বাংলালিকস! by ফিউশন রহমান
localtalk@gmail.com উইকিলিকস ফাঁস করেছে আড়াই লাখ মার্কিন তারবার্তা। মার্কিন কূটনীতিকদের ভাষ্যে এসব তারবার্তায় বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশের রাজনীতি ও ক্ষমতার অন্দরমহলের খবর। সেটা স্বাভাবিকই। কেননা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন বিশ্বের মোড়ল। বাংলাদেশের মতো গরিব রাষ্ট্রের খুঁটিনাটি বিষয়ে খবরদারি-নজরদারি করা তারই সাজে।
তবে যদি দৈবাৎ পাশার দান উল্টে যায়, যদি এমন হয় যে বাংলাদেশই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিংবা পশ্চিমা বিশ্বের ওপর নজরদারি করছে, তাহলে কী ঘটবে? কেমন হবে সেই তারবার্তার ধরন-ধারণ? চলুন, কল্পনা করা যাক—
হোয়াইট হাউসে সাম্প্রতিক রদবদলে বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের উষ্মা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গত জুলাইয়ে মার্কিন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুই ঘণ্টাব্যাপী এক বৈঠকে মিলিত হন। ঢাকায় পাঠানো এ সংক্রান্ত এক তারবার্তায় জানানো হয়, বৈঠককালে মার্কিন প্রশাসনে সাম্প্রতিক বেশ কিছু রদবদলের ব্যাপারে অত্যন্ত প্রাণবন্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। তবে বৈঠকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হোয়াইট হাউসে কর্মকর্তা পর্যায়ে সাম্প্রতিক রদবদলে তাঁর উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, এটা একেবারেই অপ্রয়োজনীয় রদবদল। এ ধরনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। কাউকে হুট করে সরিয়ে দেওয়া মানবাধিকারের পরিপন্থী। হোয়াইট হাউস প্রশাসনকে অবশ্যই এ বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সম্মানজনক সমাধানে আসতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশের প্রশাসনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কও প্রভাবিত হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
হিলারি মানসিকভাবে, ক্লিনটন শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েন
মনিকা লিউনস্কির সঙ্গে যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর ক্লিনটন ও হিলারি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তবে ক্লিনটন মানসিক অসুস্থতার চেয়ে শারীরিকভাবেই ভেঙে পড়েছিলেন বেশি। অন্যদিকে হিলারির মানসিক অবস্থা ছিল নাজুক।
প্রেসিডেন্টের একান্ত সচিব জন উইলিয়ামসকে উদ্ধৃত করে যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাসের কূটনৈতিক তারবার্তায় এ কথা বলা হয়েছে। বাংলালিকসের গত ৩০ আগস্ট ফাঁস করা তারবার্তার অন্যতম এটি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে তখন তারবার্তাটি পাঠিয়েছিলেন হুসেন আরশাদ।
১৯৯৮ সালে পাঠানো এই তারবার্তায় বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডির সঙ্গে আলাদাভাবে দুজন ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন সাইকিয়াটিস্ট ও অন্যজন ক্লিনটনের পারিবারিক চিকিৎ সক। এর আগের রাতে ক্লিনটনের শোবারঘর থেকে চিৎ কার-চেঁচামেচি ভেসে আসছিল। মনিকার সঙ্গে ক্লিনটনের সম্পর্কের বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না হিলারি। তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে ক্লিনটনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। এতে ক্লিনটন গুরুতর জখম হন। দুই পায়ে আঘাতের কারণে তিনি তখনই শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েন। পড়ন্ত অবস্থায় ক্লিনটন তাঁর এই মনিকা-কেলেঙ্কারির ঘটনা ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির সঙ্গে মিল রেখে ‘মনিকাগেট’ ও ‘জিপারগেট’ কেলেঙ্কারি বলে উল্লেখ করে হিলারির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
