সময়ের প্রতিবিম্ব-চাওয়া-পাওয়ার হিসাব-নিকাশ by এবিএম মূসা
আমি টেলিভিশনের টক শোতে তেমন কিছু বলিনি, নিয়মিত কলামটিতে এই বিষয় নিয়ে কিছুই লিখিনি। বিষয়টি হচ্ছে, এক নম্বরে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক। তার পটভূমিকায় দুই নম্বরে হাসিনা-মনমোহন সিং বৈঠক। আগাম কিছু বলিনি বা লিখিনি তার কারণ, এ নিয়ে আগাম আশাবাদ আর উচ্ছ্বাস আমাকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করেছিল।
বাংলাদেশের মানুষের আকাশচুম্বী প্রত্যাশা মাটিতে আছড়ে পড়ার যে আশঙ্কাটি আমার মনের মাঝারে উঁকি দিচ্ছিল, সেটি প্রকাশ করতে চাইনি। এখন বোধ হয় অন্য সবার বক্তব্যের সঙ্গে সংগতি রেখে, অনেকের বিলম্বিত বিচিত্র বোধোদয়ের অংশীদার হয়ে কিছু বলা যেতে পারে।
হাসিনা-মনমোহন বৈঠক প্রসঙ্গে প্রথমে বলা যায়, এমন বৈঠক বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে অতীতে এমনকি পাকিস্তান আমলেও পারস্পরিক সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন স্তরে হয়েছে। উদাহরণ, লিয়াকত-নেহরু, নুন-নেহরু, মুজিব-ইন্দিরা, সাম্প্রতিক কালে দিল্লিতে হাসিনা-মনমোহন বৈঠক। সেসবের বৈঠক নিয়ে কোনো প্রাক-আলোচনা হয়নি। পরবর্তী সময়ে কোনো মহল ফলাফল ব্যবচ্ছেদ করেনি। সবাই শুধু ফলাফল জেনেছে সংলাপের পর, ফলাফল নিয়ে আগাম কোনো ধারণা পোষণ করেনি। এবারের বৈঠকের আগে প্রত্যাশা, পরে প্রাপ্তির হিসাব-নিকাশ অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের জনগণকে এমন আগাম আশা দেওয়া হয়েছিল যে আমরা ভারতের কাছ থেকে প্রার্থিত ও আকাঙ্ক্ষিত সামান্য চাহিদা, কিছু পানি পাব। অপরদিকে তাদের দেওয়া হবে আমাদের ভূমির ওপর দিয়ে তাদের নিজ রাষ্ট্রের এক থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়ার সুবিধা।
অতঃপর মনমোহন এলেন, কথা বললেন, চলে গেলেন। ফিরতি পথে বিমানে নিজ দেশের সাংবাদিকদের পরোক্ষে জানিয়ে দিলেন, তেমন কিছু লেনদেন হয়নি। কেন হয়নি, সে জন্য নিজেদের অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি অনুযোগ প্রকাশ করলেন। আমাদের কূটনীতি ও রাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক বিশ্লেষকেরা, সাধারণ মানুষ এবং গণমাধ্যম ‘কত সব চেয়েছিলাম অথচ পাইনি অথবা কতটুকু পেয়েছি’ তার হিসাব মেলাচ্ছেন। ওদিকে ভারতীয় মিডিয়া ও মনমোহন দুষছেন মমতাকে, এদিকে আমাদের দেশের বিজ্ঞজনেরা এমনকি সরকার পরিচালকদের কেউ কেউ নাটের গুরু বলে প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টার সমালোচনায় সোচ্চার।
চাওয়া-পাওয়ার যোগ-বিয়োগটির ফলাফল ভিন্ন আলোকে পাঠক সমীপে পেশ করছি। প্রথমেই এককথায় বলছি, চাওয়া-পাওয়ার চূড়ান্ত হিসাব হালকাভাবে করলে বলা যায়, ‘বাংলাদেশের মানুষ ধোঁকা খেয়েছে, আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী দুই উপদেষ্টার তাঁকে বোকা বানানোর অপচেষ্টা ভণ্ডুল করে দিয়েছেন।’ অতিরিক্ত পাওনা হচ্ছে, শেখ হাসিনার মধ্যে বাংলার মানুষের স্বার্থরক্ষায় বঙ্গবন্ধুর আপসহীন ও তেজস্বী চেহারাটি দেখতে পেয়েছি। সেটির প্রতিফলনেই গণমাধ্যমে শিরোনাম, ‘পানি নাই’ত ট্রানজিট দেব না’। মনমোহন সিং হতাশ হয়েছেন কি না, তা নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথার কারণ নেই। তিনি আমাদের চাওয়া তিস্তার পানি দিতে পারলেন না। তবে আমরা নাকের বদলে নরুন পেয়েছি, এমন একটি ধারণা সবিস্তারে প্রচারিত হচ্ছে। প্রায় দুই ডজন ছিটমহলের মধ্যে দুটিতে অবাধ যাতায়াত নিয়ে একটুখানি সফল আলোচনা হয়েছে। কাপড় ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য-সুবিধা পেয়েছেন, তা-ও বাস্তবে কতখানি পাবেন, তা বোঝা যাচ্ছে না। অপরদিকে কতখানি পেয়েছি, তা ছিটমহলবাসীর নিষ্প্রদীপ মহড়া, অবস্থান কর্মসূচি আর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশের মাঝেই প্রকাশ পেয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বলতে হচ্ছে, পানির হিস্যা আর ট্রানজিট, দুটিকে সমান গুরুত্ব কেন দেওয়া হয়েছে, তা বোঝার চেষ্টা করছি।
প্রথমে আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলব, ট্রানজিট নয়, আমরা ‘করিডর’ দিইনি। মানে, ভারতকে তার মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন ‘সেভেন সিস্টার্স’ সাত বোনের রাজ্যে যাওয়ার সরাসরি রাস্তা দিইনি। নিকট অতীতে ‘ট্রানজিট’ ধারণাটি প্রথমে আলোচিত হয়েছিল ব্যাংককে জাতিসংঘে, এসকাপে তথা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব অর্থনৈতিক সহযোগিতাবিষয়ক দপ্তরে। প্রাথমিক ও চূড়ান্ত প্রস্তাবটি ছিল ট্রান্স-এশিয়ান সড়ক যোগাযোগ। যার অন্যতম উদ্যোক্তা, প্রস্তাবক ও মানচিত্র নির্দেশক ছিলেন যোগাযোগ বিভাগের প্রধান বাংলাদেশের ড. রহমতউল্লাহ। প্রস্তাব ছিল একটি মহাসড়ক ইস্তাম্বুল থেকে ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ হয়ে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কাম্পুচিয়া, ভিয়েতনাম হয়ে হংকংয়ে যাবে। মাঝখানে শাখা-প্রশাখা আর বিকল্প পথ যাবে নেপাল, মালয়েশিয়া আর চীনের দিকে। বিকল্প পথটি বাংলাদেশ হয়ে ভারতের পূর্বাঞ্চল দিয়ে ঘুরে আবার মূল সড়কপথে যোগ হয়ে মিয়ানমারে যাবে। একটি শাখা যাবে মালয়েশিয়া হয়ে সিঙ্গাপুরে। অর্থাৎ ভারত থেকে বাংলাদেশের বুক চিরে শুধু ভারতে নয়, ভারতের এক প্রান্ত থেকে মধ্য বাংলাদেশ হয়ে ভারতেরই অন্য প্রান্ত ছুঁয়ে ইউরোপ থেকে এশিয়ার শেষ প্রান্তে হবে ট্রানজিট।
করিডর হচ্ছে, একটি বাড়ি থেকে অন্যের আঙিনার ভেতর দিয়ে নিজেরই আরেকটি বাড়ি যাওয়ার রাস্তা। উদাহরণ আঙ্গরপোতা-দহগ্রামে যাওয়ার করিডর। দূর অতীতে জিন্নাহ সাহেব ১৯৪৭ সালে র্যাডক্লিফের কাছে ভারতের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের দুই অংশের যোগাযোগের জন্য করিডর চেয়েছিলেন, কিন্তু পাননি। বাস্তব হচ্ছে, আমরা ভারতকে এক অঞ্চল থেকে অন্যটিতে ‘ট্রানজিট’ নয়, ‘করিডর’ বা যাতায়াতের বারান্দা দিইনি। ভারতের কিন্তু উত্তরপথে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সাত বোন রাজ্যে যাওয়ার ঘোরানো বিকল্প পথ আছে। আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহার-ব্যবস্থা, আখাউড়া-আগরতলা এবং ফেনী-বিলোনিয়া রাস্তা দিয়ে মাল বহন করিডর আগেই দিয়ে দিয়েছি। নতুন করিডর তাকে নিজেদের দুই অঞ্চলের মধ্যে একটি বিস্তারিত ও অবারিত অতিরিক্ত সুবিধা দেবে। ভারত ট্রানজিট তথা করিডর না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, শুধু বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক একটি অতিরিক্ত সুবিধা পায়নি।
