প্রতিবাদ-শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিলের উদ্যোগ নিইনি by শমসের মবিন চৌধুরী
দৈনিক প্রথম আলোর ১৪ সেপ্টেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের ব্যাপারে আমি আমার অবস্থান ব্যাখ্যা করা জরুরি বলে মনে করছি। উইকিলিকসের উদ্ঘাটিত তারবার্তার নামে প্রচারিত ওই প্রতিবেদনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পাসপোর্ট বাতিলের ব্যাপারে তখনকার জরুরি অবস্থার সরকারের এক সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমার নাম জড়ানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আমার পরিষ্কার বক্তব্য হচ্ছে, তথাকথিত তারবার্তায় সত্যকে বিকৃত করা হয়েছে।
এ সম্পর্কে সত্যিকারের তথ্য হচ্ছে: ২০০৭ সালের এপ্রিল মাসের সম্ভবত ১৯ তারিখে আমি যখন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে আমার দায়িত্ব শেষের প্রস্তুতি শুরু করেছি, সে সময় ডেপুটি চিফ অব মিশন শেখ মোহাম্মদ বেলাল আমাকে জানান, পররাষ্ট্র দপ্তরের মহাপরিচালক (আমেরিকা) শহীদুল ইসলাম ঢাকা থেকে ফোন করে তাঁকে বলেছেন যে সরকার শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এ বিষয়ে দূতাবাস যেন অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়। শেখ হাসিনা তখন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন এবং পরের দিন তাঁর বাংলাদেশে ফেরার উদ্দেশে লন্ডনে যাওয়ার কথা ছিল।
ব্যাপারটা শুনে সঙ্গে সঙ্গেই আমি এর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তখনকার ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদ হোসেনকে ফোন করি। জনাব তৌহিদ জানান, ঘটনা সত্য। আমি তখন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিবকে বলি যে লিখিত কোনো নির্দেশনা ছাড়া এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
তৌহিদ বলেন, তিনি বিষয়টি দেখছেন। এর ঘণ্টা খানেক পর মহাপরিচালক (আমেরিকা) ডেপুটি চিফ অব মিশনকে জানান, সিদ্ধান্তে কিছু পরিবর্তন হয়েছে, পাসপোর্ট বাতিল করতে হবে না। তবে ওয়াশিংটনের ডালাস এয়ারপোর্টে শেখ হাসিনার প্লেনে ওঠা ঠেকাতে হবে। আমি এই পরিবর্তিত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আবার ফোনে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিবকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ডিজিএফআই থেকে ব্রিগেডিয়ার আমিন নামের একজন অফিসার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং তিনি তাঁকে বলেছেন যে শেখ হাসিনা হচ্ছেন ‘ঝুঁকির একটা উৎস’ এবং যেকোনো মূল্যে তাঁর বাংলাদেশে ফেরা ঠেকাতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
আমি ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিবকে আবারও জানাই যে মিশনকে কোনো পদক্ষেপ নিতে হলে সরকারের কাছ থেকে লিখিত নির্দেশনা থাকতে হবে। আমি ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিবকে এই পরামর্শও দিই যে বিদেশের মাটিতে এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিতে যাওয়াটা খুব একটা সুবুদ্ধির কাজ হবে না।
তিনি বলেন, ব্যাপারটিতে তিনি নাচার। ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব আমাকে আরও জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক করে পরের দিন এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা দেওয়া হবে।
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে যখন আমার ফোনে কথা হচ্ছিল, তার ঘণ্টা খানেক পরেই যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট নিকোলাস বার্নসের সঙ্গে আমার বিদায়ী সাক্ষাতের সময় নির্ধারিত ছিল। এ খবর আমার কাছ থেকে শুনে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বিষয়টি আমি মি. বার্নসের কাছে তুলে ধরে এ ব্যাপারে তাঁর সরকারের সহায়তা চাইতে পারি।