সে সময় ক্লিনটনের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে মানসিকভাবে সান্ত্বনা দিতে গিয়েছিলেন দলের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা। তাঁদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব ক্লিনটনের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে ভৎর্ সনার সুরে বলেন, ‘আপনাকে আমি আগেই বলেছিলাম, যা করার বাইরে করেন। হোয়াইট হাউসে এসব করবেন না। এখন হলো তো!’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও শ্রমিক নেবে বাংলাদেশ, ক্ষুব্ধ কানাডা
দীর্ঘদিনের দেনদরবারের পর বাংলাদেশ অবশেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও শ্রমিক নেবে বলে বাংলাদেশ সফররত উচ্চপর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্ত করেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এক বৈঠকে এ আশ্বাস দিয়েছেন। তবে তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য, জাপান ও সুইডেন থেকেও শ্রমিক নেওয়ার আগ্রহ আছে বাংলাদেশের। মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আবেদনের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের উপমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো এখন থেকে মার্কিন শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ব্যাংকের মাধ্যমে প্রদান করবে। প্রসঙ্গত, আগে বেতন-ভাতা হাতে-হাতে দেওয়ার প্রচলন ছিল।
এদিকে পত্রপত্রিকায় মার্কিন শ্রমিক নিয়োগ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর কানাডার রাষ্ট্রদূত এক ঘরোয়া বৈঠকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, বেকারত্ব বৃদ্ধির হার ভয়াবহভাবে বেড়ে যাওয়ায় তাঁর দেশ এক অস্থির সময় পার করছে। অথচ এই সময়ে বন্ধুপ্রতিম দেশটি কানাডার পাশে না দাঁড়িয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অদক্ষ শ্রমিক আনতে যাচ্ছে। তিনি এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়।
প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত খোলাখুলিভাবে মন্তব্য করেন, কানাডার রাষ্ট্রদূতের এই ধরনের যুদ্ধংদেহী মনোভাব বাংলাদেশে মার্কিন শ্রমবাজারকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তাই শ্রমবাজার সম্প্রসারণে দুই দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
ডিবি পুলিশের সাহায্য চেয়েছিল নরওয়ে
গত জুলাইয়ে নরওয়েতে সংঘটিত ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের এখনো কোনো কূলকিনারা হয়নি। নরওয়ের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাঠানো এক তারবার্তায় বলা হয়, নরওয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের কাছে হতাশা প্রকাশ করেছে। প্রতিনিধিদলটি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে ডিবি পুলিশসহ অন্য সব ধরনের কূটনৈতিক সহায়তা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি অনুরোধ জানায়। বৈঠকে প্রতিনিধিদল জানায়, এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করা শুধু নরওয়ের জন্যই না, বরং বিশ্বের জন্যও অতি আবশ্যকীয় একটি ব্যাপার। তারা নরওয়ে পুলিশের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে বাংলাদেশ সরকারের কাছে সহায়তা চেয়েছে।
সেনানিবাসসংলগ্ন বিলাসী বাড়ি ছাড়তে চাননি জর্জ বুশ
বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় সেনানিবাসসংলগ্ন বিলাসী বাড়ি ছাড়তে হবে বলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন জর্জ বুশ। ১২ সেপ্টেম্বর ফাঁস হওয়া বাংলালিকস বার্তায় এ গোপন তথ্য বেরিয়ে আসে।
তৎ কালীন বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তার সঙ্গে এক আলাপকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাড়ি ছাড়তে হবে বলে ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করে বলেছিলেন, ‘আমেরিকায় আমার কোনো বাড়ি নেই। এই বাড়ি ছাড়লে ভাইয়ের বাড়িতে ওঠা ছাড়া আমার আর কোনো পথ থাকবে না। এ সবই সরকারি দলের ষড়যন্ত্র। আমি অবশ্যই বাড়ি ছাড়াসংক্রান্ত হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করব।’
