পাকিস্তান-সরকার ও গণতন্ত্রের ভাগ্য একসূত্রে গাঁথা by আয়েশা সিদ্দিকা
পাকিস্তানের জনমত স্পষ্টত দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। এক পক্ষ মনে করছে, জারদারি ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি ষড়যন্ত্রের শিকার। অন্যপক্ষ মনে করছে, প্রেসিডেন্টকে আটকে ফেলতে পারলে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হবে। তবে প্রকৃত সত্যটা হচ্ছে, সুপ্রিম কোর্র্টের এই অ্যাক্টিভিজমটা ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে পরিচালিত।
এটা দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যতাড়িত নয়। স্পষ্টত সুপ্রিম কোর্ট এক পক্ষের ক্ষতির বিনিময়ে অপর পক্ষের লাভের দিকে হেলে পড়েছে। সম্প্রতি শরীফ ভাইদের কথিত দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত ১১ কোটি ৫০ লাখ রুপি ফেরত নেওয়ার বিষয়টি তদন্ত করার আদেশ দেন আদালত
১৩ ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্টের শুনানি অধিকাংশ মানুষকে হতাশ করেছে। সরকারকে রেয়াত দেওয়ার মতো সুপ্রিম কোর্টের কোনো মনমর্জি নেই দেখে গণতন্ত্রের বন্ধুরা উদ্বিগ্ন হয়েছেন। অপর পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট সরকারপ্রধানকে ছেঁটে ফেলার কাজটি ত্বরান্বিত করছে না দেখে শত্রুরাও সুপ্রিম কোর্র্টের ওপর নাখোশ। বাস্তবিক পক্ষে, সুপ্রিম কোর্র্টের শুনানির পরপরই ইমরান খান এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে সরকার দেশ শাসনের নৈতিক অধিকার হারিয়েছে বলে চেঁচামেচি করেছেন।
তবে উভয় পক্ষই বোঝেন যে, এখানে টার্গেটটা আসলে প্রেসিডেন্ট; প্রধানমন্ত্রী নন। প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির কথিত অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ সুইস ব্যাংকে জমা রাখার বিষয় পুনঃতদন্ত করার জন্য সে দেশের কাছে চিঠি লিখতে অস্বীকৃতি জানানোর পর তার বিরুদ্ধে এই আদালত অবমাননার মামলাটি রুজু হয়। সাবেক সামরিক একনায়ক এবং বেনজির ভুট্টোর মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন অর্ডিন্যান্সের অংশ হিসেবে তৎকালীন পারভেজ মোশাররফ সরকার সুইজারল্যান্ড থেকে অর্থ ফেরত পাওয়ার মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়।
এ ব্যাপারে পাকিস্তানের জনমত স্পষ্টত দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। এক পক্ষ মনে করছে, জারদারি ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি ষড়যন্ত্রের শিকার। অন্যপক্ষ মনে করছে, প্রেসিডেন্টকে আটকে ফেলতে পারলে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হবে। তবে প্রকৃত সত্যটা হচ্ছে, সুপ্রিম কোর্র্টের এই অ্যাক্টিভিজমটা ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে পরিচালিত। এটা দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যতাড়িত নয়। স্পষ্টত সুপ্রিম কোর্ট এক পক্ষের ক্ষতির বিনিময়ে অপর পক্ষের লাভের দিকে হেলে পড়েছে। সম্প্রতি শরীফ ভাইদের কথিত দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত ১১ কোটি ৫০ লাখ রুপি ফেরত নেওয়ার বিষয়টি তদন্ত করার আদেশ দেন আদালত। অনেকেই মনে করেন, নিহত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো ও তার স্বামী প্রেসিডেন্ট জারদারির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্র্টের অ্যাক্টিভিজমের পেছনে মহাশক্তিমান নিরাপত্তা এস্টাবলিশমেন্টের হাত রয়েছে। এখানে রাজনৈতিক সরকারকে আছড়ে ফেলে দেওয়ার জন্যই আদালতকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে ধারণা তৈরি হয়েছে। আর সামরিক বাহিনীর দৃষ্টিতে রাজনৈতিক সরকার নীতিভ্রষ্ট।
