতম আণবিক বোমা বিস্ফোরণের অসহায় শিকার নাগাসাকি, হিরোশিমার পুনরুত্থান ও নবজন্ম লাভের দেশের পক্ষেই সম্ভব, তা বিশ্বাস করা যায় বৈকি। ইলা মিত্রের 'হিরোশিমার মেয়ে'তে পড়েছি, কী দুঃসহ প্রয়াস চালাতে হয়েছে জাপানের হিরোশিমা-নাগাসাকির মহাবিপর্যয়ের অসহায়, জীবন্মৃত শত শত, হাজার নরনারীকে বংশপরম্পরায় শারীরিক-সামাজিক সংকট কাটিয়ে নতুন স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে। 'হিরোশিমা মন আমুর' (হিরোশিমা মাই লাভ) ছায়াছবিটিতেও তার প্রামাণ্য জীবন্ত সব বেদনার গাথা রচিত হয়েছে। সংকল্প থাকলে, দেশপ্রেম থাকলে একটা জাতি কিভাবে ধ্বংসস্তূপ থেকে বারবার ফিনিঙ্ পাখির মতোই জেগে উঠে অমর ভালোবাসার সংগীতে মুখর হয়ে ওঠে। এই সেদিন চিলির খনিশ্রমিক দুর্ঘটনাকেও সারা বিশ্ব বিস্ময়াবিভূতভাবে প্রত্যক্ষ করেছে।
আমরাও কি কম যাই? দেশপ্রেমের অমর অজর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি একাত্তরে শত্রুর মুখোমুখি লড়ে। গ্রামকে গ্রাম, শহর-বন্দর সর্বত্র অজস্র সাধারণ মানুষ অভুক্ত থেকেই সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা দামাল ছেলেদের মুখে দুমুঠো অন্ন তুলে দিয়ে নিজেদের বিছানা-বালিশ, আরাম-আয়েশ তুচ্ছ করে তাদের বিজয়ী করার প্রাণপণ সাহায্য জুগিয়ে বিশ্ব-ইতিহাস রচনা করেছে। আমাদের সে গৌরবগাথা আমাদের পূর্বপুরুষরা এখনো মনে রেখেছে। এ দেশ তাই মরতে মরতেও মরে না, 'মন্বন্তরে মরিনি আমরা, মারী লয়ে ঘর করি'_সাম্প্রতিক আইলার দুই বছরের মাথায় আবার সামান্য সামুদ্রিক ঝড়-জলোচ্ছ্বাসেই আমাদের বিপর্যস্ত উপকূলবাসীর জীবন, অসংখ্য বেড়িবাঁধ নতুন করে লণ্ডভণ্ড-তছনছ হয়ে যাওয়ায় কথা উঠেছে_তবে কি আমরা আমাদের অতীত লড়াইয়ের ইতিহাস বিস্মৃত হয়ে গেছি! আমরা কি বারবার শুধু মৃত্যুর ছোবলে নীল বেদনাহতই হতে থাকব! জাপানের মতো, চিলির খনিশ্রমিকদের মতো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বর্বরতায় আক্ষরিক অর্থে ভস্মস্তূপে পরিণত জার্মানির ড্রেসডেন নগরীর মতোই নতুন আলোকিত ঝলমলে চোখ ধাঁধানো নবজীবনের ঐশ্বর্য নিয়ে জেগে উঠতে পারব না!