তার পরদিন সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় হাইকোর্টের রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে আপিল করা হয়।
জর্জ বুশের আইনজীবী উইলিয়াম কেরি দূতাবাসের কর্মকর্তাকে তখন বলেছিলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে। কাল চেম্বার বিচারপতির আদালতে এই লিভ টু আপিলের ওপর শুনানি হবে।
বাংলাদেশ দূতাবাসের সেই কর্মকর্তা জর্জ বুশকে বাড়ি-গাড়ির মায়া ত্যাগ করে জনগণের জন্য কাজ করার কথা বলেন, ‘জনগণের ভালোবাসার কাছে আসলে সবই তুচ্ছ। দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করে গেলে বাড়ি-গাড়ি এমনিতেই হবে।’
জাপানে বাংলাদেশি অনুদান নিয়ে নয়ছয় সহ্য করা হবে না
জাপান থেকে দক্ষ ও আধা-দক্ষ জনশক্তি নিয়োগে অগ্রাধিকার দেবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সফররত জাপানের জনশক্তিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠককালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি গৃহীত পঞ্চবার্ষিক রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনায় এ সিদ্ধান্ত অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে প্রায় এক লাখ জাপানি শ্রমিক বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটে কাজ করছে। তবে মানবসম্পদ আমদানির ক্ষেত্রে জাপানকে অগ্রাধিকার দিতে আমাদের সিদ্ধান্তের সুবাদে আগামী পাঁচ বছরে এ সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে।
প্রতিমন্ত্রী আরও অবহিত করেন যে, তাঁর সরকার দারিদ্র্যপীড়িত টোকিওতে কয়লাচালিত একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে দেওয়া সহায়তার অর্থ শিগগির ছাড় করবে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, অনুদানের অর্থ নিয়ে কোনো রকমের দুর্নীতি কিংবা নয়ছয় সহ্য করা হবে না। অতীতে এই ধরনের বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, জাপান সরকার দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। বৈঠককালে সফররত জাপানি জনশক্তিমন্ত্রী জাপানি শ্রমিক নিয়োগের সংখ্যা বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলেন, এ সিদ্ধান্ত জাপানের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সহায়ক হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে পাননি ফরাসি প্রেসিডেন্ট
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলাই সারকোজি গত মার্চ থেকে পাঁচ-পাঁচবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে পাননি। ঢাকায় পাঠানো গোপনীয় এক তারবার্তায় জানানো হয়, মার্চে একবার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ওই মাসেই ঢাকার ফরাসি দূতাবাসের মাধ্যমে পুনরায় অনুরোধ জানান। সেবারও ঢাকার পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া না গেলে এপ্রিলের মাঝামাঝিতে একবার, মে মাসে একবার এবং সর্বশেষ গত আগস্টে আবারও সাক্ষাতের অনুমতি চেয়ে অনুরোধপত্র পাঠান। তবে অভাবনীয়ভাবে প্রতিবারই এ ব্যাপারে নিশ্চুপ ছিল ঢাকা। এ নিয়ে ঢাকার কূটনৈতিক মহলেও নজিরবিহীন বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়। কূটনৈতিক মহলে ধারণা করা হচ্ছিল, পারমাণবিক অস্ত্র নিরোধ চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে গড়িমসি করায় ফ্রান্সের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল বাংলাদেশ। সাক্ষাৎ চেয়ে না পাওয়ার ঘটনা তারই প্রতিক্রিয়া বলে অভিজ্ঞ কূটনীতিকদের ধারণা।
প্রসঙ্গত, এর আগে সিআইএ প্রধানের নিয়োগকে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল।
ইউরোপ-আমেরিকা ভ্রমণে রেড-অ্যালার্ট জারি করতে চেয়েছিল বাংলাদেশ!
