ইন্টারনেটের অসম্ভব ক্ষমতায় উদ্বেগ : গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ কঠোর করবে চীন

ণমাধ্যমের ওপর আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপের চিন্তা করছে চীন সরকার। অর্থনৈতিক বৈষম্য বৃদ্ধি, সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও সরকারের নিয়ন্ত্রণ নীতির বিরুদ্ধে সম্প্র্রতি গণঅসন্তোষের জেরে সামাজিক অস্থিরতার আশঙ্কায় চীন এরকম সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। কমিউনিস্ট পার্টির শীর্ষ নেতাদের বার্ষিক সভা শনিবার শুরু হয়েছে। চার দিনব্যাপী এই সভার আলোচনার মূল বিষয় সাংস্কৃতিক সংস্কার। এই লক্ষ্যে গণমাধ্যম ও ইন্টারনেট ফার্মগুলোর বিষয়ে সরকারি স্বার্থের অনুকূল ব্যবস্থা নেয়া হবে। চীনের ৫০ কোটিরও বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। জনগণের মতামতকে প্রভাবিত করার জন্য ইন্টারনেটের অসম্ভব ক্ষমতায় চীন সরকার উদ্বিগ্ন।


দেশটিতে জাতীয় সব গণমাধ্যমের ওপর যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ রাখে কর্তৃপক্ষ। কমিউনিস্ট সরকারের প্রচারণা প্রধান লি চ্যাংচুন এরই মধ্যে দেশের শীর্ষ ইন্টারনেট ফার্মগুলোকে বিভিন্ন ওয়েবসাইটের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর করার নির্দেশ দিয়েছেন। সম্প্রতি চীনের প্রধান সার্চ ইঞ্জিন বাইদু’র শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেছে তারা। চীন সরকার ইন্টারনেটে ‘গুজব’ ছড়ানোর ব্যাপারে সবসময় খড়গহস্ত। গত জুলাইয়ে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার খবর নিয়ে লুকোচুরি করে সরকার। এ সময় ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোতে নিন্দা ও সমালোচনায় ফেটে পড়ে সাধারণ মানুষ। ইন্টারনেট সেবাদানকারী অনেক প্রতিষ্ঠান ব্যক্তিমালিকানাধীন। এ কারণে রাজনৈতিকভাবে স্পর্শকাতর বিষয়গুলো প্রকাশে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা চীনা রক্ষণশীল সরকারের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।
চীনের গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ সিয়াও কিয়াং বলেন, ‘চীনের ওয়েইবোস (টুইটারের মতো সাইট) বিশাল সামাজিক যোগাযোগের নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। এর মাধ্যমে তথ্য বিতরণ এবং কোনো পদক্ষেপের জন্য সহযোগিতা আহ্বানের বার্তা অবিশ্বাস্য রকম দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।’ তিনি বলেন, ‘এই সাইটটি এখন দলের আদর্শিক ও সামাজিক নিয়ন্ত্রণ নীতির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’ সিয়াও যুক্তরাষ্ট্রের বারকেলেতে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজমের অধ্যাপক। তিনি জানান, বর্তমানে চীনের বিভিন্ন সমাজে সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে এবং দেশটির বেশিরভাগ অঞ্চল ও শহরে এই অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ছে। হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডেভিড ব্যানডুরস্কি বলেন, সাম্প্রতিক গণঅসন্তোষ এবং আসন্ন নেতৃত্ব হস্তান্তরের প্রেক্ষিতে কর্মকর্তাদের উদ্বেগ আরও বেড়েছে। কমিউনিস্ট সরকারের নেতৃত্ব হস্তান্তর ২০১২ সালে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘সন্দেহ নেই চীনের জন্য এটা খুবই স্পর্শকাতর একটি সময়। বর্তমানে দেশটি ভয়াবহ সামাজিক এবং অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।’ সামাজিক অস্থিরতা এবং নেতৃত্ব হস্তান্তর এই দুটি বিষয় গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর করার পক্ষে রসদ হিসেবে কাজ করবে বলে মন্তব্য করেন ডেভিড।
উল্লেখ্য, চীনের ইন্টারনেট সেন্সরশিপ সিস্টেম খুব শক্তিশালী। গ্রেট ফায়ারওয়াল নামের এই নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মাধ্যমে সরকার অসংখ্য বিদেশি ওয়েবসাইট ব্লক করে এবং কোনো তথ্য বা খবর সরকারের স্বার্থবিরোধী মনে হলে তার প্রচার বন্ধ করে দেয়।

No comments

Powered by Blogger.