গত মার্চে পারমাণবিক বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত জাপানের এখন অবস্থাটা কী দাঁড়িয়েছে, তার বিস্ময়কর খবর আছে এই গেল সোমবারের অন্য এক কাগজে। ছোট খবর, কিন্তু কী বিশাল চক্ষু উন্মীলক দৃষ্টান্ত হয়ে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে! খবরের শিরোনাম : 'এসি বন্ধ জাপানে'। কেন বন্ধ? উপর্যুপরি সুনামি, ভূমিকম্প, পরমাণু চুলি্লর বিস্ফোরণে বিপর্যস্ত হয়েছিল জাপানের বিশাল অংশ। বিদ্যুৎ সংকটে দেশটির শিল্পখাতকে বাঁচাতে এই গরমের মধ্যেও সে দেশে ৪১টি রাজ্যে স্বপ্রণোদিত হয়েই এয়ার কন্ডিশনার (এসি) না চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন নাগরিকরা। কিছুকাল আগেই আমাদের প্রধানমন্ত্রীও নাগরিকদের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন এসি বন্ধ রাখার, ঘর থেকে বেরোনোর সময় বিদ্যুৎ বন্ধ করে যাওয়ার_আমাদের কি তেমন টনক নড়েছে! চরমভাবে বিপর্যস্ত হইনি আমরা এখনো ভূমিকম্প বা বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে, কিন্তু বিদ্যুৎসাশ্রয়, গ্যাসসাশ্রয়ের জন্য আমাদের কি বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা আছে? বিদ্যুতের চুরি-অপচয় বন্ধে আমাদের কোনোই মাথাব্যথা নেই। অপচয়ের হাট খুলে বসেছি আমরা। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির। এর চরম দুঃখজনক পরিণাম অপেক্ষা করছে গোটা জাতির জন্য। দেশগড়ার তাগিদ, দেশপ্রেম কি একেবারে উঠে গেল আমাদের জীবনের অভিধান থেকে! শুধু সম্পদের অপচয়ই না, অকারণে হরতাল, ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ধ্বংসাত্মক ও নেতিবাচক রাজনীতি দিয়ে একশ্রেণীর রাজনীতিক আমাদের গৌরবজনক ঐতিহ্য ধুলায় মিশিয়ে দিচ্ছেন।
পাশের দেশ ভারতের ছোট একটি রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের দিকে তাকালেই দেখতে পাব, দেশ কিভাবে চালাতে শুরু করেছেন, কিভাবে গড়ে তুলতে চাইছেন সেখানকার আটপৌরে শাড়ি-চপ্পল পরে নতুন করে দেশ জাগাতে ছুটে বেড়াচ্ছেন রবীন্দ্রনাথের 'সাধারণ মেয়ে' নতুন যুদ্ধে জয়ী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসার মাত্র এক মাসের মধ্যেই তাক লাগিয়ে দিয়েছেন দুনিয়াকে। অফিস করছেন ছুটির দিনেও। সাধারণ মানুষের মতোই রাস্তার সব সিগন্যাল বাতির সংকেত মেনেই মহাকরণে ছুটছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় অন্য যান চলাচল, পথচারীদের পথ বন্ধ করে রাখছেন না। পথচারীদের, আপামর জনসাধারণকে অকারণ দুর্ভোগ পোহাতে দিচ্ছেন না। অফিসটাইম মানে অফিসটাইম, ১০টার অফিস ১২টায় হেলতে-দুলতে এসে বসতে-না-বসতেই শেষ করে দিয়ে ৩টার আগেই ঘরে ফিরে যাওয়ার নবাবির দিন শেষ। এসবই আমাদের জন্য চক্ষু উন্মীলক। আগে আমরা নতুন কর্মসংস্কৃতি চালু করার কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছি, তখন কেউ কান দেয়নি, সেই উৎসব-পরবে একবার ছুটিতে বাড়ি গেলে ছুটির আমেজ আর কাটতেই চায় না আমাদের এ দেশে। কোথাও সহজে কাজ আদায় হয় না। ফুয়েল ছাড়া ফাইল নড়ে না। কর্মসংস্কৃতি! সে আবার কী! কে তোয়াক্কা করে ওসবের! এখন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গ। এই আমরাই কিন্তু ৯টি মাস নির্ঘুম কাটিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করে দেশ স্বাধীন করেছি। দেশকে নতুন করে ধ্বংসস্তূপ থেকে গড়ে তোলার ব্রত নিয়েছি। আমাদের সে ব্রত কি আমরা বিস্মৃত হয়ে গেলাম মাত্র চার দশকেই! সেসব হারিয়ে গেল কোথায়, কবে, কোন অসতর্ক মুহূর্তে? আজকের প্রধানমন্ত্রী একা কিংবা বড়জোর তাঁর দুই-চারজন একনিষ্ঠ, আদর্শনিষ্ঠ সঙ্গীসাথি দেশটাকে বদলে দেওয়ার দুর্জয় পণ করেছেন! তা কি সম্ভব! বিশাল-বিপুল বিজয় হারিয়ে যেতে বসেছে মেয়াদের অর্ধেক না যেতেই।
