উন্নয়ন অন্বেষণের রিপোর্ট : দেশে কাঙ্ক্ষিত দারিদ্র্য দূর হচ্ছে না

ওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে ২০১৩ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার মোট জনসংখ্যার ২৫ ভাগ এবং ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ ভাগে নামিয়ে আনার অঙ্গীকার করেছে। ১৯৯১-৯২ সাল থেকে ২০১০ পর্যন্ত দারিদ্র্য হ্রাসের বার্ষিক গড় হার ১ দশমিক ৩২ ভাগ। দারিদ্র্য হ্রাসের এ হার অব্যাহত থাকলে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সরকার ইশতেহারে ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে না। ২০১৩ এবং ২০২১ সালের মধ্যে দেশের দারিদ্র্য হার দাঁড়াতে পারে যথাক্রমে শতকরা ২৭ দশমিক ৫ ও ১৭ ভাগ। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে যথাক্রমে আড়াই ভাগ এবং ২ ভাগ বেশি। গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন অন্বেষণের এক গবেষণায় এসব বলা হয়েছে।


গবেষণায় দেখা গেছে, অসম প্রবৃদ্ধি দারিদ্র্য নিরসনে ব্যাঘাত ঘটায়। বিভিন্ন সেবার ক্ষেত্রে অসম সুযোগ দারিদ্র্য নিরসনকে আরও গতিহীন করে দিচ্ছে। খাদ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, উচ্চ খাদ্যমূল্যস্ফীতি অসমতা বৃদ্ধি করছে। গত ১০ বছরে (২০০০-২০১০) দেশের আয় বৈষম্য শতকরা ০ দশমিক ১৬ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রচলিত দারিদ্র্য পরিমাপের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন অন্বেষণ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে মাত্র ১ দশমিক ২৫ ডলার আয় দারিদ্র্য পরিমাপে বাস্তবসম্মত নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, একজন মানুষের দৈনিক আয় যদি ১ ডলার হয় তাহলে তাকে দরিদ্র হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ১ বছর পর যদি তার আয় ১ দশমিক ৩ ডলার হয় তাহলে তাকে দরিদ্র হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে না। অথচ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি সেই সঙ্গে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে আগের তুলনায় সে অনেক বেশি কষ্ট করছে। যদিও তার আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু আয়ের তুলনায় দ্রব্যমূল্য বেশি বৃদ্ধি পাওয়ায় আগের আয় দিয়ে একজন ব্যক্তি আগের সমান ভোগ করতে পারছে না। সুতরাং দারিদ্র্য পরিমাপের ক্ষেত্রে ১ দশমিক ২৫ ডলার আয় কতটা যুক্তিসম্মত তা প্রশ্নসাপেক্ষ বলে উল্লেখ করা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে। গবেষণায় বলা হয়েছে, দারিদ্র্যতা পরিমাপের অন্য মাধ্যমটি হলো মাথাপিছু প্রতিদিন ২১০০ কিলো ক্যালরি খাদ্য গ্রহণ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে খুব সাধারণভাবে তা গ্রহণ করতে খরচ হবে ৫০ টাকা (০ দশমিক ৭১ ডলার)। সেই সঙ্গে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, যোগাযোগসহ অন্যান্য খরচের জন্য মাত্র ১ দশমিক ২৫ ডলার দ্বারা অনেকটাই অসম্ভব। সে ক্ষেত্রে ভোগ ব্যয়কে দারিদ্র্যের পরিমাপক হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, ১৯৯১-৯২ সাল থেকে ২০১০ পর্যন্ত দারিদ্র্য হ্রাসের বার্ষিক গড় হার ১ দশমিক ৩২ ভাগ। যা লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে খুবই কম। যদি কোনো বৈপ্লবিক কর্মসূচি নেয়া না হয় এবং দারিদ্র্য হ্রাসের বর্তমান হার অব্যাহত থাকলে নির্দিষ্ট সময়সীমা শেষে দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে না। গবেষণায় দেখা যায় যে, শহর অপেক্ষা গ্রাম এলাকায় দারিদ্র্যের হার বেশি। দারিদ্র্য হ্রাসের হার অন্যান্য বিভাগের তুলনায় রাজশাহী (রংপুরসহ) বিভাগে বেশি। যা ২ দশমিক ১ শতাংশ। আর দারিদ্র্য হ্রাসের হার সবচেয়ে কম খুলনাতে। খুলনাতে তা ১ দশমিক ৩০ শতাংশ। দারিদ্র্য নিরসনে কিছুটা অগ্রগতি দেখা গেলেও দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। যেখানে ১৯৯১-৯২ সালে দারিদ্র্র্যসীমার নিচে বসবাস করত ৫১ দশমিক ৬ মিলিয়ন মানুষ, সেখানে ২০০৫ সালে এই সংখ্যা বছরে গড়ে ০ দশমিক ৩১৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়ে ৫৬ মিলিয়নে দাঁড়ায়।

No comments

Powered by Blogger.