ভাঙন-স্বপ্নদ্বীপ ভোলাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসুন by নেয়ামত উল্যাহ
স্বপ্নদ্বীপ ভোলা। দুর্গম দ্বীপ। চারপাশে জল আর জল। এ দ্বীপকে, একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ জেলাকে রক্ষা করতে ভোলাবাসী আন্দোলনে নেমেছে। আমাদের সরকারের উচিত, জেলাটিকে রক্ষা করা—আমাদের স্বপ্নকে রক্ষা করা। শুধু টাকা দিয়ে রক্ষা করলেই চলবে না; নিজে দাঁড়িয়ে থেকে রক্ষা করা যাকে বলে, সেভাবেই রক্ষা করা উচিত।
কারণ ভোলার সাধারণ মানুষ, ভোলা শেষ হয়ে গেলে যাদের আর যাওয়ার কোনো স্থান নেই, তারা এবং যারা ভোলাকে ভালোবাসেন, তাঁরাই আন্দোলন করছেন মেঘনা-তেঁতুলিয়া-বুড়া গৌরাঙ্গ নদীর আগ্রাসী ছোবল থেকে রক্ষার জন্য। ভাঙন প্রতিরোধে যৎসামান্য কাজ যে হচ্ছে না তা নয়, হচ্ছে—কিন্তু তা হচ্ছে ক্ষমতাসীন একটি পক্ষকে লুটপাটের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য। যেন লুটেরারা ভোলার বাইরের বড় শহরে একাধিক বাড়ি গড়তে পারে, ব্যাংক ব্যালান্স ও ব্যবসাপাতি গড়তে পারেন। ভোলাকে রক্ষার নামে নিজেদের আখের গোছাচ্ছেন, যারা নিজেদের ক্ষমতাসীন নেতাদের আত্মীয় মনে করেন; যাঁরা মুহূর্তেই ভোলার ভুখা-নাঙ্গাদের স্বপ্ন মুহূর্তেই ধ্বংস করতে পারেন।
১২ নভেম্বর ১৯৭০ সাল। ভয়ংকর জলোচ্ছ্বাস ভোলার দেড় লাখ মানুষের জীবনসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস করেছে। ওই জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের করুণ চিত্র বঙ্গবন্ধু স্বচক্ষে দেখেছেন। আর তাই স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ভোলার চারপাশে ২৫০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করেছেন। ভোলা ছিল এক ফসলি। এখন তিন ফসলি। ভোলায় প্রতিবছর শত শত মেট্রিক টন খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকে। ওই ধান জেলার বাইরে যায়। ভোলায় ৬৫ হাজার থেকে ৭০ হাজার পুকুর আছে। আছে নদী, খাল ও উন্মুক্ত জলাশয়। এসব জলাশয়ে সঠিকভাবে মৎস্য চাষ ও রক্ষণাবেক্ষণ করলে দেশের এক-তৃতীয়াংশ মৎস্য আমিষের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। ভোলায় প্রায় ১০ লক্ষাধিক গবাদিপশু আছে। প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ ট্রাক গরু-মহিষ ভোলার বাইরে যায়। ভোলা হতে পারে দেশের সবচেয়ে বড় দুগ্ধ খামার ও মাংস উৎপাদনের এলাকা। ভোলায় আছে গ্যাসের বিপুল মজুদ। স্থানীয় ও বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ভোলায় আরও গ্যাস আছে। এ জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার। গ্যাসকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে শিল্প-কারখানা। গুরুত্বপূর্ণ জোনে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনায় ভোলার জমির মূল্য বেড়েছে কয়েক গুণ। ১ শতাংশ জমির মূল্য ১০ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ হয়েছে। একসময় ভোলায় টিনশেড বিল্ডিং ছাড়া তেমন কোনো বিল্ডিং ছিল না। এখন ১০-১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হচ্ছে শপিং মল।