এখনই এসব ভাবার সময়। এখনই তন্ন তন্ন করে দেখার সময়, কারা চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়ে আমাদের একাত্তরের গৌরবগাথাকে ম্লান করে দেওয়ার স্পর্ধা দেখাচ্ছে। তাদের কর্মকাণ্ডকে খুব নির্দোষ বা নিছক বিরোধী রাজনীতির নিয়মতান্ত্রিক বা সাংবিধানিক রাজনীতির দোহাই দেওয়া গণতান্ত্রিক অধিকার ভাবার কোনো সুযোগ বস্তুত নেই। হাইকোর্টের আদেশও যাঁরা মানছেন না, নিজেদের নিক্ষিপ্ত নিষ্ঠীবন যাঁরা লেহন করতে দ্বিধা করছেন না, জনগণের দোহাই দিয়ে যাঁরা জিনিসপত্রের দাম, বিদ্যুৎ ঘাটতি, গ্যাস সংকট, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ইত্যাকার ছুতানাতায় কার্যত আমাদের সব অর্জনকে তুচ্ছ ও অস্বীকার করতে চাইছেন, যাঁরা দেশটাকে পরাধীনতার শৃঙ্খলে নতুন করে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধার নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে উঠে-পড়ে লেগেছেন_তাঁদের আর এতটুকু ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ তাঁরা নিজেরাই রাখতে দিতে চাইছেন না। দেশে ধ্বংসাত্মক ও নেতিবাচক রাজনীতির উৎস সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী ও উগ্র মৌলবাদী দর্শনের ধারক-বাহকদের রাজনৈতিকভাবে জিইয়ে রাখলে দেশগড়ার কোনো স্বপ্ন বা প্রচেষ্টাই যে শেষ পর্যন্ত সফল হবে না, এমন আশঙ্কা সচেতন মানুষ মাত্রই করছেন। তাঁদের আশঙ্কার ভিত্তি যে অমূলক নয়, তা কয়েকটি ঘটনার দিকে চোখ মেললেই পরিষ্কার হয়ে যায়। দেশে যখন আগামী মাসেই যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচার আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে শুরু করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যখন এ দেশের সাধারণ মানুষের মহাদুর্ভোগের একটা বড়রকম কারণ হাওয়া ভবনের কর্ণধারের ও তার ভ্রাতার হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের সব তথ্যপ্রমাণ হাতে পেয়ে তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর পর জাতি রায়ের অপেক্ষা করছে, যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহাল রাখার অযৌক্তিক দাবির মধ্য দিয়ে দেশে নতুন করে ১/১১'র পুনরুত্থানের মরিয়া প্রচেষ্টা চলেছে_ঠিক সেই সময়টাকেই বেছে নেওয়া হয়েছে ধ্বংসাত্মক রাজনীতির উন্মত্ত পাঁয়তারা করার সময় হিসেবে। আমরা এর আগে এ দেশে পাটচাষ ও পাটশিল্পের হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনার সংবাদ বিশ্ববাসীকে দিয়েছি। ইতিমধ্যে বিশ্ববাজারে আমাদের সোনালি আঁশের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ারও উৎসাহব্যঞ্জক খবর পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হয়েছে। সে খবরে আছে : চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ৪২ শতাংশ। শুধু অভ্যন্তরীণ বাজারেই বিক্রি বেড়েছে ১৭৬ শতাংশ, যা পাটশিল্পের ইতিহাসে হারানো ঐতিহ্য ফেরানোর ইঙ্গিতবহ। এই সঙ্গে আগামী মাসেই প্রণীত হতে যাচ্ছে পাটনীতিমালা, যা জলবায়ু পরিবর্তনের এ যুগে পরিবেশবান্ধব পাটশিল্প বিকাশে সহায়ক হবে। এর আগে, পাটের জেনোম আবিষ্কারেও পাটচাষ ও পাটশিল্পের বিকাশে যুগান্তকারী সাফল্য অর্জনের সম্ভাবনা সূচিত হয়েছে। সেই সঙ্গে বন্ধ পাটকলগুলো একের পর এক খুলে দেওয়া ও লাভজনকভাবে চালু করার সুসংবাদও দেশবাসীকে অনেক স্বস্তি দিয়েছে। সবাই অপেক্ষা করছে বৃহত্তম পাটকল আদমজী আবার চালু হওয়ার মাহেন্দ্রক্ষণটির জন্য।
