আওয়ামী লীগের সংগ্রামের ৬২ বছর by সুভাষ সিংহ রায়
আমার এক প্রিয় মানুষ অঞ্জন রায় প্রায়ই বলেন, আওয়ামী লীগ তার বন্ধু চেনে না। বেশ আগে আহমদ ছফা বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ যখন জয়লাভ করে তখন একা জয়লাভ করে; কিন্তু যখন পরাজিত হয় তখন সমগ্র জাতি পরাজিত হয়। আহমদ ছফার এ উক্তির দ্বিতীয় অংশের সঙ্গে একমত হলেও প্রথম অংশের সঙ্গে কিছুটা দ্বিমত রয়ে যায়।
কারণ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্ব পেলে দেশের মানুষ সার্বিকভাবে অনেক কিছু পায়। বরং আওয়ামী লীগের প্রকৃত কর্মীরা বঞ্চিত হয়। এখন যে স্থানীয় সরকারের নানা ধরনের নির্বাচন হচ্ছে, সেটাও আওয়ামী লীগের অবদান। যুক্তফ্রন্টের সময় আওয়ামী লীগই সরাসরি ভোটের বিধান চালু করে। যাহোক, অঞ্জন রায়ের কথার মধ্যে অবশ্যই যুক্তি আছে; ধরে নেওয়া যায় বেশ কিছুটা অভিমানও এখানে কাজ করে। প্রশ্ন জাগে অঞ্জন রায়ে দুঃখ কোথায়, কষ্ট কী? কবি হেলাল হাফিজের ভাষায়, 'পাথর চাপা সবুজ ঘাসের সাদা কষ্ট।' যাঁরা আওয়ামী লীগকে মনেপ্রাণে সমর্থন করেন, তাঁদের অনেকেরই এ ধরনের সাদা কষ্ট আছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতে গিয়ে বাংলাদেশে লাখ লাখ পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। তাদের কথা আজকের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানেন না। অথচ দেশে আওয়ামী লীগবিরোধীরা খুব সহজে বিখ্যাত হয়ে যান। বিখ্যাত রাজনৈতিক বিশ্লেষক অমলেশ ত্রিপাঠী তাঁর একটি গ্রন্থের মুখবন্ধে লিখেছিলেন, 'যখনই বিপ্লবী দল বা কমিউনিস্ট পার্টি স্বাধীনতা আন্দোলনে কংগ্রেসের সহযোগিতা করেছে বা বিরোধিতা করেছে, তখনই পাদপ্রদীপের আলো তাদের ওপর পড়েছে।' এভাবে বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে এ কথাগুলো অক্ষরে অক্ষরে সত্য। এ দেশে কেউ আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করে যতটা না বিখ্যাত হয়েছেন, এর চেয়ে বেশি দৃশ্যপটে এসেছেন আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করে। যাঁরা বিরোধিতা করেছেন তাঁদের ওপর পাদপ্রদীপের আলো বেশি পড়েছে। আজ যাঁরা আওয়ামী লীগবিরোধী নেতা হিসেবে পরিচিত, তাঁদের অনেকেই এই অবস্থানগত কারণে সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন। সুবিধামতো সময়ে তাঁরা আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ফেলেন। এ কথা বিলক্ষণ বলা যায়, এটার জন্যও ওই সময় সেই বিরুদ্ধবাদীরাই বেশি সুবিধা পান। তাঁদের কাছ থেকে আওয়ামী লীগ খুব বেশি সুবিধা না পেলেও তাঁরা কিন্তু বেশ ভালোভাবেই আলোকিত হন। আবার তাঁরাই আওয়ামী লীগের বিপদ দেখলে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করেন। বাংলাদেশে বামপন্থী রাজনীতির অনেকেই এই সমীকরণে বিখ্যাত হয়ে আছেন। হয়তো এটা আওয়ামী লীগকে জেনেও না জানার ভান করতে হয়। আওয়ামী লীগের এই সীমাবদ্ধতা নানা কারণে; হয়তো কোনো কোনো সীমাবদ্ধতা নিয়তির বিধানে লিপিবদ্ধ। এই মাটিতে এত নেতা বঙ্গবন্ধুর বিরোধিতা করলেন; কিন্তু তাঁরা বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিয়ে চলতে পারলেন না।