ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র-মধ্যপ্রাচ্য আগের মতো থাকবে না by রবার্ট ফিস্ক
চলতি সপ্তাহে ফিলিস্তিনি জনগণ নিজেদের কোনো রাষ্ট্র পাবে না। যদি তারা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভোট পায়, আর মাহমুদ আব্বাস মার্কিন-ইসরায়েলি শক্তির সামনে তাঁর স্বভাবসুলভ ছোট মনের পরিচয় না দেন, তবে তারা প্রমাণ করে দেবে যে তারা রাষ্ট্র হয়ে ওঠার উপযুক্ত। মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আগের ধার আর নেই।
‘শান্তি-প্রক্রিয়া’, ‘রোডম্যাপ’, ‘অসলো চুক্তি’ ইত্যাদি আবোল-তাবোল কথা এখন ইতিহাস।
ইসরায়েলিরা আরবদের বিপুল ভূমি অধিকার করেছে অবৈধভাবে তাদের ঔপনিবেশিক প্রকল্পের জন্য। আমার কথা বিশ্বাস না হলে পশ্চিম তীরে গিয়ে দেখে আসুন। ইসরায়েলের বিশাল বিশাল ইহুদি বসতি, ফিলিস্তিনিদের একতলার বেশি দালান নির্মাণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আর শাস্তিস্বরূপ বাড়ির পয়োনিষ্কাশন-ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া, জর্ডান সীমান্ত কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলা, শুধু ইসরাইলিদের ব্যবহারের জন্য সড়ক নির্দিষ্ট করে দেওয়া ইত্যাদি ঘটনায় পশ্চিম তীরের মানচিত্র ভাঙা গাড়ির থেঁতলে যাওয়া ওয়াইডস্ক্রিনে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির প্রশ্নে ভোট পশ্চিমা বিশ্বকে বিভক্ত করবে—এই বিভক্তি ঘটবে মার্কিনদের সঙ্গে ইউরোপীয় ও অন্য বহু দেশের; আরবদের সঙ্গে মার্কিনদের; ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভেতরের বিভক্তিও উন্মোচিত হবে।
ইসরায়েলের ক্ষমতা, সামরিক নৃশংসতা ও ঔপনিবেশিকতার ফলে লাখ লাখ ইউরোপীয় এখন আর অ্যান্টি-সেমিটিক গালি খাওয়ার ভয়ে ইসরায়েলের সমালোচনা করার ক্ষেত্রে শঙ্কিত নন। ইহুদি গণহত্যায় তাঁদের ঐতিহাসিক দায় এবং মুসলমান রাষ্ট্রগুলোর সহিংসতার বিষয়ে সচেতন হয়েও তাঁরা আর গুটিসুটি মেরে থাকছেন না। পশ্চিমা বিশ্বে মুসলমান ও আফ্রিকানদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদ আছে, আছে ইহুদিদের বিরুদ্ধেও। পশ্চিম তীরের ইহুদি বসতিগুলোতে কোনো আরব মুসলমান ফিলিস্তিনি বসবাস করতে পারে না। এটা বর্ণবাদের অভিব্যক্তি ছাড়া আর কী?