লক্ষণীয়, আদমজী চালু না হতে দেওয়া ও সেই সঙ্গে বস্ত্রশিল্পের বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র শুরু হওয়ার উদ্বেগজনক পরিস্থিতিও একই সঙ্গে সৃষ্টি করা হচ্ছে, অনিবার্য আত্মঘাতী পরিণতির কথা ভাবা হচ্ছে না। জীর্ণ বস্ত্রের মতোই ঘুণেধরা প্রশাসনকে জড়িয়ে রাখা হচ্ছে, চুরি-দুর্নীতি-লুটপাট গায়ে মাখা হচ্ছে না। সব সম্পদ নিঃশেষ করে ফেলতে চাইছে মুষ্টিমেয় লুটেরা। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভাবা হচ্ছে না। দেশের তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ রক্ষার বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। লাতিন আমেরিকার ভেনিজুয়েলায় বর্তমান সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের হুগো শাভেজ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো সে দেশের তেল সম্পদের আশি ভাগই নিয়ে চলে যেত। হুগো শাভেজ ক্ষমতায় আসার পর অবস্থাটা উল্টে দিয়ে তেল সম্পদের আশি ভাগই দেশে রাখার যুগান্তকারী ব্যবস্থা করেছেন। ২০ ভাগ সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো প্রোডাকশন শেয়ারিং হিসেবে পেতে পারে। আমরা চোখ মেলে ওই বিশ্ব বাস্তবতার দিকে তাকাচ্ছি না কেন? দেশের সম্পদ দেশে রাখার জন্য কেউ প্রাণপণ চেষ্টা করলে তাকে বিদেশের চর বলার মতো গর্হিত অপরাধই বা করছি কেন?
চারদিকে দেশপ্রেমের দৃষ্টান্তের ছড়াছড়ি। ইচ্ছে করলেই, চোখ মেললেই দেখা যায়। শেখা যায়। আমরা দেখছি না, শিখছি না। খুব যে আত্মগ্লানির দহনে দগ্ধ হচ্ছি, তাও নয়। এক ধরনের নির্লিপ্ততা আর মূঢ় আত্মসুখের ঘেরাটোপে আত্মনিমগ্ন হয়ে আছি। এ হচ্ছে এক রকম আত্মহননেরই নামান্তর। অথচ আমাদের অতীত এমন ছিল না। খুবই গৌরবময় অতীত ছিল আমাদের। আমাদের মহান প্রতিবেশী দেশ যা মনে রাখছে, আমরা অনেকেই রাখিনি। এখন কী দেখছি?
বারবার খুবলে খাচ্ছে আমাদের উপকূলকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। আমরা এক রকম নির্লিপ্তই। রাজধানীতে দিনদুপুরে ফ্ল্যাটে ঢুকে দুর্ধর্ষ ডাকাতরা সর্বস্ব লুটে নিয়ে যাচ্ছে। উচ্চশিক্ষিত শিক্ষিকাকেও পাষণ্ড স্বামীর জিঘাংসাসুলভ পাশবিক নির্মমতার শিকার হতে হচ্ছে। আমরা এক রকম নির্লিপ্তই। বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস কোনোটাই আমরা সাশ্রয় করছি না, ক্ষমাহীন অপচয় করে চলেছি। লুণ্ঠিত হতে দিচ্ছি দেশের খনিজ সম্পদ। প্রশাসনকে গতিশীল করছি না, নতুন কর্মসংস্কৃতি গড়ে তুলছি না। জাপানের দিকে তাকাচ্ছি না। সেখানে কখনো কেউ অকারণে অবসর বা ছুটি গ্রহণও করে না। আজ পশ্চিমবঙ্গেও মমতা সরকার সেদিকেই পা বাড়াচ্ছে। তবে সেটা প্রথম দিকে সিপিএম ক্ষমতায় এসেও করতে চেষ্টা করেছিল, সে চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত ক্ষান্ত দিতে হয়েছে। মমতা শিক্ষা নিচ্ছেন অতীত থেকে। সিপিএমের ব্যর্থতার জায়গাগুলো থেকে।