হানাহানি ও জঙ্গি হামলা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশিদের ইউরোপ ও আমেরিকা ভ্রমণের ওপর সতর্কতা জারি করতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। এ ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার পর এ সতর্কতা জারির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল বলে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস জানতে পারে। দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো এক তারবার্তায় জানানো হয়, এই সতর্কতার মেয়াদ যদি দীর্ঘ হয়, তাহলে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর্যটনশিল্পে ধস নামার আশঙ্কা প্রবল। কারণ, বিশেষ করে গ্রীষ্মে বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক পর্যটক ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবকাশ কাটাতে যায়।
তারবার্তায় এক ঊর্ধ্বতন বাংলাদেশি কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়, এই সতর্কতায় কোনো বিশেষ দেশ, এলাকা বা পর্যটন অঞ্চলের কথা উল্লেখ করা হবে না। তা ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের বিরোধিতাও সেখানে থাকবে না। তবে জনসমাগমের এলাকাগুলো বিশেষ করে গণপরিবহন, বিমানবন্দর ও পর্যটন স্পটে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হবে।
হোয়াইট হাউসে সাম্প্রতিক রদবদলে বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের উষ্মা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গত জুলাইয়ে মার্কিন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুই ঘণ্টাব্যাপী এক বৈঠকে মিলিত হন। ঢাকায় পাঠানো এ সংক্রান্ত এক তারবার্তায় জানানো হয়, বৈঠককালে মার্কিন প্রশাসনে সাম্প্রতিক বেশ কিছু রদবদলের ব্যাপারে অত্যন্ত প্রাণবন্ত আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। তবে বৈঠকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হোয়াইট হাউসে কর্মকর্তা পর্যায়ে সাম্প্রতিক রদবদলে তাঁর উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, এটা একেবারেই অপ্রয়োজনীয় রদবদল। এ ধরনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। কাউকে হুট করে সরিয়ে দেওয়া মানবাধিকারের পরিপন্থী। হোয়াইট হাউস প্রশাসনকে অবশ্যই এ বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সম্মানজনক সমাধানে আসতে হবে। তা না হলে বাংলাদেশের প্রশাসনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কও প্রভাবিত হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
হিলারি মানসিকভাবে, ক্লিনটন শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েন
মনিকা লিউনস্কির সঙ্গে যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর ক্লিনটন ও হিলারি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তবে ক্লিনটন মানসিক অসুস্থতার চেয়ে শারীরিকভাবেই ভেঙে পড়েছিলেন বেশি। অন্যদিকে হিলারির মানসিক অবস্থা ছিল নাজুক।
প্রেসিডেন্টের একান্ত সচিব জন উইলিয়ামসকে উদ্ধৃত করে যুক্তরাষ্ট্রের ঢাকা দূতাবাসের কূটনৈতিক তারবার্তায় এ কথা বলা হয়েছে। বাংলালিকসের গত ৩০ আগস্ট ফাঁস করা তারবার্তার অন্যতম এটি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে তখন তারবার্তাটি পাঠিয়েছিলেন হুসেন আরশাদ।
১৯৯৮ সালে পাঠানো এই তারবার্তায় বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডির সঙ্গে আলাদাভাবে দুজন ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন সাইকিয়াটিস্ট ও অন্যজন ক্লিনটনের পারিবারিক চিকিৎ সক। এর আগের রাতে ক্লিনটনের শোবারঘর থেকে চিৎ কার-চেঁচামেচি ভেসে আসছিল। মনিকার সঙ্গে ক্লিনটনের সম্পর্কের বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না হিলারি। তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে ক্লিনটনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। এতে ক্লিনটন গুরুতর জখম হন। দুই পায়ে আঘাতের কারণে তিনি তখনই শারীরিকভাবে ভেঙে পড়েন। পড়ন্ত অবস্থায় ক্লিনটন তাঁর এই মনিকা-কেলেঙ্কারির ঘটনা ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির সঙ্গে মিল রেখে ‘মনিকাগেট’ ও ‘জিপারগেট’ কেলেঙ্কারি বলে উল্লেখ করে হিলারির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