এই ট্র্যাজেডিতে ইসরায়েলের অংশগ্রহণ নিশ্চয়ই আছে। ইসরায়েলের উন্মাদ সরকার এই সর্বনাশা পথে ইসরায়েলি জনগণকে ঠেলে দিয়েছে। এর যথার্থ উদাহরণ তিউনিসিয়া ও মিসরে গণতন্ত্র আসার ব্যাপারে তাদের চাপা আতঙ্ক—এই গোলমেলে পরিস্থিতিতে তাদের প্রধান মিত্র সৌদি আরব। গত বছর ত্রাণবাহী গাজা ফ্লোটিলায় নয়, তুর্কিকে হত্যার জন্য মাফ চাইতে নির্মম অস্বীকৃতি কিংবা ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি অনুপ্রবেশের সময় পাঁচ মিসরীয় পুলিশকে গুলি করে হত্যার জন্য মাফ চাইতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ইসরায়েলি সরকার সর্বনাশা পথেই হাঁটছে। এ জন্যই আঞ্চলিক মিত্র তুরস্ক ও মিসরকে মাত্র ১২ মাসের মাথায়ই হারাতে হলো।
ইসরায়েল রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়তো অন্যায্য পথে—কিন্তু আইনি পথে তা হয়েছে। আর ইসরায়েলের স্থপতিদের জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে ১৯৪৮-৪৯ সালের যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনকে ইহুদি ও আরবদের মাঝে ভাগ করে নেওয়ার পূর্ণ সামর্থ্য ছিল। কিন্তু ফিলিস্তিনের ভাগ্য নির্ধারণে জাতিসংঘেই আলোচনা হয় ১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বর। তাতে ইসরায়েলকে বৈধতা দেওয়া হয়। মার্কিনরা প্রথম ইসরায়েল রাষ্ট্র সৃষ্টির পক্ষে ভোট দেয়। এখন ইতিহাসের কী নির্মম পরিহাস, সেই ইসরায়েলই ফিলিস্তিনি আরবদের বৈধতা দেওয়া থেকে জাতিসংঘকে বিরত করতে চায়। আর ফিলিস্তিনকে বৈধতা দানের বিরুদ্ধে ভেটো দিতে সবার আগে যুক্তরাষ্ট্র।
ইসরায়েল রাষ্ট্রের টিকে থাকার কি কোনো অধিকার আছে? প্রশ্নটা এক ক্লান্তিকর ফাঁদ—নিয়মিত, নির্বোধের মতো ইসরায়েলের তথাকথিত সমর্থকেরা প্রশ্নটা উত্থাপন করে। মানুষ নয়, বিভিন্ন রাষ্ট্রই কোনো রাষ্ট্রের অস্তিত্বের অধিকার দেয়। ভৌগোলিকভাবে ঠিক কোন জায়গায় ইসরায়েলের অবস্থিতি? এটাই তো পৃথিবীর একমাত্র রাষ্ট্র, যেটি তার পূর্ব সীমান্ত কোথায় জানে না। সেটা তারা কখনো ঘোষণাও করবে না। এ রাষ্ট্রের সীমারেখা কি জাতিসংঘ-নির্দেশিত যুদ্ধবিরতি রেখা বরাবর ১৯৬৭ সালের সীমান্ত, নাকি ইহুদি বসতি এলাকা বাদ দিয়ে পশ্চিম তীর বরাবর, নাকি পুরো পশ্চিম তীরকে ভেতরে রেখে? এ জন্যই ইসরায়েলে মার্কিন, ব্রিটিশসহ প্রায় প্রতিটি পশ্চিমা রাষ্ট্রের দূতাবাস জেরুজালেমে নয়, তেলআবিবে অবস্থিত।
আরব জাগরণ এবং মর্যাদা ও মুক্তিপিয়াসী মুক্ত মানবের বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা নতুন মধ্যপ্রাচ্যে জাতিসংঘের এই ভোট একধরনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা। মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি ইসরায়েলে এতটাই গাঢ়ভাবে আটকে গেছে, ইসরায়েলের ব্যাপারে এতটাই শঙ্কিত যুক্তরাষ্ট্রের সব কংগ্রেস সদস্য যে চলতি সপ্তাহে আমেরিকা যে রূপ নিয়ে হাজির হবে, তা উড্রো উইলসন ও তাঁর স্বায়ত্তশাসনের ১৪ নীতিপ্রণেতা রাষ্ট্রের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। এ রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট মুসলিম বিশ্বের প্রতি নতুন প্রীতিময় সম্পর্ক গড়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর বাধ্য হন স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবি তোলা মানুষের বিরুদ্ধে দখলদারি শক্তিকে সমর্থন দিতে।