নির্বাচনে শুধু দল আর প্রার্থীই জেতে না। জেতে দলের নীতি, ব্যক্তির কর্মনিষ্ঠা আর দেশপ্রেম। জেতে জনগণ। আমাদের অতীতের অর্জন ও গৌরবগাথা অক্ষুণ্ন রাখতে হলে, তাকে পুনরুদ্ধার করতে হলে প্রথমেই চাই দেশপ্রেম, তারপর চাই নতুন দেশ গড়ার কর্মসংস্কৃতি। কথায় নয়, সত্যিকার কাজে। আর দেশপ্রেমের মহাপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে এ দেশের সর্ববৃহৎ জনভিত্তিক গণতান্ত্রিক দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বই। তাদেরই নেতৃত্বে ক্ষমতায় রয়েছে মহাজোট সরকার। দেশপ্রেমে উত্তীর্ণ যারা, তারাই নতুন দেশগড়ার কর্মসংস্কৃতি রচনার মহাপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে_এটা মানুষের ন্যায়সংগত ও সাধারণ প্রত্যাশা। কোনো অলীক স্বপ্ন নয়। দেশগড়ার এক দুর্জয় সংকল্প মাত্র।
২১.৬.২০১১
আমরাও কি কম যাই? দেশপ্রেমের অমর অজর দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছি একাত্তরে শত্রুর মুখোমুখি লড়ে। গ্রামকে গ্রাম, শহর-বন্দর সর্বত্র অজস্র সাধারণ মানুষ অভুক্ত থেকেই সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা দামাল ছেলেদের মুখে দুমুঠো অন্ন তুলে দিয়ে নিজেদের বিছানা-বালিশ, আরাম-আয়েশ তুচ্ছ করে তাদের বিজয়ী করার প্রাণপণ সাহায্য জুগিয়ে বিশ্ব-ইতিহাস রচনা করেছে। আমাদের সে গৌরবগাথা আমাদের পূর্বপুরুষরা এখনো মনে রেখেছে। এ দেশ তাই মরতে মরতেও মরে না, 'মন্বন্তরে মরিনি আমরা, মারী লয়ে ঘর করি'_সাম্প্রতিক আইলার দুই বছরের মাথায় আবার সামান্য সামুদ্রিক ঝড়-জলোচ্ছ্বাসেই আমাদের বিপর্যস্ত উপকূলবাসীর জীবন, অসংখ্য বেড়িবাঁধ নতুন করে লণ্ডভণ্ড-তছনছ হয়ে যাওয়ায় কথা উঠেছে_তবে কি আমরা আমাদের অতীত লড়াইয়ের ইতিহাস বিস্মৃত হয়ে গেছি! আমরা কি বারবার শুধু মৃত্যুর ছোবলে নীল বেদনাহতই হতে থাকব! জাপানের মতো, চিলির খনিশ্রমিকদের মতো, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসি বর্বরতায় আক্ষরিক অর্থে ভস্মস্তূপে পরিণত জার্মানির ড্রেসডেন নগরীর মতোই নতুন আলোকিত ঝলমলে চোখ ধাঁধানো নবজীবনের ঐশ্বর্য নিয়ে জেগে উঠতে পারব না!
গত মার্চে পারমাণবিক বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত জাপানের এখন অবস্থাটা কী দাঁড়িয়েছে, তার বিস্ময়কর খবর আছে এই গেল সোমবারের অন্য এক কাগজে। ছোট খবর, কিন্তু কী বিশাল চক্ষু উন্মীলক দৃষ্টান্ত হয়ে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে! খবরের শিরোনাম : 'এসি বন্ধ জাপানে'। কেন বন্ধ? উপর্যুপরি সুনামি, ভূমিকম্প, পরমাণু চুলি্লর বিস্ফোরণে বিপর্যস্ত হয়েছিল জাপানের বিশাল অংশ। বিদ্যুৎ সংকটে দেশটির শিল্পখাতকে বাঁচাতে এই গরমের মধ্যেও সে দেশে ৪১টি রাজ্যে স্বপ্রণোদিত হয়েই এয়ার কন্ডিশনার (এসি) না চালানোর ঘোষণা দিয়েছেন নাগরিকরা। কিছুকাল আগেই আমাদের প্রধানমন্ত্রীও নাগরিকদের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন এসি বন্ধ রাখার, ঘর থেকে বেরোনোর সময় বিদ্যুৎ বন্ধ করে যাওয়ার_আমাদের কি তেমন টনক নড়েছে! চরমভাবে বিপর্যস্ত হইনি আমরা এখনো ভূমিকম্প বা বিদ্যুৎ বিপর্যয়ে, কিন্তু বিদ্যুৎসাশ্রয়, গ্যাসসাশ্রয়ের জন্য আমাদের কি বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা আছে? বিদ্যুতের চুরি-অপচয় বন্ধে আমাদের কোনোই মাথাব্যথা নেই। অপচয়ের হাট খুলে বসেছি আমরা। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির। এর চরম দুঃখজনক পরিণাম অপেক্ষা করছে গোটা জাতির জন্য। দেশগড়ার তাগিদ, দেশপ্রেম কি একেবারে উঠে গেল আমাদের জীবনের অভিধান থেকে! শুধু সম্পদের অপচয়ই না, অকারণে হরতাল, ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াওয়ের ধ্বংসাত্মক ও নেতিবাচক রাজনীতি দিয়ে একশ্রেণীর রাজনীতিক আমাদের গৌরবজনক ঐতিহ্য ধুলায় মিশিয়ে দিচ্ছেন।