ভারত যা পায়নি, তা না পেলে বা বিলম্বে পেলেও তাদের কিছু আসে-যায় না। আমরা পাইনি ‘জল, যার অপর নাম জীবন’। শুধু আলোচিত তিস্তা বা ফেনী নদী থেকে নয়, আরও অর্ধশতাধিক ভারতীয় উৎ স থেকে বাংলাদেশে প্রবাহিত নদী ও ছড়ার (ঝরনাধারার) পানি। আমাদের সেচব্যবস্থা, কৃষি উৎ পাদন, এমনকি আর্সেনিকমুক্ত পানির জন্য, ব্যাপক অর্থে জীবনধারণের, বেঁচে থাকার জন্য এসব অগণিত নদী-উপনদী, এসবের শাখা-প্রশাখার ওপর নির্ভর করতে হয়। তাই আমাদের পানি পাওয়া না-পাওয়ার সঙ্গে যাতায়াত বা ব্যবসা-বাণিজ্য নয়, বেঁচে থাকার প্রশ্নটি জড়িত। তাই তো লাইফ-সাপোর্ট, জীবন রক্ষার অক্সিজেন পাওয়ার জন্য আমরা গত পাঁচ দশক বারবার ভারতের কাছে এত কাকুতি-মিনতি করেছি। মোদ্দা কথা, এ কারণে আমাদের সর্বশেষ বৈঠক থেকে আসল পাওনা অভিন্ন নদীর পানি না-পাওয়ার যন্ত্রণা, হাসিনা-মনমোহন আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার কারণে সৃষ্ট মনোবেদনা অনেক বেশি গভীর। এবারের বৈঠকটি একটু আগে আলোচিত ইতিপূর্বেকার চুক্তিগুলোর চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। এটি বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের বাঁচা-মরার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। কিছু ব্যবসায়ীর পণ্য রপ্তানির সুযোগ পাওয়া আপামর জনগণের পাওয়া নয়। ভারতের চাহিদার ভিত্তি ছিল অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক; আমাদের চাহিদাটি হচ্ছে মানবিক, জীবন রক্ষার তাগিদ। এই অন্তর্নিহিত সত্যটি অনুধাবন করেই আমাদের প্রধানমন্ত্রী বারগেইন তথা দর-কষাকষি করেছেন। বাংলাদেশের চাহিদা আদায়ে আপন অবস্থানে অনড় থেকে নিজ দেশের জনগণের মধ্যে ব্যক্তি-ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। তাঁর কূটনীতি ব্যর্থ হলেও অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অবস্থান দৃঢ় হয়েছে।
এখন হাসিনা-মনমোহন বৈঠকের আশাবাদের বেলুন ঠুস করে ফেটে যাওয়ার জন্য আমাদের সরকারের পক্ষে আলোচনাকারী অথবা দায়িত্বপ্রাপ্ত রথী-মহারথীদের সংশ্লিষ্টতা আলোচনা করা যেতে পারে। এ নিয়ে বিজ্ঞজন প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টাকে দায়িত্ব পালনে অযোগ্যতার জন্য দোষারোপ করছেন। অথচ এই দায়িত্ব তাঁদের কাঁধে কেন চাপানো হলো, সে প্রশ্ন কেউ করছেন না। প্রাসঙ্গিক বক্তব্যে আমি দায়ী করব আমাদের বর্তমান সরকারব্যবস্থাকে, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর চমক দেওয়া একটি অদ্ভুত সরকারপদ্ধতিকে। আমি গত ছয় দশক সামরিক পদ্ধতি, সেনা নিয়ন্ত্রণ সরকারব্যবস্থা, রাষ্ট্রপতির একনায়কত্বের শাসন, সংসদীয় পদ্ধতির নির্বাচিত সরকার পরিচালনা এবং তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত ছিলাম। রাষ্ট্রনীতির ছাত্রছাত্রীরা এসব