বলব কী ‘বেচারা ওবামা’? মনে হয় ঠিক হবে না। নির্বাচিত হওয়ার কয়েক মাসের ভেতর ইস্তাম্বুল ও কায়রোতে তিনি বড় বড় কথা শোনালেন, অসার, মিথ্যা ভালোবাসা বিলালেন। এ সপ্তাহে তিনি প্রমাণ দেবেন, মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যতের চেয়ে তাঁর পুনর্নির্বাচিত হওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ; অধিকৃত অঞ্চলের মানুষের যন্ত্রণার ওপর স্থান দিতে হবে ক্ষমতা ধরে রাখার তাঁর ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে। কেবল এই পরিপ্রেক্ষিতেই খুব অদ্ভুত লাগে, এমন উচ্চ আদর্শের এক ব্যক্তি নিজেকে কীভাবে এতটা কাপুরুষোচিতভাবে জাহির করতে পারেন। নতুন মধ্যপ্রাচ্যের জন্য এটা এক গভীর ট্র্যাজেডি।
ইসরায়েলের সামনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাঁড়াতে না পারা এবং ‘ফিলিস্তিনে’ ন্যায্য শান্তির কথা দৃঢ়ভাবে বলতে না পারা এই ট্র্যাজেডির জন্য দায়ী। আরবরাও দায়ী। তারা নিজেদের দেশে এত দীর্ঘ সময় ধরে স্বৈরাচারী শাসন টিকে থাকতে দিয়েছে আর এভাবে মিথ্যা সীমান্ত, পুরোনো মতবাদ ও তেল দিয়ে বালির বাঁধ তৈরি করে রেখেছে। ইসরায়েলও দায়ী। জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের দাবিকে যেখানে তাদের স্বাগত জানানো উচিত, সেখানে তারা বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সুযোগ হারাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার যে রাজনৈতিক ক্ষমতা আছে, তা এ সপ্তাহে ইসরায়েলের সপক্ষে থেকে নির্বিষ হয়ে যাবে। স্বাধীনতার নামে বেশ বড়ই বিসর্জন...।
দি ইনডিপেনডেন্ট থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ।
রবার্ট ফিস্ক: ব্রিটিশ সাংবাদিক, মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ।
ইসরায়েলিরা আরবদের বিপুল ভূমি অধিকার করেছে অবৈধভাবে তাদের ঔপনিবেশিক প্রকল্পের জন্য। আমার কথা বিশ্বাস না হলে পশ্চিম তীরে গিয়ে দেখে আসুন। ইসরায়েলের বিশাল বিশাল ইহুদি বসতি, ফিলিস্তিনিদের একতলার বেশি দালান নির্মাণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আর শাস্তিস্বরূপ বাড়ির পয়োনিষ্কাশন-ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া, জর্ডান সীমান্ত কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে ফেলা, শুধু ইসরাইলিদের ব্যবহারের জন্য সড়ক নির্দিষ্ট করে দেওয়া ইত্যাদি ঘটনায় পশ্চিম তীরের মানচিত্র ভাঙা গাড়ির থেঁতলে যাওয়া ওয়াইডস্ক্রিনে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির প্রশ্নে ভোট পশ্চিমা বিশ্বকে বিভক্ত করবে—এই বিভক্তি ঘটবে মার্কিনদের সঙ্গে ইউরোপীয় ও অন্য বহু দেশের; আরবদের সঙ্গে মার্কিনদের; ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভেতরের বিভক্তিও উন্মোচিত হবে।
ইসরায়েলের ক্ষমতা, সামরিক নৃশংসতা ও ঔপনিবেশিকতার ফলে লাখ লাখ ইউরোপীয় এখন আর অ্যান্টি-সেমিটিক গালি খাওয়ার ভয়ে ইসরায়েলের সমালোচনা করার ক্ষেত্রে শঙ্কিত নন। ইহুদি গণহত্যায় তাঁদের ঐতিহাসিক দায় এবং মুসলমান রাষ্ট্রগুলোর সহিংসতার বিষয়ে সচেতন হয়েও তাঁরা আর গুটিসুটি মেরে থাকছেন না। পশ্চিমা বিশ্বে মুসলমান ও আফ্রিকানদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদ আছে, আছে ইহুদিদের বিরুদ্ধেও। পশ্চিম তীরের ইহুদি বসতিগুলোতে কোনো আরব মুসলমান ফিলিস্তিনি বসবাস করতে পারে না। এটা বর্ণবাদের অভিব্যক্তি ছাড়া আর কী?