পাশের দেশ ভারতের ছোট একটি রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের দিকে তাকালেই দেখতে পাব, দেশ কিভাবে চালাতে শুরু করেছেন, কিভাবে গড়ে তুলতে চাইছেন সেখানকার আটপৌরে শাড়ি-চপ্পল পরে নতুন করে দেশ জাগাতে ছুটে বেড়াচ্ছেন রবীন্দ্রনাথের 'সাধারণ মেয়ে' নতুন যুদ্ধে জয়ী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসার মাত্র এক মাসের মধ্যেই তাক লাগিয়ে দিয়েছেন দুনিয়াকে। অফিস করছেন ছুটির দিনেও। সাধারণ মানুষের মতোই রাস্তার সব সিগন্যাল বাতির সংকেত মেনেই মহাকরণে ছুটছেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় অন্য যান চলাচল, পথচারীদের পথ বন্ধ করে রাখছেন না। পথচারীদের, আপামর জনসাধারণকে অকারণ দুর্ভোগ পোহাতে দিচ্ছেন না। অফিসটাইম মানে অফিসটাইম, ১০টার অফিস ১২টায় হেলতে-দুলতে এসে বসতে-না-বসতেই শেষ করে দিয়ে ৩টার আগেই ঘরে ফিরে যাওয়ার নবাবির দিন শেষ। এসবই আমাদের জন্য চক্ষু উন্মীলক। আগে আমরা নতুন কর্মসংস্কৃতি চালু করার কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছি, তখন কেউ কান দেয়নি, সেই উৎসব-পরবে একবার ছুটিতে বাড়ি গেলে ছুটির আমেজ আর কাটতেই চায় না আমাদের এ দেশে। কোথাও সহজে কাজ আদায় হয় না। ফুয়েল ছাড়া ফাইল নড়ে না। কর্মসংস্কৃতি! সে আবার কী! কে তোয়াক্কা করে ওসবের! এখন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গ। এই আমরাই কিন্তু ৯টি মাস নির্ঘুম কাটিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করে দেশ স্বাধীন করেছি। দেশকে নতুন করে ধ্বংসস্তূপ থেকে গড়ে তোলার ব্রত নিয়েছি। আমাদের সে ব্রত কি আমরা বিস্মৃত হয়ে গেলাম মাত্র চার দশকেই! সেসব হারিয়ে গেল কোথায়, কবে, কোন অসতর্ক মুহূর্তে? আজকের প্রধানমন্ত্রী একা কিংবা বড়জোর তাঁর দুই-চারজন একনিষ্ঠ, আদর্শনিষ্ঠ সঙ্গীসাথি দেশটাকে বদলে দেওয়ার দুর্জয় পণ করেছেন! তা কি সম্ভব! বিশাল-বিপুল বিজয় হারিয়ে যেতে বসেছে মেয়াদের অর্ধেক না যেতেই।
এখনই এসব ভাবার সময়। এখনই তন্ন তন্ন করে দেখার সময়, কারা চরম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়ে আমাদের একাত্তরের গৌরবগাথাকে ম্লান করে দেওয়ার স্পর্ধা দেখাচ্ছে। তাদের কর্মকাণ্ডকে খুব নির্দোষ বা নিছক বিরোধী রাজনীতির নিয়মতান্ত্রিক বা সাংবিধানিক রাজনীতির দোহাই দেওয়া গণতান্ত্রিক অধিকার ভাবার কোনো সুযোগ বস্তুত নেই। হাইকোর্টের আদেশও যাঁরা মানছেন না, নিজেদের নিক্ষিপ্ত নিষ্ঠীবন যাঁরা লেহন করতে দ্বিধা করছেন না, জনগণের দোহাই দিয়ে যাঁরা জিনিসপত্রের দাম, বিদ্যুৎ ঘাটতি, গ্যাস সংকট, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ইত্যাকার ছুতানাতায় কার্যত আমাদের সব অর্জনকে তুচ্ছ ও অস্বীকার করতে চাইছেন, যাঁরা দেশটাকে পরাধীনতার শৃঙ্খলে নতুন করে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধার নীলনকশা বাস্তবায়ন করতে উঠে-পড়ে লেগেছেন_তাঁদের আর এতটুকু ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ তাঁরা নিজেরাই রাখতে দিতে চাইছেন না। দেশে ধ্বংসাত্মক ও নেতিবাচক রাজনীতির উৎস সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী ও উগ্র মৌলবাদী দর্শনের ধারক-বাহকদের রাজনৈতিকভাবে জিইয়ে রাখলে দেশগড়ার কোনো স্বপ্ন বা প্রচেষ্টাই যে শেষ পর্যন্ত সফল হবে না, এমন আশঙ্কা সচেতন মানুষ মাত্রই করছেন। তাঁদের আশঙ্কার