বইপুস্তকে পেয়েছেন। কিন্তু কোথাও ‘উপদেষ্টা পদ্ধতির’ সরকারের ব্যাখ্যা বা সংজ্ঞার বিশ্লেষণ খুঁজে পাবেন না। এবার সরকারের ভেতরের-বাইরের সবাই ও জনগণ বর্তমান সরকারব্যবস্থায় এই চমক দেওয়া পদ্ধতিটির অকার্যকারিতা হূদয়ঙ্গম করেছেন। হাসিনা-মনমোহন বৈঠকের আদি প্রস্তুতিকালে, মধ্যবর্তী প্রাক্কালে ও প্রান্তে এসে এই দুই উপদেষ্টার কর্মতৎ পরতার সঙ্গে জনগণ পুরোপুরি পরিচিত হলেন। এই পদ্ধতিটির বৈচিত্র্য হচ্ছে, উল্লিখিত গণতান্ত্রিক বা অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিচালিত সরকারব্যবস্থায় কমবেশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকে। জনগণ সেই সময়কার সরকারের গৃহীত সব পদক্ষেপের উৎ পত্তি ও পরিণতি সম্পর্কে অবগত থাকেন, সজাগও থাকেন। কিন্তু উপদেষ্টা পদ্ধতির সরকারের জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহি থাকে না, নেই কোনো দায়বদ্ধতা, ব্যর্থতার কৈফিয়ত প্রদানের বাধ্যবাধকতা।
ভারতের নীতি নিয়ে আমি আলোচনা করতে চাই না। কারণ, দুই দেশের সম্পর্কের গত কয়েক বছরে যে অগ্রগতি হয়েছিল, তা হঠাৎ করে থমকে যাওয়ার মূলে রয়েছে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির মেরুকরণ। আমাদের উপদেষ্টা পদ্ধতির বিপরীতে ভারতের গণতান্ত্রিক পদ্ধতির সরকারের কার্যকারিতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে থাকবে পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে মনমোহনের অবস্থান। তিনি নিজস্ব রাজনৈতিক অঙ্গনের ও আঞ্চলিক ক্ষমতাধরদের সবাইকে নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে পানিচুক্তি, ট্রানজিট ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে চেয়েছিলেন। এর বিপরীতে আমাদের সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী দুই উপদেষ্টা, যাঁদের তিনি কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, শুধু তাঁদের নিয়েই একটি বৈদেশিক নীতি বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন। তিনি এ নিয়ে মন্ত্রিপরিষদে আলোচনা করেছেন, এমনটি শুনিনি। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের, দলীয় অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতাদের, অবসরে যাওয়া প্রবীণ কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনা প্রয়োজন মনে করেননি। ‘ট্রানজিট’ নিয়ে যোগাযোগমন্ত্রী, নদী নিয়ে পানিসম্পদমন্ত্রী, সীমান্ত নিয়ে পররাষ্ট্র বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী—এদের সংশ্লিষ্ট করেননি। বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার কথা না-ই বা বললাম, সে কাজটি তো ভারতের প্রধানমন্ত্রীই করলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে।