এই ট্র্যাজেডিতে ইসরায়েলের অংশগ্রহণ নিশ্চয়ই আছে। ইসরায়েলের উন্মাদ সরকার এই সর্বনাশা পথে ইসরায়েলি জনগণকে ঠেলে দিয়েছে। এর যথার্থ উদাহরণ তিউনিসিয়া ও মিসরে গণতন্ত্র আসার ব্যাপারে তাদের চাপা আতঙ্ক—এই গোলমেলে পরিস্থিতিতে তাদের প্রধান মিত্র সৌদি আরব। গত বছর ত্রাণবাহী গাজা ফ্লোটিলায় নয়, তুর্কিকে হত্যার জন্য মাফ চাইতে নির্মম অস্বীকৃতি কিংবা ইসরায়েলে ফিলিস্তিনি অনুপ্রবেশের সময় পাঁচ মিসরীয় পুলিশকে গুলি করে হত্যার জন্য মাফ চাইতে অস্বীকৃতি জানিয়ে ইসরায়েলি সরকার সর্বনাশা পথেই হাঁটছে। এ জন্যই আঞ্চলিক মিত্র তুরস্ক ও মিসরকে মাত্র ১২ মাসের মাথায়ই হারাতে হলো।
ইসরায়েল রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়তো অন্যায্য পথে—কিন্তু আইনি পথে তা হয়েছে। আর ইসরায়েলের স্থপতিদের জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহকে সঙ্গে নিয়ে ১৯৪৮-৪৯ সালের যুদ্ধের পর ফিলিস্তিনকে ইহুদি ও আরবদের মাঝে ভাগ করে নেওয়ার পূর্ণ সামর্থ্য ছিল। কিন্তু ফিলিস্তিনের ভাগ্য নির্ধারণে জাতিসংঘেই আলোচনা হয় ১৯৪৭ সালের ২৯ নভেম্বর। তাতে ইসরায়েলকে বৈধতা দেওয়া হয়। মার্কিনরা প্রথম ইসরায়েল রাষ্ট্র সৃষ্টির পক্ষে ভোট দেয়। এখন ইতিহাসের কী নির্মম পরিহাস, সেই ইসরায়েলই ফিলিস্তিনি আরবদের বৈধতা দেওয়া থেকে জাতিসংঘকে বিরত করতে চায়। আর ফিলিস্তিনকে বৈধতা দানের বিরুদ্ধে ভেটো দিতে সবার আগে যুক্তরাষ্ট্র।
ইসরায়েল রাষ্ট্রের টিকে থাকার কি কোনো অধিকার আছে? প্রশ্নটা এক ক্লান্তিকর ফাঁদ—নিয়মিত, নির্বোধের মতো ইসরায়েলের তথাকথিত সমর্থকেরা প্রশ্নটা উত্থাপন করে। মানুষ নয়, বিভিন্ন রাষ্ট্রই কোনো রাষ্ট্রের অস্তিত্বের অধিকার দেয়। ভৌগোলিকভাবে ঠিক কোন জায়গায় ইসরায়েলের অবস্থিতি? এটাই তো পৃথিবীর একমাত্র রাষ্ট্র, যেটি তার পূর্ব সীমান্ত কোথায় জানে না। সেটা তারা কখনো ঘোষণাও করবে না। এ রাষ্ট্রের সীমারেখা কি জাতিসংঘ-নির্দেশিত যুদ্ধবিরতি রেখা বরাবর ১৯৬৭ সালের সীমান্ত, নাকি ইহুদি বসতি এলাকা বাদ দিয়ে পশ্চিম তীর বরাবর, নাকি পুরো পশ্চিম তীরকে ভেতরে রেখে? এ জন্যই ইসরায়েলে মার্কিন, ব্রিটিশসহ প্রায় প্রতিটি পশ্চিমা রাষ্ট্রের দূতাবাস জেরুজালেমে নয়, তেলআবিবে অবস্থিত।