আদালত অবমাননা কার্যক্রম শুরুর আগে মেমোগেট স্ক্যান্ডাল নামে পরিচিতি পাওয়া আরও একটি মামলা চলছিল। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এক মার্কিন নাগরিক প্রেসিডেন্ট জারদারি ও যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত হুসাইন হাক্কানী দেশটির সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ওয়াশিংটনকে উস্কানি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ আনেন এবং এর ভিত্তিতেই মামলা দায়ের হয়। মামলাটি এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। তবে অভিযোগকারী আমেরিকার নাগরিক মনসুর এজাজ আদালতে হাজির হতে বারবার অস্বীকৃতি জানানোর পর মামলাটির আকর্ষণ এখন অনেকটা কমে গেছে। সম্প্রতি আদালত এজাজকে ভিডিওলিংকের মাধ্যমে তার বক্তব্য রেকর্ড করার সুযোগ দিয়েছে। এটা পাকিস্তানের আদালতের বেলায় নজিরবিহীন। এখানে দেখা যাচ্ছে, অভিযুক্তকে শাস্তি দেওয়ার জন্য এক মামলায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত যে ধরনের উদারতা দেখাচ্ছে, একই ধরনের অন্য মামলায় তা দেখাচ্ছে না।
পিপিপি সরকার দৃশ্যত এই আইনি লড়াইটা করার জন্য একটি রাজনৈতিক পদ্ধতি বেছে নিয়েছে। যেমন, তারা এ মামলার জন্য একজন বিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগের পরিবর্তে আইন বিষয়ে অপেক্ষাকৃত কম পারদর্শী আইনজীবী আইতাজ আহসানকে নিযুক্ত করেছে। আইতাজ আহসান ২০০৭-০৮ সালের আইনজীবী আন্দোলনের প্রথম সারির ভূমিকা পালনের জন্য পরিচিত। অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মনে করেন, আইতাজ আহসানের নির্বাচনটা আসলে তার প্রধান বিচারপতি ও উচ্চ আদালতের বিচারকদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সুসম্পর্কের কারণে। তবে আদালতে সওয়াল-জবাব চলাকালে আইতাজ আহসানকে প্রধান বিচারপতি প্রশ্রয় দিলেও তার আইনি যুক্তি মোয়াক্কেলের পক্ষে পোক্ত হয়েছে এবং আদালত তার বক্তব্যে সন্তুষ্ট_ এমনটা কিন্তু আদালতের মনোভাবে ফুটে ওঠেনি।
এ পর্যায়ে সুপ্রিম কোর্ট ও সরকারের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। অন্য কথায়, প্রেসিডেন্টের ইমিউনিটি রয়েছে_ এ যুক্তিতে সুইচ আদালতের কাছে চিঠি লিখতে অস্বীকৃতি জানানোয় জিলানির ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়া এক প্রকার নিশ্চিত। কতিপয় সূত্র মনে করছে, সেনাবাহিনীপ্রধান ও আইএসআইপ্রধান তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য গিলানির ওপর চটে আছেন এবং এ কারণেই তার অপসারণটা অবধারিত। যদিও পরে গিলানি তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিয়েছেন, তবে সামরিক বাহিনীকে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে রাষ্ট্র বলে প্রধানমন্ত্রী যে উক্তি করেছিলেন তা সংসদীয় কার্যবিবরণীর অংশ হয়ে গেছে। এটা ছোট কাজ নয়। তবে বৃহত্তর ইস্যুটা হলো জারদারিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া। কারণ, জারদারি তার ক্ষমতায় থাকাকালীন এই চার বছরে দেশটির রাজনৈতিক সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই চালিয়েছেন। গিলানিকে অপসারণের পর জারদারির প্রতিপক্ষ তাকে ইমপিচ করার জন্য আন্দোলন জোরদার করবে।
কেউ কেউ মনে করতে পারেন, তার অপসারণের মধ্য দিয়ে দুর্নীতি দূর হবে না ঠিকই, তবে ২০১৩ সালে আশফাক কায়ানি সেনাপ্রধান হিসেবে অবসর নেওয়ার পর নতুন সেনাপ্রধান নির্বাচনে দূর থেকেও জারদারি প্রভাব খাটানোর অবস্থায় থাকবেন না। পাকিস্তানের সেনা সদরের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নড়বড়ে করে দিয়েছেন যে জারদারি, তাকে নিয়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না।