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, 'বাঙ্গালি চিরদিন দলাদলি করতেই পারে, কিন্তু দল গড়ে তুলতে পারে না।' বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের জন্য এটা একটা অনিবার্য সত্যে পরিণত হয়ে গেছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা একবাক্যে স্বীকার করবেন, আওয়ামী লীগ সব সময় পরাজিত হয় নিজেদের ভেতরের দলাদলির কারণে। বাংলাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের অবস্থা যে খুবই শক্তিশালী, এ কথা সবাই স্বীকার করবেন; কিন্তু পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তুলনামূলকভাবে ভালো ফল দেখাতে পারেনি। এর কারণ একটাই, উপদলীয় কোন্দল। আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতারা এই দলাদলি চিরকাল চাষাবাদ করে এসেছেন। দিন দিন তা সব ধরনের নীতিবিবর্জিত পরিস্থিতির দিকে পেঁৗছাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগের ভেতরে যখন দলাদলি ভয়ংকর অবস্থায় ছিল, তখন শেখ হাসিনাকে সভানেত্রীর দায়িত্ব নিতে হয়েছিল। এরপর থেকে তাঁর অবিরাম কঠিন পথচলা। জাতীয় আন্তর্জাতিক ঘাতকরা বারবার তাঁকে প্রাণে মারতে চেয়েছে। ইমেজ ধ্বংস করার যত অপকৌশল আছে সবই তাঁর বিরুদ্ধে নানাভাবে প্রয়োগ করেছে এবং এখনো সেই ধারা অব্যাহত। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের ভোট ডাকাতির নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা করা হয়েছে; কিন্তু যেখানে তিনি গেছেন, সেখানেই জনতার ঢল নেমেছে। আপামর মানুষের ঢল দেখে সরকার শেখ হাসিনার ওপর চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়েছে। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা যখন গফরগাঁওয়ে যান, তখন সেখানে একজন তাঁকে সালাম দিয়েছিলেন_এই অপরাধে ওই নিরীহ লোকটার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। তাঁর বাড়িঘর ভেঙেচুরে মাটিতে মিশিয়ে সেখানে পুকুর কাটা হয়েছিল। এর বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা যখন প্রতিবাদ করেছেন, তখন অনেকেই সেই প্রতিবাদের ভাষা পছন্দ করেননি। মহিমা-পূর্ণিমারা যখন ধর্ষিত হয় তখন বিবেকবান বলে খ্যাতরা কোনো প্রতিবাদ করেননি, কেউ কেউ এটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁদের শেখ হাসিনা ছেড়ে কথা বলেন না। এ কারণে বিবেকবানরা অনেক সময় শেখ হাসিনাকে পছন্দ করেন না। বোধ হয় আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে যিনি থাকবেন তাঁর বিরুদ্ধে কারণে-অকারণে সমালোচনা হবেই। এটা মেনে নিয়েই আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের পথ চলতে হবে।
আজকের আওয়ামী লীগের ছয় দশকের অধিক পথ পরিক্রমায় এ বিষয়টি মাথায় রেখে দল গঠনে নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলতেন, 'আমরা কেবলই দুঃখ এবং অসুবিধা বহন করি, কিন্তু দায়িত্ব বহন করিতে চাই না।' আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দায়িত্ব বহন করার ইচ্ছা জাগ্রত করা গেলে দেশের বেশির ভাগ মানুষ সব সময় এই দলের সঙ্গে থাকবে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মনে রাখতে হবে, আওয়ামী লীগের চিরবন্ধুরা চিরশত্রুতে পরিণত হতে সময় লাগে না; কিন্তু চিরশত্রুরা এক মুহূর্তের জন্য আওয়ামী লীগের বন্ধু হতে পারে না।
লেখক : রাজনীতিক ও ফার্মাসিস্ট
svuassingho@gmail.com