সে সময় ক্লিনটনের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে মানসিকভাবে সান্ত্বনা দিতে গিয়েছিলেন দলের অনেক জ্যেষ্ঠ নেতা। তাঁদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব ক্লিনটনের সঙ্গে দেখা করে তাঁকে ভৎর্ সনার সুরে বলেন, ‘আপনাকে আমি আগেই বলেছিলাম, যা করার বাইরে করেন। হোয়াইট হাউসে এসব করবেন না। এখন হলো তো!’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও শ্রমিক নেবে বাংলাদেশ, ক্ষুব্ধ কানাডা
দীর্ঘদিনের দেনদরবারের পর বাংলাদেশ অবশেষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও শ্রমিক নেবে বলে বাংলাদেশ সফররত উচ্চপর্যায়ের মার্কিন প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্ত করেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী এক বৈঠকে এ আশ্বাস দিয়েছেন। তবে তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য, জাপান ও সুইডেন থেকেও শ্রমিক নেওয়ার আগ্রহ আছে বাংলাদেশের। মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আবেদনের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের উপমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো এখন থেকে মার্কিন শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ব্যাংকের মাধ্যমে প্রদান করবে। প্রসঙ্গত, আগে বেতন-ভাতা হাতে-হাতে দেওয়ার প্রচলন ছিল।
এদিকে পত্রপত্রিকায় মার্কিন শ্রমিক নিয়োগ সংক্রান্ত সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর কানাডার রাষ্ট্রদূত এক ঘরোয়া বৈঠকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, বেকারত্ব বৃদ্ধির হার ভয়াবহভাবে বেড়ে যাওয়ায় তাঁর দেশ এক অস্থির সময় পার করছে। অথচ এই সময়ে বন্ধুপ্রতিম দেশটি কানাডার পাশে না দাঁড়িয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে অদক্ষ শ্রমিক আনতে যাচ্ছে। তিনি এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়।
প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত খোলাখুলিভাবে মন্তব্য করেন, কানাডার রাষ্ট্রদূতের এই ধরনের যুদ্ধংদেহী মনোভাব বাংলাদেশে মার্কিন শ্রমবাজারকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তাই শ্রমবাজার সম্প্রসারণে দুই দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
ডিবি পুলিশের সাহায্য চেয়েছিল নরওয়ে
গত জুলাইয়ে নরওয়েতে সংঘটিত ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের এখনো কোনো কূলকিনারা হয়নি। নরওয়ের বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাঠানো এক তারবার্তায় বলা হয়, নরওয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের কাছে হতাশা প্রকাশ করেছে। প্রতিনিধিদলটি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে ডিবি পুলিশসহ অন্য সব ধরনের কূটনৈতিক সহায়তা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি অনুরোধ জানায়। বৈঠকে প্রতিনিধিদল জানায়, এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করা শুধু নরওয়ের জন্যই না, বরং বিশ্বের জন্যও অতি আবশ্যকীয় একটি ব্যাপার। তারা নরওয়ে পুলিশের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে বাংলাদেশ সরকারের কাছে সহায়তা চেয়েছে।
সেনানিবাসসংলগ্ন বিলাসী বাড়ি ছাড়তে চাননি জর্জ বুশ
বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় সেনানিবাসসংলগ্ন বিলাসী বাড়ি ছাড়তে হবে বলে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন জর্জ বুশ। ১২ সেপ্টেম্বর ফাঁস হওয়া বাংলালিকস বার্তায় এ গোপন তথ্য বেরিয়ে আসে।
তৎ কালীন বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তার সঙ্গে এক আলাপকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাড়ি ছাড়তে হবে বলে ক্ষোভ ও হতাশা ব্যক্ত করে বলেছিলেন, ‘আমেরিকায় আমার কোনো বাড়ি নেই। এই বাড়ি ছাড়লে ভাইয়ের বাড়িতে ওঠা ছাড়া আমার আর কোনো পথ থাকবে না। এ সবই সরকারি দলের ষড়যন্ত্র। আমি অবশ্যই বাড়ি ছাড়াসংক্রান্ত হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করব।’
তার পরদিন সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় হাইকোর্টের রায়ের স্থগিতাদেশ চেয়ে আপিল করা হয়।
জর্জ বুশের আইনজীবী উইলিয়াম কেরি দূতাবাসের কর্মকর্তাকে তখন বলেছিলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছে। কাল চেম্বার বিচারপতির আদালতে এই লিভ টু আপিলের ওপর শুনানি হবে।