এ মাসেই সুপ্রিম কোর্র্টে গিলানির ভাগ্য নির্ধারিত হবে। ভবিষ্যৎ বক্তাদের মতে, এর মাধ্যমে সাধারণভাবে সরকার ও গণতন্ত্রের ভবিষ্য}ও নির্ধারণ হয়ে যাবে।
আয়েশা সিদ্দিকা :ইসলামাবাদভিত্তিক লেখিকা, পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর ওপর গ্রন্থ রচয়িতা; হিন্দুস্তান টাইমস থেকে ভাষান্তর সুভাষ সাহা
১৩ ফেব্রুয়ারিতে সুপ্রিম কোর্টের শুনানি অধিকাংশ মানুষকে হতাশ করেছে। সরকারকে রেয়াত দেওয়ার মতো সুপ্রিম কোর্টের কোনো মনমর্জি নেই দেখে গণতন্ত্রের বন্ধুরা উদ্বিগ্ন হয়েছেন। অপর পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট সরকারপ্রধানকে ছেঁটে ফেলার কাজটি ত্বরান্বিত করছে না দেখে শত্রুরাও সুপ্রিম কোর্র্টের ওপর নাখোশ। বাস্তবিক পক্ষে, সুপ্রিম কোর্র্টের শুনানির পরপরই ইমরান খান এক সংবাদ সম্মেলন ডেকে সরকার দেশ শাসনের নৈতিক অধিকার হারিয়েছে বলে চেঁচামেচি করেছেন।
তবে উভয় পক্ষই বোঝেন যে, এখানে টার্গেটটা আসলে প্রেসিডেন্ট; প্রধানমন্ত্রী নন। প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানি প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির কথিত অবৈধ উপায়ে অর্জিত সম্পদ সুইস ব্যাংকে জমা রাখার বিষয় পুনঃতদন্ত করার জন্য সে দেশের কাছে চিঠি লিখতে অস্বীকৃতি জানানোর পর তার বিরুদ্ধে এই আদালত অবমাননার মামলাটি রুজু হয়। সাবেক সামরিক একনায়ক এবং বেনজির ভুট্টোর মধ্যে সমঝোতার ভিত্তিতে ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশন অর্ডিন্যান্সের অংশ হিসেবে তৎকালীন পারভেজ মোশাররফ সরকার সুইজারল্যান্ড থেকে অর্থ ফেরত পাওয়ার মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়।
এ ব্যাপারে পাকিস্তানের জনমত স্পষ্টত দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। এক পক্ষ মনে করছে, জারদারি ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি ষড়যন্ত্রের শিকার। অন্যপক্ষ মনে করছে, প্রেসিডেন্টকে আটকে ফেলতে পারলে সুশাসন প্রতিষ্ঠার পথ প্রশস্ত হবে। তবে প্রকৃত সত্যটা হচ্ছে, সুপ্রিম কোর্র্টের এই অ্যাক্টিভিজমটা ব্যক্তিবিশেষের বিরুদ্ধে পরিচালিত। এটা দুর্নীতিমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যতাড়িত নয়। স্পষ্টত সুপ্রিম কোর্ট এক পক্ষের ক্ষতির বিনিময়ে অপর পক্ষের লাভের দিকে হেলে পড়েছে। সম্প্রতি শরীফ ভাইদের কথিত দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত ১১ কোটি ৫০ লাখ রুপি ফেরত নেওয়ার বিষয়টি তদন্ত করার আদেশ দেন আদালত। অনেকেই মনে করেন, নিহত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো ও তার স্বামী প্রেসিডেন্ট জারদারির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্র্টের অ্যাক্টিভিজমের পেছনে মহাশক্তিমান নিরাপত্তা এস্টাবলিশমেন্টের হাত রয়েছে। এখানে রাজনৈতিক সরকারকে আছড়ে ফেলে দেওয়ার জন্যই আদালতকে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে ধারণা তৈরি হয়েছে। আর সামরিক বাহিনীর দৃষ্টিতে রাজনৈতিক সরকার নীতিভ্রষ্ট।
