সীমান্ত সড়ক-নিরাপত্তা ও উন্নয়নের পথে এক ধাপ

ভারতের সঙ্গে স্থল সীমান্তরেখার সমান্তরালে সড়ক নির্মাণের যে খবর বুধবারের সমকালে প্রকাশ হয়েছে, তা নানা বিবেচনায় সাধুবাদযোগ্য। গত দুই দশকে সীমান্তে বিএসএফের হত্যাকাণ্ড, সমাজবিরোধীদের তৎপরতা ও চোরাচালান বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে এই পদক্ষেপ সময়োচিতও।


অর্থনৈতিক প্রেক্ষিতে খানিকটা ব্যয়বহুল হলেও এর উপযোগিতা অনেক বেশি ও সুদূরপ্রসারী। বস্তুত সীমান্ত সুরক্ষার প্রশ্নে এটা এক ধাপ অগ্রগতি। বিজিবির প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে চলতি বছরই এলজিইডির মাধ্যমে ৯৩৬ কিলোমিটার পাকা সড়ক নির্মাণে উদ্যোগী হয়ে সরকার এই কার্যক্রমের গতিশীলতা স্পষ্ট করেছে। আমরা আশা করি, তা শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। আর দশটা প্রকল্পের মতো সীমান্ত সড়ক নির্মাণের বিষয়টি মাঝপথে ঝুলে যাবে না। এর অবকাশও নেই। আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী ইতিমধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সীমান্তরেখা যথাসম্ভব দুর্ভেদ্য করে তুলেছে। চার হাজার কিলোমিটারের বেশি অভিন্ন সীমান্তের সিংহভাগই এখন কাঁটাতার ও সড়কঘেরা। আন্তঃসীমান্ত সম্পর্কে ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থেই এ পাশে অন্তত সমান্তরাল সড়ক নির্মাণ জরুরি বলে আমরা মনে করি। দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সদস্য ও চৌকি সংখ্যার মধ্যে যে ব্যবধান রয়েছে, দুর্গম যাতায়াত ব্যবস্থা তা স্বভাবতই বাড়িয়ে তোলে। প্রস্তাবিত সড়ক তা কমিয়ে আনবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। পাকা রাস্তায় জওয়ানদের চলাচলের জন্য বিশেষ যানবাহন, রাত্রিকালীন আলোর ব্যবস্থা কর্তৃপক্ষের দূরদর্শিতার প্রমাণ। সমকালের কাছে বিজিবি মহাপরিচালকের এই প্রত্যাশার সঙ্গে আমরা একমত যে, এতে সীমান্ত অপরাধ আগের তুলনায় কমে আসবে। চোরাচালান নিয়ন্ত্রণে আসলে দুই দেশের সম্পর্কে যেমন ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, কমে আসবে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও। কেবল সীমান্তরেখা সুরক্ষা নয়; সংশ্লিষ্ট এলাকার সার্বিক উন্নয়নেও এই সড়ক নিশ্চয়ই ভূমিকা রাখবে। এটা প্রতিষ্ঠিত যে, চলিষ্ণুতা বাড়লে উন্নয়ন সহজসাধ্য হয়। চোরাচালানে যুক্ত খেটে খাওয়া মানুষ কিন্তু দারিদ্র্যের কারণেই বেআইনি পরিবহনে জড়িয়ে পড়ে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও বিদ্যুতের আগমন সীমান্ত অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে প্রত্যাশা। আর বিকল্প কর্মসংস্থান থাকলে সাধ করে ক'জনেই-বা বিএসএফের গুলির মুখে পড়তে যাবে? বস্তুত যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি সীমান্ত অঞ্চলকে এখনকার মতো দেশের পশ্চাৎভূমি করে রাখবে না। সুশাসন, শিক্ষা ও মানবাধিকারের মতো মানব উন্নয়নসূচকে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বেই। আমরা জানি, বর্তমান সরকার আন্তঃসীমান্তে স্থানীয় আদান-প্রদান বৃদ্ধির জন্য পরীক্ষামূলক সীমান্ত হাট চালু করেছে। সড়ক যোগাযোগের উন্নয়ন তা আরও অর্থবহ করে তুলবে। সীমান্ত পর্যটন ব্যবস্থা গড়ে তোলার কথাও ভাবতে হবে। তাতে করে সাংস্কৃতিক বিনিময় জোরালো হয়। প্রস্তাবিত সড়করেখা সেক্ষেত্রেও বড় ভূমিকা রাখতে পারে। দুই দেশের মধ্যে অভিন্ন ৫৪টি নদী রয়েছে। সীমান্ত সড়কের আওতায় নির্মিত সেতু ও স্থাপিত নৌযান থেকে নদীগুলোর নয়নাভিরাম দৃশ্য পর্যবেক্ষণ সহজতর হবে। বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত সুরক্ষা ও উন্নয়নের প্রশ্নে সম্প্রীতির কথা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে ব্যক্ত হয়ে থাকে, প্রস্তাবিত সড়ক তা তৃণমূলে নিয়ে যেতে সহায়তা করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

No comments

Powered by Blogger.