ভোলাবাসী বড়ই হতভাগা। আমাদের পুরোনো কিছু বেঁচে থাকে না। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে মনপুরা গিয়ে মুগ্ধ হয়েছেন। যেখানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর শক্ত পা পড়েনি, সে পবিত্র স্থানে বঙ্গবন্ধু পা দিয়েই বুঝেছেন, এটা শান্তির স্বপ্নদ্বীপ। তিনি সেখানে একটি চিন্তানিবাস আর মনপুরাকে পর্যটন এলাকা হিসেবে নির্মাণ করতে আশা করেছিলেন। এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে মনপুরায় ইট-বালু-রড পৌঁছেছিল। কিন্তু স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি। যে জমি চিন্তানিবাসের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে, সেটিও মেঘনায় অনেক আগে বিলুপ্ত করেছে। ইতিহাস-ঐতিহ্যে ভরা এ স্বপ্নদ্বীপ আজও অবহেলিত। হয়নি পর্যটনকেন্দ্র। এমনই করে আমাদের পুরোনো স্কুল-মাদ্রাসা, মসজিদ-মন্দির, বাড়ি ও বাড়ির নকশা করা ঘর আজ মেঘনায় বিলীন। অথচ ভোলা হতে পারে পৃথিবীর সেরা পর্যটনকেন্দ্র। কারণ, এর চারপাশে জল আর জলাশয়। ওপরে নীল আকাশ। নির্মল বায়ু, যানজট ও ধোঁয়ামুক্ত।
ভোলার প্রতিটি বাড়ি একান্নবর্তী। চারপাশে ঘর, মাঝে মস্ত উঠান, একটি লম্বা দরজা, দরজায় কাছারি। আর ঘরগুলোর পেছন থেকে বাগানের শুরু। ঘরের দাওয়ায় ফল-সবজি-লতাগাছ। এসব বাড়ির নাম হাওলাদার বাড়ি, গোলদার বাড়ি, তালুকদার বাড়ি, ফরাজি বাড়ি...কত নাম! এদের মাঠ ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ, গোয়াল ভরা গরু, বাথান ভরা মহিষ আর বাড়ির খোপভর্তি কবুতর-হাঁস-মুরগি। কোনো কিছুতে কোনো কমতি নেই। শিক্ষা ও ঐতিহ্যেও এরা সমাজের মাথা। মেঘনা-তেঁতুলিয়া মুহূর্তে আমাদের এসব ঐতিহ্য, আচার-আচরণ, কালচার, বংশমর্যাদা নদীর পানিতে মিশিয়ে দেয়—ভেঙে দেয় স্বপ্ন। নষ্ট করে পারিবারিক ঐতিহ্য। যেন বর্গিরা সবকিছু লুট করে নিয়ে গেছে। ভাঙে একান্নবর্তী পরিবার।
ভোলার চারদিকে নদী, মেঘনা-তেঁতুলিয়া-ইলিশা আর বুড়া গৌরাঙ্গ। চারদিক থেকে গ্রাস করছে। এ নদীকে শাসন করতে অনেক গবেষণা হয়েছে। কিন্তু কিছু সুবিধাভোগী বারবার নদীকে শাসনের পরিবর্তে নদীকে শোষণ করেছে। কারণ, এদের প্রত্যেকের ভোলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়ি আছে। এরা সৃষ্টির শুরু থেকে সুবিধাভোগী। আমরা কষ্টের সময় ও বিপদে এদের সাহচর্যে যাই—এরা সে সুযোগে উপকারের পরিবর্তে ব্যবসা শুরু করে। এ কারণে সরকারের নদীভাঙন প্রতিরোধ বিফলে যাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কোটি কোটি টাকার ব্লক ফেলছে, ঠিকাদার