আদালত অবমাননা কার্যক্রম শুরুর আগে মেমোগেট স্ক্যান্ডাল নামে পরিচিতি পাওয়া আরও একটি মামলা চলছিল। পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এক মার্কিন নাগরিক প্রেসিডেন্ট জারদারি ও যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত হুসাইন হাক্কানী দেশটির সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ওয়াশিংটনকে উস্কানি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ আনেন এবং এর ভিত্তিতেই মামলা দায়ের হয়। মামলাটি এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন। তবে অভিযোগকারী আমেরিকার নাগরিক মনসুর এজাজ আদালতে হাজির হতে বারবার অস্বীকৃতি জানানোর পর মামলাটির আকর্ষণ এখন অনেকটা কমে গেছে। সম্প্রতি আদালত এজাজকে ভিডিওলিংকের মাধ্যমে তার বক্তব্য রেকর্ড করার সুযোগ দিয়েছে। এটা পাকিস্তানের আদালতের বেলায় নজিরবিহীন। এখানে দেখা যাচ্ছে, অভিযুক্তকে শাস্তি দেওয়ার জন্য এক মামলায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত যে ধরনের উদারতা দেখাচ্ছে, একই ধরনের অন্য মামলায় তা দেখাচ্ছে না।
পিপিপি সরকার দৃশ্যত এই আইনি লড়াইটা করার জন্য একটি রাজনৈতিক পদ্ধতি বেছে নিয়েছে। যেমন, তারা এ মামলার জন্য একজন বিজ্ঞ আইনজীবী নিয়োগের পরিবর্তে আইন বিষয়ে অপেক্ষাকৃত কম পারদর্শী আইনজীবী আইতাজ আহসানকে নিযুক্ত করেছে। আইতাজ আহসান ২০০৭-০৮ সালের আইনজীবী আন্দোলনের প্রথম সারির ভূমিকা পালনের জন্য পরিচিত। অনেক রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মনে করেন, আইতাজ আহসানের নির্বাচনটা আসলে তার প্রধান বিচারপতি ও উচ্চ আদালতের বিচারকদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সুসম্পর্কের কারণে। তবে আদালতে সওয়াল-জবাব চলাকালে আইতাজ আহসানকে প্রধান বিচারপতি প্রশ্রয় দিলেও তার আইনি যুক্তি মোয়াক্কেলের পক্ষে পোক্ত হয়েছে এবং আদালত তার বক্তব্যে সন্তুষ্ট_ এমনটা কিন্তু আদালতের মনোভাবে ফুটে ওঠেনি।
এ পর্যায়ে সুপ্রিম কোর্ট ও সরকারের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের সম্ভাবনা ক্ষীণ। অন্য কথায়, প্রেসিডেন্টের ইমিউনিটি রয়েছে_ এ যুক্তিতে সুইচ আদালতের কাছে চিঠি লিখতে অস্বীকৃতি জানানোয় জিলানির ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়া এক প্রকার নিশ্চিত। কতিপয় সূত্র মনে করছে, সেনাবাহিনীপ্রধান ও আইএসআইপ্রধান তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য গিলানির ওপর চটে আছেন এবং এ কারণেই তার অপসারণটা অবধারিত। যদিও পরে গিলানি তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিয়েছেন, তবে সামরিক বাহিনীকে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে রাষ্ট্র বলে প্রধানমন্ত্রী যে উক্তি করেছিলেন তা সংসদীয় কার্যবিবরণীর অংশ হয়ে গেছে। এটা ছোট কাজ নয়। তবে বৃহত্তর ইস্যুটা হলো জারদারিকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া। কারণ, জারদারি তার ক্ষমতায় থাকাকালীন এই চার বছরে দেশটির রাজনৈতিক সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই চালিয়েছেন। গিলানিকে অপসারণের পর জারদারির প্রতিপক্ষ তাকে ইমপিচ করার জন্য আন্দোলন জোরদার করবে।
কেউ কেউ মনে করতে পারেন, তার অপসারণের মধ্য দিয়ে দুর্নীতি দূর হবে না ঠিকই, তবে ২০১৩ সালে আশফাক কায়ানি সেনাপ্রধান হিসেবে অবসর নেওয়ার পর নতুন সেনাপ্রধান নির্বাচনে দূর থেকেও জারদারি প্রভাব খাটানোর অবস্থায় থাকবেন না। পাকিস্তানের সেনা সদরের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নড়বড়ে করে দিয়েছেন যে জারদারি, তাকে নিয়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না।
এ মাসেই সুপ্রিম কোর্র্টে গিলানির ভাগ্য নির্ধারিত হবে। ভবিষ্যৎ বক্তাদের মতে, এর মাধ্যমে সাধারণভাবে সরকার ও গণতন্ত্রের ভবিষ্য}ও নির্ধারণ হয়ে যাবে।
আয়েশা সিদ্দিকা :ইসলামাবাদভিত্তিক লেখিকা, পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর ওপর গ্রন্থ রচয়িতা; হিন্দুস্তান টাইমস থেকে ভাষান্তর সুভাষ সাহা
No comments