আমি ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিবকে বলি, সরকারের নির্দেশ হিসেবে আমি বিষয়টি আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেটকে জানাতে পারি। তবে সশরীরে শেখ হাসিনাকে ডালাস বিমানবন্দরে প্লেনে ওঠা ঠেকাতে কোনো কিছু করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ, এটা হবে আমার বিবেক-বিরুদ্ধ কাজ। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের পদে আজই আমার শেষ দিন। এ সময়ে ওই ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কোনো দায় আমার নেই।
এর মধ্যে দূতাবাসের ডিফেন্স অ্যাটাশে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নূরুজ্জামান আমাকে ফোন করেন। তিনি বলেন, ওই ব্রিগেডিয়ার আমিন তাঁকেও ফোন করে বলেছেন, রাষ্ট্রদূতকে সিদ্ধান্তমতো কাজ করতেই হবে। কথা না শুনলে রাষ্ট্রদূতকে গুরুতর পরিণাম ভোগ করতে হবে বলে আমিন হুমকি দিয়েছেন বলেও নূরুজ্জামান আমাকে জানান। আমিন ডিফেন্স অ্যাটাশেকে এ কথাও বলেন, প্রয়োজনীয় নির্দেশনা শিগগিরই পাঠানো হচ্ছে।
আমি এর জবাবে ডিফেন্স অ্যাটাশেকে বলি, আমি কেবল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করতে পারি, অন্য কারও নয়।
ডিফেন্স অ্যাটাশে খুবই হতবিহ্বল ছিলেন। বোঝাই যাচ্ছিল, তিনি বিরাট চাপের মধ্যে আছেন।
এরপর আন্ডার সেক্রেটারি মি. বার্নসের সঙ্গে আমি বিদায়ী সাক্ষাৎ করতে যাই। বৈঠকে রীতিমাফিক কথাবার্তার পর আমি তাঁকে বলি, সরকার আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন তাঁকে এবং তাঁর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে এ কথা জানাই যে বাংলাদেশ সরকার এই মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশে উপস্থিতি কাম্য নয়। কেননা, তাঁকে ‘গুরুতর নিরাপত্তা ঝুঁকির অন্যতম উৎস’ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। আমি মি. বার্নসকে আরও জানাই যে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ওয়াশিংটনের ডালাস বিমানবন্দরে শেখ হাসিনা যাতে লন্ডনগামী ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের প্লেনে উঠতে না পারেন, এর জন্য দূতাবাসকে পরদিন সবকিছু করতে হবে। এই বৈঠকে ডেপুটি চিফ অব মিশন শেখ মোহাম্মদ বেলালও উপস্থিত ছিলেন।
আন্ডার সেক্রেটারি বার্নস কথাগুলো শুনে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের এজাতীয় উদ্যোগকে তাঁর সরকার সমর্থন করে না। তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনাকে প্লেনে উঠতে বাধা দিতে গিয়ে ডালাস বিমানবন্দরে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে এর পুরো দায়ভার বাংলাদেশ সরকারকেই বইতে হবে।
বৈঠক শেষে দূতাবাসে ফিরে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিবকে আমি একটি সাংকেতিক বার্তা পাঠাই। তাতে আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট মি. বার্নসের সঙ্গে আমার আলোচনার বিশদ বিবরণ দিই। আমি যখন বার্তাটি লিখি, সে সময় ডেপুটি চিফ অব মিশন শেখ মোহাম্মদ বেলাল, ডিফেন্স অ্যাটাশে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নূরুজ্জামান এবং নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল কাজী ইমতিয়াজ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