আমার সর্বশেষ বক্তব্যটি হচ্ছে, হাসিনা-মনমোহন বৈঠকের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব-নিকাশ এখনই চূড়ান্ত করা যাবে না। কারণ, অঙ্ক শেষ হয়নি। হাসিনা-মনমোহন বৈঠক ব্যর্থ হয়নি, মাঝপথে থেমে গেছে। মৈত্রীর পথে যাত্রা রোডব্লকে সাময়িকভাবে আটকা পড়েছে। অদূর ভবিষ্যতে, কত নিকট-দূরে জানি না, আবার যাত্রাটি চলমান হবে—আমার এ বিশ্বাস আছে। এ হচ্ছে দুই মিত্রের সাময়িক মতবিরোধ, সম্পর্কচ্ছেদ নয়। কূটনীতির ভাষায় বলে, ‘দে হ্যাভ এগ্রিড টু ডিজএগ্রি’—মতান্তরের বিষয়ে একমত আছেন। আমার বিশ্বাস, দুই প্রধানমন্ত্রী অনুধাবন করতে পেরেছেন শীর্ষ বৈঠকের প্রস্তুতিপর্বে, গোড়ায়ই গলদ ছিল। যদি তা পেয়ে থাকেন, আগামী বৈঠকটি অবশ্যই সফল হবে।
এবিএম মূসা: সাংবাদিক ও কলাম লেখক।
হাসিনা-মনমোহন বৈঠক প্রসঙ্গে প্রথমে বলা যায়, এমন বৈঠক বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকে অতীতে এমনকি পাকিস্তান আমলেও পারস্পরিক সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন স্তরে হয়েছে। উদাহরণ, লিয়াকত-নেহরু, নুন-নেহরু, মুজিব-ইন্দিরা, সাম্প্রতিক কালে দিল্লিতে হাসিনা-মনমোহন বৈঠক। সেসবের বৈঠক নিয়ে কোনো প্রাক-আলোচনা হয়নি। পরবর্তী সময়ে কোনো মহল ফলাফল ব্যবচ্ছেদ করেনি। সবাই শুধু ফলাফল জেনেছে সংলাপের পর, ফলাফল নিয়ে আগাম কোনো ধারণা পোষণ করেনি। এবারের বৈঠকের আগে প্রত্যাশা, পরে প্রাপ্তির হিসাব-নিকাশ অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের জনগণকে এমন আগাম আশা দেওয়া হয়েছিল যে আমরা ভারতের কাছ থেকে প্রার্থিত ও আকাঙ্ক্ষিত সামান্য চাহিদা, কিছু পানি পাব। অপরদিকে তাদের দেওয়া হবে আমাদের ভূমির ওপর দিয়ে তাদের নিজ রাষ্ট্রের এক থেকে অন্য প্রান্তে যাওয়ার সুবিধা।
অতঃপর মনমোহন এলেন, কথা বললেন, চলে গেলেন। ফিরতি পথে বিমানে নিজ দেশের সাংবাদিকদের পরোক্ষে জানিয়ে দিলেন, তেমন কিছু লেনদেন হয়নি। কেন হয়নি, সে জন্য নিজেদের অঙ্গরাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি অনুযোগ প্রকাশ করলেন। আমাদের কূটনীতি ও রাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ, রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক বিশ্লেষকেরা, সাধারণ মানুষ এবং গণমাধ্যম ‘কত সব চেয়েছিলাম অথচ পাইনি অথবা কতটুকু পেয়েছি’ তার হিসাব মেলাচ্ছেন। ওদিকে ভারতীয় মিডিয়া ও মনমোহন দুষছেন মমতাকে, এদিকে আমাদের দেশের বিজ্ঞজনেরা এমনকি সরকার পরিচালকদের কেউ কেউ নাটের গুরু বলে প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টার সমালোচনায় সোচ্চার।
চাওয়া-পাওয়ার যোগ-বিয়োগটির ফলাফল ভিন্ন আলোকে পাঠক সমীপে পেশ করছি। প্রথমেই এককথায় বলছি, চাওয়া-পাওয়ার চূড়ান্ত হিসাব হালকাভাবে করলে বলা যায়, ‘বাংলাদেশের মানুষ ধোঁকা খেয়েছে, আর আমাদের প্রধানমন্ত্রী দুই উপদেষ্টার তাঁকে বোকা বানানোর অপচেষ্টা ভণ্ডুল করে দিয়েছেন।’ অতিরিক্ত পাওনা হচ্ছে, শেখ হাসিনার মধ্যে বাংলার মানুষের স্বার্থরক্ষায় বঙ্গবন্ধুর আপসহীন ও তেজস্বী চেহারাটি দেখতে পেয়েছি। সেটির প্রতিফলনেই গণমাধ্যমে শিরোনাম, ‘পানি নাই’ত ট্রানজিট দেব না’। মনমোহন সিং হতাশ হয়েছেন কি না, তা নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথার কারণ নেই। তিনি আমাদের চাওয়া তিস্তার পানি দিতে পারলেন না। তবে আমরা নাকের বদলে নরুন পেয়েছি, এমন একটি ধারণা সবিস্তারে প্রচারিত হচ্ছে। প্রায় দুই ডজন ছিটমহলের মধ্যে দুটিতে