রাজধানীতে যেতে চাই! by আনোয়ার হোসেন
রাজধানীর স্কুলে আসতে দেড় হাজার শিক্ষকের আবেদন_ সোমবার সমকালের একটি সংবাদ শিরোনাম। এতে বলা হয়, 'কেবল চিকিৎসক নন, সরকারি স্কুলের শিক্ষকরাও রাজধানীর বাইরে থাকতে চান না। থাকতে চান ঢাকাতেই। কোচিং ও প্রাইভেট পড়ানোর সুযোগ এর অন্যতম কারণ।'
যারা ঢাকায় আসতে চান, তাদের যুক্তি জোরালো বৈকি। এখন সরকারি স্কুল-কলেজের যেসব শিক্ষক রয়েছেন, তারা এসব সুবিধা ভোগ করছেন। ঢাকায় থাকতে পারলে মাসে প্রাইভেট পড়িয়ে লাখ টাকা কামানো কোনো ব্যাপারই নয়_ এমন কথা তারা শোনেন। এ অর্থে ফ্ল্যাট কেনা যায়, গাড়ির মালিক হওয়া যায়। শুধু নিজের জন্য নয়, পরিবারের সদস্যদের জন্যও ঢাকা সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান_ এ নিয়ে কেউ দ্বিমত করবে না। দেশে 'ভালো স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়' হাতেগোনা। সীমিত যা আছে তার বেশিরভাগ রয়েছে ঢাকায়। এমন পরিবার কি পাওয়া যাবে, যাদের সন্তানকে 'ভালো' প্রতিষ্ঠানে পড়ানোর আগ্রহ নেই? যারা ঢাকায় আসতে চান তারা জানেন, এমন পোস্টিং পাওয়া শুধুু ভাগ্য থাকলে হয় না, চাই জোরদার তদবির। অর্থেরও লেনদেন হয়ে থাকে। এ জন্য জমি বিক্রি করতে হলেও সমস্যা নেই। ঋণও করা যেতে পারে চড়া সুদে। ঢাকায় যেতে পারলে সব উসুল হয়ে যাবে যে!
কিছুদিন আগে ঢাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত ডায়েরি দেখছিলাম। সেখানে নারী শিক্ষকের সংখ্যা অনেক। এ তালিকা নিয়ে আলোচনা হয় প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি বলেন, কেউ মনে করতে পারেন, আমরা নারীর ক্ষমতায়নের ইস্যুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বুয়েটের চেয়ে এগিয়ে। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, উচ্চ পদগুলোতে যারা রয়েছেন তাদের তদবির-চাপের ফল এটা। তাদের কারণে অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পদে নিযুক্ত হন। লা-জবাব থাকা ছাড়া উপায় কী!
বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এখনও পিছিয়ে। দেশের সব নাগরিকের জন্য সমান সুবিধা নিশ্চিত করার সুযোগ নেই। বৈষম্য প্রকট। এর মধ্যেই ঢাকাবাসী নিজেদের ভাগ্যবান মনে করতে পারে। এখানে অন্য শহরের চেয়ে বেশি সময় বিদ্যুৎ থাকে। ওয়াসার পানির সরবরাহ মেলে। রান্নার জন্য গ্যাস মেলে 'পানির দরে'। তাই বলে কি ঢাকাবাসী পরিতৃপ্ত? যে কাউকে জিজ্ঞেস করলে বলবে_ সবাই যানজটে নাকাল। অনেক লোকের বসতি হওয়ায় জনজটও প্রকট। কিন্তু এরপরও ঢাকায় বাড়ছে মানুষ। যারা পড়তে আসে, তাদের বড় অংশ এখানেই থাকার চেষ্টা করে। কয়েক লাখ গার্মেন্টকর্মীর বসতি হয়েছে ঢাকায়। নদীভাঙনের শিকার লোকজন বেঁচে থাকার আশায় ছুটে আসে এ জনপদে। কিছু সরকারি অফিসের সদর দফতর ঢাকার বাইরে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয় মাঝে মধ্যে। কিন্তু দেখা যায়, একই সঙ্গে ঢাকা ও বাইরে কাজ চলছে। এতে ব্যয় বাড়ে, কাজের সময় বেশি পড়ে। মন্ত্রীরা তো ঢাকাতেই থাকেন। বেশিরভাগ সংসদ সদস্য থাকেন ঢাকায়। উপজেলা চেয়ারম্যানদের পছন্দের মহানগর ঢাকা। তাহলে শিক্ষকদের দোষ কোথায়? তাদের এখানে আসার জন্য যুক্তির অভাব হয় না। সবকিছু ছাপিয়ে থাকে অর্থনীতি এবং নাগরিক সুবিধা। এটা পেতে সাধ্যমতো চেষ্টা করেন সবাই। কিছু লোক সফল হন, বেশিরভাগ হন না। এখানে আসতে পারলে অনেকের জীবন আমূল বদলে যেতে পারত। ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়ানোর সুযোগ সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করত। কিন্তু তা তো হওয়ার নয়। তাদের যে 'পিছিয়ে পড়া' জনপদে পড়ে থাকাই কপালের লিখন! তারা যখন স্বপ্নের রাজধানীতে আসার জন্য তৎপর হয়, কেউ সেটা ভালো চোখে দেখে না। এ নিয়ে সংবাদপত্রে প্রচার চলে। সভা-সেমিনারে সমালোচনা করে বক্তব্য রাখা হয়। কিন্তু তাদের দুঃখের কথা কেউ বুঝতে চায় না। পরিবারের সদস্যদের আকাঙ্ক্ষার মূল্য কেউ দিতে চায় না।
কিছুদিন আগে ঢাকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত ডায়েরি দেখছিলাম। সেখানে নারী শিক্ষকের সংখ্যা অনেক। এ তালিকা নিয়ে আলোচনা হয় প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি বলেন, কেউ মনে করতে পারেন, আমরা নারীর ক্ষমতায়নের ইস্যুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বুয়েটের চেয়ে এগিয়ে। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, উচ্চ পদগুলোতে যারা রয়েছেন তাদের তদবির-চাপের ফল এটা। তাদের কারণে অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পদে নিযুক্ত হন। লা-জবাব থাকা ছাড়া উপায় কী!
বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এখনও পিছিয়ে। দেশের সব নাগরিকের জন্য সমান সুবিধা নিশ্চিত করার সুযোগ নেই। বৈষম্য প্রকট। এর মধ্যেই ঢাকাবাসী নিজেদের ভাগ্যবান মনে করতে পারে। এখানে অন্য শহরের চেয়ে বেশি সময় বিদ্যুৎ থাকে। ওয়াসার পানির সরবরাহ মেলে। রান্নার জন্য গ্যাস মেলে 'পানির দরে'। তাই বলে কি ঢাকাবাসী পরিতৃপ্ত? যে কাউকে জিজ্ঞেস করলে বলবে_ সবাই যানজটে নাকাল। অনেক লোকের বসতি হওয়ায় জনজটও প্রকট। কিন্তু এরপরও ঢাকায় বাড়ছে মানুষ। যারা পড়তে আসে, তাদের বড় অংশ এখানেই থাকার চেষ্টা করে। কয়েক লাখ গার্মেন্টকর্মীর বসতি হয়েছে ঢাকায়। নদীভাঙনের শিকার লোকজন বেঁচে থাকার আশায় ছুটে আসে এ জনপদে। কিছু সরকারি অফিসের সদর দফতর ঢাকার বাইরে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয় মাঝে মধ্যে। কিন্তু দেখা যায়, একই সঙ্গে ঢাকা ও বাইরে কাজ চলছে। এতে ব্যয় বাড়ে, কাজের সময় বেশি পড়ে। মন্ত্রীরা তো ঢাকাতেই থাকেন। বেশিরভাগ সংসদ সদস্য থাকেন ঢাকায়। উপজেলা চেয়ারম্যানদের পছন্দের মহানগর ঢাকা। তাহলে শিক্ষকদের দোষ কোথায়? তাদের এখানে আসার জন্য যুক্তির অভাব হয় না। সবকিছু ছাপিয়ে থাকে অর্থনীতি এবং নাগরিক সুবিধা। এটা পেতে সাধ্যমতো চেষ্টা করেন সবাই। কিছু লোক সফল হন, বেশিরভাগ হন না। এখানে আসতে পারলে অনেকের জীবন আমূল বদলে যেতে পারত। ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়ানোর সুযোগ সন্তানদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করত। কিন্তু তা তো হওয়ার নয়। তাদের যে 'পিছিয়ে পড়া' জনপদে পড়ে থাকাই কপালের লিখন! তারা যখন স্বপ্নের রাজধানীতে আসার জন্য তৎপর হয়, কেউ সেটা ভালো চোখে দেখে না। এ নিয়ে সংবাদপত্রে প্রচার চলে। সভা-সেমিনারে সমালোচনা করে বক্তব্য রাখা হয়। কিন্তু তাদের দুঃখের কথা কেউ বুঝতে চায় না। পরিবারের সদস্যদের আকাঙ্ক্ষার মূল্য কেউ দিতে চায় না।
No comments