আরব জাগরণ এবং মর্যাদা ও মুক্তিপিয়াসী মুক্ত মানবের বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা নতুন মধ্যপ্রাচ্যে জাতিসংঘের এই ভোট একধরনের মোড় ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো ঘটনা। মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি ইসরায়েলে এতটাই গাঢ়ভাবে আটকে গেছে, ইসরায়েলের ব্যাপারে এতটাই শঙ্কিত যুক্তরাষ্ট্রের সব কংগ্রেস সদস্য যে চলতি সপ্তাহে আমেরিকা যে রূপ নিয়ে হাজির হবে, তা উড্রো উইলসন ও তাঁর স্বায়ত্তশাসনের ১৪ নীতিপ্রণেতা রাষ্ট্রের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। এ রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট মুসলিম বিশ্বের প্রতি নতুন প্রীতিময় সম্পর্ক গড়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর বাধ্য হন স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবি তোলা মানুষের বিরুদ্ধে দখলদারি শক্তিকে সমর্থন দিতে।
বলব কী ‘বেচারা ওবামা’? মনে হয় ঠিক হবে না। নির্বাচিত হওয়ার কয়েক মাসের ভেতর ইস্তাম্বুল ও কায়রোতে তিনি বড় বড় কথা শোনালেন, অসার, মিথ্যা ভালোবাসা বিলালেন। এ সপ্তাহে তিনি প্রমাণ দেবেন, মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যতের চেয়ে তাঁর পুনর্নির্বাচিত হওয়া অনেক গুরুত্বপূর্ণ; অধিকৃত অঞ্চলের মানুষের যন্ত্রণার ওপর স্থান দিতে হবে ক্ষমতা ধরে রাখার তাঁর ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে। কেবল এই পরিপ্রেক্ষিতেই খুব অদ্ভুত লাগে, এমন উচ্চ আদর্শের এক ব্যক্তি নিজেকে কীভাবে এতটা কাপুরুষোচিতভাবে জাহির করতে পারেন। নতুন মধ্যপ্রাচ্যের জন্য এটা এক গভীর ট্র্যাজেডি।
ইসরায়েলের সামনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দাঁড়াতে না পারা এবং ‘ফিলিস্তিনে’ ন্যায্য শান্তির কথা দৃঢ়ভাবে বলতে না পারা এই ট্র্যাজেডির জন্য দায়ী। আরবরাও দায়ী। তারা নিজেদের দেশে এত দীর্ঘ সময় ধরে স্বৈরাচারী শাসন টিকে থাকতে দিয়েছে আর এভাবে মিথ্যা সীমান্ত, পুরোনো মতবাদ ও তেল দিয়ে বালির বাঁধ তৈরি করে রেখেছে। ইসরায়েলও দায়ী। জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের দাবিকে যেখানে তাদের স্বাগত জানানো উচিত, সেখানে তারা বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সুযোগ হারাচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার যে রাজনৈতিক ক্ষমতা আছে, তা এ সপ্তাহে ইসরায়েলের সপক্ষে থেকে নির্বিষ হয়ে যাবে। স্বাধীনতার নামে বেশ বড়ই বিসর্জন...।
দি ইনডিপেনডেন্ট থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ।
রবার্ট ফিস্ক: ব্রিটিশ সাংবাদিক, মধ্যপ্রাচ্য বিশেষজ্ঞ।
No comments