অবাধ যাতায়াত নিয়ে একটুখানি সফল আলোচনা হয়েছে। কাপড় ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য-সুবিধা পেয়েছেন, তা-ও বাস্তবে কতখানি পাবেন, তা বোঝা যাচ্ছে না। অপরদিকে কতখানি পেয়েছি, তা ছিটমহলবাসীর নিষ্প্রদীপ মহড়া, অবস্থান কর্মসূচি আর ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশের মাঝেই প্রকাশ পেয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বলতে হচ্ছে, পানির হিস্যা আর ট্রানজিট, দুটিকে সমান গুরুত্ব কেন দেওয়া হয়েছে, তা বোঝার চেষ্টা করছি।
প্রথমে আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলব, ট্রানজিট নয়, আমরা ‘করিডর’ দিইনি। মানে, ভারতকে তার মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন ‘সেভেন সিস্টার্স’ সাত বোনের রাজ্যে যাওয়ার সরাসরি রাস্তা দিইনি। নিকট অতীতে ‘ট্রানজিট’ ধারণাটি প্রথমে আলোচিত হয়েছিল ব্যাংককে জাতিসংঘে, এসকাপে তথা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব অর্থনৈতিক সহযোগিতাবিষয়ক দপ্তরে। প্রাথমিক ও চূড়ান্ত প্রস্তাবটি ছিল ট্রান্স-এশিয়ান সড়ক যোগাযোগ। যার অন্যতম উদ্যোক্তা, প্রস্তাবক ও মানচিত্র নির্দেশক ছিলেন যোগাযোগ বিভাগের প্রধান বাংলাদেশের ড. রহমতউল্লাহ। প্রস্তাব ছিল একটি মহাসড়ক ইস্তাম্বুল থেকে ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ হয়ে মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কাম্পুচিয়া, ভিয়েতনাম হয়ে হংকংয়ে যাবে। মাঝখানে শাখা-প্রশাখা আর বিকল্প পথ যাবে নেপাল, মালয়েশিয়া আর চীনের দিকে। বিকল্প পথটি বাংলাদেশ হয়ে ভারতের পূর্বাঞ্চল দিয়ে ঘুরে আবার মূল সড়কপথে যোগ হয়ে মিয়ানমারে যাবে। একটি শাখা যাবে মালয়েশিয়া হয়ে সিঙ্গাপুরে। অর্থাৎ ভারত থেকে বাংলাদেশের বুক চিরে শুধু ভারতে নয়, ভারতের এক প্রান্ত থেকে মধ্য বাংলাদেশ হয়ে ভারতেরই অন্য প্রান্ত ছুঁয়ে ইউরোপ থেকে এশিয়ার শেষ প্রান্তে হবে ট্রানজিট।
করিডর হচ্ছে, একটি বাড়ি থেকে অন্যের আঙিনার ভেতর দিয়ে নিজেরই আরেকটি বাড়ি যাওয়ার রাস্তা। উদাহরণ আঙ্গরপোতা-দহগ্রামে যাওয়ার করিডর। দূর অতীতে জিন্নাহ সাহেব ১৯৪৭ সালে র্যাডক্লিফের কাছে ভারতের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের দুই অংশের যোগাযোগের জন্য করিডর চেয়েছিলেন, কিন্তু পাননি। বাস্তব হচ্ছে, আমরা ভারতকে এক অঞ্চল থেকে অন্যটিতে ‘ট্রানজিট’ নয়, ‘করিডর’ বা যাতায়াতের বারান্দা দিইনি। ভারতের কিন্তু উত্তরপথে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সাত বোন রাজ্যে যাওয়ার ঘোরানো বিকল্প পথ আছে। আশুগঞ্জ বন্দর ব্যবহার-ব্যবস্থা, আখাউড়া-আগরতলা এবং ফেনী-বিলোনিয়া রাস্তা দিয়ে মাল বহন করিডর আগেই দিয়ে দিয়েছি। নতুন করিডর তাকে নিজেদের দুই অঞ্চলের মধ্যে একটি বিস্তারিত ও অবারিত অতিরিক্ত সুবিধা দেবে। ভারত ট্রানজিট তথা করিডর না পেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, শুধু বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক একটি অতিরিক্ত সুবিধা পায়নি।