ও পাউবো সেটির পূর্ণ সদ্ব্যবহার না করে চুরি করছে। কাগজে-কলমে ব্লকের প্রস্থ ২৮ মিটার। কিন্তু বাস্তবে ১০-১৮ মিটার। ব্লকের মান এমন যে লাথি দিলে ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যায়। ব্লক তৈরি হয়েছে, কিন্তু সঠিকভাবে বসানো হয়নি। জনগণের প্রশ্ন, ঠিকাদার যতই দুর্নীতির আশ্রয়ে যায়, কর্তৃপক্ষ আরও দুর্নীতির সুযোগ করে দেয় পকেট ভরার খাতিরে। আমাদের নেতারা এগুলো দেখেন, শোনেন, বোঝেন, কিন্তু রঙিন চশমা চোখে দিয়ে ঘোরেন।
ভাঙতে ভাঙতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে ভোলাবাসীর। প্রতিদিন শত শত পরিবার উদ্বাস্তু হচ্ছে। ভোলার বোরহানউদ্দিন, দৌলতখান, তজুমদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন ও মনপুরা এলাকার ৫০ কিলোমিটার ভাঙনকবলিত। এটুকু একসঙ্গে ব্লক ফেললেই ভোলার ভাঙন রক্ষা করা সম্ভব। কিন্তু ওই ৫০ কিলোমিটারে ব্লক না ফেলে দুই-এক কিলোমিটার করে ব্লক ফেলা হচ্ছে। এ কারণে প্রতিদিন শত শত একর ফসলি জমি-বাড়ি-ঘর নদীতে বিলীন হচ্ছে। ভোলা রক্ষা করতে আন্দোলনে নেমেছে ভোলাবাসী। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, যত দিন ভোলা রক্ষা না হবে, তত দিন আন্দোলন চলবে।
ভোলাবাসীর আন্দোলনে আসলে সারা দেশের মানুষেরই সমর্থন থাকা প্রয়োজন। ভোলা এখন আর শুধু মহিষ, বাথান আর রাখালের দেশ নয়; এখন ভোলা একটি গুরুত্বপূর্ণ নগর। কারণ ভোলা দেশের বৃহত্তর ধান-পান-সুপারি উৎপাদনকারী জেলা, ভোলা ইলিশসহ বৃহত্তর মৎস্য উৎপাদনকারী জেলা, ভোলায় শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র। এখানে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট বসছে। ভবিষ্যতে ভোলা হবে শিল্পনগর। একসময় দোতলা-দেড়তলা টিনের ঘর ছিল। এখন সেখানে পাঁচতলা-১০ তলা শপিং মল নির্মাণ করা হচ্ছে। ভোলা সম্পদশালী। একে রক্ষা করা ভোলার প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব, দেশের সরকারের দায়িত্ব। আমাদের অনুরোধ, এ স্বপ্নদ্বীপকে বাঁচাতে সরকার যেন একটু এগিয়ে আসে।
নেয়ামত উল্যাহ: প্রথম আলোর ভোলা প্রতিনিধি।১২ নভেম্বর ১৯৭০ সাল। ভয়ংকর জলোচ্ছ্বাস ভোলার দেড় লাখ মানুষের জীবনসহ কোটি কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস করেছে। ওই জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের করুণ চিত্র বঙ্গবন্ধু স্বচক্ষে দেখেছেন। আর তাই স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ভোলার চারপাশে ২৫০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ করেছেন। ভোলা ছিল এক ফসলি। এখন তিন ফসলি। ভোলায় প্রতিবছর শত শত মেট্রিক টন খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকে। ওই ধান জেলার বাইরে যায়। ভোলায় ৬৫ হাজার থেকে ৭০ হাজার পুকুর আছে। আছে নদী, খাল ও উন্মুক্ত