জনস্বাস্থ্য-চিকিৎ সায় অবহেলা ও অবহেলায় চিকিৎ সা by এ বি এম আবদুল্লাহ
সম্প্রতি অল্প সময়ের ব্যবধানে চিকিৎ সায় ‘অবহেলা’ বা ‘ভুল’জনিত কারণে রোগীর মৃত্যুর বেশ কিছু অভিযোগ মিডিয়ায় এসেছে। বরাবরের মতো এ নিয়ে রোগীর লোকদের সঙ্গে হাসপাতাল বা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের গোলযোগ, হাতাহাতি ঘটেছে, থানাপুলিশ জড়িত হয়েছে এবং হাসপাতালের চিকিৎ সক, কর্মকর্তা ও নার্সদের গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গটি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ, আর তাই বিশদ আলোচনার দাবি রাখে।
প্রথমে বলে নেওয়া দরকার, কোনো চিকিৎ সকই তাঁর রোগীকে মেরে ফেলতে চান না। তাই প্রশ্নটা এখানে হত্যার নয়, বরং অবহেলা, ভুল এবং অদক্ষতার।
ভুল যে কারোরই হতে পারে, চিকিৎ সক আলাদা নন। সব ভুলের গুরুত্বও এক রকম নয়, ভুল করে কাশির সিরাপ এক চামচ করে দেওয়া আর ভুল করে ডান কিডনির বদলে বাম কিডনি কেটে ফেলা বা এক ওষুধের বেলায় অন্য ওষুধ দেওয়া এক নয়। কিছু কিছু ভুলের জন্য কোনো অজুহাতই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই কেউ মারা গেলে যদি ডাক্তারের অদক্ষতা, অবহেলা বা অমনোযোগিতার কারণে হয়ে থাকে, তবে প্রমাণসাপেক্ষে অবশ্যই তার শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু রোগী মারা যাওয়া মানেই ভুল করা নয়। মনে রাখা দরকার, সব রোগীকে ডাক্তার ভালো করতে পারবেন না। অনেক রোগের কারণ এখনো মানুষের অজানা এবং সব রোগের চিকিৎ সা পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশেও সম্ভব হয়ে ওঠে না। আর আমাদের এখানে ভালো চিকিৎ সা ওষুধ, প্রযুক্তি বা অবকাঠামোর অভাবে অনেক সময় করা যায় না।
আমাদের চিকিৎ সাব্যবস্থা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভুলকে অনিবার্য করে তোলে। প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎ সকের সংখ্যা অনেক কম হওয়ায় তাঁদের স্বল্প সময়ে অনেক রোগী দেখতে হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে রোগীর অত্যধিক চাপ, তাই ভুলের সংখ্যা বাড়ছে। এমনকি বিশেষজ্ঞ চিকিৎ সকের সংখ্যাও রোগীর তুলনায় যথেষ্ট কম। তবে প্রত্যেকের মনে রাখা উচিত যে আমাদের চিকিৎ সকদের হাতে প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী সুস্থ হচ্ছে। তাঁদের সেবায়, দক্ষতায় অনেকে মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে আসছে। হূদেরাগের বড় বড় জটিল অপারেশনসহ কিডনি বা লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন দেশেই হচ্ছে এবং বিদেশে যাওয়ার প্রবণতাও বেশ কমে আসছে।
আমরা অবশ্যই স্বীকার করি যে চিকিৎ সকদের বিরুদ্ধে ভুল বা অবহেলার যে অভিযোগ আনা হয়, তা অনেকাংশেই সত্য। তবে এটাও ঠিক যে ভুল আর অবহেলার ধারণা অনেক সময় অজ্ঞতার কারণেও হয়ে থাকে। আবেগের বশে হোক বা স্বাভাবিক বিবেচনায় হোক, চিকিৎ সকের ভুল হয়েছে বা অবহেলা ছিল, এ ধরনের ধারণা যদি রোগীর বা তাঁর স্বজনের হয়েই থাকে তবে তাদের অবশ্যই আইনের আশ্রয় নেওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু অভিযোগ করলেই চিকিৎ সক ভুল করেছেন বলে ধরে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। তদন্তে প্রমাণিত হলে গ্রেপ্তার করাই যায় এবং শাস্তি দেওয়া উচিত, কিন্তু তার আগেই অপরাধী ঘোষণা করে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত?
অনেকে সবকিছুর জন্য চিকিৎ সকই দায়ী মনে করেন। দেখা যায়, হাসপাতালে ওষুধ নেই, বিছানাপত্র ঠিক নেই, পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই, খাবারের মান ভালো নেই, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং এগুলোর জন্যও চিকিৎ সককেই দায়ী করেন। চিকিৎ সকের দিকে আঙুল তোলার আগে তাঁর কর্মপরিধি বোঝা দরকার।
চিকিৎ সকদের দক্ষতার ক্রমাবনতির জন্য আমাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা অনেকটাই দায়ী। চিকিৎ সা শিক্ষাব্যবস্থা দিন দিন অবনতির দিকেই যাচ্ছে। মেডিকেল কলেজগুলোতে মানসম্মত শিক্ষকের অভাব রয়েছে, অনেক পদ বছরের পর বছর খালি পড়ে আছে। রাজনৈতিক আর আর্থিক কর্মকাণ্ডের ডামাডোলে অনেক শিক্ষক, এমনকি ছাত্রেরও পড়াশোনার দিকে নজর দেওয়ার সময় নেই। হাতে-কলমে শিক্ষার সুযোগ অনেক প্রতিষ্ঠানেই সীমিত, এমনকি রাজধানীর অনেক নামীদামিও প্রতিষ্ঠানেও। ঢালাও অনুমোদনের ফায়দা লোটা অনেক বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ছাত্র ভর্তি করা হয় পয়সার বিনিময়ে—এ ধরনের কথাও শোনা যায়। স্নাতকোত্তর শিক্ষার অবস্থা আরও খারাপ। রাজনৈতিক বিবেচনায় ভর্তি আর পাস করানোর অভিযোগ বাজারে চালু আছে। কিন্তু শেখানোর যোগ্যতাসম্পন্ন লোকজন দিন দিন কমে যাচ্ছে। চিকিৎ সকদের পাঠ্যক্রমে চিকিৎ সাবিষয়ক বৈজ্ঞানিক অংশটুকু যাও বা পড়ানো হয়, মানবিক দিকটা একেবারেই অবহেলিত থাকে। রোগীর সঙ্গে আচরণ, তথ্য আদান-প্রদান, সেবার মনোভাব—এগুলোর ভিত গোড়াতেই শক্ত করা দরকার, কিন্তু আমাদের ব্যবস্থায় তা হয় না। এর সঙ্গে কর্মজীবনে যোগ হয় নানা রকম হতাশা—রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, পেশাগত। সমস্যা তাই যত না চিকিৎ সকের মধ্যে, তার চেয়ে বেশি দক্ষ চিকিৎ সক তৈরি এবং চিকিৎ সাব্যবস্থায়। ভালো চিকিৎ সক তৈরির যথাযথ ব্যবস্থা না করে ভালো সেবা কি সম্ভব?
এ অবস্থা থেকে বের হওয়ার জন্য চিকিৎ সকদের অবশ্যই কিছু করণীয় আছে। যারা চিকিৎ সা পেশায় জড়িত তাদের রোগীর আস্থা অর্জন করাকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। চিকিৎ সার শুরুতেই রোগীর কথাবার্তাগুলো মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে, তাকে কিছু সময় দিয়ে ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। সম্ভব হলে রোগীকে তার অবস্থা জানাতে হবে, অনেক সময় জটিল রোগ যেমন ক্যানসার জাতীয় রোগ অথবা নিরাময়যোগ্য নয় এমন রোগ রোগীর আত্মীয়স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবকে আলাদাভাবে ডেকে জানাতে হবে। সব সমস্যার সমাধান হবে না ঠিকই কিন্তু আন্তরিকতার প্রমাণ রাখতে পারলে চিকিৎ সক ও রোগীর মাঝে দূরত্বসহ ভুল বোঝাবুঝি অনেকটাই কমে আসবে।
তবে সার্বিকভাবে এ ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকাই মুখ্য। বিএমডিসিকে আরও যথাযথ ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎ সকের ভুলের মাশুল অনেক ক্ষেত্রেই অপূরণীয় হয়ে থাকে, অন্য সব পেশায় তা নয়। তাই চিকিৎ সা খাত নিঃসন্দেহে বিশেষ বিবেচনার দাবি রাখে। চিকিৎ সাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো, বাস্তবমুখী করা, এর সমস্যাগুলো জরুরি ভিত্তিতে চিহ্নিত করা ও সমাধান করা—এ সবই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে করতে হবে। চিকিৎ সায় চিকিৎ সকের অবহেলা