রাজনৈতিক সহিংসতায় বেশি ক্ষতি সরকারি দলের-১২ মার্চের কর্মসূচি

পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণার আপাতত যবনিকা ঘটেছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। কিন্তু তাতে সহিংসতার আশঙ্কা একেবারে উবে যাচ্ছে না। এর আগে বিএনপি ঢাকার পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি পিছিয়ে দিয়ে জনমনে যে স্বস্তি দিয়েছিল, এবার আওয়ামী লীগ একই কৌশল নিয়েছে।


সুতরাং সেদিক থেকে ক্ষমতাসীন দলের নীতিনির্ধারকেরা শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়েছেন। যুক্তিসংগত বাধানিষেধ সাপেক্ষে সভা-সমাবেশ করার অধিকার দেশের সংবিধান সবার জন্য সমভাবে নিশ্চিত করেছে। কিন্তু বিরোধী দল অব্যাহতভাবে সংসদ বয়কট করে সভা-সমাবেশ, মিছিল, অবস্থান ধর্মঘটসর্বস্ব কর্মসূচি দেওয়ার যে সংস্কৃতি গড়ে তুলেছে, তা অবশ্যই পরিহার করতে হবে। এর কারণ যদি সংবিধান বা আইনের কাঠামো বা অন্যত্র থেকে থাকে, তাহলে তা-ও খোলামন নিয়ে চিহ্নিত করা দরকার।
আর দুই বছর পরের সাধারণ নির্বাচনেও একটি বিরোধী দল বেরোবে। কিন্তু তাদের মুখ্য কাজ যদি হয় সংসদ বর্জন করা, তাহলে গণতন্ত্রের মৌল রীতিনীতিই লঙ্ঘিত হবে। বিরোধী দল জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলনের চিন্তা বাদ দিয়েছে বলে মনে হয় না। ক্ষমতাসীনদের অসহিষ্ণুতাও প্রকট। তারা আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে হঠকারিতার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু এ-ও সত্য, এটা বহাল থাকলেও বিরোধী দল সংসদ কার্যকর করতে আগ্রহী থাকত না। এর প্রমাণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোর পরেও বিরোধী দল সংসদ পরিত্যাগ করেছে। আর সরকারি দল বিরোধী দলের প্রতি ন্যূনতম সহনশীলতা, সহমর্মিতা কিংবা শ্রদ্ধাশীল থাকার তেমন কোনো প্রচেষ্টা চালিয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না। ক্ষমতাসীন দল দাবি করতে পারে না যে তারা বিরোধী দলের প্রতি শুভেচ্ছা কিংবা উদারতা দেখাতে গিয়ে দারুণ হোঁচট খেয়েছে।
বিএনপির ১২ মার্চের কর্মসূচি সামনে রেখে উভয় তরফে রেষারেষি ও যুদ্ধংদেহী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ এখনো কম নয়। বিএনপি এ রকম বড় সমাবেশ করে চটজলদি কী অর্জন করবে, তা স্পষ্ট নয়। তবে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা স্বীকার করছেন যে তাঁরা যেসব কারণে মাঠে থাকতে চাইছেন তার বড় উদ্দেশ্য হলো তাঁদের কথায় ‘অরাজকতা’ ঠেকানো। বিএনপির অভিযোগ, বিরোধী দলের কর্মসূচিতে বাধা দেওয়াই তাঁদের লক্ষ্য। এ জন্য মহানগর আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের ব্যানারে এসব কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে। তবে যে দল যে নামেই কর্মসূচি দিক না কেন, জনগণ লক্ষ রাখবে ‘বৃক্ষ তোমার নাম কী, ফলে পরিচয়’। উভয় পক্ষের উচিত হবে কাদা-ছোড়াছুড়ি ও উসকানিমূলক মন্তব্য শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা। সরকারকে ‘ল্যাংড়া-লুলা’ বানানোর ঘোষণা কোনোভাবেই গণতন্ত্রের ভাষা নয়। এটা একটা উসকানি।
ইদানীং উভয় দল অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন নিয়ে আলাপ-আলোচনা শুরু করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে চলেছে। তারা যদি সত্যিই শান্তিপূর্ণভাবে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে চায়, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সংলাপ শুরু করা দরকার। যে ধরনের প্রক্রিয়ায় অনুসন্ধান কমিটি করে পাঁচজন নির্বাচন কমিশনার বাছাই করা হয়েছে, সেটা কাম্য নয়। একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের গ্যারান্টি দিতে হবে সরকারি দলকেই।

No comments

Powered by Blogger.