জলাশয়। এসব জলাশয়ে সঠিকভাবে মৎস্য চাষ ও রক্ষণাবেক্ষণ করলে দেশের এক-তৃতীয়াংশ মৎস্য আমিষের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। ভোলায় প্রায় ১০ লক্ষাধিক গবাদিপশু আছে। প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ ট্রাক গরু-মহিষ ভোলার বাইরে যায়। ভোলা হতে পারে দেশের সবচেয়ে বড় দুগ্ধ খামার ও মাংস উৎপাদনের এলাকা। ভোলায় আছে গ্যাসের বিপুল মজুদ। স্থানীয় ও বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ভোলায় আরও গ্যাস আছে। এ জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার। গ্যাসকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে শিল্প-কারখানা। গুরুত্বপূর্ণ জোনে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনায় ভোলার জমির মূল্য বেড়েছে কয়েক গুণ। ১ শতাংশ জমির মূল্য ১০ হাজার টাকা থেকে দুই লাখ হয়েছে। একসময় ভোলায় টিনশেড বিল্ডিং ছাড়া তেমন কোনো বিল্ডিং ছিল না। এখন ১০-১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হচ্ছে শপিং মল।
ভোলাবাসী বড়ই হতভাগা। আমাদের পুরোনো কিছু বেঁচে থাকে না। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে মনপুরা গিয়ে মুগ্ধ হয়েছেন। যেখানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর শক্ত পা পড়েনি, সে পবিত্র স্থানে বঙ্গবন্ধু পা দিয়েই বুঝেছেন, এটা শান্তির স্বপ্নদ্বীপ। তিনি সেখানে একটি চিন্তানিবাস আর মনপুরাকে পর্যটন এলাকা হিসেবে নির্মাণ করতে আশা করেছিলেন। এ স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে মনপুরায় ইট-বালু-রড পৌঁছেছিল। কিন্তু স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়নি। যে জমি চিন্তানিবাসের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে, সেটিও মেঘনায় অনেক আগে বিলুপ্ত করেছে। ইতিহাস-ঐতিহ্যে ভরা এ স্বপ্নদ্বীপ আজও অবহেলিত। হয়নি পর্যটনকেন্দ্র। এমনই করে আমাদের পুরোনো স্কুল-মাদ্রাসা, মসজিদ-মন্দির, বাড়ি ও বাড়ির নকশা করা ঘর আজ মেঘনায় বিলীন। অথচ ভোলা হতে পারে পৃথিবীর সেরা পর্যটনকেন্দ্র। কারণ, এর চারপাশে জল আর জলাশয়। ওপরে নীল আকাশ। নির্মল বায়ু, যানজট ও ধোঁয়ামুক্ত।
ভোলার প্রতিটি বাড়ি একান্নবর্তী। চারপাশে ঘর, মাঝে মস্ত উঠান, একটি লম্বা দরজা, দরজায় কাছারি। আর ঘরগুলোর পেছন থেকে বাগানের শুরু। ঘরের দাওয়ায় ফল-সবজি-লতাগাছ। এসব বাড়ির নাম হাওলাদার বাড়ি, গোলদার বাড়ি, তালুকদার বাড়ি, ফরাজি বাড়ি...কত নাম! এদের মাঠ ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ, গোয়াল ভরা গরু, বাথান ভরা মহিষ আর বাড়ির খোপভর্তি কবুতর-হাঁস-মুরগি। কোনো কিছুতে কোনো কমতি নেই। শিক্ষা ও ঐতিহ্যেও এরা সমাজের মাথা। মেঘনা-তেঁতুলিয়া মুহূর্তে আমাদের এসব ঐতিহ্য, আচার-আচরণ, কালচার, বংশমর্যাদা নদীর পানিতে মিশিয়ে দেয়—ভেঙে দেয় স্বপ্ন। নষ্ট করে পারিবারিক ঐতিহ্য। যেন বর্গিরা সবকিছু লুট করে নিয়ে গেছে। ভাঙে একান্নবর্তী পরিবার।
