বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক-ঝুলে থাকা সমস্যার দ্রুত সমাধান হোক

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। দুই দেশের বন্ধুত্বকে শুধু পুরনো বললে অনেক কমিয়ে বলা হয়। ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবেই অনেক গুরুত্ব বহন করে। কখনো সে সম্পর্ক হার্দিক উষ্ণতায় ঋদ্ধ হয়েছে। কখনো আবার বরফ জমেছে সম্পর্কে। সে বরফ গলতে সময় লেগেছে।


কিন্তু সম্পর্ক অটুট আছে। হ্যাঁ, সম্পর্কের তিক্ততা কাটাতে অনেক ক্ষেত্রে সময় লেগেছে। সম্পর্কের ফাটল সারিয়ে তোলা গেছে। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের মধ্যে একধরনের অস্বস্তি লক্ষ করা যাচ্ছে। এই অস্বস্তির কারণও স্পষ্ট।
গত সেপ্টেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সফরকে কেন্দ্র করে একধরনের আশাবাদ দেখা দিয়েছিল। ধারণা করা গিয়েছিল, ওই সফরের মধ্য দিয়ে খুলে যাবে সম্ভাবনার দরজা। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে অমীমাংসিত অনেক বিষয়ে একটি গ্রহণযোগ্য সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হবে বলেও আশা করা হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আশাহত হতে হয়েছে বাংলাদেশকে। ভারত সম্পর্কে বাংলাদেশের আশাবাদী হওয়াটাও অযৌক্তিক নয়। একদিকে বৃহৎ প্রতিবেশী, অন্যদিকে একাত্তরে বাংলাদেশের মানুষের চরম দুর্দিনে পরম মমতায় সহযোগিতার সব দরজা খুলে দেওয়া- স্বাভাবিক কারণেই ভারতের কাছে বাংলাদেশের প্রাপ্তির আশা সব সময় বড়। কিন্তু সেই আশা অনেক ক্ষেত্রে পরিণত হয় আশঙ্কায়। উভয় দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে দেখা দেয় মতপার্থক্য। এর বাইরে আছে সীমান্তের সমস্যা। সীমান্ত নিয়েও দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে।
ধারণা করা হয়েছিল, এবার দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের বরফ একেবারেই গলে যাবে। কারণ বর্তমান সরকারের আমলে ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ অনেক অগ্রগতি লক্ষণীয়। পাশাপাশি অনেক ইস্যুতে রয়েছে স্থবিরতা। গত সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর হবে, এ ব্যাপারে অনেক আশাবাদী ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তিতে তিস্তাচুক্তি শেষ পর্যন্ত স্বাক্ষর হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের প্রত্যাশা পূরণ হওয়ার পরিবর্তে সৃষ্টি হয়েছে হতাশা। ওই চুক্তি কবে স্বাক্ষর হবে, সে ব্যাপারেও কোনো সুস্পষ্ট কোনো আভাস-ইঙ্গিত নেই। অনেক দিনের আরেকটি সমস্যা হচ্ছে ছিটমহল। ছিটমহল বিনিময়ের সিদ্ধান্ত হওয়ার পরও তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় ছিটমহলবাসীর হতাশাও কাটছে না। ছিটমহল বিনিময়ের জন্য স্বাক্ষরিত স্থল সীমান্ত প্রটোকল দুই দেশে এখনো অনুমোদন না হওয়ায় তা বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। কবে নাগাদ এটি করা যাবে, সে বিষয়েও কোনো সুস্পষ্ট সময়সীমা নেই। আবার সীমান্ত প্রটোকল বাস্তবায়ন, ট্রানজিট, পানিবণ্টন ও সীমান্তে হত্যা-নির্যাতনের মতো ইস্যুগুলো দুই দেশেই রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর। বারবার আশ্বাস সত্ত্বেও এসব বিষয়ে তেমন অগ্রগতি নেই। দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ে সমস্যা নিরসনের আশা থাকলেও এখন পর্যন্ত আস্থার সংকটই প্রধান অন্তরায় বলে মনে করা হচ্ছে। উভয় দেশের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সেই আস্থাহীনতা দুই দেশের জনগণের মধ্যেও প্রভাব ফেলছে না, সে নিশ্চয়তা কে দেবে?
মনমোহনের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গতকালের বৈঠকে এসব বিষয়ে কী কথা হয়েছে, তার বিস্তারিত তথ্য হয়তো পরে জানা যাবে। ফারাক্কা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তোলা, তিস্তাচুক্তি পিছিয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা, দুই দেশের মধ্যে তিক্ততা আরো বাড়াবে। এতে অস্বস্তি প্রলম্বিত হবে। বাড়বে টানাপড়েন। প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নে যত দেরি হবে আস্থার সংকট ততই বাড়বে। সম্পর্কের টানাপড়েন ও অস্বস্তি দুই দেশেরই উন্নয়নের পথে অন্তরায়, সেটা দূর করতে হলে দ্রুত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.