ভারত যা পায়নি, তা না পেলে বা বিলম্বে পেলেও তাদের কিছু আসে-যায় না। আমরা পাইনি ‘জল, যার অপর নাম জীবন’। শুধু আলোচিত তিস্তা বা ফেনী নদী থেকে নয়, আরও অর্ধশতাধিক ভারতীয় উৎ স থেকে বাংলাদেশে প্রবাহিত নদী ও ছড়ার (ঝরনাধারার) পানি। আমাদের সেচব্যবস্থা, কৃষি উৎ পাদন, এমনকি আর্সেনিকমুক্ত পানির জন্য, ব্যাপক অর্থে জীবনধারণের, বেঁচে থাকার জন্য এসব অগণিত নদী-উপনদী, এসবের শাখা-প্রশাখার ওপর নির্ভর করতে হয়। তাই আমাদের পানি পাওয়া না-পাওয়ার সঙ্গে যাতায়াত বা ব্যবসা-বাণিজ্য নয়, বেঁচে থাকার প্রশ্নটি জড়িত। তাই তো লাইফ-সাপোর্ট, জীবন রক্ষার অক্সিজেন পাওয়ার জন্য আমরা গত পাঁচ দশক বারবার ভারতের কাছে এত কাকুতি-মিনতি করেছি। মোদ্দা কথা, এ কারণে আমাদের সর্বশেষ বৈঠক থেকে আসল পাওনা অভিন্ন নদীর পানি না-পাওয়ার যন্ত্রণা, হাসিনা-মনমোহন আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার কারণে সৃষ্ট মনোবেদনা অনেক বেশি গভীর। এবারের বৈঠকটি একটু আগে আলোচিত ইতিপূর্বেকার চুক্তিগুলোর চেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে। এটি বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষের বাঁচা-মরার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। কিছু ব্যবসায়ীর পণ্য রপ্তানির সুযোগ পাওয়া আপামর জনগণের পাওয়া নয়। ভারতের চাহিদার ভিত্তি ছিল অর্থনৈতিক ও ভৌগোলিক; আমাদের চাহিদাটি হচ্ছে মানবিক, জীবন রক্ষার তাগিদ। এই অন্তর্নিহিত সত্যটি অনুধাবন করেই আমাদের প্রধানমন্ত্রী বারগেইন তথা দর-কষাকষি করেছেন। বাংলাদেশের চাহিদা আদায়ে আপন অবস্থানে অনড় থেকে নিজ দেশের জনগণের মধ্যে ব্যক্তি-ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। তাঁর কূটনীতি ব্যর্থ হলেও অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অবস্থান দৃঢ় হয়েছে।
এখন হাসিনা-মনমোহন বৈঠকের আশাবাদের বেলুন ঠুস করে ফেটে যাওয়ার জন্য আমাদের সরকারের পক্ষে আলোচনাকারী অথবা দায়িত্বপ্রাপ্ত রথী-মহারথীদের সংশ্লিষ্টতা আলোচনা করা যেতে পারে। এ নিয়ে বিজ্ঞজন প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টাকে দায়িত্ব পালনে অযোগ্যতার জন্য দোষারোপ করছেন। অথচ এই দায়িত্ব তাঁদের কাঁধে কেন চাপানো হলো, সে প্রশ্ন কেউ করছেন না। প্রাসঙ্গিক বক্তব্যে আমি দায়ী করব আমাদের বর্তমান সরকারব্যবস্থাকে, আমাদের প্রধানমন্ত্রীর চমক দেওয়া একটি অদ্ভুত সরকারপদ্ধতিকে। আমি গত ছয় দশক সামরিক পদ্ধতি, সেনা নিয়ন্ত্রণ সরকারব্যবস্থা, রাষ্ট্রপতির একনায়কত্বের শাসন, সংসদীয় পদ্ধতির নির্বাচিত সরকার পরিচালনা এবং তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত ছিলাম। রাষ্ট্রনীতির ছাত্রছাত্রীরা এসব বইপুস্তকে পেয়েছেন। কিন্তু কোথাও ‘উপদেষ্টা পদ্ধতির’ সরকারের ব্যাখ্যা বা সংজ্ঞার বিশ্লেষণ খুঁজে পাবেন না। এবার সরকারের ভেতরের-বাইরের সবাই ও জনগণ বর্তমান সরকারব্যবস্থায় এই চমক দেওয়া পদ্ধতিটির অকার্যকারিতা হূদয়ঙ্গম করেছেন। হাসিনা-মনমোহন বৈঠকের আদি প্রস্তুতিকালে, মধ্যবর্তী প্রাক্কালে ও প্রান্তে এসে এই দুই উপদেষ্টার কর্মতৎ পরতার সঙ্গে জনগণ পুরোপুরি পরিচিত হলেন। এই