চট্টগ্রামের ছয় চোর-বিত্তেও চিত্ত নষ্ট
অভাবে স্বভাব নষ্ট_ এ প্রবাদ বাংলায় জনপ্রিয়। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কেউ অপরাধকর্মে জড়িয়ে পড়লেই এর ব্যবহার হয়। সব গরিব মানুষ জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে অপরাধে যুক্ত হয়ে পড়ে_ এমন কথা কেউ বলবে না। তবে এ বিষয়ে দ্বিমত কম যে, তাদের দিকে সন্দেহের তীর সহজেই ছুড়ে মারা যায়।
আইন-শৃঙ্খলাজনিত অনেক সমস্যার দায় সহজেই তাদের ওপর চাপানো হয়ে থাকে। ধনী পরিবারের জন্য 'স্বভাব নষ্টের' মতো প্রবাদ নেই বলেই ধারণা। কিন্তু সেখানে কি অপরাধ কম ঘটে? যখন দেশের দুর্নীতি-অনিয়মের প্রশ্ন আসে, তখন দেখা যায় এ ক্ষেত্রে গরিবদের দায় খুবই কম থাকে। তারা ট্যাক্স ফাঁকি দেয় না। ট্যাক্স দেওয়ার মতো আয়ই তো অনেকে করতে পারে না। কিন্তু ধনবানরা বিস্তর কর ফাঁকি দেয়। তাদের জন্য আছে আয়কর উপদেষ্টা, যারা আইনের ফাঁকফোকর খুঁজে বের করে। তবে এ কারণে সব ধনীকে অভিযুক্ত করা চলে না। চট্টগ্রামে কয়েক স্কুলছাত্র চুরির দায়ে ধরা পড়েছে পুলিশের হাতে। তাদের বক্তব্য :'দামি মোবাইল ফোন ব্যবহার ও উপাদেয় খাবার খেতে চুরিতে নেমে পড়ি।' তারা একটি মাস্টার চাবি ব্যবহার করে বিভিন্ন ফ্ল্যাট বা বাসা থেকে অর্থ, স্বর্ণালঙ্কার ও দামি জিনিসপত্র চুরি করত। সচ্ছল পরিবারের সন্তান হওয়ায় থেকে যেত সন্দেহের বাইরে। প্রবাদ বলে_ চোরের সাতদিন, গৃহস্থের একদিন। ডা. শামসুল আলমের বাড়িতে চুরি করার পর তারা নির্বিঘ্নেই সরে পড়েছিল। অর্থ ও অলঙ্কারও ভাগাভাগি হয়ে যায়। কিন্তু একে একে সবাই ধরা পড়ে এবং তাদের কাছ থেকেই এর আগে করা অন্য অপরাধগুলোর খবর পেয়ে যায় পুলিশ। ১৬ থেকে ২০ বছর বয়সী এসব অপরাধীকে ছাড়িয়ে নেওয়ার জন্য নিশ্চয়ই চেষ্টা চলবে। খুনের অপরাধীর ক্ষেত্রেও তো এটা ঘটে থাকে। কেন সচ্ছল পরিবারের কিশোরদের এভাবে স্বভাব নষ্ট হলো_ সেটা অনুসন্ধানের দায় প্রথমেই বর্তায় পরিবারের ওপর। তারা কি সন্তানদের প্রতি কোনো নজরই রাখেননি? সমাজবিজ্ঞানীরাও বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পারেন। কেবল এই ছয়জনেরই কি পদস্খলন ঘটেছে, নাকি আরও অনেক দুষ্কৃৃতকারী সক্রিয় আমাদের চারপাশে_ সেটাও কিন্তু ভাবনার বিষয়।
No comments