বাংলাদেশ দূতাবাসের সেই কর্মকর্তা জর্জ বুশকে বাড়ি-গাড়ির মায়া ত্যাগ করে জনগণের জন্য কাজ করার কথা বলেন, ‘জনগণের ভালোবাসার কাছে আসলে সবই তুচ্ছ। দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করে গেলে বাড়ি-গাড়ি এমনিতেই হবে।’
জাপানে বাংলাদেশি অনুদান নিয়ে নয়ছয় সহ্য করা হবে না
জাপান থেকে দক্ষ ও আধা-দক্ষ জনশক্তি নিয়োগে অগ্রাধিকার দেবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সফররত জাপানের জনশক্তিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠককালে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি গৃহীত পঞ্চবার্ষিক রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনায় এ সিদ্ধান্ত অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে প্রায় এক লাখ জাপানি শ্রমিক বাংলাদেশের বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠান ও দোকানপাটে কাজ করছে। তবে মানবসম্পদ আমদানির ক্ষেত্রে জাপানকে অগ্রাধিকার দিতে আমাদের সিদ্ধান্তের সুবাদে আগামী পাঁচ বছরে এ সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে।
প্রতিমন্ত্রী আরও অবহিত করেন যে, তাঁর সরকার দারিদ্র্যপীড়িত টোকিওতে কয়লাচালিত একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে দেওয়া সহায়তার অর্থ শিগগির ছাড় করবে। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন, অনুদানের অর্থ নিয়ে কোনো রকমের দুর্নীতি কিংবা নয়ছয় সহ্য করা হবে না। অতীতে এই ধরনের বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, জাপান সরকার দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। বৈঠককালে সফররত জাপানি জনশক্তিমন্ত্রী জাপানি শ্রমিক নিয়োগের সংখ্যা বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলেন, এ সিদ্ধান্ত জাপানের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সহায়ক হবে।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে পাননি ফরাসি প্রেসিডেন্ট
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নিকোলাই সারকোজি গত মার্চ থেকে পাঁচ-পাঁচবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চেয়ে পাননি। ঢাকায় পাঠানো গোপনীয় এক তারবার্তায় জানানো হয়, মার্চে একবার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ওই মাসেই ঢাকার ফরাসি দূতাবাসের মাধ্যমে পুনরায় অনুরোধ জানান। সেবারও ঢাকার পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া না গেলে এপ্রিলের মাঝামাঝিতে একবার, মে মাসে একবার এবং সর্বশেষ গত আগস্টে আবারও সাক্ষাতের অনুমতি চেয়ে অনুরোধপত্র পাঠান। তবে অভাবনীয়ভাবে প্রতিবারই এ ব্যাপারে নিশ্চুপ ছিল ঢাকা। এ নিয়ে ঢাকার কূটনৈতিক মহলেও নজিরবিহীন বিস্ময়ের সৃষ্টি হয়। কূটনৈতিক মহলে ধারণা করা হচ্ছিল, পারমাণবিক অস্ত্র নিরোধ চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে গড়িমসি করায় ফ্রান্সের ওপর ক্ষুব্ধ ছিল বাংলাদেশ। সাক্ষাৎ চেয়ে না পাওয়ার ঘটনা তারই প্রতিক্রিয়া বলে অভিজ্ঞ কূটনীতিকদের ধারণা।
প্রসঙ্গত, এর আগে সিআইএ প্রধানের নিয়োগকে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল।
ইউরোপ-আমেরিকা ভ্রমণে রেড-অ্যালার্ট জারি করতে চেয়েছিল বাংলাদেশ!
হানাহানি ও জঙ্গি হামলা বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশিদের ইউরোপ ও আমেরিকা ভ্রমণের ওপর সতর্কতা জারি করতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। এ ব্যাপারে গোয়েন্দা তথ্য পাওয়ার পর এ সতর্কতা জারির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল বলে ঢাকার মার্কিন দূতাবাস জানতে পারে। দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো এক তারবার্তায় জানানো হয়, এই সতর্কতার মেয়াদ যদি দীর্ঘ হয়, তাহলে ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর্যটনশিল্পে ধস নামার আশঙ্কা প্রবল। কারণ, বিশেষ করে গ্রীষ্মে বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চসংখ্যক পর্যটক ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবকাশ কাটাতে যায়।
তারবার্তায় এক ঊর্ধ্বতন বাংলাদেশি কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানানো হয়, এই সতর্কতায় কোনো বিশেষ দেশ, এলাকা বা পর্যটন অঞ্চলের কথা উল্লেখ করা হবে না। তা ছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের বিরোধিতাও সেখানে থাকবে না। তবে জনসমাগমের এলাকাগুলো বিশেষ করে গণপরিবহন, বিমানবন্দর ও পর্যটন স্পটে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হবে।
No comments