ভোলার চারদিকে নদী, মেঘনা-তেঁতুলিয়া-ইলিশা আর বুড়া গৌরাঙ্গ। চারদিক থেকে গ্রাস করছে। এ নদীকে শাসন করতে অনেক গবেষণা হয়েছে। কিন্তু কিছু সুবিধাভোগী বারবার নদীকে শাসনের পরিবর্তে নদীকে শোষণ করেছে। কারণ, এদের প্রত্যেকের ভোলা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়ি আছে। এরা সৃষ্টির শুরু থেকে সুবিধাভোগী। আমরা কষ্টের সময় ও বিপদে এদের সাহচর্যে যাই—এরা সে সুযোগে উপকারের পরিবর্তে ব্যবসা শুরু করে। এ কারণে সরকারের নদীভাঙন প্রতিরোধ বিফলে যাচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড কোটি কোটি টাকার ব্লক ফেলছে, ঠিকাদার ও পাউবো সেটির পূর্ণ সদ্ব্যবহার না করে চুরি করছে। কাগজে-কলমে ব্লকের প্রস্থ ২৮ মিটার। কিন্তু বাস্তবে ১০-১৮ মিটার। ব্লকের মান এমন যে লাথি দিলে ভেঙে গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যায়। ব্লক তৈরি হয়েছে, কিন্তু সঠিকভাবে বসানো হয়নি। জনগণের প্রশ্ন, ঠিকাদার যতই দুর্নীতির আশ্রয়ে যায়, কর্তৃপক্ষ আরও দুর্নীতির সুযোগ করে দেয় পকেট ভরার খাতিরে। আমাদের নেতারা এগুলো দেখেন, শোনেন, বোঝেন, কিন্তু রঙিন চশমা চোখে দিয়ে ঘোরেন।
ভাঙতে ভাঙতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে ভোলাবাসীর। প্রতিদিন শত শত পরিবার উদ্বাস্তু হচ্ছে। ভোলার বোরহানউদ্দিন, দৌলতখান, তজুমদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন ও মনপুরা এলাকার ৫০ কিলোমিটার ভাঙনকবলিত। এটুকু একসঙ্গে ব্লক ফেললেই ভোলার ভাঙন রক্ষা করা সম্ভব। কিন্তু ওই ৫০ কিলোমিটারে ব্লক না ফেলে দুই-এক কিলোমিটার করে ব্লক ফেলা হচ্ছে। এ কারণে প্রতিদিন শত শত একর ফসলি জমি-বাড়ি-ঘর নদীতে বিলীন হচ্ছে। ভোলা রক্ষা করতে আন্দোলনে নেমেছে ভোলাবাসী। তাদের বক্তব্য হচ্ছে, যত দিন ভোলা রক্ষা না হবে, তত দিন আন্দোলন চলবে।
ভোলাবাসীর আন্দোলনে আসলে সারা দেশের মানুষেরই সমর্থন থাকা প্রয়োজন। ভোলা এখন আর শুধু মহিষ, বাথান আর রাখালের দেশ নয়; এখন ভোলা একটি গুরুত্বপূর্ণ নগর। কারণ ভোলা দেশের বৃহত্তর ধান-পান-সুপারি উৎপাদনকারী জেলা, ভোলা ইলিশসহ বৃহত্তর মৎস্য উৎপাদনকারী জেলা, ভোলায় শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র। এখানে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ প্ল্যান্ট বসছে। ভবিষ্যতে ভোলা হবে শিল্পনগর। একসময় দোতলা-দেড়তলা টিনের ঘর ছিল। এখন সেখানে পাঁচতলা-১০ তলা শপিং মল নির্মাণ করা হচ্ছে। ভোলা সম্পদশালী। একে রক্ষা করা ভোলার প্রতিটি মানুষের দায়িত্ব, দেশের সরকারের দায়িত্ব। আমাদের অনুরোধ, এ স্বপ্নদ্বীপকে বাঁচাতে সরকার যেন একটু এগিয়ে আসে।
No comments