পদ্ধতিটির বৈচিত্র্য হচ্ছে, উল্লিখিত গণতান্ত্রিক বা অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে পরিচালিত সরকারব্যবস্থায় কমবেশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকে। জনগণ সেই সময়কার সরকারের গৃহীত সব পদক্ষেপের উৎ পত্তি ও পরিণতি সম্পর্কে অবগত থাকেন, সজাগও থাকেন। কিন্তু উপদেষ্টা পদ্ধতির সরকারের জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহি থাকে না, নেই কোনো দায়বদ্ধতা, ব্যর্থতার কৈফিয়ত প্রদানের বাধ্যবাধকতা।
ভারতের নীতি নিয়ে আমি আলোচনা করতে চাই না। কারণ, দুই দেশের সম্পর্কের গত কয়েক বছরে যে অগ্রগতি হয়েছিল, তা হঠাৎ করে থমকে যাওয়ার মূলে রয়েছে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির মেরুকরণ। আমাদের উপদেষ্টা পদ্ধতির বিপরীতে ভারতের গণতান্ত্রিক পদ্ধতির সরকারের কার্যকারিতার প্রকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে থাকবে পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে মনমোহনের অবস্থান। তিনি নিজস্ব রাজনৈতিক অঙ্গনের ও আঞ্চলিক ক্ষমতাধরদের সবাইকে নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে পানিচুক্তি, ট্রানজিট ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে চেয়েছিলেন। এর বিপরীতে আমাদের সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী দুই উপদেষ্টা, যাঁদের তিনি কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, শুধু তাঁদের নিয়েই একটি বৈদেশিক নীতি বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন। তিনি এ নিয়ে মন্ত্রিপরিষদে আলোচনা করেছেন, এমনটি শুনিনি। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের, দলীয় অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতাদের, অবসরে যাওয়া প্রবীণ কূটনীতিকদের সঙ্গে আলোচনা প্রয়োজন মনে করেননি। ‘ট্রানজিট’ নিয়ে যোগাযোগমন্ত্রী, নদী নিয়ে পানিসম্পদমন্ত্রী, সীমান্ত নিয়ে পররাষ্ট্র বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী—এদের সংশ্লিষ্ট করেননি। বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার কথা না-ই বা বললাম, সে কাজটি তো ভারতের প্রধানমন্ত্রীই করলেন, খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে।
আমার সর্বশেষ বক্তব্যটি হচ্ছে, হাসিনা-মনমোহন বৈঠকের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব-নিকাশ এখনই চূড়ান্ত করা যাবে না। কারণ, অঙ্ক শেষ হয়নি। হাসিনা-মনমোহন বৈঠক ব্যর্থ হয়নি, মাঝপথে থেমে গেছে। মৈত্রীর পথে যাত্রা রোডব্লকে সাময়িকভাবে আটকা পড়েছে। অদূর ভবিষ্যতে, কত নিকট-দূরে জানি না, আবার যাত্রাটি চলমান হবে—আমার এ বিশ্বাস আছে। এ হচ্ছে দুই মিত্রের সাময়িক মতবিরোধ, সম্পর্কচ্ছেদ নয়। কূটনীতির ভাষায় বলে, ‘দে হ্যাভ এগ্রিড টু ডিজএগ্রি’—মতান্তরের বিষয়ে একমত আছেন। আমার বিশ্বাস, দুই প্রধানমন্ত্রী অনুধাবন করতে পেরেছেন শীর্ষ বৈঠকের প্রস্তুতিপর্বে, গোড়ায়ই গলদ ছিল। যদি তা পেয়ে থাকেন, আগামী বৈঠকটি অবশ্যই সফল হবে।
এবিএম মূসা: সাংবাদিক ও কলাম লেখক।
No comments