গাজীপুরের শ্রীপুরে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী : দুই হাজার গাড়ি কিনে রোডমার্চ করার টাকা কোথায় পেলেন, এর বিচার হবে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসী মদতদাতাদের আইনের মাধ্যমে দেশে বিচার করা হবে। তিনি বিএনপি চেয়ারপার্সনের গাড়িবহর নিয়ে রোডমার্চ আন্দোলনের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, অতীতে তারা লুটপাট ছাড়া আর কিছুই করেনি। বর্তমানে দুই হাজার দামি গাড়ি নিয়ে রোডমার্চের নামে পিকনিক করে বেড়াচ্ছেন। ভাঙা সুটকেস থেকে দুই হাজার দামি গাড়ি কেনার টাকা তারা কোথায় পেলেন? প্রত্যেক গাড়ির নম্বর নিয়ে টাকার উেসর হিসাব নেয়া হবে।


গতকাল বিকালে শ্রীপুর উপজেলা আ’লীগের উদ্যোগে মাওনা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উপজেলা আ’লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট শামসুল আলমের সভাপতিত্বে মাওনা হাইস্কুল মাঠে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এর আগে শ্রীপুর উপজেলা মাওনা সিঙ্গারদীঘি গ্রামে আন্তর্জাতিক মানের প্লেজ হারবার স্কুল অ্যান্ড স্পোর্টস একাডেমি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের টাকা হাওয়া ভবনে বসে লুটপাট করেছেন, খোয়াব ভবন করে আমোদফুর্তি করেছেন। আপনারা টাকা চুরি করবেন আর বিচার হবে না, তা হতে পারে না। তিনি আরও বলেন, বিএনপি সরকারের আমলে একটুও বিদ্যুত্ উত্পাদন হয়নি, হাজার হাজার টাকা লুট করে খেয়েছে। বিদ্যুত্ উত্পাদনে তাদের কোনো আগ্রহ ছিল না। আমরা ক্ষমতায় আসার পর ২২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত্ উত্পাদন করেছি এবং আপনাদের গাজীপুরে শিল্প-কলকারখানার বিদ্যুত্ সমস্যা মেটানোর জন্য ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুেকন্দ্র নির্মাণের কাজ অচিরেই শুরু করতে যাচ্ছি। গ্যাস সরবরাহের জন্য বিবিয়ানা গ্যাসফিল্ড থেকে পাইপলাইনে গ্যাস আনার জন্য এরই মধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছি। গাজীপুরের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ সহজ করার লক্ষ্যে ঢাকা থেকে আশুলিয়া-টঙ্গী হয়ে গাজীপুর পর্যন্ত এলিভেটেড রাস্তা তৈরি কাজ হাতে নিয়েছি। ৪ লাখ বেকার যুবককে চাকরি দেয়া হয়েছে। বিরোধীদলীয় নেতাকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি সবসময়ই চায় বাংলাদেশ ভিক্ষুকের দেশ হয়ে থাকুক। কিন্তু আমরা তা চাই না। আমরা বিদেশ থেকে বেশি দামে চাল কিনে এনে কম দামে বিক্রি করি। গরিবদের মধ্যে বিনামূল্যে চাল বিতরণ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী জানতে চেয়েছেন, কীভাবে বিএনপি প্রধান নিশ্চিত হলেন যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে তিনি ক্ষমতায় আসবেন? খালেদা জিয়া অর্থ আত্মসাত্কারী তার দুই সন্তানকে রক্ষার জন্য ড. ফখরুদ্দীন আহমদ ও মইন উ আহমেদের ওপর আস্থাবান ছিলেন। কিন্তু তারা তার দুই সন্তানকে রক্ষা না করায় এখন তাদের তিরস্কার করছেন।
‘এখন বেগম জিয়াকে কে আশ্বস্ত করল যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে তিনি ক্ষমতায় আসতে পারবেন?’ তিনি খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার অতীতের মতো আবারও তাকে কারাগারে নিতে পারে।
আগামী সাধারণ নির্বাচনে বিএনপি ও তাদের জোট আবারও ক্ষমতায় এলে বিএনপি নেতারা বিলাসবহুল জীবন-যাপন করবে এবং সাধারণ মানুষ অনাহারে মরবে। গাজীপুরের উন্নয়নে তার সরকারের পরিকল্পনা ঘোষণা করে শেখ হাসিনা বলেন, ঢাকা সংলগ্ন জেলা হওয়ায় রাজধানী ঢাকার মতো গুরুত্ব দিয়ে এ জেলার উন্নয়ন করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির ও খালেদা জিয়ার দুই ছেলের দুর্নীতি বিদেশে পুরো জাতির জন্য লজ্জার কারণ হয়েছে। তারা তাদের দুটি গুণের জন্য পরিচিত— একটি হচ্ছে দুর্নীতি, আরেকটি হচ্ছে হত্যা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতা খালেদা জিয়া জনগণের জীবনে শান্তি দেখতে চান না। জনগণ শান্তিতে থাকলে তিনি অস্বস্তি বোধ করেন। তিনি বলেন, জনগণের জীবন থেকে শান্তি কেড়ে নিয়ে খালেদা জিয়া ও তার সহযোগীরা আবারও আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন।
প্রধানমন্ত্রী এতিমদের জন্য দেয়া বিদেশি অর্থ আত্মসাত্ করায় বিরোধীদলীয় নেতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, জিয়া হত্যাকাণ্ডের পর তার দুই সন্তানের লেখাপড়ার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে ভাতা দেয়া হতো। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিধবা হিসেবে বেগম জিয়াও ভাতা পেতেন। তাহলে কীভাবে জিয়ার নামে অরফানেজ ট্রাস্টের টাকা তিনি আত্মসাত্ করলেন?
জনসভায় আরও বক্তৃতা করেন আলহাজ অ্যাডভোকেট রহমত আলী এমপি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, জেলা আ’লীগের সভাপতি আকম মোজাম্মেল, জাহিদ আহসান রাসেল, আজমত উল্ল্যা খান, জামিল হাসান দুর্জয়, শেখ নজরুল ইসলাম, নুরুন্নবী আকন্দ প্রমুখ।
মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক আইন প্রণয়ন করা হবে : বাসস জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার মানসিক স্বাস্থ্য পরিচর্যাসহ জনগণের জন্য সার্বিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়ায় মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল তিন দিনব্যাপী মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উদ্বোধনকালে তিনি একথা বলেন। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইক্রিয়াটিস্ট এই সম্মেলনের আয়োজন করে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইক্রিয়াটিস্টের সভাপতি প্রফেসর ড. মো. গোলাম রাব্বানির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রফেসর ড. আ ফ ম রুহুল হক, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ড. ক্যাপ্টেন (অব.) মুজিবুর রহমান ফকির এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়ারও উদ্যোগ নিয়েছি। মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেয়া আরও কার্যকর করতে একটি গাইডবুক প্রণয়ন করা হয়েছে। তিনি মানসিক রোগ প্রতিরোধে পরিবার ও সমাজে নিরবচ্ছিন্ন শান্তি এবং ভীতিমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে পারিবারিক বন্ধন আরও দৃঢ় করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে বেশকিছু কুসংস্কারের কথা উল্লেখ করে তিনি এসব কুসংস্কার ও অপচিকিত্সার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে সংবাদমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান। স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া জনগণের সাংবিধানিক অধিকার—একথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করছে।
তিনদিনের এ সম্মেলনে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, মিয়ানমার, দক্ষিণ কোরিয়া, নেপাল, জাপান ও পাকিস্তানের ৭৯ জন সাইক্রিয়াটিস্ট অংশ নিচ্ছেন।

No comments

Powered by Blogger.