ভিত্তি যে অমূলক নয়, তা কয়েকটি ঘটনার দিকে চোখ মেললেই পরিষ্কার হয়ে যায়। দেশে যখন আগামী মাসেই যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীর বিচার আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে শুরু করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যখন এ দেশের সাধারণ মানুষের মহাদুর্ভোগের একটা বড়রকম কারণ হাওয়া ভবনের কর্ণধারের ও তার ভ্রাতার হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের সব তথ্যপ্রমাণ হাতে পেয়ে তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর পর জাতি রায়ের অপেক্ষা করছে, যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বহাল রাখার অযৌক্তিক দাবির মধ্য দিয়ে দেশে নতুন করে ১/১১'র পুনরুত্থানের মরিয়া প্রচেষ্টা চলেছে_ঠিক সেই সময়টাকেই বেছে নেওয়া হয়েছে ধ্বংসাত্মক রাজনীতির উন্মত্ত পাঁয়তারা করার সময় হিসেবে। আমরা এর আগে এ দেশে পাটচাষ ও পাটশিল্পের হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনার সংবাদ বিশ্ববাসীকে দিয়েছি। ইতিমধ্যে বিশ্ববাজারে আমাদের সোনালি আঁশের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ারও উৎসাহব্যঞ্জক খবর পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হয়েছে। সে খবরে আছে : চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ৪২ শতাংশ। শুধু অভ্যন্তরীণ বাজারেই বিক্রি বেড়েছে ১৭৬ শতাংশ, যা পাটশিল্পের ইতিহাসে হারানো ঐতিহ্য ফেরানোর ইঙ্গিতবহ। এই সঙ্গে আগামী মাসেই প্রণীত হতে যাচ্ছে পাটনীতিমালা, যা জলবায়ু পরিবর্তনের এ যুগে পরিবেশবান্ধব পাটশিল্প বিকাশে সহায়ক হবে। এর আগে, পাটের জেনোম আবিষ্কারেও পাটচাষ ও পাটশিল্পের বিকাশে যুগান্তকারী সাফল্য অর্জনের সম্ভাবনা সূচিত হয়েছে। সেই সঙ্গে বন্ধ পাটকলগুলো একের পর এক খুলে দেওয়া ও লাভজনকভাবে চালু করার সুসংবাদও দেশবাসীকে অনেক স্বস্তি দিয়েছে। সবাই অপেক্ষা করছে বৃহত্তম পাটকল আদমজী আবার চালু হওয়ার মাহেন্দ্রক্ষণটির জন্য।
লক্ষণীয়, আদমজী চালু না হতে দেওয়া ও সেই সঙ্গে বস্ত্রশিল্পের বিরুদ্ধে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র শুরু হওয়ার উদ্বেগজনক পরিস্থিতিও একই সঙ্গে সৃষ্টি করা হচ্ছে, অনিবার্য আত্মঘাতী পরিণতির কথা ভাবা হচ্ছে না। জীর্ণ বস্ত্রের মতোই ঘুণেধরা প্রশাসনকে জড়িয়ে রাখা হচ্ছে, চুরি-দুর্নীতি-লুটপাট গায়ে মাখা হচ্ছে না। সব সম্পদ নিঃশেষ করে ফেলতে চাইছে মুষ্টিমেয় লুটেরা। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভাবা হচ্ছে না। দেশের তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ রক্ষার বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। লাতিন আমেরিকার ভেনিজুয়েলায় বর্তমান সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের হুগো শাভেজ সরকার ক্ষমতায় আসার আগে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো সে দেশের তেল সম্পদের আশি ভাগই নিয়ে চলে যেত। হুগো শাভেজ ক্ষমতায় আসার পর অবস্থাটা উল্টে দিয়ে তেল সম্পদের আশি ভাগই দেশে রাখার যুগান্তকারী ব্যবস্থা করেছেন। ২০ ভাগ সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো প্রোডাকশন শেয়ারিং হিসেবে পেতে পারে। আমরা চোখ মেলে ওই বিশ্ব বাস্তবতার দিকে তাকাচ্ছি না কেন? দেশের সম্পদ দেশে রাখার জন্য কেউ প্রাণপণ চেষ্টা করলে তাকে বিদেশের চর বলার মতো গর্হিত অপরাধই বা করছি কেন?
