ফয়েজ আহ্মদ-আলোকিত গুণীজনের বিদায়
বহুমাত্রিক গুণান্বিত মানুষ ফয়েজ আহ্মদের জীবনাবসান ঘটেছে ১৯ ফেব্রুয়ারির ভোরের আলো ফোটার মুহূর্তে। সাংবাদিকতা পেশায় তিনি খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। একই সঙ্গে সাহিত্য, সংস্কৃতি ও রাজনীতির অঙ্গনেও ছিলেন পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তিনি দীর্ঘায়ু ছিলেন, বেঁচেছেন ৮৪ বছর। এর মধ্যে ছয় দশকেরও বেশি সময় কেটেছে প্রাণচঞ্চল কর্মময় জীবন।
কয়েক প্রজন্মের মানুষের কাছে তিনি অতি আপনজন। যৌবনে অমিত তেজে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে শরিক ছিলেন, আইয়ুব খানের সামরিক শাসনামলে দীর্ঘ সময় কেটেছে কারাগারে। ষাটের দশকে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতি পর্যায়ে কলমযোদ্ধা হিসেবে প্রেরণা ছিলেন, একাত্তরের যুদ্ধদিনগুলোতে যা হয়ে ওঠে আরও শাণিত। এ ভূমিকায় স্বৈরাচারী শাসকদের ভ্রূকুটি উপেক্ষা করেছেন, থেকেছেন আমজনতার কাতারে। আশির দশকে ফের সামরিক শাসনের জাঁতাকলে প্রিয় স্বদেশ ভূমি নিষ্পেষিত হতে থাকলে তিনি তারুণ্যের উদ্দীপনায় নিজেকে নিয়ে আসেন সামনের সারিতে, এইচএম এরশাদের অপশাসন দূর করার অভিন্ন লক্ষ্য নিয়ে আন্দোলনরত জোটগুলোর যুগপৎ আন্দোলনে সমন্বয় বাড়ানোর কাজে অবদান রাখেন নানাভাবে। এ আন্দোলনে সংস্কৃতিসেবী ও পেশাজীবীদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ বাড়াতে তার ভূমিকা বিশেষভাবে স্মরণীয়। সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী অপশক্তির বিরুদ্ধে তিনি যেমন ছিলেন সক্রিয়, তেমনি একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আন্দোলনেও অগ্রসেনাসী। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের প্রেরণাদায়ী নেতৃত্বে গঠিত গণআদালতের অন্যতম বিচারক ছিলেন এবং এ জন্য অন্যদের সঙ্গে তাকেও রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় অভিযুক্ত করা হয়। কিন্তু তিনি কখনোই লড়াইয়ের ময়দান থেকে দূরে থাকেননি। পরিস্থিতি যতই কঠিন হোক, দেশ ও মানুষের স্বার্থ ছিল তার কাছে সবকিছুর ওপরে। এ জন্য যখন যা প্রয়োজন, তা করেছেন অকুতোভয়ে, দৃঢ়সংকল্পে। তার প্রয়াণে সর্বস্তরের মানুষের অশেষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রকাশ ঘটেছে প্রত্যাশিতভাবেই। বিপুল কর্মময় জীবনের কারণে নতুন প্রজন্ম বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত হয়ে থাকবেন, তাতে সন্দেহ নেই।
ফয়েজ আহ্মদ 'মধ্যরাতের অশ্বারোহী' লিখে বিশেষ খ্যাতি পেয়েছিলেন। সাহসী ও মুক্তমনা মানুষরা নতুন নির্মল-সি্নগ্ধ ভোর নিয়ে আসবে, এটাই চেয়েছেন আজীবন। মৃত্যুর উইলে তার দান করা চোখে দৃষ্টি পাবেন এক বা দু'জন, কিন্তু যে দ্যুতি তিনি ছড়িয়েছেন তাতে অনেক অনেক সময় ধরে আলোকিত হতে থাকবে আমাদের চারপাশ। সতীর্থ ফয়েজ আহ্মদের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা। তার শোকাহত স্বজনদের জন্য রইল আন্তরিক সহানুভূতি।
ফয়েজ আহ্মদ 'মধ্যরাতের অশ্বারোহী' লিখে বিশেষ খ্যাতি পেয়েছিলেন। সাহসী ও মুক্তমনা মানুষরা নতুন নির্মল-সি্নগ্ধ ভোর নিয়ে আসবে, এটাই চেয়েছেন আজীবন। মৃত্যুর উইলে তার দান করা চোখে দৃষ্টি পাবেন এক বা দু'জন, কিন্তু যে দ্যুতি তিনি ছড়িয়েছেন তাতে অনেক অনেক সময় ধরে আলোকিত হতে থাকবে আমাদের চারপাশ। সতীর্থ ফয়েজ আহ্মদের প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা। তার শোকাহত স্বজনদের জন্য রইল আন্তরিক সহানুভূতি।
No comments