টিসিবির গুদামে পণ্য আসতে দাম বাড়ছে ১০ শতাংশ! by আবুল কাশেম

দুল ফিতরের আগে মেঘনা গ্রুপের কাছ থেকে ৫২ টাকা ৪৮ পয়সা কেজি দরে চিনি কিনেছে সরকারি বিক্রয় সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ বা টিসিবি। এখন সেই চিনিই টিসিবি বিক্রি করছে ৬০ টাকা দরে। অথচ এতে সংস্থাটি কোনো মুনাফা করছে না। মেঘনা গ্রুপের মিল থেকে টিসিবির গুদাম পর্যন্ত আসতেই প্রতি কেজি চিনির দাম বাড়ছে পাঁচ টাকা ৩৬ পয়সা। এই টাকার বড় অংশই যাচ্ছে সরকারের কাছে। একই অবস্থা অন্য পণ্যের ক্ষেত্রেও। অথচ কম দামে পণ্য বিক্রি করে বাজার স্থিতিশীল রাখার গুরু দায়িত্ব টিসিবির ঘাড়ে!


টিসিবির হিসাবে, ৫২ টাকা ৪৮ পয়সা দরে কিনে অন্যান্য খরচ কেজিপ্রতি এক-দেড় টাকায় সীমিত রাখতে পারলেই বাজারে তা ৫৪ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব। আর তা পারলেই বাজারে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে সক্ষম হতো টিসিবি। কিন্তু ৫২ টাকা ৪৮ পয়সা দরে চিনি কেনার পর ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর বাবদ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দিতে হয় দুই টাকা ৬২ পয়সা। প্রতি কেজি চিনির মূল্যের তিন মাসের ব্যাংকের ঋণের সুদ দাঁড়ায় এক টাকা ২৭ পয়সা। তার সঙ্গে মিল থেকে গুদামে সংরক্ষণ পর্যন্ত এক টাকা পরিবহন খরচসহ অন্যান্য চার্জ যোগ করলে প্রতি কেজি চিনির পেছনে টিসিবির খরচ হচ্ছে ৫৭ টাকা ৮৪ পয়সা। এ হিসাবে শত টাকার পণ্যে দাম বাড়ছে প্রায় ১০ টাকা। টিসিবি ডিলারদের মাধ্যমে ওই চিনি খুচরা বিক্রি করছে ৬০ টাকায়।
টিসিবির কর্মকর্তারা জানান, দেশের যেকোনো চিনিকল বা ভোজ্য তেলের মিলগুলো থেকে পরিবেশকরা এখন খোলা সয়াবিন তেল কিনছেন ১০৪ টাকা দরে; কিন্তু নিজের ডিলারদের দেওয়ার জন্য টিসিবিকে একই মিল থেকে তা কিনতে হচ্ছে ১০৯ টাকা ৮০ পয়সায়। পরিবেশকদের ১০৪ টাকায় কেনা তেল খুচরা ব্যবসায়ীরা ১০৬ টাকায় কিনে বিক্রি করেন ১০৯ টাকায়। অথচ ওই তেল টিসিবির গুদাম হয়ে ডিলারদের হাতে পেঁৗছাতেই খরচ পড়ে ১১৩-১১৪ টাকা। অথচ টিসিবিকে খুচরা ব্যবসায়ীদের চেয়েও কম দামে তা বিক্রিও দায়িত্ব নিতে হয়। সংস্থাটির কর্মকর্তারা জানান, টিসিবির এই বর্ধিত খরচের জন্য সংস্থাটির অব্যবস্থাপনা দায়ী নয়, দায়ী রাজস্ব বোর্ড ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একগুঁয়েমি মনোভাব। আবার বেসরকারি মিলমালিক বা আমদানিকারকরা আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার মুহূর্তেই অনলাইনে লগইন করার দুই-তিন দিনের মধ্যে এলসি খুলে তা আমদানি করতে পারেন। কিন্তু টিসিবি আন্তর্জাতিক বাজার থেকে পণ্য আমদানি করতে গেলে তাকে পিপিআর ২০০৬-এর পাঁচটি পদ্ধতির যেকোনোটি মেনে তা করতে হয়। এতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। আর এ কারণে সুবিধামতো সময়ে পণ্য আমদানি সম্ভব হয় না। তা ছাড়া যেকোনো পণ্য আমদানির আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতেও সময় ব্যয় হয়।
মূলত আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ৫২(১৬) ধারা অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠান স্থানীয় কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে তিন কোটি টাকার বেশি মূল্যের পণ্য কিনলে ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানকে ৫ শতাংশ হারে অগ্রিম আয়কর দিতে হয়। আর টিসিবিকে যেহেতু একসঙ্গে কয়েক হাজার টন করে ভোজ্য তেল ও চিনি কিনতে হয়, তাই স্বাভাবিকভাবেই তার মূল্য তিন কোটি টাকার বেশি হয়। ফলে সংস্থাটিকে স্থানীয় বাজার থেকে পণ্য সংগ্রহের সময় ৫ অংশ হারে অগ্রিম আয়করও পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু মিলগুলোর পরিবেশকদের ক্ষেত্রে এ আয়কর প্রযোজ্য নয়। ফলে অনেকটা ব্যাকফুটে থেকেই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাজার স্থিতিশীল রাখার ব্যর্থ চেষ্টা করতে হচ্ছে টিসিবিকে।
টিসিবির চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সারোয়ার জাহান তালুকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, স্থানীয় বাজার থেকে পণ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে যে অগ্রিম আয়কর পরিশোধ করতে হয়, তা থেকে অব্যাহতি পাওয়া গেলে টিসিবি আরো কমমূল্যে বাজার পণ্য সরবরাহ করে বাজার স্থিতিশীল রাখতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারবে।

No comments

Powered by Blogger.