চারদিকে দেশপ্রেমের দৃষ্টান্তের ছড়াছড়ি। ইচ্ছে করলেই, চোখ মেললেই দেখা যায়। শেখা যায়। আমরা দেখছি না, শিখছি না। খুব যে আত্মগ্লানির দহনে দগ্ধ হচ্ছি, তাও নয়। এক ধরনের নির্লিপ্ততা আর মূঢ় আত্মসুখের ঘেরাটোপে আত্মনিমগ্ন হয়ে আছি। এ হচ্ছে এক রকম আত্মহননেরই নামান্তর। অথচ আমাদের অতীত এমন ছিল না। খুবই গৌরবময় অতীত ছিল আমাদের। আমাদের মহান প্রতিবেশী দেশ যা মনে রাখছে, আমরা অনেকেই রাখিনি। এখন কী দেখছি?
বারবার খুবলে খাচ্ছে আমাদের উপকূলকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। আমরা এক রকম নির্লিপ্তই। রাজধানীতে দিনদুপুরে ফ্ল্যাটে ঢুকে দুর্ধর্ষ ডাকাতরা সর্বস্ব লুটে নিয়ে যাচ্ছে। উচ্চশিক্ষিত শিক্ষিকাকেও পাষণ্ড স্বামীর জিঘাংসাসুলভ পাশবিক নির্মমতার শিকার হতে হচ্ছে। আমরা এক রকম নির্লিপ্তই। বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস কোনোটাই আমরা সাশ্রয় করছি না, ক্ষমাহীন অপচয় করে চলেছি। লুণ্ঠিত হতে দিচ্ছি দেশের খনিজ সম্পদ। প্রশাসনকে গতিশীল করছি না, নতুন কর্মসংস্কৃতি গড়ে তুলছি না। জাপানের দিকে তাকাচ্ছি না। সেখানে কখনো কেউ অকারণে অবসর বা ছুটি গ্রহণও করে না। আজ পশ্চিমবঙ্গেও মমতা সরকার সেদিকেই পা বাড়াচ্ছে। তবে সেটা প্রথম দিকে সিপিএম ক্ষমতায় এসেও করতে চেষ্টা করেছিল, সে চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত ক্ষান্ত দিতে হয়েছে। মমতা শিক্ষা নিচ্ছেন অতীত থেকে। সিপিএমের ব্যর্থতার জায়গাগুলো থেকে।
নির্বাচনে শুধু দল আর প্রার্থীই জেতে না। জেতে দলের নীতি, ব্যক্তির কর্মনিষ্ঠা আর দেশপ্রেম। জেতে জনগণ। আমাদের অতীতের অর্জন ও গৌরবগাথা অক্ষুণ্ন রাখতে হলে, তাকে পুনরুদ্ধার করতে হলে প্রথমেই চাই দেশপ্রেম, তারপর চাই নতুন দেশ গড়ার কর্মসংস্কৃতি। কথায় নয়, সত্যিকার কাজে। আর দেশপ্রেমের মহাপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে এ দেশের সর্ববৃহৎ জনভিত্তিক গণতান্ত্রিক দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বই। তাদেরই নেতৃত্বে ক্ষমতায় রয়েছে মহাজোট সরকার। দেশপ্রেমে উত্তীর্ণ যারা, তারাই নতুন দেশগড়ার কর্মসংস্কৃতি রচনার মহাপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে_এটা মানুষের ন্যায়সংগত ও সাধারণ প্রত্যাশা। কোনো অলীক স্বপ্ন নয়। দেশগড়ার এক দুর্জয় সংকল্প মাত্র।
২১.৬.২০১১
No comments