অবশ্যই তদন্ত করে দেখা উচিত, প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, কিন্তু তা হবে সমস্যার উপশম মাত্র। প্রতিরোধ করতে হলে সমগ্র চিকিৎ সাব্যবস্থাকে ঘিরে থাকা অবহেলার স্বরূপ উদ্ঘাটন করে তার প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে চিকিৎ সকদেরও মনে রাখতে হবে যে তাঁরা যেন নিজেদের দক্ষভাবে তৈরি করার চেষ্টা করেন, সব ঝামেলার মধ্যেও ধৈর্য, বুদ্ধিমত্তা, কর্মদক্ষতা ও সাহসিকতার সঙ্গে রোগীকে ভালোভাবে চিকিৎ সা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যান। তবেই রোগী ও চিকিৎ সকের দূরত্ব কমিয়ে আনা সম্ভব। তা না হলে একটা কমন গালি ‘কসাই’ শব্দটি শুনতেই থাকবেন।
ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ: ডিন, মেডিসিন অনুষদ, অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
ভুল যে কারোরই হতে পারে, চিকিৎ সক আলাদা নন। সব ভুলের গুরুত্বও এক রকম নয়, ভুল করে কাশির সিরাপ এক চামচ করে দেওয়া আর ভুল করে ডান কিডনির বদলে বাম কিডনি কেটে ফেলা বা এক ওষুধের বেলায় অন্য ওষুধ দেওয়া এক নয়। কিছু কিছু ভুলের জন্য কোনো অজুহাতই গ্রহণযোগ্য নয়। তাই কেউ মারা গেলে যদি ডাক্তারের অদক্ষতা, অবহেলা বা অমনোযোগিতার কারণে হয়ে থাকে, তবে প্রমাণসাপেক্ষে অবশ্যই তার শাস্তি হওয়া উচিত। কিন্তু রোগী মারা যাওয়া মানেই ভুল করা নয়। মনে রাখা দরকার, সব রোগীকে ডাক্তার ভালো করতে পারবেন না। অনেক রোগের কারণ এখনো মানুষের অজানা এবং সব রোগের চিকিৎ সা পৃথিবীর অনেক উন্নত দেশেও সম্ভব হয়ে ওঠে না। আর আমাদের এখানে ভালো চিকিৎ সা ওষুধ, প্রযুক্তি বা অবকাঠামোর অভাবে অনেক সময় করা যায় না।
আমাদের চিকিৎ সাব্যবস্থা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভুলকে অনিবার্য করে তোলে। প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎ সকের সংখ্যা অনেক কম হওয়ায় তাঁদের স্বল্প সময়ে অনেক রোগী দেখতে হচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে রোগীর অত্যধিক চাপ, তাই ভুলের সংখ্যা বাড়ছে। এমনকি বিশেষজ্ঞ চিকিৎ সকের সংখ্যাও রোগীর তুলনায় যথেষ্ট কম। তবে প্রত্যেকের মনে রাখা উচিত যে আমাদের চিকিৎ সকদের হাতে প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী সুস্থ হচ্ছে। তাঁদের সেবায়, দক্ষতায় অনেকে মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে আসছে। হূদেরাগের বড় বড় জটিল অপারেশনসহ কিডনি বা লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন দেশেই হচ্ছে এবং বিদেশে যাওয়ার প্রবণতাও বেশ কমে আসছে।
আমরা অবশ্যই স্বীকার করি যে চিকিৎ সকদের বিরুদ্ধে ভুল বা অবহেলার যে অভিযোগ আনা হয়, তা অনেকাংশেই সত্য। তবে এটাও ঠিক যে ভুল আর অবহেলার ধারণা অনেক সময় অজ্ঞতার কারণেও হয়ে থাকে। আবেগের বশে হোক বা স্বাভাবিক বিবেচনায় হোক, চিকিৎ সকের ভুল হয়েছে বা অবহেলা ছিল, এ ধরনের ধারণা যদি রোগীর বা তাঁর স্বজনের হয়েই থাকে তবে তাদের অবশ্যই আইনের আশ্রয় নেওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু অভিযোগ করলেই চিকিৎ সক ভুল করেছেন বলে ধরে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। তদন্তে প্রমাণিত হলে গ্রেপ্তার করাই যায় এবং শাস্তি দেওয়া উচিত, কিন্তু তার আগেই অপরাধী ঘোষণা করে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত?
অনেকে সবকিছুর জন্য চিকিৎ সকই দায়ী মনে করেন। দেখা যায়, হাসপাতালে ওষুধ নেই, বিছানাপত্র ঠিক নেই, পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম নেই, খাবারের মান ভালো নেই, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং এগুলোর জন্যও চিকিৎ সককেই দায়ী করেন। চিকিৎ সকের দিকে আঙুল তোলার আগে তাঁর কর্মপরিধি বোঝা দরকার।
চিকিৎ সকদের দক্ষতার ক্রমাবনতির জন্য আমাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা অনেকটাই দায়ী। চিকিৎ সা শিক্ষাব্যবস্থা দিন দিন অবনতির দিকেই যাচ্ছে। মেডিকেল কলেজগুলোতে মানসম্মত শিক্ষকের অভাব রয়েছে, অনেক পদ বছরের পর বছর খালি পড়ে আছে। রাজনৈতিক আর আর্থিক কর্মকাণ্ডের ডামাডোলে অনেক শিক্ষক, এমনকি ছাত্রেরও পড়াশোনার দিকে নজর দেওয়ার সময় নেই। হাতে-কলমে শিক্ষার সুযোগ অনেক প্রতিষ্ঠানেই সীমিত, এমনকি রাজধানীর অনেক নামীদামিও প্রতিষ্ঠানেও। ঢালাও অনুমোদনের ফায়দা লোটা অনেক বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ছাত্র ভর্তি করা হয় পয়সার বিনিময়ে—এ ধরনের কথাও শোনা যায়। স্নাতকোত্তর শিক্ষার অবস্থা আরও খারাপ। রাজনৈতিক বিবেচনায় ভর্তি আর পাস করানোর অভিযোগ বাজারে চালু আছে। কিন্তু শেখানোর যোগ্যতাসম্পন্ন লোকজন দিন দিন কমে যাচ্ছে। চিকিৎ সকদের পাঠ্যক্রমে চিকিৎ সাবিষয়ক বৈজ্ঞানিক অংশটুকু যাও বা পড়ানো হয়, মানবিক দিকটা একেবারেই অবহেলিত থাকে। রোগীর সঙ্গে আচরণ, তথ্য আদান-প্রদান, সেবার মনোভাব—এগুলোর ভিত গোড়াতেই শক্ত করা দরকার, কিন্তু আমাদের ব্যবস্থায় তা হয় না। এর সঙ্গে কর্মজীবনে যোগ হয় নানা রকম হতাশা—রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, পেশাগত। সমস্যা তাই যত না চিকিৎ সকের মধ্যে, তার চেয়ে বেশি দক্ষ চিকিৎ সক তৈরি এবং চিকিৎ সাব্যবস্থায়। ভালো চিকিৎ সক তৈরির যথাযথ ব্যবস্থা না করে ভালো সেবা কি সম্ভব?
এ অবস্থা থেকে বের হওয়ার জন্য চিকিৎ সকদের অবশ্যই কিছু করণীয় আছে। যারা চিকিৎ সা পেশায় জড়িত তাদের রোগীর আস্থা অর্জন করাকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। চিকিৎ সার শুরুতেই রোগীর কথাবার্তাগুলো মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে, তাকে কিছু সময় দিয়ে ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। সম্ভব হলে রোগীকে তার অবস্থা জানাতে হবে, অনেক সময় জটিল রোগ যেমন ক্যানসার জাতীয় রোগ অথবা নিরাময়যোগ্য নয় এমন রোগ রোগীর আত্মীয়স্বজন বা বন্ধু-বান্ধবকে আলাদাভাবে ডেকে জানাতে হবে। সব সমস্যার সমাধান হবে না ঠিকই কিন্তু আন্তরিকতার প্রমাণ রাখতে পারলে চিকিৎ সক ও রোগীর মাঝে দূরত্বসহ ভুল বোঝাবুঝি অনেকটাই কমে আসবে।
তবে সার্বিকভাবে এ ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকাই মুখ্য। বিএমডিসিকে আরও যথাযথ ও বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। চিকিৎ সকের ভুলের মাশুল অনেক ক্ষেত্রেই অপূরণীয় হয়ে থাকে, অন্য সব পেশায় তা নয়। তাই চিকিৎ সা খাত নিঃসন্দেহে বিশেষ বিবেচনার দাবি রাখে। চিকিৎ সাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো, বাস্তবমুখী করা, এর সমস্যাগুলো জরুরি ভিত্তিতে চিহ্নিত করা ও সমাধান করা—এ সবই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে করতে হবে। চিকিৎ সায় চিকিৎ সকের অবহেলা অবশ্যই তদন্ত করে দেখা উচিত, প্রমাণিত হলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, কিন্তু তা হবে সমস্যার উপশম মাত্র। প্রতিরোধ করতে হলে সমগ্র চিকিৎ সাব্যবস্থাকে ঘিরে থাকা অবহেলার স্বরূপ উদ্ঘাটন করে তার প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে চিকিৎ সকদেরও মনে রাখতে হবে যে তাঁরা যেন নিজেদের দক্ষভাবে তৈরি করার চেষ্টা করেন, সব ঝামেলার মধ্যেও ধৈর্য, বুদ্ধিমত্তা, কর্মদক্ষতা ও সাহসিকতার সঙ্গে রোগীকে ভালোভাবে চিকিৎ সা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যান। তবেই রোগী ও চিকিৎ সকের দূরত্ব কমিয়ে আনা সম্ভব। তা না হলে একটা কমন গালি ‘কসাই’ শব্দটি শুনতেই থাকবেন।
ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ: ডিন, মেডিসিন অনুষদ, অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
No comments