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, 'বাঙ্গালি চিরদিন দলাদলি করতেই পারে, কিন্তু দল গড়ে তুলতে পারে না।' বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের জন্য এটা একটা অনিবার্য সত্যে পরিণত হয়ে গেছে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা একবাক্যে স্বীকার করবেন, আওয়ামী লীগ সব সময় পরাজিত হয় নিজেদের ভেতরের দলাদলির কারণে। বাংলাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে আওয়ামী লীগের অবস্থা যে খুবই শক্তিশালী, এ কথা সবাই স্বীকার করবেন; কিন্তু পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তুলনামূলকভাবে ভালো ফল দেখাতে পারেনি। এর কারণ একটাই, উপদলীয় কোন্দল। আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতারা এই দলাদলি চিরকাল চাষাবাদ করে এসেছেন। দিন দিন তা সব ধরনের নীতিবিবর্জিত পরিস্থিতির দিকে পেঁৗছাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগের ভেতরে যখন দলাদলি ভয়ংকর অবস্থায় ছিল, তখন শেখ হাসিনাকে সভানেত্রীর দায়িত্ব নিতে হয়েছিল। এরপর থেকে তাঁর অবিরাম কঠিন পথচলা। জাতীয় আন্তর্জাতিক ঘাতকরা বারবার তাঁকে প্রাণে মারতে চেয়েছে। ইমেজ ধ্বংস করার যত অপকৌশল আছে সবই তাঁর বিরুদ্ধে নানাভাবে প্রয়োগ করেছে এবং এখনো সেই ধারা অব্যাহত। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের ভোট ডাকাতির নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা করা হয়েছে; কিন্তু যেখানে তিনি গেছেন, সেখানেই জনতার ঢল নেমেছে। আপামর মানুষের ঢল দেখে সরকার শেখ হাসিনার ওপর চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়েছে। ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা যখন গফরগাঁওয়ে যান, তখন সেখানে একজন তাঁকে সালাম দিয়েছিলেন_এই অপরাধে ওই নিরীহ লোকটার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। তাঁর বাড়িঘর ভেঙেচুরে মাটিতে মিশিয়ে সেখানে পুকুর কাটা হয়েছিল। এর বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা যখন প্রতিবাদ করেছেন, তখন অনেকেই সেই প্রতিবাদের ভাষা পছন্দ করেননি। মহিমা-পূর্ণিমারা যখন ধর্ষিত হয় তখন বিবেকবান বলে খ্যাতরা কোনো প্রতিবাদ করেননি, কেউ কেউ এটাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁদের শেখ হাসিনা ছেড়ে কথা বলেন না। এ কারণে বিবেকবানরা অনেক সময় শেখ হাসিনাকে পছন্দ করেন না। বোধ হয় আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে যিনি থাকবেন তাঁর বিরুদ্ধে কারণে-অকারণে সমালোচনা হবেই। এটা মেনে নিয়েই আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের পথ চলতে হবে।
আজকের আওয়ামী লীগের ছয় দশকের অধিক পথ পরিক্রমায় এ বিষয়টি মাথায় রেখে দল গঠনে নিজেদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে হবে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলতেন, 'আমরা কেবলই দুঃখ এবং অসুবিধা বহন করি, কিন্তু দায়িত্ব বহন করিতে চাই না।' আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মধ্যে দায়িত্ব বহন করার ইচ্ছা জাগ্রত করা গেলে দেশের বেশির ভাগ মানুষ সব সময় এই দলের সঙ্গে থাকবে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের মনে রাখতে হবে, আওয়ামী লীগের চিরবন্ধুরা চিরশত্রুতে পরিণত হতে সময় লাগে না; কিন্তু চিরশত্রুরা এক মুহূর্তের জন্য আওয়ামী লীগের বন্ধু হতে পারে না।
লেখক : রাজনীতিক ও ফার্মাসিস্ট
svuassingho@gmail.com
No comments