পবিত্র কোরআনের আলো-আল্লাহ তায়ালা মানুষকে শাস্তি দিতে চান না যদি মানুষ সুপথে চলে
১৪৪. ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আমানূ লা-তাত্তাখিযূল কাফিরীনা আওলিইয়াআ মিন দূনিল মু'মিনীন; আতুরীদূনা আন তাজ'আলূ লিল্লাহি 'আলাইকুম সুল্ত্বানাম মুবীনা। ১৪৫. ইন্নাল মুনাফিক্বীনা ফিদ দার্কিল আস্ফালি মিনান নার; ওয়া লান তাজিদা লাহুম নাসীরা।
১৪৬। ইল্লাল্লাযীনা তাবূ ওয়া আস্লাহূ ওয়া'তাসিমূ বিল্লাহি ওয়া আখ্লাসূ দীনাহুম লিল্লাহি ফা-উলায়িকা মা'আল মু'মিনীন; ওয়া সাওফা ইউ'তিল্লাহুল মু'মিনীনা আজ্রান 'আজীমা।
১৪৭। মা ইয়াফ্'আলুল্লাহু বি'আজাবিকুম ইন শাকার্তুম ওয়া আমান্তুম; ওয়া কানাল্লাহু শাকিরান 'আলীমা। [সুরা : আন-নিসা, আয়াত : ১৪৪-১৪৭]
অনুবাদ
১৪৪. হে ইমানদারগণ, তোমরা ইমানদারদের বাদ দিয়ে অবাধ্যদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা কি আল্লাহর কাছে তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ তুলে দিতে চাও?
১৪৫. এসব মুনাফিক জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থান করবে। তুমি শেষ পরিণতিতে তাদের জন্য কোনো সাহায্যকারী খুঁজে পাবে না।
১৪৬. তবে তাদের কথা আলাদা, যারা তওবা করে এবং নিজেদের সংশোধন করে নেয়, যারা আল্লাহর রজ্জুকে মজবুতভাবে ধরে রাখে এবং একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই নিজেদের ধর্মকে একনিষ্ঠ করে নেয়। এসব লোক অবশ্যই সেদিন প্রকৃত ইমানদারদের সঙ্গে অবস্থান করবে। আর অচিরেই আল্লাহ তায়ালা তাঁর ইমানদার বান্দাদের মহা প্রতিদানে ভূষিত করবেন।
১৪৭. তোমাদের শাস্তি দিয়ে আল্লাহ তায়ালা কী করবেন, তোমরা যদি তাঁর কৃতজ্ঞতা আদায় করো এবং তাঁর ওপর ইমান আনো (তাহলে তিনি তোমাদের শাস্তি দিতে চান না)? আল্লাহ তায়ালা অত্যন্ত গুণগ্রাহী ও মহাজ্ঞানী।
ব্যাখ্যা
এ আয়াতগুলোও মুনাফিক ও কাফিরদের ব্যাপারে নাজিল হয়েছে। এখানে ইমানদারদের স্পষ্ট ভাষায় সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে, তারা যেন অবাধ্য তথা কাফিরদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে না তোলে। কাফিরদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার ক্ষতিকর দিকটিও এখানে তুলে ধরা হয়েছে। কাফিরদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার মাধ্যমে নিজেদের ইমানি দুর্বলতা আল্লাহর কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এটা নিজেদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে প্রমাণ তুলে ধরারই শামিল। কাফিরদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার বিষয়টি অবশ্যই উদারনৈতিকতা নয় বা ভিন্নধর্মী ও ভিন্ন সম্প্রদায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার বিষয় নয়। এটা অসত্য ও অন্যায়ের সঙ্গে আপস করার শামিল এবং আদর্শিক শত্রুদের সঙ্গে গোপন আঁতাত গড়ে তোলার শামিল।
১৪৫ নম্বর আয়াতে মুনাফিকদের সর্বনিম্ন স্তরের জাহান্নামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আসলে মুনাফিকরা কাফিরদের চেয়েও নিকৃষ্ট ও বিপজ্জনক। তাদের বিরোধিতা ও শত্রুতা প্রকাশ্য। কিন্তু মুনাফিকদের চেনা যায় না। তারা ওপরে সুসম্পর্ক রাখার চেষ্টা করে এবং ভেতরে বড় ধরনের ক্ষতিসাধন করে। তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা চূড়ান্ত সংবাদ দিচ্ছেন, শেষ বিচারের দিন তারা কোনো সাহায্যকারী খুঁজে পাবে না। তবে হ্যাঁ, যারা তওবা করবে এবং নিজেদের সংশোধন করে নেবে, যারা আল্লাহর রজ্জুকে মজবুতভাবে ধরবে এবং একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই নিজেদের ধর্মকে একনিষ্ঠ করে নেবে, তাদের স্থান হবে প্রকৃত ইমানদারদের সঙ্গে। তাদের জন্য মহা প্রতিদান রয়েছে।
১৪৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সান্ত্বনা দিয়ে বলছেন, তিনি কখনোই মানুষকে শাস্তি দিতে চান না; তিনি মানুষের জন্য চান শান্তি ও সম্মান। তবে মানুষ যদি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করে এবং তাঁর ওপর ইমান আনে, তবেই আল্লাহর অনুগ্রহ পাওয়া সম্ভব। আল্লাহ তায়ালা মানুষের দোষ-গুণ, উৎকর্ষ-অপকর্ষ বোঝেন এবং সে অনুযায়ীই প্রতিদান দেবেন।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments