পবিত্র কোরআনের আলো-নবী ও মুমিনরা আত্মীয়তার অজুহাতে সত্য ও ন্যায় থেকে বিচ্যুত হতে পারেন না
১১৩. মা কা-না লিন্নাবিয়্যি ওয়াল্লাযীনা আমানূ আনইয়্যাছ্তাগফিরূ লিলমুশ্রিকীনা ওয়া লাও কা-নূ ঊলী ক্বুরবা- মিম্ বা'দি মা- তাবাইয়্যানা লাহুম আন্নাহুম আসহা-বুল জাহীম। ১১৪. ওয়া মা- কা-নাছ্তিগ্ফা-রু ইবরাহীমা লিআবীহি ইল্লা- আ'ন-ম্মাওই'দাতিন ওয়্যাআ'দাহা- ইয়্যা-হু; ফালাম্মা- তাবাইয়্যানা লাহূ আন্নাহূ আ'দুওয়্যুন লিল্লাহি তাবার্রাআ মিনহু; ইন্না ইবরাহীমা লাআওয়্যা-হুন হালীম।
১১৫. ওয়া মা- কা-নাল্লা-হু লিইউদ্বিল্লা ক্বাওমাম্ বা'দা ইয্ হাদা-হুম হাত্তা- ইউবায়্যিনা লাহুম্ মা- ইয়াত্তাক্বূন; ইন্নাল্লাহা বিকুলি্ল শাইয়িন আ'লীম। [সুরা : আত্ তাওবা, আয়াত : ১১৩-১১৫]
অনুবাদ : ১১৩. নবী ও মুমিনদের পক্ষে এটা শোভনীয় নয় যে তারা মুশরিকদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, যদি তারা আত্মীয়স্বজনও হয়ে থাকে। যেহেতু (তাদের অবস্থানের কারণেই) এটা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে তারা জাহান্নামি।
১১৪. আর ইব্রাহিম তাঁর পিতার জন্য যে মাগফিরাত প্রার্থনা করেছিলেন, এর কারণ তিনি পিতাকে এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। পরে যখন তাঁর কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল যে তাঁর পিতা আল্লাহর দুশমন; তখন তিনি পিতার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন। ইব্রাহিম তো অত্যন্ত কোমল-হৃদয় ও সহনশীল মানুষ ছিলেন।
১১৫. আল্লাহ এমন নন যে কোনো সম্প্রদায়কে হেদায়েত দান করার পর আবার বিপথগামী করে দেবেন। এটা এ পর্যন্ত নয়, যতক্ষণ তাদের কাছে স্পষ্ট করে দেওয়া হবে কোন কোন জিনিস থেকে তাদের সতর্ক থাকতে হবে।
ব্যাখ্যা : ১১৩ নম্বর আয়াতের শানেনুজুল হিসেবে বুখারি ও মুসলিম শরিফে বর্ণিত হয়েছে যে নবী (সা.)-এর চাচা আবু তালিব তাঁকে লালন-পালন করেছিলেন এবং নবুয়ত লাভের পরও তাঁকে সর্বাত্মক সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য রক্ষা করার অজুহাতে তিনিও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইসলাম গ্রহণ থেকে বিরতই ছিলেন। মৃত্যুকালে নবী (সা.) তাঁকে কলেমা পড়ে ইসলাম গ্রহণ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু তখন আবু জাহল প্রমুখ মুশরিক কুরাইশ সর্দার তীব্র বিরোধিতার মাধ্যমে তাঁকে এ কাজে বাধা দেয়। এতে প্রভাবিত হয়ে তিনি রাসুল (সা.)-এর ইচ্ছা রক্ষা করেননি। এর পরও রাসুল (সা.) তাঁর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছিলেন এবং বলছিলেন, আমাকে যতক্ষণ পর্যন্ত নিষেধ না করা হয় ততক্ষণ আমি আমার চাচার নামে ক্ষমা প্রার্থনা করতেই থাকব। এর পরিপ্রেক্ষিতে এ আয়াতটি নাজিল হয়। এই আয়াতের মাধ্যমে মুশরিক হিসেবে আবু তালিবের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা নিষিদ্ধ হয়ে গেল। রাসুল (সা.)-এর চাচা আবু তালিব যে শুধু তাঁর প্রতি স্নেহপ্রবণ ছিলেন তা-ই নয়, ইসলাম প্রচারে সহযোগিতা করার জন্যও তাঁকে অনেক দুঃখ-কষ্ট সইতে হয়েছিল। সে জন্য তাঁর প্রতি রাসুল (সা.)-এর সমবেদনা ও অনুরাগ খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু যেহেতু তিনি ইসলাম গ্রহণ করেননি, সেহেতু মুশরিক হিসেবে তাঁর জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমাপ্রার্থনা সংগত নয়। অনুরূপভাবে এই আয়াতের মাধ্যমে ক্ষমাপ্রার্থনা নিষিদ্ধ হয়ে গেছে সেসব সাহাবির পিতা-মাতা বা আত্মীয়স্বজনের জন্য, যাঁরা মানবিক দুর্বলতার কারণেই তা করে আসছিলেন। এর মাধ্যমে ইসলাম ও 'শিরক'-এর মধ্যে ফারাক স্পষ্টতর করা হয়েছে। ১১৪ নম্বর আয়াতে হজরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর মুশরিক পিতার নামে মাগফিরাতের দোয়া করেছিলেন_এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে যুক্তি খণ্ডন করা হয়েছে। খোদ রাসুল (সা.)সহ ইসলামের প্রাথমিক যুগে যাঁরা মুসলমান হয়েছিলেন, তাঁদের মৃত পূর্বপুরুষ ও আত্মীয়স্বজনরা মুশরিক হিসেবেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তাঁরা তাঁদের মৃত আত্মীয়স্বজনদের জন্য মাগফিরাত কামনা করতেন এবং যুক্তি হিসেবে উল্লেখ করতেন যে হজরত ইব্রাহিম (আ.) তো তাঁর মুশরিক পিতার নামে মাগফিরাত কামনা করেছিলেন। এই আয়াতে বলা হয়েছে, হজরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর মুশরিক পিতার জন্য দোয়া করার ওয়াদা করেছিলেন। পরে তিনি তাঁর পিতাকে আল্লাহর পথে আনতে ব্যর্থ হয়ে তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন। ১১৫ নম্বর আয়াতের মর্মার্থ হলো, কোনো মুশরিকের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা জায়েজ নয়, এ মর্মে যেহেতু এ পর্যন্ত কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশ ছিল না, সেহেতু এর আগে কোনো মুশরিকের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করাটা গুনাহের কাজ হয়নি।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
অনুবাদ : ১১৩. নবী ও মুমিনদের পক্ষে এটা শোভনীয় নয় যে তারা মুশরিকদের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে, যদি তারা আত্মীয়স্বজনও হয়ে থাকে। যেহেতু (তাদের অবস্থানের কারণেই) এটা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে তারা জাহান্নামি।
১১৪. আর ইব্রাহিম তাঁর পিতার জন্য যে মাগফিরাত প্রার্থনা করেছিলেন, এর কারণ তিনি পিতাকে এর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। পরে যখন তাঁর কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল যে তাঁর পিতা আল্লাহর দুশমন; তখন তিনি পিতার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করলেন। ইব্রাহিম তো অত্যন্ত কোমল-হৃদয় ও সহনশীল মানুষ ছিলেন।
১১৫. আল্লাহ এমন নন যে কোনো সম্প্রদায়কে হেদায়েত দান করার পর আবার বিপথগামী করে দেবেন। এটা এ পর্যন্ত নয়, যতক্ষণ তাদের কাছে স্পষ্ট করে দেওয়া হবে কোন কোন জিনিস থেকে তাদের সতর্ক থাকতে হবে।
ব্যাখ্যা : ১১৩ নম্বর আয়াতের শানেনুজুল হিসেবে বুখারি ও মুসলিম শরিফে বর্ণিত হয়েছে যে নবী (সা.)-এর চাচা আবু তালিব তাঁকে লালন-পালন করেছিলেন এবং নবুয়ত লাভের পরও তাঁকে সর্বাত্মক সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন। কিন্তু পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য রক্ষা করার অজুহাতে তিনিও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ইসলাম গ্রহণ থেকে বিরতই ছিলেন। মৃত্যুকালে নবী (সা.) তাঁকে কলেমা পড়ে ইসলাম গ্রহণ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছিলেন। কিন্তু তখন আবু জাহল প্রমুখ মুশরিক কুরাইশ সর্দার তীব্র বিরোধিতার মাধ্যমে তাঁকে এ কাজে বাধা দেয়। এতে প্রভাবিত হয়ে তিনি রাসুল (সা.)-এর ইচ্ছা রক্ষা করেননি। এর পরও রাসুল (সা.) তাঁর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করছিলেন এবং বলছিলেন, আমাকে যতক্ষণ পর্যন্ত নিষেধ না করা হয় ততক্ষণ আমি আমার চাচার নামে ক্ষমা প্রার্থনা করতেই থাকব। এর পরিপ্রেক্ষিতে এ আয়াতটি নাজিল হয়। এই আয়াতের মাধ্যমে মুশরিক হিসেবে আবু তালিবের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা নিষিদ্ধ হয়ে গেল। রাসুল (সা.)-এর চাচা আবু তালিব যে শুধু তাঁর প্রতি স্নেহপ্রবণ ছিলেন তা-ই নয়, ইসলাম প্রচারে সহযোগিতা করার জন্যও তাঁকে অনেক দুঃখ-কষ্ট সইতে হয়েছিল। সে জন্য তাঁর প্রতি রাসুল (সা.)-এর সমবেদনা ও অনুরাগ খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু যেহেতু তিনি ইসলাম গ্রহণ করেননি, সেহেতু মুশরিক হিসেবে তাঁর জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমাপ্রার্থনা সংগত নয়। অনুরূপভাবে এই আয়াতের মাধ্যমে ক্ষমাপ্রার্থনা নিষিদ্ধ হয়ে গেছে সেসব সাহাবির পিতা-মাতা বা আত্মীয়স্বজনের জন্য, যাঁরা মানবিক দুর্বলতার কারণেই তা করে আসছিলেন। এর মাধ্যমে ইসলাম ও 'শিরক'-এর মধ্যে ফারাক স্পষ্টতর করা হয়েছে। ১১৪ নম্বর আয়াতে হজরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর মুশরিক পিতার নামে মাগফিরাতের দোয়া করেছিলেন_এ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে যুক্তি খণ্ডন করা হয়েছে। খোদ রাসুল (সা.)সহ ইসলামের প্রাথমিক যুগে যাঁরা মুসলমান হয়েছিলেন, তাঁদের মৃত পূর্বপুরুষ ও আত্মীয়স্বজনরা মুশরিক হিসেবেই মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তাঁরা তাঁদের মৃত আত্মীয়স্বজনদের জন্য মাগফিরাত কামনা করতেন এবং যুক্তি হিসেবে উল্লেখ করতেন যে হজরত ইব্রাহিম (আ.) তো তাঁর মুশরিক পিতার নামে মাগফিরাত কামনা করেছিলেন। এই আয়াতে বলা হয়েছে, হজরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর মুশরিক পিতার জন্য দোয়া করার ওয়াদা করেছিলেন। পরে তিনি তাঁর পিতাকে আল্লাহর পথে আনতে ব্যর্থ হয়ে তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন। ১১৫ নম্বর আয়াতের মর্মার্থ হলো, কোনো মুশরিকের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা জায়েজ নয়, এ মর্মে যেহেতু এ পর্যন্ত কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশ ছিল না, সেহেতু এর আগে কোনো মুশরিকের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করাটা গুনাহের কাজ হয়নি।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments