স্পেনে লাখ লাখ শিশু চুরির নেপথ্যে চার্চ

স্পেনে পাঁচ দশকেরও বেশি সময়ে প্রায় তিন লাখ নবজাতককে তাদের মা-বাবার কাছ থেকে চুরি করা হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে তাদের তুলে দেওয়া হয়েছে পালক মা-বাবার হাতে। একনায়ক জেনারেল ফ্রাঙ্কোর শাসনামলে শুরু হয়ে গত শতকের নব্বইয়ের দশকের আগ পর্যন্ত এ চৌর্যবৃত্তি অব্যাহত ছিল। এর পেছনে সংঘবদ্ধভাবে কাজ করেছে একদল ডাক্তার, নার্স, চার্চের পুরোহিত ও নান। তাঁদের যোগসাজশেই এ কুকর্ম সংঘটিত হয়েছে। ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং করপোরেশনের (বিবিসি) 'দিস ওয়ার্ল্ড : স্পেনস স্টোলেন বেবিজ' শীর্ষক প্রামাণ্যচিত্রে এসব তথ্য উঠে এসেছে।


স্পেনের বিভিন্ন হাসপাতালে জন্ম দেওয়ার পর যেসব পরিবার তাদের সন্তানদের হারিয়েছে, তারা এ ব্যাপারে সরকারি তদন্তের দাবি জানিয়েছে। অনেক মা বলছেন, হাসপাতাল থেকে তাঁদের বলা হয়েছে, মৃত সন্তান জন্মেছে অথবা জন্মের পর পরই নবজাতক মারা গেছে। তবে নবজাতকের মৃতদেহ তাঁদের দেখতে দেওয়া হয়নি। অপেক্ষাকৃত সচ্ছল ও ধার্মিক পরিবারের কাছে এসব শিশুকে বিক্রি করে দেওয়া হয়। সম্প্রতি আন্তোনিও বারোসো ও হুয়ান লুই মোরেনো নামের দুই ব্যক্তি নিজেদের আসল পরিচয় শনাক্ত করতে সক্ষম হন। তাঁদের হাত ধরেই ব্যাপারটি জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়েছে।
বিবিসির পক্ষে তদন্তকারী সাংবাদিক কাটিয়া অ্যাডলার বলেন, এসব ঘটনা হাজারো মানুষের জন্য অবর্ণনীয় কষ্টের কারণ। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ১৯৬০ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত স্পেনে ১৫ শতাংশ শিশু চুরির ঘটনা ঘটেছে।
১৯৩৯ সালে জেনারেল ফ্রাঙ্কোর শাসন শুরু হয় স্পেনে। রাজনৈতিকভাবে তাঁর শাসনামলের জন্য হুমকি বিবেচিত হতো_এমন পরিবারের সন্তানদের সরিয়ে দেওয়ার চিন্তা হয়। এরই অংশ হিসেবে শুরু হয় শিশু বিক্রির প্রক্রিয়া। ১৯৭৫ সালে একনায়ক ফ্রাঙ্কোর মৃত্যু হলেও তা বন্ধ হয়নি। সে সময় ক্যাথলিক চার্চগুলো ব্যাপক ক্ষমতাধর ছিল, জনজীবনে তাদের প্রভাব ছিল ব্যাপক। ফলে শিশু চুরির ব্যাপারটি অব্যাহত রাখে তারা। মোরেনোর পালক বাবা মৃত্যুশয্যায় স্বীকার করেন, অর্থের বিনিময়ে তিনি স্পেনের উত্তরাঞ্চলের জারাগোজা থেকে এক পুরোহিতের কাছ থেকে মোরেনোকে কিনে নেন। বারোসোর মা-বাবাও জানান, সে সময় দুই লাখ পেসেটা (স্পেনের তৎকালীন মুদ্রা) খরচ করে বারোসোকে তাঁরা পান। ডিএনএ পরীক্ষায়ও প্রমাণিত হয়েছে, বারোসো তাঁর মা-বাবার সন্তান নন। পাশাপাশি এ ঘটনায় জড়িত নানও বারোসোকে বিক্রির কথা স্বীকার করেন।
বারোসো জানান, 'সে সময় দুই লাখ পেসেটা অনেক বড় অঙ্কের অর্থ ছিল। তাঁর মা-বাবার হাতে পর্যাপ্ত অর্থ ছিল না। তাই ১০ বছর ধরে কিস্তিতে তাঁরা ওই অর্থ পরিশোধ করেন। সূত্র : ডেইলি মেইল।

No comments

Powered by Blogger.