পবিত্র কোরআনের আলো-মুনাফিকদের ব্যাপারে শেষ বিচারের দিন সঠিক ফয়সালা হবে

১৪১. আল্লাযীনা ইয়াতারাব্বাসূনা বিকুম; ফাইন কা-না লাকুম ফাতহুম্ মিনাল্লাহি ক্বা-লূ আলাম নাকুম্ মাআ'কুম; ওয়াইন কা-না লিল্কা-ফিরীনা নাসীবুন ক্বা-লূ আলাম নাছতাহ্উইয্ আ'লাইকুম ওয়ানাম্না'কুম্ মিনাল মু'মিনীনা; ফাল্লাহু ইয়াহ্কুমু বাইনাকুম ইয়াওমাল কি্বইয়ামাতি; ওয়া লান ইয়্যাজআ'লাল্লা-হু লিলকা-ফিরীনা আ'লাল মু'মিনীনা ছাবীলা।


১৪২. ইন্নাল মুনা-ফিক্বীনা ইউখা-দিঊ'নাল্লা-হা ওয়া হুয়া খা-দিউ'হুম; ওয়া ইযা ক্বা-মূ ইলাস্সালাতি ক্বা-মূ কুছা-লা; ইউরা-ঊ'নান্ না-ছা ওয়ালা ইয়ায্কুরূনাল্লা-হা ইল্লা ক্বালীলা।
১৪৩. মুযাবযাবীনা বাইনা যা-লিকা; লা ইলা হা-উলায়ি ওয়া লা ইলা হা-উলায়ি; ওয়া মান ইয়্যুদ্বলিলিল্লা-হু ফালান তাজিদা লাহূ ছাবীলা।
[সুরা : আন নিসা, আয়াত : ১৪১-১৪৩]
অনুবাদ
১৪১. যারা তোমাদের ব্যাপারে সব সময়ই প্রতীক্ষায় থাকে। যদি আল্লাহর তরফ থেকে তোমাদের বিজয় চলে আসে তখন এরা বলবে, কেন আমরা কি তোমাদের পক্ষে ছিলাম না? আবার যখন কোনো অংশে কাফিরদের বিজয় এসে যায় তখন এরা বলে, আমরা কি তোমাদের ওপর বিজয়ী হচ্ছিলাম না? এবং আমরা কি তোমাদের মুসলমানদের হাত থেকে রক্ষা করিনি? সুতরাং জেনে রাখো, শেষ বিচারের দিন আল্লাহ তোমাদের উভয়ের মাঝে ফয়সালা শুনিয়ে দেবেন। আর সেদিন আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের বিরুদ্ধে এ কাফিরদের কোনো অজুহাত পেশ করার পথ অবশিষ্ট রাখবেন না।
১৪২. অবশ্যই মুনাফিকরা আল্লাহ তায়ালাকে ধোঁকা দেয়, আর আল্লাহ সেই ধোঁকাবাজির প্রতিফল তাদের প্রদান করেন। এরা যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন আলস্যভরে দাঁড়ায়, আর তারা কেবল মানুষকে দেখায়, এরা আল্লাহ তায়ালাকে খুব কমই স্মরণ করে।
১৪৩. এরা কুফরি ও ইমানের মাঝে দোদুল্যমান। এরা না এদিকে না ওদিকে। আপনি কখনোই তাকে পথ দেখাতে পারবেন না, যাকে আল্লাহ পাপের পরিণতি হিসেবে গোমরাহ করে দিয়েছেন।
ব্যাখ্যা
এ আয়াতগুলো মুনাফিকদের ব্যাপারে নাজিল হয়েছে। এখানে মুনাফিকদের চরিত্র অনেকখানি স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এদের একটা বৈশিষ্ট্য হলো, এরা মুসলমানদের ভাগ্যের ব্যাপারে অপেক্ষা করে থাকে। যখন বিজয় মুসলমানদের পক্ষে আসে তখন বলে, আমরা তো তোমাদের সঙ্গেই ছিলাম, সুতরাং গনিমতের মাল ইত্যাদিতে আমাদের অংশ থাকা উচিত। আবার যখন মানসিক কোনো বিজয় কাফিরদের ভাগে এসে যায় তখন ওরা বলে, আমরা তো তোমাদের ওপর বিনয়ী হয়েই গিয়েছিল। আমরা তোমাদের মুসলমানদের হাত থেকে রক্ষা করেছি। এভাবে এরা দুদিক থেকেই সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করত। এরা ছিল ইসলাম এবং মুসলমানদের জন্য খুবই বিপজ্জনক। এরা মুসলমানের রূপ ধরে থাকত এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফেরদের পক্ষে কাজ করত। কিন্তু উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে এদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যেত না। এদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ বলছেন, শেষ বিচারের দিন আল্লাহ তোমাদের উভয়ের মাঝে ফয়সালা শুনিয়ে দেবেন। সেদিন কিন্তু তারা আর নিজেদের অপকর্ম লুকানোর সুযোগ পাবে না। সেদিন আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের বিরুদ্ধে এ কাফিরদের কোনো অজুহাত পেশ করার পথ অবশিষ্ট রাখবেন না।
মুনাফিকদের অন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তারা ধোঁকাবাজ। এরা খোদ আল্লাহকেই ধোঁকা দেওয়ার চেষ্টা করে। সংগত কারণেই আল্লাহ তাদের ধোঁকা তাদের প্রতিই ফেরত দেন। তারা যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন আলস্যভরে দাঁড়ায়। কারণ তারা তো নামাজে দাঁড়ায় মানুষকে দেখানোর জন্য। এরা আল্লাহকে স্মরণ করে না এবং আল্লাহর প্রতি কোনো দায়িত্ববোধও ধারণ করে না। এরা কুফরি ও ইমানের মধ্যে দোদুল্যমান অবস্থায় ঝুলে আছে। এরা এমনই হতভাগ্য যে আল্লাহর রাসুল এদের পথ দেখাতে পারবেন না। কারণ এরা নিজের অপকর্মের মাধ্যমেই হেদায়েত পথ বন্ধ করে রেখেছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.