ওপরের বিবরণ থেকে নিঃসন্দেহে এ কথা পরিষ্কার হবে, শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিলের কোনো উদ্যোগ কখনো কোনোভাবেই আমি নিইনি, বরং তখনকার সরকারের এ-সম্পর্কিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই আমি যুক্তি দেখিয়েছি। শুধু তা-ই নয়, শেখ হাসিনাকে প্লেনে ওঠা থেকে বিরত রাখার সরকারি সিদ্ধান্তেরও বিরোধী ছিলাম আমি। এ ধরনের কাজে আমি নিজে জড়িত হইনি, শুধু তা-ই নয়, এমন কোনো উদ্যোগ নিতে কোনো কর্মকর্তাকেও কখনো নির্দেশ আমি দিইনি।
কাজেই কথিত উদ্ঘাটিত তারবার্তা হিসেবে উইকিলিকসের নামে যা প্রচারিত হয়েছে, তার বিষয়বস্তু নিছক কল্পকাহিনিমাত্র এবং এতে সত্যের লেশমাত্র নেই। এর মাধ্যমে আমার সুনাম ও পেশাজীবনের পক্ষপাতহীন, সৎ ও দায়িত্বশীল ভূমিকাকে খর্ব করার অপচেষ্টা করা হয়েছে বলেই আমি মনে করি।
শমসের মবিন চৌধুরী, ঢাকা।
ব্যাপারটা শুনে সঙ্গে সঙ্গেই আমি এর সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তখনকার ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব তৌহিদ হোসেনকে ফোন করি। জনাব তৌহিদ জানান, ঘটনা সত্য। আমি তখন ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিবকে বলি যে লিখিত কোনো নির্দেশনা ছাড়া এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
তৌহিদ বলেন, তিনি বিষয়টি দেখছেন। এর ঘণ্টা খানেক পর মহাপরিচালক (আমেরিকা) ডেপুটি চিফ অব মিশনকে জানান, সিদ্ধান্তে কিছু পরিবর্তন হয়েছে, পাসপোর্ট বাতিল করতে হবে না। তবে ওয়াশিংটনের ডালাস এয়ারপোর্টে শেখ হাসিনার প্লেনে ওঠা ঠেকাতে হবে। আমি এই পরিবর্তিত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আবার ফোনে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিবকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, ডিজিএফআই থেকে ব্রিগেডিয়ার আমিন নামের একজন অফিসার তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং তিনি তাঁকে বলেছেন যে শেখ হাসিনা হচ্ছেন ‘ঝুঁকির একটা উৎস’ এবং যেকোনো মূল্যে তাঁর বাংলাদেশে ফেরা ঠেকাতে পদক্ষেপ নিতে হবে।
আমি ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিবকে আবারও জানাই যে মিশনকে কোনো পদক্ষেপ নিতে হলে সরকারের কাছ থেকে লিখিত নির্দেশনা থাকতে হবে। আমি ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিবকে এই পরামর্শও দিই যে বিদেশের মাটিতে এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিতে যাওয়াটা খুব একটা সুবুদ্ধির কাজ হবে না।
তিনি বলেন, ব্যাপারটিতে তিনি নাচার। ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব আমাকে আরও জানান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একটি আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক করে পরের দিন এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা দেওয়া হবে।
ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে যখন আমার ফোনে কথা হচ্ছিল, তার ঘণ্টা খানেক পরেই যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট নিকোলাস বার্নসের সঙ্গে আমার বিদায়ী সাক্ষাতের সময় নির্ধারিত ছিল। এ খবর আমার কাছ থেকে শুনে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিব বলেন, বিষয়টি আমি মি. বার্নসের কাছে তুলে ধরে এ ব্যাপারে তাঁর সরকারের সহায়তা চাইতে পারি।
আমি ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিবকে বলি, সরকারের নির্দেশ হিসেবে আমি বিষয়টি আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেটকে জানাতে পারি। তবে সশরীরে শেখ হাসিনাকে ডালাস বিমানবন্দরে প্লেনে ওঠা ঠেকাতে কোনো কিছু করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ, এটা হবে আমার বিবেক-বিরুদ্ধ কাজ। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের পদে আজই আমার শেষ দিন। এ সময়ে ওই ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কোনো দায় আমার নেই।
এর মধ্যে দূতাবাসের ডিফেন্স অ্যাটাশে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নূরুজ্জামান আমাকে ফোন করেন। তিনি বলেন, ওই ব্রিগেডিয়ার আমিন তাঁকেও ফোন করে বলেছেন, রাষ্ট্রদূতকে সিদ্ধান্তমতো কাজ করতেই হবে। কথা না শুনলে রাষ্ট্রদূতকে গুরুতর পরিণাম ভোগ করতে হবে বলে আমিন হুমকি দিয়েছেন বলেও নূরুজ্জামান আমাকে জানান। আমিন ডিফেন্স অ্যাটাশেকে এ কথাও বলেন, প্রয়োজনীয় নির্দেশনা শিগগিরই পাঠানো হচ্ছে।
আমি এর জবাবে ডিফেন্স অ্যাটাশেকে বলি, আমি কেবল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করতে পারি, অন্য কারও নয়।
ডিফেন্স অ্যাটাশে খুবই হতবিহ্বল ছিলেন। বোঝাই যাচ্ছিল, তিনি বিরাট চাপের মধ্যে আছেন।
এরপর আন্ডার সেক্রেটারি মি. বার্নসের সঙ্গে আমি বিদায়ী সাক্ষাৎ করতে যাই। বৈঠকে রীতিমাফিক কথাবার্তার পর আমি তাঁকে বলি, সরকার আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, আমি যেন তাঁকে এবং তাঁর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে এ কথা জানাই যে বাংলাদেশ সরকার এই মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাংলাদেশে উপস্থিতি কাম্য নয়। কেননা, তাঁকে ‘গুরুতর নিরাপত্তা ঝুঁকির অন্যতম উৎস’ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। আমি মি. বার্নসকে আরও জানাই যে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ওয়াশিংটনের ডালাস বিমানবন্দরে শেখ হাসিনা যাতে লন্ডনগামী ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের প্লেনে উঠতে না পারেন, এর জন্য দূতাবাসকে পরদিন সবকিছু করতে হবে। এই বৈঠকে ডেপুটি চিফ অব মিশন শেখ মোহাম্মদ বেলালও উপস্থিত ছিলেন।
আন্ডার সেক্রেটারি বার্নস কথাগুলো শুনে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকারের এজাতীয় উদ্যোগকে তাঁর সরকার সমর্থন করে না। তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনাকে প্লেনে উঠতে বাধা দিতে গিয়ে ডালাস বিমানবন্দরে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে এর পুরো দায়ভার বাংলাদেশ সরকারকেই বইতে হবে।
বৈঠক শেষে দূতাবাসে ফিরে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রসচিবকে আমি একটি সাংকেতিক বার্তা পাঠাই। তাতে আন্ডার সেক্রেটারি অব স্টেট মি. বার্নসের সঙ্গে আমার আলোচনার বিশদ বিবরণ দিই। আমি যখন বার্তাটি লিখি, সে সময় ডেপুটি চিফ অব মিশন শেখ মোহাম্মদ বেলাল, ডিফেন্স অ্যাটাশে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নূরুজ্জামান এবং নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল কাজী ইমতিয়াজ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
ওপরের বিবরণ থেকে নিঃসন্দেহে এ কথা পরিষ্কার হবে, শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিলের কোনো উদ্যোগ কখনো কোনোভাবেই আমি নিইনি, বরং তখনকার সরকারের এ-সম্পর্কিত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই আমি যুক্তি দেখিয়েছি। শুধু তা-ই নয়, শেখ হাসিনাকে প্লেনে ওঠা থেকে বিরত রাখার সরকারি সিদ্ধান্তেরও বিরোধী ছিলাম আমি। এ ধরনের কাজে আমি নিজে জড়িত হইনি, শুধু তা-ই নয়, এমন কোনো উদ্যোগ নিতে কোনো কর্মকর্তাকেও কখনো নির্দেশ আমি দিইনি।
কাজেই কথিত উদ্ঘাটিত তারবার্তা হিসেবে উইকিলিকসের নামে যা প্রচারিত হয়েছে, তার বিষয়বস্তু নিছক কল্পকাহিনিমাত্র এবং এতে সত্যের লেশমাত্র নেই। এর মাধ্যমে আমার সুনাম ও পেশাজীবনের পক্ষপাতহীন, সৎ ও দায়িত্বশীল ভূমিকাকে খর্ব করার অপচেষ্টা করা হয়েছে বলেই আমি মনে করি।
শমসের মবিন চৌধুরী, ঢাকা।
No comments